বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

মাসলামা বিন আব্দুল মালেক

 মাসলামা বিন আব্দুল মালেক নামে একজন বাদশাহ ছিলেন। একবার তিনি কোথাও সৈন্য পরিচালনা করেন। শত্রুরা এক দূর্গে আশ্রয় নেয়। মুসলমানরা দূর্গ অবরোধ করে রাখে। কয়েকদিন পর্যন্ত অবরোধ থাকে। তারা এমন অন্তরায় সৃষ্টি করে রাখে যে, বিজয়ের কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এক ব্যক্তি দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে মহানবী সা.-এর শানে বেআদবীমূলক কথা বলতো। 
:
মুসলমানদের রক্তে আগুন জ্বলে ওঠে। তাই মুসলমানরা দ্রুত বিজয়ের মানসে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু দূর্গের নিকটে যেতেই শত্রুরা তীরের বৃষ্টি বইয়ে মুসলমানদের পিছনে হটতে বাধ্য করে। 
:
আল্লাহর কী অপার কারিশমা! একদিন এক মুসলিম যুবক তীরবৃষ্টি উপেক্ষা করে দেয়ালের দিকে এগুতে শুরু করে। তীরের পরোয়া না করে সামনেই চলতে থাকে সে। একটার পর একটা তীর তাঁর শরীরে বিঁধছে সেদিকে তাঁর কোনো খেয়াল নেই। তাঁর রক্তে আজ হুব্বে নবীর নেশা জেগেছে। কোনো রকমে মাথাটাকে সে তীরবৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে পৌঁছে যায় দূর্গের গোড়ায়। এখন আর তীর তার শরীর স্পর্শ করছে না। সেখানে বসে সে দূর্গের দেয়াল ভাঙতে শুরু করে। 
:
তার দেখাদেখি আরো কয়েকজন যুবক সেখানে পৌঁছে যায়। তারা সকলে মিলে দেয়াল ছিদ্র করে ফেলে। এরপর কয়েকজন যুবক দূর্গে প্রবেশ করলে দূর্গ বিজিত হয়ে যায়।
:
যুবকের বীরত্ব দেখে পুরো সৈন্যবাহিনী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় যে, সে তীরের বৃষ্টিতে জীবনের পরওয়া করেনি। পরিশেষে তা মহাকৃতিত্বেরও কারণ হলো। সবাই জানতে চাচ্ছে, কে এই ব্যক্তি? বিজয়ের পর সবাই এক জায়গায় জড়ো হলো। সেনাপতি বললেন, যে দেয়াল ছিদ্র করেছে তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি, সে যেনো দাঁড়িয়ে যায়। আমি জানতে চাই সে কে? একথা শুনে যুবকটি চেহারা ঢেকে দাঁড়িয়ে গেলোবললো, আমীরুল মুমিনীন ! আমিও আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি, আপনি আমাকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছেন, কিন্তু কখনো আমার নাম জিজ্ঞাসা করবেন না।
:
সেনাপতি তাঁর এ কাজে খুব খুশি হলেন। দোয়া করলেন, হে আল্লাহ ! কিয়ামতের দিন এই মুজাহিদের সাথে যেনো আমার হাশর হয়।
:
১. বন্ধুরা ! আজকে এমন মুখলিস একজন মর্দে মুজাহিদ দরকার। যার মনে থাকবে ইশকে নববীর প্রবাহিত ঝর্ণা। রক্তে থাকবে শাহাদাতের সুতীব্র নেশা। যে নিজেকে প্রকাশ করার মানষিকতায় নয় বরং জান্নাতের অকৃত্তিম লালসায় লড়বে। গোস্তাখে রাসূলদের মারবে ও মরবে। আছে কি এমন কেউ? 
:
২. আমদের আজ খুব দূর্দিন যাচ্ছে। যা-ই করি বাহবা পাবার আশায়। মানুষকে খুশি করাই আমাদের পরম ব্রত হয়ে গেছে আজ। কী লাভ হবে এ লোক দেখানো আমল দিয়ে? দুনিয়ার নাম কামানোই কি আমাদের সব? আখেরাতের বিশ্বাস কি উঠেই গেলো আমাদের মন থেকে?
:
কেমন বে রিয়া ছিলো তাদের আমল!! তাই জাগতিক কোনো মোহ তাদের দমাতে পারতো না। অথচ আমরা!! ঠুনকো বাহবা পাবার আশায় সব বিকিয়ে দেই। আমাদের নামায, রোজা, তাহাজ্জুদ, হজ্জ সব আজ লোক দেখানো। সামান্য পদলোভে আমরা লালায়িত। লোক আমাকে বড়ো বলুক। মানুষ আমাকে জানুক। বাহ!! সব যদি দুনিয়াতেই পেয়ে যাই তাহলে আখেরাতের জন্য কী রইলো তাহলে? কিছু আমল থাকনা শুধু আখেরাতের জন্য! 
:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বে-রিয়া বা-ইখলাস আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন