রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫

দেওবন্দী আহলে হক্বদের কাছে কাক খাওয়া কি জায়েজ ? সত্য উন্মোচন

দেওবন্দী আহলে হক্বদের কাছে কাক খাওয়া কি জায়েজ ? বিদআতিদের ইমাম আহমদ রেজা খাঁ’র করা মহা প্রতারণামূলক অভিযোগের জবাব-
প্রশ্ন –
দেওবন্দী আলেম রশীদ আহমদ গঙ্গুহী বলেছেন যে, কাক খাওয়া জায়েজ। সেই সাথে এটি সওয়াবের কাজ। {ফতোয়া রশিদীয়া-২/১৩০} সুতরাং দেওবন্দীদের কাছে কাক খাওয়া জায়েজ?
উত্তর-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
এ অভিযোগটি মূলত বিদআতিদের ইমাম আহমদ রেজা খাঁ এর করা প্রতারণামূলক অভিযোগ। নিজেকে হানাফী মাযহাবের একনিষ্ট অনুসারী দাবি করে এ বিদআতিটি দেওবন্দী আলেমদের বিরুদ্ধে প্রচুর মিথ্যাচার করেছে দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম তার বিদআত আর নবী বিদ্বেষী মানসিকতার মুখোশ উন্মোচিত করে দেয়ার কারণে।
প্রথমেই একটি শরয়ী মূলনীতি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার। সেটি হল- “বস্তুর মূল হল তা হালাল হওয়া। তবে যদি হারাম হওয়ার দলীল পাওয়া যায় তবে ভিন্ন কথা।” এটি ফুক্বাহায়ে কেরামের কাছে স্বীকৃত কায়দা বা মূলনীতি। যার পক্ষে কুরআন ও হাদীসের দলীল বিদ্যমান।
কুরআনের আলোকে- ﻗُﻞْ ﻣَﻦْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺯِﻳﻨَﺔَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺃَﺧْﺮَﺝَ ﻟِﻌِﺒَﺎﺩِﻩِ ﻭَﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺯْﻕِۚ ‏[ ٧: ٣٢
(আপনি বলুন, আল্লাহর সাজ- সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্যবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে?) {সূরা আরাফ-৩২}
এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাদের জন্য তৈরী করে দেয়া সাজ- সজ্জা এবং পবিত্র খাদ্যদ্রব্যকে হারাম বলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি যেটাকে হারাম বলেননি, তা যেন কেউ হারাম না বানিয়ে দেয়। সুতরাং যেসব বস্তুর ক্ষেত্রে হারাম হওয়া কুরআন বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাকে হারাম বলা যাবে না। বরং তা হালালই থাকবে।
হাদীসের আলোকে- ﻋَﻦْ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥَ ﺍﻟْﻔَﺎﺭِﺳِﻲِّ، ﻗَﺎﻝَ: ﺳُﺌِﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺴَّﻤْﻦِ، ﻭَﺍﻟْﺠُﺒْﻦِ، ﻭَﺍﻟْﻔِﺮَﺍﺀِ ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﺍﻟْﺤَﻠَﺎﻝُ ﻣَﺎ ﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺑِﻪِ، ﻭَﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡُ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺑِﻪِ، ﻭَﻣَﺎ ﺳَﻜَﺖَ ﻋَﻨْﻪُ، ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﻋَﻔَﺎ ﻋَﻨْﻪُ »
(হযরত সালমান ফারসী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর নিকট ঘী, পনীর ও বন্য গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, যে সব জিনিস আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে হালাল করেছেন, তা হালাল। আর যেসব জিনিস আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে হারাম করেছেন, তা হারাম। আর যেসব জিনিস সম্পর্কে তিনি নীরব থেকেছেন তা তিনি ক্ষমা করেছেন।) {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৩৬৭}
ﻋَﻦ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ، ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ: ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴﻪ ﻭَﺳَﻠَّﻢ: ﻣَﺎ ﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺑِﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﻼﻝٌ ﻭَﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻭَﻣَﺎ ﺳَﻜَﺖَ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻬُﻮَ ﻋَﻔْﻮٌ ﻓَﺎﻗْﺒَﻠُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺎﻓِﻴَﺘَﻪُ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻟِﻴَﻨْﺴَﻰ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﺛُﻢَّ ﺗَﻼ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻵﻳَﺔَ } : ﻭَﻣَﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺑﻚ ﻧﺴﻴﺎ
( হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন, তা হালাল। আর যা হারাম করেছেন, তা হারাম। আর যে সম্পর্কে নীরব থেকেছেন, তা তিনি মাফ করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মাফ করে দেয়া বস্তু গ্রহণ কর। কেননা, আল্লাহ তাআলা কোন কিছুই ভুলেন না। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- আর তোমার রব কোন কিছু ভুলে যায় না।) [সূরা মারিয়াম-৬৪] {মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪০৮৭, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২০৬৬}
এর কাছাকাছি শব্দের হাদীস সুনানে তিরমিজী, সুনানে আবু দাউদসহ অনেক হাদীসের কিতাবে সহীহ সনদে এসেছে। এসব হাদীস একথাই প্রমাণ করছে যে, যে বস্তু হারাম হওয়ার কোন দলীল না থাকে, তা হালাল হবে। তা নিয়ে অযথা সন্দেহ করার কোন মানে হয় না। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম মূলনীতি বলে দিয়েছেন। বস্তুর মূল হল তা হালাল হওয়া। তবে যদি হারাম হওয়ার দলীল পাওয়া যায় তবে ভিন্ন কথা।
কাক খাওয়ার বিষয়টিও এমনি। এটি খাওয়া হালাল বা হারাম হওয়ার কোন দলীল কুরআন বা হাদীসে বিদ্যমান নয়। তাই এটি হালাল বা হারাম হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই মুজতাহিদদের ইজতিহাদ নির্ভর বিষয়।
মুজতাহিদগণ ইজতিহাদ করে বিভিন্ন কাকের বিভিন্ন হুকুমের কথা বলেছেন। যেমনটি নিচে উদ্ধৃত করা হল।
কাকের প্রকারভেদ:
কাক তিন প্রকার। যথা- ১ যারা শুধুমাত্র পাখির মত দানা খেয়ে থাকে। মৃত প্রাণী খায় না। ২ যারা শুধু মৃত খায়। ৩ যারা দানাও খায় আবার মৃতও খায়।
এবার বিভিন্ন মাযহাবে কাক খাওয়ার বিধান সম্পর্কে জেনে নিন-
হানাফী মাযহাব হানাফী মাযহাব মতে যে কাক শুধু মৃত খায় তা খাওয়া জায়েজ নয়। তবে যে শুধু দানা খায়, আবার মৃতও খায়, বা শুধু দানা খায় মৃত খায় না। এ উভয় প্রকার কাক খাওয়া জায়েজ আছে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নিকট।
তবে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর মতে যে কাক দানা ও মৃত উভয়টি খায় সে কাক খাওয়া মাকরূহ। তবে যে শুধু দানা খায় তা খাওয়া সর্বসম্মত মতানুসারে জায়েজ। {ইনায়া-৯/৫১২}
কারণ ﻭَﺃَﺻْﻞُ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﻥَّ ﻣَﺎ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺠِﻴَﻒَ ﻓَﻠَﺤْﻤُﻪُ ﻧَﺒَﺖَ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ﺧَﺒِﻴﺜًﺎ ﻋَﺎﺩَﺓً، ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺤَﺐَّ ﻟَﻢْ ﻳُﻮﺟَﺪْ ﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻴﻪِ، ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻂَ ﻛَﺎﻟﺪَّﺟَﺎﺝِ ﻭَﺍﻟْﻌَﻘْﻌَﻖِ ﻓَﻠَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺑِﺄَﻛْﻠِﻪِ ﻋِﻨْﺪَ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﺄَﺻَﺢُّ، ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ – ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ – ﺃَﻛَﻞَ ﺍﻟﺪَّﺟَﺎﺟَﺔَ ﻭَﻫِﻲَ ﻣِﻤَّﺎ ﻳَﺨْﻠِﻂُ.
অনুবাদ- এ মতভিন্নতার আসল কারণ হল, যে পাখি নাপাক খায়, যেহেতু তার গোস্তও এর দ্বারা বেড়ে থাকে, এ কারণে তা খাওয়া মাকরূহ।
আর যে পাখি শুধু দানা খায়, তাতে যেহেতু এ সুরত নেই, তাই তা হালাল। তবে যে প্রাণী নাপাক ও পাক উভয় ধরণের বস্তু খায় তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে হালাল। আর এটিই সহীহ বক্তব্য। এ কারণে যে, মুরগী পাক ও নাপাক উভয় প্রকার বস্তু খায়। অথচ রাসূল সাঃ তা ভক্ষণ করেছেন। {আলইনায়াহ শরহুল হিদায়াহ-৯/৫১২-৫১৩}
ফাতাওয়া শামীতে এসেছে-
ﺣﻞ ‏( ﻏﺮﺍﺏ ﺍﻟﺬﺭﻉ ‏) ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺎﻛﻞ ﺍﻟﺤﺐ ‏( ﻭﺍﻷﺭﻧﺐ ﻭﺍﻟﻌﻘﻌﻖ ‏) ﻫﻮ ﻏﺮﺍﺏ ﺑﺠﻤﻴﻊ ﺑﻴﻦ ﺍﻛﻞ ﺟﻴﻒ ﻭﺣﺐ ﻭﺍﻷﺻﺢ ﺣﻠﻪ
( আর খেতের কাক যা দানা খেয়ে থাকে, তা হালাল। আর খরগোস ও আকআক ঐ কাক যা ময়লা এবং দানা উভয়ই খায়। সহীহ বক্তব্য অনুপাতে এসব খাওয়া জায়েজ আছে।) {ফাতাওয়া শামী-৯/৩৭৩}
ফাতাওয়া আলমগিরীতে এসেছে-
ﻭَﺍﻟْﻐُﺮَﺍﺏِ ﺍﻟْﺄَﺑْﻘَﻊِ ﻣُﺴْﺘَﺨْﺒَﺚٌ ﻃَﺒْﻌًﺎ، ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﺍﻟْﻐُﺮَﺍﺏُ ﺍﻟﺰَّﺭْﻋِﻲُّ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻂُ ﺍﻟْﺤَﺐَّ ﻣُﺒَﺎﺡٌ ﻃَﻴِّﺐٌ، ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻐُﺮَﺍﺏُ ﺑِﺤَﻴْﺚُ ﻳَﺨْﻠِﻂُ ﻓَﻴَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺠِﻴَﻒَ ﺗَﺎﺭَﺓً ﻭَﺍﻟْﺤَﺐَّ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻓَﻘَﺪْ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻳُﻮﺳُﻒَ – ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ – ﺃَﻧَّﻪُ ﻳُﻜْﺮَﻩُ، ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ – ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ – ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺑِﺄَﻛْﻠِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢُ ﻋَﻠَﻰ ﻗِﻴَﺎﺱِ ﺍﻟﺪَّﺟَﺎﺟَﺔِ، ﻛَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺒْﺴُﻮﻁِ. ‏( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ، ﻛِﺘَﺎﺏُ ﺍﻟﺬَّﺑَﺎﺋِﺢِ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔُ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏٍ، ﺍﻟْﺒَﺎﺏُ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺚُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤُﺘَﻔَﺮِّﻗَﺎﺕِ- 5/358
(আর আবক্বা কাক যা শুধু মৃত খায় এটি স্বভাবজাত নোংরা। আর ফসলী জমির কাক। যা দানা খায়। এটি জায়েজ এবং তা পরিচ্ছন্ন। আর যদি এমন হয় যে, যা মৃত এবং দানা উভয়ই খায়। তাহলে এ ব্যাপারে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ থেকে বর্নিত যে, তা খাওয়া মাকরূহ। আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে তা খাওয়া জায়েজ আছে। আর এ বক্তব্যটিই সঠিক। যেমন মুরগী উভয় ধরণের বস্তু খাওয়া সত্বেও তা হালাল।) {ফাতাওয়া আলমগিরী-৫/৩৫৮}
মালেকী মাযহাবে সকল প্রকার কাক খাওয়া জায়েজ ﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴﺔ ﻗﺎﻟﻮﺍ: ﻳﺤﻞ ﺍﻛﻞ ﺍﻟﻐﺮﺍﺏ ﺑﺠﻤﻴﻊ ﺍﻧﻮﺍﻋﻪ
(মালেকী মাযহাবীরা বলেনঃ সকল প্রকার কাক খাওয়া জায়েজ।) {আলফিক্বহ আলা মাযাহিবিল আরবাআ-২/১৮৩, কিতাবুল হাজরি ওয়ালইবাহাতি, মিসরী ছাপা}
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা আশা করি পাঠকদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যে কাক শুধু নাপাক খায় তা হানাফী মাযহাব মতে হালাল নয়। কিন্তু যে কাক নাপাক ও পাক উভয় প্রকার বস্তু খায়, বা শুধু পাক বস্তু খায় তা খাওয়া জায়েজ আছে। আর মালেকী মাযহাবে সকল প্রকার কাক খাওয়াই জায়েজ আছে।
এবার সাহারানপুরের এক গ্রাম্য লোকের কাক খাওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরটি ফাতাওয়া রশীদিয়ার মূল ইবারত থেকে দেখে নিন-
ﺳﻮﺍﻝ: ﺟﺲ ﺟﮕﮧ ﺯﺍﻍ ﻣﻌﺮﻭﻓﮧ ﮐﻮ ﺍﮐﺜﺮ ﺣﺮﺍﻡ ﺟﺎﻧﺘﮯ ﮨﻮﮞ ﺍﻭﺭ ﮐﻬﺎﻧﮯ ﻭﺍﻟﮯ ﮐﻮ ﺑﺮﺍ ﮐﮩﺘﮯ ﮨﻮﮞ، ﺗﻮ ﺍﯾﺴﯽ ﺟﮕﮧ ﺍﺱ ﮐﻮ ﮐﮭﺎﻧﮯ ﻭﺍﻟﮯ ﮐﻮ ﮐﭽﮫ ﺛﻮﺍﺏ ﮨﻮﮔﺎ ﯾﺎ ﻧﮧ ﺛﻮﺍﺏ ﮨﻮﮔﺎ ﻧﮧ ﻋﺬﺍﺏ؟ ﺟﻮﺍﺏ- ﺛﻮﺍﺏ ﮨﻮﮔﺎ –
(প্রশ্ন যে স্থানে প্রচলিত কাককে অধিকাংশ মানুষ হারাম মনে করে। আর যে খায় তাকে মন্দ কথা বলে। তাহলে এমন স্থানে এটি ভক্ষণকারীর কি কোন সওয়াব হবে? নাকি সওয়াবও হবে না আবার আজাবও হবে না? উত্তর সওয়াব হবে।) {ফাতাওয়া রশিদীয়া-৫৯৭, সাকীব বুক ডিপো দেওবন্দ, নতুন সংস্করণ}
প্রিয় পাঠকগণ! এক হল, কোন জিনিস খাওয়া হালাল হওয়া। আরেক হল উক্ত বস্তু খাওয়া। দুটি বিষয় যে, সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় তা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে পারবেন। এরকম অনেক কিছুই আছে, যা হালাল, কিন্তু অনেকেই তা খেতে পারে না। যেমন গরুর ভুরি। পরিস্কার করে খাওয়া জায়েজ। কিন্তু অনেকেই খায় না। গরুর চামড়ার উপরের চুল তুলে খাওয়া জায়েজ। কিন্তু ক’জনে তা খায়? ঠিক তেমনি যে কাক শুধু দানা খায়, বা যে কাক দানা ও নাপাক উভয় খায়, তা মুরগী যেমন নাপাক ও পাক উভয় খায়, তবু তা হালাল তেমনি তা খাওয়া হালাল। যা উল্লেখ করেছেন ফুক্বাহায়ে কেরাম স্বীয় ইজতিহাদের ভিত্তিতে।
এটি শায়েখ রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহঃ এর নিজস্ব কোন মত নয়। বরং সর্বজন স্বীকৃত মুজতাহিদ ফক্বীহদের। সেখানে হানাফী মাযহাবের অনুসারী দাবি করে রেজাখানীরা এরকম নিচতর অপপ্রচার কি করে চালাতে পারে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। আর যে বস্তু হালাল, তাকে হারাম মনে করা জায়েজ নয়। হালালকে হারাম মনে করার ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗُﺤَﺮِّﻣُﻮﺍ ﻃَﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻣَﺎ ﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌْﺘَﺪُﻭﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﻌْﺘَﺪِﻳﻦَ ‏(87
( হে ঈমানদারগণ! তোমরা পাক বস্তুকে হারাম করো না, যাকে আল্লাহ তাআলা হালাল করেছেন। আর তোমরা সীমালঙ্ঘণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সীমালঙ্ঘণকারীদের পছন্দ করেন না।) {সূরা মায়িদা-৮৭}
এ কারণে গঙ্গুহী রহঃ প্রশ্নকারীকে তা খাওয়ার অনুমতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন। আর হালালকে হারাম মনে কারা মারাত্মক ধারণা দূর করে দ্বীনে সঠিক বিষয় প্রকাশের মানসে উক্ত ব্যক্তির জন্য তা খাওয়াকে সওয়াবের কারণ বলেছেন। এতে দোষণীয় কি হল আমাদের বুঝে আসে না।
কিন্তু আফসোস! বিদ্বেষ মানুষকে কতটা নিচে নামিয়ে দেয়। যা রেজাখানীদের এ অপপ্রচার থেকেই সহজে অনুমেয় হয়।
মজার বিষয় হল, রেজাখানী বেদআতির কাছে বাদুড় আর পেঁচা খাওয়া জায়েজ। অথচ তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত কাক নিয়ে।
দেখুন- বেরেলবী বেদআতিদের কাছে বাদুড় খাওয়া জায়েজ! হানাফী কায়দা অনুযায়ী বাদুড় খাওয়া জায়েজ। {ফাতাওয়া রেজাইয়্যাহ-২০/৩১৮}
বেরেলবী বেদআতিদের কাছে পেঁচা খাওয়া জায়েজ পেঁচা খাওয়া জায়েজ। {ফাতাওয়ারেজাইয়্যাহ-২০/৩১৩,১৩৪}
বাহ! চমৎকার! রেজাখানী মাজারপূজারী বিদআতি ভাইয়েরা এখন থেকে মানুষ মারা যাবার তিন দিনের মাথায় মিলাদে বাদুড় ভাজা, আর চল্লিশা পালনের দিন পেঁচার বিরিয়ানী। সেই সাথে বাৎসরিক উরসের দিন বাদুড় আর পেঁচার রেজালা পাকিয়ে খাওয়া শুরু কর। রেজাখানী বিদআতি মাযহাব জিন্দাবাদ!
আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যুক আর প্রতারকদের প্রতারণা থেকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতকে হিফাযত করুন। ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
লেখাটির লিংক www.markajomar.com/?p=809

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন