বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

পবিত্র কুরআনে মুমিনের শান্তনা : তারিক মেহান্না

আল্লাহতা’আলা কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৮৬ নং আয়াতে বলছেন,
“নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবনের দ্বারা। এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববতী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরিকদের কাছে বহু অশুভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। [আলে ইমরান : ১৮৬]
কিছু লোকের জন্য উল্লেখিত আয়াতে পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। কারো জন্য হতে পারে সেটা, কোন মারাতœক শারীরিক কিংবা মানসিক অসুস্থতা। আবার কিছু মানুষের জন্য, কোন ভালোবাসার মানুষকে হারানো। কারও জন্য বা বন্দীদশা। তবে আমাদের প্রত্যেকের জন্যই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে এটা একটা প্রতিশ্র“তি যে, তিনি আমাদের মধ্যে সবাইকেই জীবনের কোন না কোন সময়ে, কোন একধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি করবেনই। আপনি যে কোন মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকুন কিংবা একজন খুনির মতন ঘৃণ্য ব্যক্তিত্বের কেউ হোন না কেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দুঃখ-কষ্ট নির্ধারণ করে রেখেছেন। আসলে, আপনি যদি খেয়াল করেন যে কত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত নবীদের প্রত্যেকে, তাহলে আপনার কাছে মনে হবে যেন আল্লাহ তা’আলা আগে থেকেই আপনার আমার জন্য এই জিনিসগুলোকে উদাহরণ হিসেবে রেখে দিয়েছেন যাতে আমরা আজকের সমস্যাগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারি। যেমন-
– আদম আ. এর এক ছেলে আরেক ছেলেকে মেরে ফেললো।
– নূহ আ. এর এক ছেলে কাফির ছিল, পানিতে ডুবে যার মত্যু হলো।
– ইবরাহীম আ. এর নিজের বাবা ছিল অত্যাচারী মুশরিক।
– ইউসুফ আ. কে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ দিন কাটাতে হয়েছিল কারাগারে।
– আইয়ুব আ. কে সম্মুখীন হতে হয়েছিল মারাতœক ধরণের সব অসুখের।
– ইয়াকুব আ. দুইবার তার দুই ছেলেকে (ইউসুফ ও বিনয়ামিন) সাময়িকভাবে হারিয়ে ছিলেন।
– রাসূলুল্লাহ সা. দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছিলেন, জীবনের ওপর নেমে এসেছিল ঝুঁকি, অল্প বয়সী সন্তানদেরকে হারিয়ে ছিলেন, প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাকে হারিয়ে ছিলেন, প্রাণপ্রিয় চাচা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল পরপারে, সর্বোপরি তাঁর নিজের জন্মভূমি থেকে হয়েছিলেন বিতাড়িত।
তাই বলা চলে এখনকার দিনে আমরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি সেগুলোর মধ্যে এমন একটি সমস্যাও নেই যেগুলো পূর্ববর্তী কোন নবী-রাসূল মোকাবিলা করেননি। এই সত্যটির উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা হচ্ছে,
* আমাদের কাছে প্রত্যেকটা কষ্টকর পরীক্ষার নমুনা রয়েছে এবং সেই সাথে রয়েছে সেগুলো ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবিলা করার পর্যাপ্ত দিক নির্দেশনা।
* আল্লাহতা’আলার সবচাইতে প্রিয় বান্দাদেরকে এই ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হবার ঘটনা থেকে আমরা সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে, এই সকল বিপদময় পরিস্থিতির মোকাবিলা মানুষকে পূর্ণতা দান করে।
* নবীদের সাথে আমাদের অন্তত একটা দিকে সাদৃশ্য থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
* যখন আমরা নিজেরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হবো তখন নবীদের কষ্ট-ত্যাগ ইত্যাদি যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হব, ফলে আল্লাহ তা’আলার নবী-রাসূলদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।
* আল্লাহ তা’আলার ওপর ভরসা রাখার মানসিকতা জন্মাবে, যখন আমরা বুঝতে শিখব। যেহেতু আল্লাহ তা’আলা নবীদেরকে সাহায্য করেছিলেন সেহেতু তাদের মতন তাকওয়া থাকলে আমরাও আল্লাহর সাহায্য লাভ করব।
* এমনকি নবীরাও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার উর্ধ্বে নন-এই সত্যটি সমগ্র সৃষ্টির ওপর আল্লাহ তা’আলার একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়টিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তোলে।
শুধু কি তাই, রাসূল সা. এইও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর যত প্রিয় বান্দা আল্লাহ তাকে তত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। এর উদাহরণ উপরে উল্লেখ হয়েছে।
তাই, যখন আমরা কষ্টকর কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, বিষয়টি আমাদের কাছে খারাপ প্রতীয়মান হতে পারে, অথচ আমরা জীবনে নিশ্চিত কিছু অর্জন করতে পারি এর থেকে। বিশেষত যদি আমরা জিনিসগুলোকে আল্লাহ তাআলার নবীদের সাথে তুলনা করতে পারি।
লেখক : প্রাবন্ধিক,
পলিমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেশন ইউনিট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন