মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

আলীগড় ভার্সিটিতে গিয়ে যা দেখে কেঁদেছিলেন, হাকীমুল ইসলাম মাওলানা ক্বারী মোহাম্মদ তাইয়্যব রহ.



একবার আলীগড় মুসলিম ইউনির্ভাসিটিতে একসেমিনারে আমন্ত্রিত হলেন দারুল উলুম দেওবন্দ এর সুদীর্ঘ ৫০বছরের সুনামধন্য মুহতামিম, ইন্ডিয়ান সেন্টাল ল বোর্ডের চেয়ারম্যান, হাকীমুল ইসলাম মাওলানা ক্বারী তাইয়্যব রহঃ। এনিয়ে আলীগড়ে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল।

বামপন্থী ছাত্রদের আদিপত্য তখন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি ছিল। তারা দেওবন্দের একজন মৌলবাদী আলেমের আলীগড়ে আমন্ত্রিত হওয়ার বিরোদ্ধে তুমুল ছাত্র আন্দোলন শুরু করল। ধর্মঘট, ক্লাস বর্জন, মিছিল সমাবেশ, ভিসির কার্যালয় ঘেরাও সবই হল। এমনকী ক্বারী তাইয়্যব কে সেখানে গেলে হত্যা করার ঘোষনা দিল বামপন্থি মুসলিম ছাত্র নেতারা। প্রশাসন বাধ্য হয়েই সেই সেমিনার ও তার প্রোগ্রামকে বাতিল করল।
এভাবে বাম রাজনীতির আদিপত্যের ভিতর দিয়েই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেটে গেল ১০ বছর।
এবার আলীগড়ের ছাত্র-শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে দেওবন্দে গিয়ে সাক্ষাত করলো। ক্বারী তাইয়্যব রহ কে তারা আলীগড়ে দাওয়াত দিল। তিনি তাদেরকে দশ বছর পূর্বের সেই নেক্কারজনক ঘটনার কথা স্মরন করিয়ে দিলেন। তারা জানালেন হয়রত আলীগড় ভার্সিটির সেই পরিবেশ আর নেই। এমন কিছু হবে না। তিনি দাওয়াত কবুল করলেন।
নির্ধারিত দিন তিনি সফর সঙ্গিদের নিয়ে আলীগড়ের দিকে রওয়ানা হলেন। আলীগড় পৌছা মাত্রই তিনি দেখলেন ভার্সিটির মূল ফটকের বাহিরে ত্বালেবে এলেমদের দীর্ঘ লাইন রাস্তার দু পাশে। যাদের পড়নে লম্বা সফেদ পান্জাবী, বুক পকেটে মেসওয়াক, হাতে তাসবিহ, আর মাথায় সাদা পাগড়ি। ক্বারী তাইয়্যব বিস্মিত হলেন। সাথীদের বললেন, তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ। তোমরা না বললে আজ আলীগড়ে আমার কথা বলার কথা।
সফর সঙ্গিরা বললেন, এই তো আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। এরা আলীগড়ের ছাত্র যারা আপনাকে ইস্তেকবাল করতে এসেছে। অবাক বিস্ময়ে হাকীমুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করলেন, মাত্র দশ বছরে এদের মধ্যে এই বিপ্লবিক পরিবর্তন কিভাবে এলো, যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল আজ তারা স্বাগত - সম্ভাষণ করছে!। সাথীরা জবাব দিল এটা দিল্লীর হয়রতজীর মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের দাওয়াতের মেহনতের ফসল।
তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে ছাত্র শিক্ষকদের জোড়ে গেলেন। গিয়ে বললেন আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি দেওবন্দের ছাত্রদের সামনে বসে আছি। তাদের কারগুজারী নিলেন। এক শিক্ষক দাড়িয়ে কেঁদে দিয়ে বললেন, আমি সেই লোক যিনি দশ বছর আগে আপনার বিরোদ্ধে পুরো ক্যম্পাসকে ক্ষেপিয়ে তুলে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, আজ তাবলীগের মেহনতে আমি আপনার গোলাম হতে প্রস্তুত।
ক্বারী তাইয়্যব নসিহত করতে গিয়ে আবেগে অনেক্ষন কাঁদলেন।বয়ানে বললেন, এই কাজ ছেড়ে দেয়ার ফলেই আজ উম্মত দ্বীন ভুলে গেছে। আর ছাত্রদের বললেন, জামানার নতুন নতুন ফেৎনা থেকে বাচার জন্য তোমরা তাবলীগের মেহনতকে আকড়ে থাকবে।"
বয়ান শেষ করে সোজা নিজামুদ্দীনের মার্কাজে চলে এলেন, এর পর থেকে আজীবন তাবলীগের কাজে সময় দিয়েছেন। মেওয়াতের যে কোন জোড় ও ইজতেমাতে শরীক হতেন। দেওবন্দের ছাত্রতের নিয়ে লম্বা সফর করতেন। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাবলীগের এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছেন, "কিয়া তাবলীগী মেহনত জরুরী হ্যায়।
আজো দেশে দেশে দুনিয়াজুড়ে আলীগড়ের সে সময়ের মতো তাবলীগের মহনত চলছে উলামায়ে দেওবন্দের নিগরানীতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই মোবারক মেহনতের বিশ্বব্যাপী উত্তরোত্তর বৃদ্ধি দেখে কেউ কেউ ইলিয়াছ রহ সময়ের তাবলীগ থেকে বের হয়ে 'নতুন তাবলীগ 'বলে আওয়াজ তুলার হীন চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন উম্মতের এই মকবুল জামাতকে ইহুদী নাসারার এজেন্ট হিসাবে প্ররোক্ষবাবে তুলে ধরার। এসকল ফেৎনা থেকে উম্মতকে সজাগ থাকা ও আমাদের আকাবির আসলাফের আমানত নববী এই মেহনতকে শক্তভাবে আকড়ে থাকা আজ খুব বেশি প্রয়োজন।
হাকীমুল ইসলাম ক্বরী তাইয়্যাব রহ. তার গ্রন্থের শুরুতে লিখেছেন, সমাজ বিপ্লবের মূল চাবিকাটিই হল পরিকল্পিত দাওয়াতেরর মেহনত। প্রথম যামানার দাওয়াতী মেহনতই শেষ জামানার উম্মতের সংশোধনের একমাত্র পদ্ধতি।
তিনি আরো লিখেছেন,এছলাহে নফসের চারটি অংশ এবং চারটি প্রদ্ধতি রয়েছে। 
১.সৎ লোকের সান্নিধ্যে 
২. জিকির ও ফিকির 
৩.আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব বন্ধন 
৪.আত্ম সমালোচনা। 
আর এই চারটি জিনিসের সমষ্টির নামই হল তাবলীগ জামাত। সাধারন ও আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্ত মানুষেন জন্য এর চেয়ে উত্তম কোন পথ হতে পারে না।

হে আল্লাহ, আমাদের নব্য সকল ফেৎনা থেকে হেফাজত কর। দ্বীনের হক মেহনতকে আকড়ে থাকার তাওফিক দান কর। আমিন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন