বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

কেন পশ্চিমাদের আর ইউরোপীয়ানদের রক্তই রক্ত আর মুসলিমদের রক্ত কি ড্রেনের পানি?

আজকে প্যারিসে যা ঘটেছে, তা ফিলিস্তিন, সিরিয়া, কাশ্মির, আফঘানিস্তা্ন, ইরাকে প্রতিদিন ঘটে। গত ৪ বছরে সিরিয়াতে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ এর উপর মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে । কিন্তু আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এসব অত্যাচারিতদের পক্ষে গলা উচু করতে তো দেখি ই না, বরং দেখি যে প্রতিবছর ইসরায়েলের সাথে তার আশেপাশের দেশগুলোর বানিজ্য ৩.১ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেখি যে বাশার আল আসাদের হত্যাযজ্ঞে কিভাবে আমেরিকা নীরব ভূমিকা পালন করছে এবং রাশিয়া সক্রিয় ভাবে সাহায্য করছে। আমরা দেখিনা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এ্যাপস চালু করতে যে আপনি চাইলে ফিলিস্তিনিদের, কিংবা সিরিয়ান মুসলিমদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আপনার প্রোফাইল পিক এর কালার পরিবর্তন করতে পারেন।
গতকাল লেবাননের রাজধানীতে আইসিসের ডাবল এ্যাটাকে অন্তত ৪৩ জন লেবানীজ নিহত হয়েছে, এমন কতজন আছেন যে, যারা এ বিষয়টি জানেন কিংবা এমন কত জন আছেন যারা ঘটনা ঘটার ১০ মিনিটের মধ্যেই নিন্দা জ্ঞ্যাপন করে ফেলেছেন? কেন শুধুমাত্র পশ্চিমাদের জীবন ই কি আন্তর্জাতিক মানের? যে তার নিন্দা আন্তর্জাতিকভাবেই হতে হবে?
9/11 এর পর গত ১০ বছরে ‪#‎প্রতিদিন_গড়ে_৪০০_মুসলিম‬ নৃশংস ভাবে নিহত হয়েছে এই আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ানদের হাতে অথচ পৃথিবী সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে 13/11 এর পর!!!!!!!
এই ১০ বছরে নিহত হওয়া ৪০,০০০০০ মুসলিমের রক্ত এতই ফিকে যে তা ফেসবুকের প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করতে পারেনি, উন্মত্ত করতে পারেনি বিশ্ব মিডিয়া ও নেতৃবৃন্দকে
যখন ইরাকে একটি জানাজার নামাজ এর দিকে ছুটে যাওয়া মিসাইলের আঘাতে এত লোক মারা যায় যে তাদের জানাজা পড়ার আর কোন লোক অবশিষ্ট থাকেনা কই তখন তো এটা পৃথিবীকে অবাক করেনা!! এ কেমন পার্শিয়াল ইমোশন আমাদের !!!
আমেরিকা মুসলিমদের উপর দিনে রাতে ড্রোন হামলা চালায়, মিডিয়ার কাউকে দেখা যায় না এ বিষয়টিকে কনডেম করতে। তারা ১০ বছর ইরাকে বোম্বিং করে ৫ লাখ ইরাকী শিশু হত্যা করেছে, ১২ লাখ বোনকে করেছে বিধবা , তারা ইরাককে বোম্বিং করতে করতে প্রস্তর যুগে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে কিন্তু কাউকে দেখা যায়নি এ বিষয়ে টু শব্দটিও করতে।
মুসলিমদের জীবন এতই তুচ্ছ যে যখন লাখে লাখে মুসলিম নর্থ আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয় তখন এটাকে ভুল হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হয় এবং ভুল স্বীকার করার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যদি ইউরোপ বা আমেরিকার একজন ব্যাক্তিও কোন মুসলিমের হাতে নিহত হয় তবে তারা চায় যে পুরো দেড়শ কোটি মুসলিম ই এর জন্য মাফ চাক, এবং তাদের জন্য এ ও যথেষ্ট নয়।
তারা চায় যে আমরা এ্যাপোলেজেটিক মুসলিম হই, আমরা ক্ষমা চাই এমন কিছু বিষয়ে যা আমরা করিনাই, যেমন আমরা দেখতে পেয়েছি আজ বাংলাদেশের এক তথাকথিত বৃহৎ ইসলামী দল অফিশিয়ালি প্যারিস এ্যাটাকের নিন্দা জ্ঞ্যাপন করেছে কিন্তু তাদেরকে কখনো অফিশিয়ালি ইরাক কিংবা সিরিয়া কিংবা কাশ্মির এ্যাটাকের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞ্যাপন করতে দেখা যায় নি। অথচ আমরা আজ পর্যন্ত দেখিনাই আমেরিকা কর্তৃক সংঘঠিত হিরোসিমা নাগাসাকিতে সংঘঠিত, স্পষ্ট প্রমানিত অপরাধের জন্য সে আজ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়েছে।
এখন আবার মানুষেরা ফ্রান্সের মসজিদ গুলো ধ্বংস করার ডাক দিচ্ছে।
আমাদেরকে বুঝতে হবে যে এই সরকার এবং মিডিয়াগুলো আমাদের পক্ষে নয়। প্যারিসের এই হামলাকে কোন নিরপেক্ষ দৃষ্টি থেকে তারা সম্প্রচার করবে না, ন্যায়বিচার করা হবে না আমাদের প্রতি, এবং এই ঘটনা থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব ফুয়েল গ্রহন করা হবে।
আমার কাছে মনে হয় তারা এ ঘটনাকে ব্যবহার করবে , কোয়ালিশন বাহিনীতে ফ্রান্সের সৈন্য যোগ করার ছুতা হিসেবে যাতে করে তারা সিরিয়ার সিন্সিয়ার মুসলিম দের হত্যা করতে পারে আইসিসকে ধ্বংস করার নামে, যাতে করে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রন পুরোপুরি বাশার আল কালবের হাতে তুলে দেয়া যায়।
আমরা জানি এবং এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা ইসলামে গ্রহনযোগ্য নয় সে কাফির হলেও, কিন্তু যখন মুসলিমদের উপর এ্যাটাক হলে আপনি অন্ধের মত আচরন করেন এ্যাস ইফ কিছুই ঘটে নাই , তখন কিছু মুসলিম যদি তাদের আক্রোশ থেকে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে এধরনের আক্রমন চালায় তখন আপনি একচোখা হয়ে তাদেরকেই শুধু একতরফাভাবে কনডেম করে যাবেন এটা আপনার কেমন বিচার?.
এই পৃথিবী সত্যিকার অর্থেই এমন জায়গায় পরিনত হয়েছে যেখানে, “ সত্যবাদীকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হয় এবং একজন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদি। এবং বিশ্বাসভাজনকে বলা হয় বিশ্বাসঘাতক ও বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাসভাজন।” এ কেমন অসুস্থ এবং পশ্চাৎপদ সমাজে আমরা বাস করছি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন