বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ইমাম আযম হযরত আবু হানিফা রহ. -এর তাকওয়া


ইমাম আযম হযরত আবু হানিফা রহ. -এর তাকওয়া পরহেযগারি তো দৃষ্টান্ততুল্য ছিল। তাঁর সমকালীন উলামায়ে কেরাম বলতেন যে, আমরাপ আমাদের যুগে ইমাম আবু হানিফা রহ. -এর তুলনায় অধিক মুত্তাকী পরহেযগার কাউকে দেখিনি।
আলি ইবনে হাফস বলেন, হাফস ইবনে আব্দুর রহমান ব্যবস্য় ইমাম আবু হানিফা রহ. -এর সাথে অংশীদার ছিলেন। একবার ইমাম সাহেব রহ. তার নিকট ব্যবসার কিছু সামগ্রী দিয়ে তাকে তা বিক্রির জন্য পাঠালেন। সাথে সাথে একথাও বলে দেন যে, এ কাপড়গুলোর মধ্য থেকে এই একটি কাপড়ে কিছু খুঁত আছে। সুতরাং বিক্রি করার সময় তা ক্রেতাকে দেখিয়ে বিক্রি করবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে অন্যান্য কাপড়ের সাথে তিনি তাকে একত্রে বিক্রি করে ফেলেন। খুঁত জায়গাটি ক্রেতাকে দেখাতে ভুলে যান। আর উক্ত কাপড়টি কোন ক্রেতা কিনেছিল তা সঠিক জানাও ছিল না। পরে হযরত ইমাম সাহেবের নিকট ফিরে এসে ব্যবসা সংক্রান্ত খবরাদি অবহিত করেন। এ সময় তিনি তাকে উক্ত কাপড়টির কথা জিজ্ঞেস করেন। হাফ্স ইবনে আব্দুর রহমান বললেন, হযরত সেটির কথা আমার মনেই ছিল না। হযরত ইমাম সাহেব রহ. তখন এ ব্যবসার সম্পূর্ণ অর্থ সাদকা করে দিলেন। আর সে সময় তার মূল্য ছিল ২০ হাজার দেরহাম। ওপরন্ত এরপর তিনি হাফ্স ইবনে আব্দুর রহমানের সাথে যৌথ ব্যবসা-ই বন্ধ করে দেন।
একবার কিছু লোক কোন এক এলাকা থেকে বণ্ড ছাগল লুট করে নিয়ে এসে তা কুফায় বিক্রি করল। ছাগলগুলো শহরের ব্যবসায়ীদের অন্যান্য ছাগলের সাথে মিশে গেল। লুণ্ঠিত ছাগল আলাদা করার কোন উপায় ছিল না। ইমাম সাহেব রহ. যখন এ সংবাদ অবগত হলেন তখন তিনি মানুষের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, ছাগল আনুমানিক কত বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে? লোকেরা উত্তর দিল যে, ৭ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। তখন থেকে ৭ বছর পর্যন্ত তিনি কুফায় ছাগলের গোশত ভক্ষণ করেননি। যাতে তাঁর উক্ত চোরাই ছাগলের গোশত আহারের সন্দেহ দূরীভূত হয়ে যায়।
একবার হযরত ইমাম সাহেব রহ. এক ঘরের পার্শ্বে রোদের মধ্যে বসেছিলেন। ইয়াহইয়া ইবনে আবু যাহিদ তাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁকে ঘরের দেয়ালের ছায়ায় না বসে রোদে বসা দেখে জিজ্ঞেস করলেন- হযরত! ঘরের ছায়ায় না বসে রোদে বসার কারণ কি? ঘরে বসলে তো গরমের কষ্ট হতো না। ইমাম সাহেব রহ. উত্তর দিলেন, এ ঘরের মালিকের নিকট আমার ঋণের টাকা পাওনা রয়েছে। আমি যদি তার ঘরের দেয়ালের ছায়া দ্বারা উপকার গ্রহণ করি তাহলে হতে পারে তা ঋণ দিয়ে কোন প্রকার উপকার লাভ করার আযাবের ণ্ডমকীর অধীনে শামিল হয়ে যাবো। আর এটা যদিও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়, তবে আলেমদের জন্য ইলমের ওপর সর্বসাধরণের তুলনায় অনেক বেশি আমলকারী হওয়া উচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন