শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫

মানবতার আধ্যত্মিক রাহবার: কাওমী মাদরাসা -মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম

শিক্ষা জাতির মেরুদ-, মেরুদ-হীন অশিক্ষিত কোন জাতি বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। কেননা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যবঞ্চিত একটি জাতির ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি সব কিছুই গড়ে ওঠে শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। তাইতো বলা হয়, যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি ততবেশী বিশ্বে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়-বস্তু হলো মানব জাতিকে তার অস্তিত্ব, অবস্থান, উত্থান, পতন, আত্মপরিচয়, পরিণতি ও আখেরাত এবং আদর্শ নির্ভর পার্থিব জীবনপ্রণালী শিক্ষা দেয়া, যাতে সে তার মাহান স্রষ্টার পরিচয় জানতে পারে এবং মানবীয় গুণাবলী অর্জন করে আদর্শ মানব হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। এমনকি মানবমস্তিষ্ক থেকে সকল প্রকার অবিলতা ও লোভ মোহ অহংকার, পরশ্রিকাতর বের করে দিয়ে সর্বোতভাবে আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম ও রাসূল সা. এর সুন্নত মোতাবেক স্বতঃস্ফূর্ত জীবন যাপনের দীক্ষা নিতে পারে। সেই সাথে হিংসা বিদ্বেষ, যুলুম নির্যাতন, কলহ বিবাদ, চুরি ডাকাতি, অন্যায় ব্যভিচার, সন্ত্রাস চাদাবাজি, দূর্নীতি কালোবাজারীসহ সকল প্রকার পাশবিকতা ধুঁয়ে মুছে সাফ করে মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষ রুপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। উল্লেখ্য, যে প্রতিষ্ঠানে এ দীক্ষা দেয়, তারই নাম কওমী মাদরাসা।
প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা জেনে নেই কওমী মাদরাসার অর্থ কী? কওম অর্থ জাতি, আর কওমী অর্থ জাতীয়। মাদরাসা আরবী শব্দ, যার অর্থ হলো পাঠশালা। যেহেতু এ মাদরাসাগুলো জাতি বা কওমের অর্থ ও সহযোগিতায় পরিচালিত হয়, তাই এগুলোকে কওমী মাদরাসা বলা হয়। বর্তমান বিশ্বে যখন নীতি নৈতিকতা ও আত্মচেতনার দূর্ভিক্ষ চলছে, তখন কওমী মারাসাগুলো এমন অসংখ্য বিবেকবান আর দৃঢ় প্রত্যয়ী সাচ্চা ঈমানদার আলেম ও সুনাগরিক জাতিকে উপহার দিচ্ছে, যারা পৃথিবীর আনাচ কানাচ থেকে অজ্ঞতা ও বর্বরতার অন্ধকার দূূর করে সাধারণ মুসলমানদের কে আলোকিত জীবনের সন্ধান দিচ্ছে। কারণ এখানেই রয়েছে প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা। তাছাড়া কওমী মাদরাসা একটি দ্বীনি হাসাপাতাল তুল্য যেখানে রুহের চিকিৎসা করা হয়। এর শিক্ষকগণ হলেন রুহানী চিকিৎসক। যেমনিভাবে মানুষের বাহ্য অঙ্গ প্রতঙ্গের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে তেমনিভাবে রুহের চিকিৎসার জন্য তার চেয়ে বেশী প্রয়োজন রয়েছে মাদরাসানামক কওমী মাদরাসার। পক্ষান্তরে বাস্তবতা সাক্ষী যে, প্রচলিত বস্তুবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা নীতি নৈতিকতা ও মানবীয় সভ্যতা উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ইহলৌকিক ও পরোলৌকিক মুক্তি দিতে পারে না। দিতে পারেনা শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যরান্টি; অথচ মহানবী সা. ঐশী শিক্ষার আলোকে হাজার বছরের মরিচা ধরা হৃদয়গুলোকে খাঁটি সোনায় পরিণত করেছেন ইলমে ওহী তথা মাদরাসা শিক্ষার দ্বারা। তবে দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, আমাদের কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতরা ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের সবক পড়ে অহর্ণিশ প্রোপাগা-া চালিয়ে যাচ্ছে যে, কওমী মাদরাসা হলো জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র। এ মাদরাসাগুলো জাতির কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনা; ইত্যাদি। তারা মনে করে, কওমী মাদারাসার জায়গাগুলোতে মাদরাসার পরিবর্তে মিল ফ্যাক্টরী শিল্প কারখানা স্থাপিত হলে দেশ ও জাতির অধিক কল্যাণ হবে। আমরা এসমস্ত বিকৃত মগজের অধিকারীদের বলব, দেশে চিড়িয়খানা, যাদুঘরের যদি প্রয়োজন থাকে, বিনোদনের জন্য পার্ক, খেলার জন্য স্টেডিয়াম, টেলিভিশনভবন ও বেতার কেন্দ্রের প্রয়োজন থাকে, এমনকি কলমের পরিবর্তে অস্ত্র, কালির পরিবর্তে রক্ত নিয়েও এদেশের কলেজ ভার্সিটির মত রাষ্ট্রীয় শিক্ষাঙ্গনগুলো যদি নিজস্ব ধারায় তথাকথিত জাতীয় কল্যাণের জোয়ার বইয়ে দিতে পারে, তাহলে সৎচরিত্র প্রতিষ্ঠার প্রাণ কেন্দ্র যে, কওমী মাদরাসা মানুষের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করে, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি শৃংখলা তৈরি করে, সুনাগরিক তৈরি করে প্রদান করে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা তা কেন জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র হতে যাবে? কেন হবে এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো নিরর্থক!
পরিশেষে বলব, সুশিক্ষা যদি পেতে হয়, তাহলে কওমী মাদরাসার সুশীতল ছায়াতলে আসতে হবে। যদি কেউ আলোর পথ দেখতে চায়, সঠিক পথের সন্ধান পেতে চায়, স্রষ্টার সন্ধান পেতে চায়, হাউযে কাওছারে রাসূলের হাত থেকে পানি পান করতে চায়, জান্নাত লাভে ধন্য হতে চায়, জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়, আল্লাহর দীদার লভের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্যবান হতে চায়, তাহলে কওমী মাদরাসার শিক্ষা গ্রহণ এবং তার অনুসারী হওয়া ছাড়া দোছরা কোনো পথ নেই। আল্লাহ তাআলাই একমাত্র তাওফিকদাতা।
লেখক: অধ্যয়নরত, তফসীর বিভাগ, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন