বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

হজ্ব কার উপর কখন ফরজ হজ্জের আহকাম আরকানসমূহ


আমীনুল ইসলাম আমীন

আল্লাহর সন্তুষ্টিরর জন্য মানুষের উপর বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্ব ফরজ করা হইয়াছে ঐ সব লোকের উপর, যাহারা যাতায়াতের সামর্থ রাখে। (আল ইমরান) এই আয়াত দ্বারা হজ্ব ফরজ সাব্যস্ত হইয়াছে। কেউ যদি হজ্বকে অস্বীকার করে সে কাফের হয়ে যাবে, আর হজ্ব ফরজ হয়েছে যদি না করে কঠিন গুনাহগার হবে। রহমতে আলম সা. এরশাদ করেন ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি তার মধ্যে অন্যতম হল হজ্ব আদায় করা। (মুসলিম) রাসূল সা. বলেন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর হজ্ব ফরজ করেছেন, সুতরাং তোমরা হজ্ব কর। (মুসলিম) হজ্ব কাকে বলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মক্কা মোয়াজ্জমায় বিশেষ স্থান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ কার্যপদ্ধতি সহকারে পরিদর্শন করাকে হজ্ব বলে। নবম হিজরিতে হজ্ব ফরজ হয়েছে। 

হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য শর্তসমূহ:- (১) মুসলমান হওয়া (২) আযাদ হওয়া (৩) বালেগ হওয়া (৪) আক্বেল হওয়া (৫) সুস্থ হওয়া (৬) পরিবারের খরচ ব্যতিত হজ্বের কাজ সম্পাদন করার মত সম্পত্তি থাকা (৭) হজ্বের রাস্তা নিরাপদ হওয়া (৮) মহিলার জন্য মুহরিম সাথে থাকা।★
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
হজ্ব তিন প্রকার :- (১) ইফরাদ " হজের মাসে কেবলমাত্র হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করাকে হজ্জে ইফরাদ বলে। এরুপ হাজীকে বলা হয় মুফরিদ। (২) তামাত্তু :- হজের মাসে প্রথমে উমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে উমরাহ শেষ করে পুনরায় ৮ ই যিলহজ্ব মক্কা থেকে হজের ইহরাম বেঁধে হজ্ব করাকে হজ্জে তামাত্তু বলে। এরুপ হাজীকে বলা হয় মুতামাত্তি। (৩) ক্বিরান:- একই ইহরামে হজ্ব ও উমরাহ এক সাথে মিলিয়ে করাকে বলা হয় হজ্বে কিরান। এরুপ হাজীকে বলা হয় ক্বারিন। এই তিন প্রকার হজের মধ্যে ক্বিরান হজই উত্তম। রাসূল সা. এর জীবনের শেষ হজ ছিল হজ্বে ক্বিরান। (মিশকাত) 
হজ্বের ফরজ ৩ টি :- (১) এহরাম বাঁধা। (২) ৯ ই যিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, (৩) তাওয়াফে যিয়ারত করা। 
হজ্বের ওয়াজিব ৬ ছয়টি :- (১) মুজদালাফার ময়দানে অবস্থান, (২) ছাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো, (৩) শয়তানকে কংকর মারা, (৪) বিদেশীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা, (৫) মাথা মুড়ানো অথবা চুল ছাঁটা স্ত্রীলোকের চুল হইতে কিছু কর্তন করা (৬) কাফফারা বা হজ্বের কার্যসমূহ ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য দম বা একটি কোরবানী করা। উপরোল্লিখিত ফরয ও ওয়াজিব কার্যাবলী ব্যতীত অন্যান্য সকল আমল সুন্নত ও মুস্তাহাব।
হজ্বে মাবরুর এর ফাজীলত ও হজ্বের উৎসাহ, হে মাওলা কবুল কর আমায়। পুরাটা পড়লে উপকৃত হবেন। ২য় পর্ব
-----------------------------------------------------------------------
★রহমতে আলম সা. এরশাদ করেন যেই ব্যক্তি শুধু আল্লাহর রেজামন্দীর জন্য হজ্ব করে, উহাতে কোন ফাহেশা কথা কাজ বা অবাধ্যাচরণমূলক কাজ করে না, সে হজ্ব হইতে এমনভাবে নিষ্পাপ প্রত্যাবর্তন করে যেমন সে আজ মায়ের গর্ভ হইতে জন্ম নিল। (সু্বহানাল্লাহ) ওলামাগণ লিখিয়াছেন, এই সব হাদীসের অর্থ হইল, ছগীরা গুনাহ সমূহ মাফ হইয়া যায়। অবশ্য কোন কোন আলেম এই সিদ্বান্তে পৌঁছিয়াছেন যে, হজ্বের দ্বারা ছগীরা কবীরা উভয় প্রকার গুনাহ মাফ হইয়া যায় বান্দাহর হক্ব ব্যতীত।®রহমতে আলম সা. এরশাদ করেন নেকীওয়ালা হজ্বের বদলা (কবুল হজ্বের বদলা) জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। ,সুবহানাল্লাহ, (বোখারী মুসলিম)
®হুজুর সা. এরশাদ করেন হাজী যখন লাব্বায়িক বলিতে থাকে তখন তাহার ডানে বামের যাবতীয় পাথর, বৃক্ষ এবং ধূলাবালি লাব্বায়িক বলিতে থাকে। এমনকি জমিনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ইহা বলিতে থাকে। "সুবহানাল্লাহ" (মিশকাত)
®রহমতে আলম সা. বলেন, হজ্বের মধ্যে খরচ করা জেহাদের মধ্যে খরচ করার সমতূল্য। অর্থাৎ এক টাকায় সাত শত টাকার ছওয়াব। (তারগীব)
®হজুর সা. এরশাদ করেন কেহ হজ্ব করিতে এরাদা করিলে তাড়াতাড়ি আদায় করা উচিৎ। (আবু দাউদ) ®হজুর সা. আরো বলেন যে ব্যক্তি হজ্বে রওয়ানা হইয়া পথিমধ্যে মারা যায়, কেয়ামত পর্যন্ত সে হজ্বের ছওয়াব পাইতে থাকিবে। সু্বহানাল্লাহ। (তারগীব)★
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
রহমতে আলম সা. এরশাদ করেন, হজ্বের এরাদা করিয়া ঘর হইতে বাহির হইলে ছওয়ারীর প্রতি কদম উঠানামায় তোমাদের আমলনামায় এক একটি নেকী লেখা যাইবে। এবং একটি করিয়া গোনাহ মাফ হইয়া যাইবে। তওয়াফের পরের দুই রাকাত নামায়ে একজন আরবী গোলাম আজাদের ছওয়াব পাওয়া যাইবে। ছাফা মারওয়া দৌড়াইলে সত্তরটি গোলাম আযাদ করার ছওয়াব পাওয়া যায়। আরাফাতের ময়দানে মানুষ যখন একত্রিত হয় তখন আল্লাহ পাক প্রথম আসমানে আসিয়া (আল্লাহর রহমত) ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করিয়া বলেন যে, আমার বান্দারা দূর - দূরান্ত হইতে এলোমেলো চুল নিয়া আসিয়াছে, তাহারা আমার রহমতের বিখারী। হে বান্দাগণ তোমাদের গোনাহ যদি জমিনের ধূলিকণা বরাবরও হয় অথবা সমুদ্রের ফেনা বরাবরও হয়, তবুও উহা আমি মাফ করিয়া দিলাম। এবং কি যাহাদের জন্য তোমরা সুপারিশ করিবে তাহাদেরকেও ক্ষমা করিয়া দিলাম। প্রিয় বান্দারা আমার ক্ষমাপ্রাপ্ত হইয়া তোমরা নিজ নিজ বাড়ী চলিয়া যাও। শয়তানকে পাথর মারার ছওয়াব এই যে, প্রত্যেক পাথর টুকরায় তাহাকে ধ্বংস করার উপযোগী এক একটা পাপ মাফ হইয়া যায়। আর কোরবানীর বদলে আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্য পুঁজি জমা রহিল। এহরাম খোলার সময় মাথার চুল কাটার মধ্যে প্রত্যেক চুলের বদলে একটি করিয়া নেকী, একটা করিয়া গোনাহ মাফ। সর্বশেষ যখন জিয়ারত করা হয় তখন বান্দার আমলনামায় কোন গোনাহই থাকে না। বরং একজন ফেরেশতা তাহার কাঁধে হাত বুলাইয়া বলিতে থাকে তুমি এখন হইতে নতুন করিয়া আমল করিতে থাক, তোমার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হইয়াছে। (সুবহানাল্লাহ) (তারগীব)
===================================
হুজুর সা. এরশাদ করেন, কা'বা শরীফের উপর দৈনিক আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে একশত বিশটা রহমত নাজেল হয়, তন্মধ্যে ষাট রহমত তওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশ রহমত নামাজীদের জন্য এবং বিশ রহমত দর্শকদের জন্য। সুবহানাল্লাহ (বায়হাকী)
আয় রাব্বে কা'বা জীবনে একটাই চাওয়া কাপনের কাপড় পরার আগে এহরামের কাপড় পরার তাওফীক্ব দিয়ে দেন আমীন।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন