Mohiuddin Quasemi
গীবত শোনার পর প্রথম করণীয় হল, যার দোষচর্চা করা হয়েছে তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ না করা। তার যেসব দোষত্রুটি, অন্যায়-অপরাধ ও মন্দ বিষয় আলোচিত হয়েছে সেসব বিশ্বাস না করা। কারণ, গীবত করা কবিরা গোনাহ, ভয়ানক অপরাধ। এত বড় অপরাধী কখনো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
দ্বিতীয়ত কোথাও কারো গীবত শুরু হলে নিজে গীবতে অংশগ্রহণ করবে না। মনে মনে ধারণা করবে, গীবতকারী আল্লাহর অভিশপ্ত। তার কথায় বিশ্বাস করলে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন এবং পরকালে আমাকে শাস্তি দিবেন।
একবার হযরত ঈসা আ. নিজের অনসারীদের বললেন, ঘুমের অবস্থায় কারো সতর খুলে গেলে তোমরা কী করবে? তা ঢেকে দিবে নাকি আরও খুলে দিবে? সকলে সমস্বরে বলল, আমরা তা ঢেকে দেবো। ঈসা আ. বললেন, তাহলে তোমাদের সামনে কারো দোষচর্চা করা হলে কেন দোষ ঢেকে দেওয়ার পরিবর্তে নিজেরাও দোষচর্চায় লিপ্ত হয়ে যাও? তোমাদের সামনে কারো দোষচর্চা শুরু হলে কর্তব্য হল ওই ব্যক্তির প্রশংসা আরম্ভ করা। অন্যথায় গীবত শোনার দায়ে সবাইকে আল্লাহর দরবারে পাকড়াও করা হবে। (ফকীহ আবুল লাইছ)
তৃতীয়ত কোনো মুসলমান ভাইয়ের সামনে কারো গীবত শুরু হলে সেও তার প্রশংসা শুরু করবে। তার ভালো দিকগুলো তুলে ধরবে। তার পক্ষে কথা বলবে। যেন একজন মুসলমানের অপমান না হয়। নয়তো কেয়ামতের দিন গীবত শ্রবণকারীও অভিযুক্ত হবে। বিচারের সম্মুখীন হওয়া লাগবে। তখন অুতপ্ত ও লজ্জিত হবে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক রহ. এর দরবারে একবার কেউ ইমাম আবু হানিফা রহ. এর গীবত শুরু করল। ইবনুল মোবারক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি ইমাম আবু হানিফার গীবত করছ; অথচ তাঁর শান হল একাধারে চল্লিশ বছর পর্যন্ত তিনি এশার অজু দিয়ে ফজরের নামায পড়েছেন। (দুররে মুখতার)
হযরত আবু দারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
مَنْ ذَبَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللَّهُ عَنْهُ عَذَابَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَتَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ.
অর্থ : যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের ইজ্জত-আব্রু বিনষ্ট হওয়া থেকে বারণ করতে পারবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। এরপর রাসুল সা. আয়াত তেলাওয়াত করলেন : ‘মুমিনদের সহযোগিতা করা আমার কর্তব্য।’ (তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদিস : ৪৩১৩; হাদিসটি আংশিক শাব্দিক বেশকমে মুজামে কাবীর, মুসনাদে আহমদসহ আরও বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে।)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন