মুহিউদ্দীন কাসেমী (হাফি:)
কোনো কাজ শুরু করতে, ভ্রমণে বের হতে, বিবাহ বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে শুভ-অশুভ দেখার প্রচলনও আমাদের দেশে রয়েছে। প্রাচীনকালে পাখির মাধ্যমে এই শুভ-অশুভ নির্ধারণ হত। পাখি ডান দিকে উড়ে গেলে শুভ, অন্যথায় অশুভ ধরে নেওয়া হত। পৃথিবীর প্রাচীনকাল থেকেই এ কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাসটির প্রচলন পাওয়া যায়। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগেও এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে শুভ-অশুভ নির্ধারণের এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভুয়া ও ধোঁকাবাজি। এর মাধ্যমে শিরকের পথ সুগম হয়। কেননা এটি আল্লাহর প্রতি মানুষের আস্থা ও তাওয়াক্কুলকে বিঘিœত করে। আসলে মঙ্গল-অমঙ্গল, শুভ-অশুভ মহান আল্লাহর বিষয়। কোনো সৃষ্টের মাধ্যমে তা নির্ধারণ মূলত আল্লাহরই কর্তৃত্বে অন্যকে অংশীদার বানানোর নামান্তর। কাকের ডাক, যাত্রাপথে ভাঙা বা ছেড়া কোনো কিছু দেখা, কলা বা ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া, বন্ধ্যার মুখ দর্শন, খালি কলস দেখা, প্রভৃতিকে অশুভ মনে করার যে প্রচলন আমাদের সমাজে রয়েছে তা কুসংস্কার এবং শিরকের রাস্তা খুলে দেয়। এ বিষয়ে হাদিসের কিতাবে স্বতন্ত্র অধ্যায় স্থাপন করে হাদিস পেশ করা হয়েছে। একটি হাদিস :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ ্র الطِّيَرَةُ شِرْكٌ الطِّيَرَةُ شِرْكٌ গ্ধ. ثَلاَثًا
অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাখি দিয়ে শুভ-অশুভ নির্ধারণ করা শিরক। (সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং- ৩৯১২)
এ বিষয়ে আরও হাদিস দেখা যেতে পারে :
আবু দাউদ, অধ্যায় : باب فِى الطِّيَرَةِ
সুনানে ইবনে মাজাহ : باب من كان يعجه الفأل ويكره الطيرة
সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী : باب الْعِيَافَةِ وَالطِّيَرَةِ وَالطَّرْقِ
সহিহ ইবনে হিব্বান : ذكر التغليظ على من تطير في أسبابه متعريا عن التوكل فيها
তবে ভালো জিনিস দ্বারা ভালো লক্ষণ অনুভব করা দোষের কিছু না। যেমন কারো সুন্দর ও অর্থবোধক নাম দেখে ভালো ধারণা করা। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَيُعْجِبُنِى الْفَأْلُ الصَّالِحُ
অর্থ : ইসলামে ছোঁয়াছুয়ি এবং শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। তবে ভালো লক্ষণ আমার বেশ পছন্দ। (সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং- ৩৯১৭)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে :
وكان النبى يسأل عن اسم الخيل والأرض والإنسان فإن كان حسنًا سر بذلك واستبشر به وإن كان سيئًا ساء ذلك
অর্থ : রাসুল সা. ঘোড়া, এলাকা ও মানুষের নাম জিজ্ঞেস করতেন। সুন্দর ও ভালো নাম হলে খুশি হতেন। খারাপ ও মন্দ নাম হলে খারাপ অনুভব করতেন।
শুভ-অশুভ নির্ধারণ এবং ভালো লক্ষণের মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন :
قال الخطابى : الفرق بين الفأل والطيرة أن الفأل إنما هو من طريق حسن الظن بالله تعالى والطيرة وإنما هى من طريق الاتكال على شىء سواه .
(শরহে সহীহিল বুখারী লিবনিল বাত্তাল : খ. ৯, পৃ. ৪৩৫)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন