রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫

হযরত ফাতেমা (রা)-কে স্বপ্ন যোগে জড়িয়ে ধরা প্রসংগে এক আহলে হাদিস নেতার দাজ্জালী মন্তব্যের পোস্টমর্টেম

বিদয়াতি রেজভিদের চেয়েও ভ্রষ্ট আহলে হাদিস দাবিদার আধুনিক বিদয়াতিদের মিথ্যাচারের নমুনা কোনো অংশে কম না। আল্লামা থানভী (রহ)-এর নামে আহলে হাদিস নেতা মুরাদ বিন আমজাদের দাজ্জালী মন্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব, ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন—
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
মুহতারম, ইদানিং কথিত আহলে হাদীসরা এবং আহলে বিদআতরা একটা বিষয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্লগ, ওয়েব সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন— ফেসবুক ইত্যাদিতে ঢালাও ভাবে প্রচার করছে। তাহল, হাকীমুল উম্মাত মুজাদ্দিদুল-মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এর নামে। হযরতের “মালফূযাতে হাকীমুল উম্মত” এর অষ্টম খণ্ডের, ৩৭ পৃষ্ঠার রেফারেন্স দিয়ে।
তাদের প্রচারিত পোস্টগুলোর একটি কপি করে তুলে ধরছিঃ আশরাফ আলী থানভি বলেনঃ ”আমি অত্যন্ত অসুস্থ ছিলাম এবং মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পরেছিলাম। আমি স্বপ্নে ফাতেমাহ (রাঃ)- কে দেখলাম এবং তিনি দু’বাহু দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, আমি ভাল হয়ে গেলাম” (নাউজুবিল্লাহ)।
[ মালফুযাত হাকিম আল-উম্মাহ ৮ম খন্ড; পৃষ্ঠা নং ৩৭]।
স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ইসলামী নির্দেশনাঃ
স্বপ্ন মুলত তিন প্রকারঃ১/ ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালার নিকট হতে সুসংবাদ সরূপ ২/ আরেক প্রকার স্বপ্ন হল শয়তানের নিকট হতে মু’মিনের জন্য দুশ্চিন্তাস্বরূপ ৩/ আরেক প্রকার স্বপ্ন হল মানুষের মনের চিন্তা ভাবনা (সে যা চিন্তা করে তা-ই স্বপ্নে দেখে) তিরমিযি ২২৭০”। এই হলো ওদের বিভিন্ন পোস্টের একটি পোস্ট। এ ব্যাপারটা যদি খুলাসা করতেন, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতাম। জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দারাইন।
প্রশ্নকর্তা- শামীম হানাফী।
আমাদের জবাব —
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
উপরোক্ত বক্তব্যটি মূলত কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ কিংবা জ্ঞানপাপী মুরাদ বিন আমজাদ সাহেবের লিখিত “সহীহ আকিদার মানদন্ডে বেহেশতি জেওর ১ম খন্ড থেকে নেয়া হয়েছে। আমরা প্রথমে মুরাদ বিন আমজাদ সাহেবের জাহালাতপূর্ণ বক্তব্যের পূর্ণ অংশটি দেখে নেই-একদা থানবী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত অসুস্থ ছিলাম এবং মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে ছিলাম। আমি স্বপ্নে ফাতিমা রাঃ [রাসূল সাঃ এর কন্যা] কে দেখলাম এবং তিনি দু’বাহু দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, আমি ভাল হয়ে গেলাম।
{মালফুযাতে হাকীমল উম্মত-৮ম খন্ড,পৃঃ ৩৭ গৃহীত}
সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা! লক্ষ্য করেছেন, নাবীর কন্যার সঙ্গে এ কেমন ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ থানবীর। যার মর্যাদার আয়াত আয়াতে তাতহীর অর্থাৎ পবিত্রকরণের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় তাঁর বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে।হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”। {সুরাহ আল আহযাব-৩৩}
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে দেখলাম, তিনি আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন রাঃ কে ডাকলেন এবং তাদের মাথার উপর একখানা কাপড় ফেলে দিলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার পরিবারের সদস্য। তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করুন।
{মুখতাসার তাফসীরে ইবনু কাসীর-৩/৯৪ গৃহীত, আসহাবে রাসূল জীবন কথা-৬/৭০ পৃষ্ঠা]
যিনি সাইয়্যিদাতুন নিসা আহলুল জান্নাহ তার সম্পর্কে এ জাতীয় গুস্তাকিপূর্ণ কথা ঈমানের ত্রুটির বহিঃপ্রকাশ বৈকি? যে ফাতিমাহ তাঁ মৃত্যুর পূর্বে অসীয়ত করেছেন, আমার দাফন যেন রাত্রের বেলা হয় [আল ইতীআব-৪/৩৬৭ গৃহীত প্রাগুক্ত ৬/৭৯]
যিনি মৃত্যুর পরেও পর্দার ক্ষেত্রে এত সচেতন, তাঁর মৃত্যুর ১৪শত বৎসর পর বেগানা পুরুষ থানভীকে বাহুর সঙ্গে জড়িয়ে ধরেছেন, বলাটা কতটা বেআদবী এবং ঈমানের মুনাফী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
[মুরাদ বিন আমজাদ কৃত সহীহ আকিদার মানদন্ডে বেহেশতী জেওর ১ম খন্ড-১১৮-১১৯]
আমাদের বক্তব্য রুচিতে বাঁধছিল, তবু জাহালাতের ফিরিস্তি তুলে ধরতে মুরাদ বিন আমজাদ নামক কাজ্জাবের বক্তব্যটি হুবহু তুলে দিলাম।
এবার খেয়াল করুন। মুরাদ বিন আমজাদ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর স্বপ ্ননিয়ে কতটি ধোঁকাবাজীর আশ্রয় নিয়েছে।
১-
স্বপ্ন বাস্তবতার মতই। বাস্তবে করলে যে হুকুম স্বপ্নে কোন কিছু দেখলে একই হুকুম।
২-
স্বপ্নে বেগানা কাউকে দেখা বাস্তবে দেখার হুকুমে।
৩-
পর্দানশীন নারীকে স্বপ্নের ঘোরে পর্দাহীন অবস্থায় দেখা উক্ত নারী পর্দাহীন হয়েছেন মর্মে প্রমাণিত হয়। মুরাদ বিন আমজাদ সাহেবের জাহিলী ব্যাখ্যা থেকে আমরা উপরোক্ত তিনটি বক্তব্য পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি। তার বক্তব্য মতে থানবী রহঃ স্বপ্নে যেহেতু ফাতিমা রাঃ কে বেগানা ব্যক্তির কাছে আসা দেখেছেন তাই আসলেই হযরত ফাতিমা রাঃ বেগানা পুরুষের কাছে এসেছেন। [নাউজুবিল্লাহ] সেই সাথে বাস্তবে কেউ এমন কাজ করলে যেমন উক্ত ব্যক্তি লানত ও শাস্তির উপযুক্ত, তেমনি স্বপ্নে দেখার কারণেও একই হুকুম আরোপিত হবে। কেননা, স্বপ্ন আর জাগ্রত অবস্থার একই হুকুম। সেই সাথে পর্দা ছাড়া কোন নারী স্বপ্ন দেখা মানে উক্ত নারী আসলেই পর্দাহীন দাবিকরার মত। আমি কুরআন ও হাদীসের কথা বলছি না। একজন বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি মুরাদ বিন আমজাদের উপরোক্ত তিনটি দাবিকে কি সাপোর্ট করতে পারবেন?
মাথা বিকৃত পাগল ছাড়া স্বপ্নকে কেউ বাস্তবতার হুকুম দিতে পারে?
এরকম উন্মাদ ব্যক্তি নাকি আবার কথিত আহলে হাদীসদের শায়েখ! আফসোস এ পথভ্রষ্ট জামাতের জন্য। যাদের শায়েখের পর্যন্ত সামান্য বিবেক বুদ্ধি নেই। পাগলের প্রলাপই যাদের মুখের বুলি। মুরাদ বিন আমজাদ সাহেবের কাছে আমরা দু’টি স্বপ্ন ও তাবীর পেশ করছি-
১বেশ কিছু তারীখ গ্রন্থে এসেছে, এক রাতে বাদশা হারুনুর রশীদের স্ত্রী জুবাইদা স্বপ্নে দেখেন যে, অনেক লোক লাইন ধরে এসে এসে তার সাথে সহবাস করছে। এ স্বপ্ন দেখে তিনি খুবই পেরেশান হয়ে যান। স্বপ্ন বিশারদরা এর তাবীর করে বলেন, এটি কোন খারাপ স্বপ্ন নয়, এর ব্যাখ্যা হল, জুবাইদা এর মাধ্যমে এমন উপকারী একটি কাজ প্রকাশিত হবে, যার দ্বারা অসংখ্য মানুষ উপকৃত হবে। বাস্তবেও তাই হল তিনি নহরে জুবাইদা খনন করান। যার মাধ্যমে অনেক এলাকার মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। হজ্ব করতে আসা হাজীরা এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। {রাসাউল আখয়ার-৫১}
আল্লাহর হাজার শুকরিয়া! মুরাদ বিন আমজাদের মত কোন জাহিল সেই জমানায় ছিল না। যদি থাকতো তাহলে জুবাইদাকে জিনাকারী সাব্যস্ত করে সঙ্গেসার করে মৃত্যুর আদেশ দিয়ে বসতো তাই নয় কি?
আরো ভয়ংকর একটি স্বপ্নের কথা বলি-
২-
রাসূল সাঃ এর চাচি উম্মুল ফজল বিনতুল হারেস রাঃ এক স্বপ্ন দেখলেন। তারপর তিনি হুজুর সাঃ এর দরবারে এসে বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আজ রাতে আমি একটি খুবই খারাপস্বপ্ন দেখেছি। রাসূল সাঃ বললেন-তুমি কি দেখেছো? বল। তিনি বললেন-এটা খুবই শক্ত সন্দিহান স্বপ্ন। রাসূল সাঃ বললেন-বলনা শুনি কী দেখেছো? হযরত উম্মুল ফজল বললেন-আমি দেখেছি যে, আপনার শরীর থেকে এক খন্ড গোস্ত কেটে আমার কোলে এসে পড়েছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন-তুমি অনেক সুন্দর স্বপ্ন দেখেছো। এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল- আমার মেয়ের [ফাতিমা রাঃ] ঘরে যে বাচ্চা হবে সে তোমার কোলে খেলবে। তো হযরত হুসাইন রাঃ জন্ম নিলেন। আর তিনি আমার কোলে খেলেছেন, যেমনটি রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। {মেশকাতুল মাসাবিহ-২/৫৭২}
আল্লাহর হাজার শুকরিয়া মুরাদ বিন আমজাদের মত কোন জাহিল রাসূল সাঃ এর জমানায় ছিলনা। থাকলে হয়তো তার মতই ফাতওয়া দিত, উম্মে ফজল! তুমিতো গুস্তাখে রাসূল! কারণ তুমি রাসূল সাঃ এর শরীরের অঙ্গ কেটে ফেলেছো!!
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। আমরা ইংরেজদের জমানার পর জন্ম নিয়েছি। তাই ইংরেজ সৃষ্ট এ কথিত আহলে হাদীসদের ষড়যন্ত্র আর ধোঁকাবাজীর খপ্পরে পড়ছি। স্বপ্ন যা কেবল স্বপ্নই। সেটাকে বাস্তবতা বা জাগ্রত অবস্থার সাথে কোন আহমকও মিলায় না। কিন্তু কথিত শায়েখ এ মুরাদ বিন আমজাদ তা বাস্তবতার হুকুম আরোপ করে কি হাস্যকরভাবে কুরআন আর হাদীসের দলীল দিয়ে হযরত ফাতিমা রাঃ এর পবিত্রতা বর্ণনা করল।
হযরত ফাতিমা রাঃ এর পবিত্রতা কে অস্বিকার করে?
যে অস্বিকার করবে সেতো কাফির। এতে কার সন্দেহ আছে?
কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে এমন জালিয়াতী বক্তব্য প্রদানকারী কোন ব্যক্তিকে ইংরেজদের আসার আগে পৃথিবী আর দেখেছে কি না আমাদের জানা নেই।
এবার স্বপ্ন সম্পর্কে ইসলামী শরীয়ত এবং শরীয়ত বিশেষজ্ঞগণ কি বলে তা দেখে নিই-
এটি একটি স্বপ্ন ছিল। আর স্বপ্ন ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা হয়। স্বপ্নে মুখ থেকে যা বের হয় শরীয়তে এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। স্বপ্নের কোন বিষয় শরয়ী দলিল নয়। স্বপ্নে কোন কিছু হলে সেটার মাধ্যমে কোন কিছু প্রমাণিত হয় না। এমনকি কেউ যদি ঘুমের মাঝে কুফরী কালাম বলে তাহলে সে কাফের হয়ে যায় না। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর শরয়ী হুকুমই আরোপিত হয় না।
যেমন-عن عائشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قالرفع القلمعن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصغير حتى يكبر وعن المجنون حتى يعقل
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তিন ব্যক্তি থেকে [হিসাব-নিকাশের] কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১-ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, ২-না বালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, ৩-পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে সুস্থ্য হয়।
{তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৩০২৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪০৫, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৪২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৯৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০০৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪০}।
عن أبي قتادة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم :ليس في النوم تفريطإنما التفريط في اليقظة
হযরত কাতাদা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঘুমন্ত অবস্থার কোন ভুল হলে এতে কোন গোনাহ নেই, তবে সজাগ অবস্থায় হলে গোনাহ হবে।
{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫৯৪,সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৮৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৬০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৯০২, সুনানে সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৭৩৭, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৯৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৭৭, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-২১০১, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৩০৭৫}।
এ সকল বর্ণনা দ্বারা ফুক্বাহায়ে কিরাম এ উসূল ও মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন যে, ঘুমন্ত অবস্থায় যে কোন ধরণের কাজই কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। চাই কেউ মুসলমান হোক, বা কেউ নাউজুবিল্লাহ মুরদাত হয়ে যাক। চাই কেউ বিবাহ করে নিক, বা কেউ তালাক দিয়ে দেক।
তাইতো আল্লামা মুহাম্মদ আমীন বিন ওমর আশ শামী রহঃ লিখেছেন- ﻭﻟﺬﺍ ﻻ ﻳﺘﺼﻒ ﺑﺼﺪﻕ ﺃﻭ ﻛﺬﺏ ﻭﻻ ﺧﺒﺮ ﻭﻻ ﺇﻧﺸﺎﺀ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﺮ : ﻭﺗﺒﻄﻞ ﻋﺒﺎﺭﺗﻪ ﻣﻦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻭﺍﻟﺮﺩﺓ ﻭﺍﻟﻄﻼﻕ ، ﻭﻟﻢ ﺗﻮﺻﻒ ﺑﺨﺒﺮ ﻭﺇﻧﺸﺎﺀ ﻭﺻﺪﻕ ﻭﻛﺬﺏ ﻛﺄﻟﺤﺎﻥ ﺍﻟﻄﻴﻮﺭ
অনুবাদ-আর এ কারণে ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা, সত্য, মিথ্যা, সংবাদ, চুক্তি সম্পদান, ইত্যাদি গুণে গুনান্বিত হবে না। আর তাহরীরুল উসূলে রয়েছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা, যেমন ইসলাম গ্রহণ, অথবা মুরতাদ হয়ে যাওয়া, স্ত্রীকে তালাক দেয়া, ইত্যাদি সবই নিরর্থক হবে। না এসবকে সংবাদ বলা যাবে। না ইনশা, না সত্য, না মিথ্যা। এসবই পাখির আওয়াজের মতই বেকার সাব্যস্ত হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-২/৮৫৫, তালাক অধ্যায়, বেহুশ ব্যক্তির তালাক পরিচ্ছেদ, মিশরী ছাপা}
এর পর আরো লেখেন- ﻭﻣﺜﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﻠﻮﻳﺢ ، ﻓﻬﺬﺍ ﺻﺮﻳﺢ ﻓﻲ ﺃﻥ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﻨﺎﺋﻢ ﻻ ﻳﺴﻤﻰ ﻛﻼﻣﺎ ﻟﻐﺔ ﻭﻻ ﺷﺮﻋﺎ ﺑﻤﻨﺰﻟﺔ ﺍﻟﻤﻬﻤﻞ
অনুবাদ-আর এমনিভাবে তালওয়ীহ এ আছে যে, এসব ইবারত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঘুমন্ত অবস্থার কথা না শাব্দিকভাবে কোন অর্থ আছে, না শরয়ীভাবে কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে। {প্রাগুক্ত}
শায়েখ ইবনে তাইমিয়া স্বপ্নের ব্যাপারে লিখেন- ﻭﺍﻟﺮﺅﻳﺎ ﺍﻟﻤﺤﻀﺔ ﺍﻟﺘﻰ ﻻ ﺩﻟﻴﻞ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﺘﻬﺎ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺃﻥ ﻳﺜﺒﺖ ﺑﻬﺎ ﺷﻴﺊ ﺑﺎﻹﺗﻔﺎﻕ
অনুবাদ-স্বপ্ন, যার সহীহ হওয়ার উপর কোন দলিল নেই। তার দ্বারা কোন কিছু প্রমাণিত হয় না সর্বসম্মত মতানুসারে। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৭/৩৩৩}
হায় জাহালাত! হায় মুর্খতা! কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে যদি সামান্যতম পড়াশোনা থাকতো এ জাহিল মুরাদ সাহেবের। তাহলে এত বড় মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বেআদবীমূলক কথা লেখার আগে অন্তত আখেরাতের ভয়টা আসতো।
কিন্তু আফসোস! ইংরেজ সৃষ্ট দলকে আল্লাহ তাআলা ইলমের নূরকেও হয়তো উঠিয়ে নিয়েছেন। নতুবা এমন জাহিলী বক্তব্য দিয়ে বই কিভাবে রচনা করতে পারে?
মুরাদ বিন আমজাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন:
১ম প্রশ্ন আপনি থানবী রহঃ এর স্বপ্ন নিয়ে যে তিনটি বিষয় সাব্যস্ত করেছেন, তথা- ১ স্বপ্ন বাস্তবতার মতই। বাস্তবে করলে যে হুকুম স্বপ্নে কোন কিছু দেখলে একই হুকুম। ২ স্বপ্নে বেগানা কাউকে দেখা বাস্তবে দেখার হুকুমে। ৩ পর্দানশীন নারীকে স্বপ্নের ঘোরে পর্দাহীন অবস্থায় দেখা উক্ত নারী পর্দাহীন হয়েছেন মর্মে প্রমাণিত হয়।
আপনার এসব দাবির স্বপক্ষে কুরআনের একটি আয়াত পেশ করুন। কিংবা একটি সহীহ হাদীস পেশ করুন। যদি না পারেন, তাহলে সাধারণ মুসলমানদের ধোকা দিয়ে দাজ্জালী করার কারণে প্রকাশ্যে কানে ধরে তওবা করুন।
২য় প্রশ্ন আপনার বক্তব্য মতে যেহেতু স্বপ্নের কাজ জাগ্রত অবস্থায় কাজ করার মতই, তাহলে যাদের স্বপ্নদোষ হয়, তাদেরকে কি আপনি জিনাকারী হবার ফাতওয়া প্রদান করেন কি না?
তাহলে আপনার যতবার স্বপ্নদোষ হয়েছে ততবার আপনি নিজেকে জিনার শাস্তি প্রদান করেননি কেন?
শেষকথা ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীসদের জন্মই হয়েছে উপমহাদেশে মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য।
তাই হে মুসলিম সাবধান! যাদের মাধ্যমে দ্বীন পেয়েছেন তাদের ব্যাপারে এ অধুনা জমানার কোন দাজ্জালের কথা শুনেই সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করবেন না। বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞ আলেমদের শরনাপন্ন হোন। বিষয়টি তাহকীক করুন।
আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীস ফিতনা এবং এসব নব্য জাহিলদের থেকে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন