আগেকার কোনো এক নবীর ঘটনা। তিনি ঘুমিয়ে আছেন। স্বপ্ন দেখলেন তাকে বলা হচ্ছে, ভোরবেলা নিদ্রাভঙ্গের পর সর্বপ্রথম যে জিনিসের প্রতি তোমার দৃষ্টি যাবে তা খেয়ে ফেলবে। এরপর যে জিনিসের দিকে তাকাবে তা লুকিয়ে নিবে, প্রকাশ করবে না। তারপর যা দেখবে তাকে আশ্রয় দিবে। অতঃপর যে জিনিস দেখবে তাকে নিরাশ করবে না। এরপর যা দেখবে তা থেকে পালাবে।
ভোরবেলা সর্বাগ্রে নবীর দৃষ্টি পড়ল এক পাহাড়ের ওপর। পাহাড়টি দেখার পর তিনি চিন্তায় তলিয়ে গেলেন। ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। আল্লাহর পক্ষ হতে নিদের্শ ছিল তা খাওয়ার। কিভাবে পাহাড় খাবো?! আল্লাহর হুকুম শিরোধার্য বিধায় তিনি পাহাড় ভক্ষণ করতে অগ্রসর হলেন। খাওয়ার সংকল্প করার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়টি ছোটো হয়ে গেল। এমনকি তা সুস্বাদু একটি খাদ্যে রূপান্তরি হল। এক লোকমায় তা খেয়ে ফেললেন। নিমিষেই খেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।
এরপর তাঁর কাছে স্বর্ণের একটি পাত্র আসল। যেহেতু আল্লাহর নির্দেশ ছিল দ্বিতীয় চিনিসটি লুকিয়ে ফেলার। তাই তিনি তা মাটির নিচে পুঁতে রাখলেন। অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা হলেন। অল্পক্ষণ চলার পর পেছনে তাকিয়ে দেখেন স্বর্ণের পাত্রটি মাটির ওপর পড়া আছে। তিনি আবার তা মাটিতে পুঁতে রাখলেন। কিন্তু পরক্ষণেই সেটিকে মাটির ওপর উঠানো দেখতে পেলেন। দুতিনবার পুঁতার পরও স্বর্ণের পাত্রটি মাটির ওপর উঠে যায়। তাই তিনি সেটিকে রেখে নামনে অগ্রসর হলেন।
সামনে গিয়ে দেখেন একটি চড়–ই পাখি হাঁপাচ্ছে। পাখিটি খাওয়ার জন্য একটি বাজপাখি দৌড়ে আসছে। আল্লাহর নির্দেশ ছিল তৃতীয় জিনিসটি আশ্রয়দানের। তাই চড়–ইকে আশ্রয় দিলেন। বাজপাখির হাত থেকে রক্ষা করলেন। বাজপাখিটি চড়–ই থেকে নিরাশ হয়ে বলল, হে নবী! আমার হাত থেকে চড়–ই পাখিকে ছিনিয়ে নিলেন। এবার আমার ক্ষুধা নিবারণের কোনো ব্যবস্থা করুন। নবীর খেয়াল এলো, আল্লাহ তাআলা চতুর্থ জিনিসকে নিরাশ না করার আদেশ করেছেন। ফলে তিনি নিজের উরু হতে একখ- গোশত কেটে বাজপাখিকে খেতে দিলেন। এরপর তার সামনে একটি মৃতদেহ পড়ল।
পঞ্চম জিনিস হতে পালানোর নির্দেশ থাকায় তিনি তা দেখে পালালেন। সন্ধ্যা হলে ওই নবী আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে আরজ করল, হে আল্লাহ!
আমি আপনার নির্দেশ পালন করেছি। এখন এর মাঝে কী রহস্য রয়েছে তা দয়া করে আমাকে বলুন। আল্লাহর নবী যখন ঘুমিয়ে পড়লেন তখন আল্লাহর পক্ষ হতে ইরশাদ হল :
হে নবী! প্রথমে আপনি যে জিনিস খেয়েছেন তা হল ক্রোধ বা গোস্বা। পাহাড় যেখাকে প্রথমে বিরাট ছিল; কিন্তু খেয়ে ফেলার সংকল্প করার সঙ্গে সঙ্গে তা অতি ক্ষুদ্র হয়ে গিয়ে সুস্বাদু খাবারে পরিণত হল। ক্রোধের উদাহরণও তাই। গোস্বা আসার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হতে তীব্রতর হতে থাকে, কিšুÍ মানুষ তা হজম করতে পারলে খুব উপকারী হয়ে যায়। এরূপ লোককে ধৈর্যশীল বলা হয়; আখিরাতে সে এর সুফল ভোগ করবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে তুমি যে পাত্রটি বারংবার পুঁতে রাখার পরও তা বেরিয়ে আসছিল, তা হল ইখলাসের সাথে নেক আমল। মানুষ ইখলাসের সাথে সহীহ নিয়তে যে আমল করবে তাতে লোক দেখানোর কোনো মানসিকতা থাকবে না। সে আমল যত গোপনেই করা হোক না কেন তা এমনিতেই প্রকাশ পেয়ে যায়।
তৃতীয় জিনিসের উদাহরণ হল আমানতের। কেউ আমানত রাখলে কোনো প্রকার খিয়ানত না করা উচিত।
চতুর্থত আপনি নিজ উরুর গোশত কেটে বাজপাখিটিকে দিয়েছেন। তার প্রয়োজন মিটিয়েছেন। এভাবে কোনো মানুষ যদি কোনো প্রয়োজনে আপনার নিকট আসে; তখন আপনার জন্য অপরিহার্য হল তার প্রয়োজন পূর্ণ করা। তাকে নিরাশ না করা। কারণ বাজপাখি হতে মানুষের মর্যাদা অনেক গুণ ঊর্ধ্বে।
পঞ্চম জিনিস, যেই মৃত দেহ হতে আপনাকে পালানোর নির্দেশ দিয়েছি তা হল গীবতের উদাহরণ। মৃতদেহ হতে যেভাবে পালিয়েছেন সেভাবে গীবত হতেও ঘৃণাভরে পালানো উচিত। (ফকীহ আবুল লাইছ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন