বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য : মুফতী উবায়দুল হক খান

মানবিক উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, নৈতিকতার বিশেষণে ভূষিত ও উত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত মানুষকেই আদর্শ মানুষ বলা যায়। এই আদর্শ মানুষই সমাজের মূলভিত্তি। এদের দ্বারাই সমাজ সুন্দরভাবে চলে। মানবতা হয় উপকৃত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে সে নিবেদিত হয়। এসব গুণে কোন পুরুষ গুণান্বিত হলে তাকেই আদর্শ পুরুষ বলে। আদর্শ সন্তানের জন্য যেমন আদর্শ মায়ের দরকার, আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য যেমন আদর্শ নারী-পুরুষ দরকার; তেমনি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য আদর্শ পুরুষ দরকার। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকে পুরুষরাই। দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ যেমন পুরুষদেরকেই নবুওয়াত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তেমনি তিনি পুরুষদেরকেই কর্তৃত্বশীল করেছেন। তাই দেশ-জাতি, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পুরুষদেরকে আদর্শ হিসাবে গড়ে উঠতে হবে। তাহলে তাদের দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ-রাষ্ট্র সবাই কল্যাণ লাভ করবে, সবাই সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
তাহলে চলুন এবার আদর্শ পুরুষের কতিপয় বৈশিষ্ট্য জানা যাকÑ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়া দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না।
এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক।
দুই. সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে।
তিন. সে ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর তথায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত।
চার. এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালবাসে। আল্লাহর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁর জন্যই পৃথক হয়ে যায়।
পাঁচ.এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে।
ছয়. এমন ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহ্বান করে আর সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি।
সাত. সে ব্যক্তি, যে গোপনে দান করে। এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না তার ডান হাত কি দান করে। -বুখারী, মুসলিম
এই হাদীসে বর্ণিত সাত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ নেতা-শাসক ও মসজিদের সাথে অন্তর সম্পৃক্ত থাকা কেবল পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট। বাকী গুণগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এবার চলুন প্রত্যেকটি গুণের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জেনে নিইÑ
ন্যায়পরায়ণ শাসক : ন্যায়পরায়ণ শাসক বা নেতা দুনিয়ার জন্য নেয়ামত। কারণ তার মাধ্যমে মানুষ শান্তি ও কল্যাণ লাভ করে। সুতরাং সমাজ বা দেশের নেতৃত্ব দিতে কিংবা শাসন করতে সর্বদা সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আদর্শ পুরুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
যৌবনকালের ইবাদত : যৌবনকাল মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় ইবাদত করা অত্যন্ত কঠিন। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ কিয়ামতের মাঠে পাঁচটি জিনিস জিজ্ঞেস করার পূর্বে আদম সন্তানের পা নড়াচড়া করার সুযোগ পাবে না। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি তার যৌবনকাল কোন পথে অতিবাহিত করেছে। -তিরমিযী, মিশকাত
অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা : যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ যে ব্যক্তি ছালাত আদায়ের পর মসজিদে বসে আল্লাহ যিকর (স্মরণ) করে, সে ব্যক্তি সেই দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। -তিরমিযী, মিশকাত
আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালবাসা: এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালবাসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ এমন মানুষকে আল্লাহ ভালবাসেন, ফেরেশতাগণ ভালবাসেন এবং সকল মানুষ ভালবাসেন। -বুখারী, মুসলিম
নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করা : যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয় বা কাঁদে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া অনুরূপ অসম্ভব যেমন গাভীর বাট থেকে দুধ বের হওয়ার পর পুনরায় ভিতরে ঢুকানো অসম্ভব। -তিরমিযী, মিশকাত
সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারীর আহ্বানে সাড়া না দেয়া : যে ব্যক্তি যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ যে ব্যক্তি দু’টি জিনিসের যামিন হবে, আমি তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার যামিন হব। তার একটি হচ্ছে যেনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অপরটি হচ্ছে পরনিন্দা হতে মুক্ত থাকতে হবে। -বুখারী, মুসলিম।
গোপনে দান করা : যারা গোপনে দান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ জান্নাত পাওয়ার জন্য দান-ছাদাক্বাহ হচ্ছে দলীল। -বুখারী, মুসলিম।
এসব গুণের অধিকারী মানুষই হচ্ছে আদর্শ পুরুষ।
আল্লাহ তাআলার বাণীÑ যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী হতে বের করে দেয় না, এমন অমুসলিম লোকদের সাথে কল্যাণকর ও সুবিচারপূর্ণ ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। সুবিচারকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন। [মুমতাহানা ৮]
উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ সুবিচারকে আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর এ সুবিচার শুধু মুসলিমের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়; বরং যেসব অমুসলিম মুসলমানদের প্রতি যুলুম-নির্যাতন করে না তাদের সাথেও ন্যায়ানুগ আচরণ ও সুবিচার করার জন্য আল্লাহ বলেছেন। সুবিচার আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় বৈশিষ্ট্য।
লেখক : তরুণ আলেম, প্রাবন্ধিক ও মুহাদ্দিস আংগারিয়া ইকরা মাদরাসা, সদর, শরীয়তপুর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন