বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

শয়তানকে গোমরাহ করার ঘটনা : হাফেজ মোঃ হামিম খান রাশেদ

বনী ইসরাঈলের এক বুযুর্গ শয়তানকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট করার জন্যে বারবার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু পারেননি। একদিন তিনি বিশেষ কোন প্রয়োজনে কোথাও যাচ্ছিলেন। শয়তানও তখন তার সঙ্গী হয়ে পড়ল। পথে রিপুকাম ও ক্ষোভের অনেক হাতিয়ারই ব্যবহার করল সে। মাঝে মধ্যে তাকে ভয় দেখাবারও চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হলো বারবারই।
বুযুর্গ একবার পাহাড়ের পাদদেশে বসেছিলেন। শয়তান তখন পাহাড়ের উপরে উঠে একটি পাথর ছেড়ে দিল। বুযর্গ যখন লক্ষ করলেন বিশাল একটি পাথর তার দিকে গড়িয়ে পড়ছে। তখন তিনি আল্লাহর যিকিরে মশগুল হয়ে পড়লেন। পাথর তাকে পাশ কেটে অন্য দিকে গড়িয়ে পড়ল। শয়তান বাঘ ও সিংহের আকৃতি ধরে তাকে ভয় দেখাতে চাইল। তাতেও কাজ হলোনা। একবার বুযুর্গ নামায পড়ছিলেন। শয়তান তখন সাপের আকৃতি ধরে বুযুর্গের মাথা থেকে পা পর্যন্ত জড়িয়ে ধরল। অতঃপর তার ফনাটি সিজদার স্থানে বিছিয়ে দিল। বুযুর্গ এতেও ভীত হলেন না।
এবার শয়তান পূর্ণ নিরাশ হয়ে সম্পূর্ণ নিজের আকৃতিতে সেই বুযুর্গের সামনে এলো এবং বলল : আপনাকে গোমরাহ করার সকল কৌশলই আমি অবলম্বন করেছি। কিন্তু তার কোনটিই কাজে আসেনি। তাই আমি এখন আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আপনাকে আর ভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবনা। সুতরাং আপনিও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। বুযুর্গ বললেন : এটাতো তোর সর্বশেষ কৌশল। দুর্ভাগা, তোর ভীতি প্রদর্শনেও আমি ভীত হইনি। তোর বন্ধুত্বেরও আমার কোন প্রয়োজন নেই।
শয়তান তখন বলল : আমি কি আপনাকে একথা বলে দিব, মানুষকে আমি কিভাবে গোমরাহ করি?
বুযুর্গ বললেন : বল।
শয়তান বলল : তিনটি বিষয়ের দ্বারা-
১. কার্পণ্য, ২. ক্রোধ ও ৩. নেশা। শয়তান বলল : মানুষের মধ্যে যখন কার্পণ্য সৃষ্টি হয়, তখন সঞ্চয়ের নেশায় পড়ে যায়। খরচ করেনা। অন্যের হক নষ্ট করে। আর মানুষ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তখন সে আমাদের হাতের খেলনায় পরিণত হয়। যেমন ছোট বাচ্চাদের হাতে খেলার বল থাকে ঠিক তেমন। আমরা তার ইবাদত বন্দেগীর মোটেও পরোয়া করিনা। সে যদি স্বীয় দু’আর দ্বারা মৃতকে জীবিতও করে তবুও আমরা নিরাশ হইনা। আমরা একটি কথায় তার সকল বন্দেগী মাটিতে মিশিয়ে দেই। আর মানুষ যখন নেশা করে মাতাল হয়ে পড়ে, তখন আমরা ছাগলের মত তার কান ধরে যে কোন পাপের দিকে নিয়ে যাই এবং খুব সহজেই নিয়ে যাই।
ফকীহ আবুল লাইস রা. বলেন : এ ঘটনায় জানা গেল মানুষ যখন ক্ষুদ্ধ ও রাগান্বিত হয়, তখন সে শয়তানের হাতের খেলার ’বল’ হয়ে যায়। ছোট শিশুরা যেমন ’বল’ এদিক-ওদিক ছুড়ে মারে, শয়তানও তাকে অনুরুপ ইচ্ছামত এদিক সেদিক নিতে থাকে। তাই রাগের সময় আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করা চাই, যাতে শয়তানের হাতের ক্রিড়নক হতে না হয়।
শিক্ষা : প্রিয় পাঠক উল্লেখিত ঘটনা থেকে আমরা একটি শিক্ষা নিতে পারি যে, আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শে এসমস্ত শয়তানের ধোঁকা থেকে বাচতে পারব।
পাঠিয়েছেন : হাফেজ মো. হামিম খান রাশেদ, শিক্ষার্থী-মাদরাসাতুল ফালাহ্ আল-আরাবিয়াহ্, উত্তরা-ঢাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন