বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬

কুরআন হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহর তাওরাত-ইঞ্জিল হেফাজতের দায়িত্ব উম্মতের

Mohiuddin Kasemi

কুরআনে যে আদৌ পরিবর্তন সম্ভব নয়, এ প্রসঙ্গে বাদশা ‘মামুনুর রশিদ’-এর দরবারের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ইমাম কুরতুবি রহ. বর্ণনা করেন :
বাদশা মামুনের দরবারে মাঝে মাঝে জ্ঞানচর্চা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হত। এতে বিভিন্ন বিষয়ের পণ্ডিতগণ অংশগ্রহণ করতেন। জাতি-ধর্মের কোনো ভেদাভেদ সেখানে ছিল না। এমনই এক আলোচনাসভায় একজন ইহুদি পণ্ডিতও অংশগ্রহণ করল। পোশাক-পরিচ্ছদের দিক দিয়েও তাকে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মনে হল। এছাড়া তার বিজ্ঞজনসুলভ আলোচনাও সকলকে মুগ্ধ করে ফেলল। আলোচনা শেষে বাদশা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি কি ইহুদি? সে জওয়াবে বলল, হাঁ। অতঃপর পরীক্ষার উদ্দেশে বাদশা তাকে বললেন- আপনি মুসলমান হলে আপনার সাথে খুবই উত্তম ব্যবহার করা হবে। কিন্তু সে জওয়াব দিল- “আমি পৈতৃক ধর্ম বিসর্জন দিতে পারি না”। সেদিন আলোচনা এখানেই শেষ হয়। আর লোকটিও চলে যায়। 
এক বছর পর সে মুসলমান হয়ে পুনরায় বাদশার দরবারে এল এবং ইসলামি ফিক্হ সম্পর্কে সারগর্ভ বক্তব্য দিল। আলোচনা শেষে বাদশা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি কি সেই ব্যক্তি যে গত বছর এসেছিল? তিনি বললেন- হাঁ। পরে বাদশা তাকে বললেন, সেদিন তো আপনি ইসলাম গ্রহণে রাজি হন নি। এরপর এমন কী ঘটল যে, মুসলমান হয়ে গেলেন। এবার লোকটি পুরো ঘটনা বর্ণনা করল। 
সে বলল : এখান থেকে ফিরে আমি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করার মনস্থ করি। এদিকে আমি একজন কাতেব (হস্তলিপি বিশারদ); স্বহস্তে গ্রন্থাদি লিখে চড়া দামে বিক্রি করি। একবার পরীক্ষার উদ্দেশে তাওরাতের তিনটি কপি লিপিবদ্ধ করলাম। এগুলোতে অনেক জায়গায় নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তন করে লিখলাম। কপিগুলো নিয়ে যখন আমি ইহুদিদের উপাসনালয়ে উপস্থিত হলাম তখন ইহুদিরা আগ্রহভরে আমার নিকট থেকে সেগুলো খরিদ করে নিল। অতঃপর ইঞ্জিলেরও তিনটি কপি কম-বেশ করে লিখে খ্রিস্টানদের উপাসনালয়ে গেলাম। সেখানেও তারা খুব খাতির যতœ সহকারে সেগুলো আমার নিকট থেকে ক্রয় করে নিল। 
এরপর কুরআনের ক্ষেত্রেও তাই করলাম। অর্থাৎ এরও তিনটি কপি প্রস্তুত করলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে অনেক জায়গায় পরিবর্তন করে দিলাম। আর এগুলো বিক্রয়ের জন্য যখন বের হলাম, তখন যে-ই দেখল সে-ই প্রথমে আমার প্রস্তুতকৃত কপিগুলো নির্ভুল কি-না, তা যাচাই করে দেখল। ফলে যে পরিবর্তনগুলো আমি করেছিলাম সেগুলো প্রকাশ পেয়ে গেল। সুতরাং কেউ একটি কপিও খরিদ করল না। এতে আমি এ শিক্ষাই পেলাম যে, কুরআন হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং আল্লাহ পাক স্বয়ং এর সংরক্ষণ করেছেন। ফলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।” 
--
এ ঘটনার বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনে আকতাম বলেন, সৌভাগ্যবশত সে বছরই আমার হজ পালনের সুযোগ হয়। সেখানে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনা রহ. -এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে এ ঘটনাটি তাঁর কাছে বর্ণনা করি। অতঃপর তিনি বললেন : নিঃসন্দেহে এমনই হওয়ার কথা। কেননা, কুরআনে এ সত্যের সমর্থন রয়েছে। ইবনে আকতাম তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন- কুরআনের কোন্ আয়াতে এ আলোচনা রয়েছে? সুফিয়ান রহ. বললেন- কুরআনে কারিম যেখানে তাওরাত ও ইঞ্জিলের আলোচনা করেছে সেখানে বলেছে-
بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ 
‘ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে আল্লাহর কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিল সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ [সূরা মায়িদা : ৪৪]
এ কারণেই যখন তারা সংরক্ষণের এ গুরু দায়িত্ব পালন করেনি, তখন উক্ত গ্রন্থদ্বয় বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অন্যদিকে কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন : وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ‘আমিই এর সংরক্ষক’। (সূরা হিজর- ৯) এজন্য বিগত সাড়ে চৌদ্দশত বছরেও কুরআনের একটি অক্ষর, একটি যের বা যবরও পরিবর্তন হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন