বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

আযম মুল্লুকের বাদশাহর ঘটনা

আজম মুলুকের এক বাদশাহর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সে তার জুলুম-অত্যাচারের কালোহাত প্রজাদের ধন-সম্পদের ওপর বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং প্রজাদেরকে অত্যাচার করতে শুরু করল। প্রজাবৃন্দ তার অবৈধ হস্তক্ষেপে বিরক্ত হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে লাগল। বাদশাহর অত্যাচারে লোকজন নিষ্পেষিত হয়ে ভিখারী হতে লাগল। যখন রাজ্যের লোকজন কমতে লাগল, তখন রাজস্ব খাতে ঘাটতি দেখা দিল। রাজকোষ শূন্য হতে লাগল। শত্র“রা সুযোগ বুঝে লোভ করতে লাগল এবং রাজ্য আক্রমণ করে বসল।
বিপদের সময় যে ব্যক্তির সাহায্যকারীর প্রয়োজন আছে, তার উচিৎ সুস্থ সময়ে লোকের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা। অধীনস্ত লোকদেরকে যদি সাহায্য ও সম্মান না করে, তাহলে তারা দূরে চলে যাবে। মেহেরবানী কর; কেননা, মেহেরবানী ও দয়া দেখালে শত্র“ও আপন হয়ে যায়।
একদিন বাদশাহর দরবারে শাহনামা আবৃত্তি করা হচ্ছিল, তাতে জিহাক বাদশাহর রাজ্য ধ্বংস হওয়ার কথা এবং ফরিদুন বাদশাহর রাজ্যের বর্ণনা করা হয়েছিল। বাদশাহর ধন-ভাণ্ডার, রাজত্ব ও সৈন্য-সামন্ত কোনটাই ছিল না, কেমন করে তার বিরাট রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হল? বাদশাহ উত্তর দিলেন, তুমি যে রকম শুনেছ, সর্বসাধারণ তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল এবং তাকে সবলে সাহায্য সহায়তা করেছিল বলে বাদশাহী পেয়েছিল। তখন উজির বলল, হে বাদশাহ! জনগণের সাহনুভূতি ও সাহায্য যখন বাদশাহী পাবার কারণ হয়, তাহলে আপনি কেন মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন? আপনি মনে হয় বাদশাহী করার ইচ্ছা রাখেন না।
আপনার জন্য এটাই উত্তম যে, আপনি সৈন্যদেরকে নিজের মতো মূল্যবান মনে করবেন। কেননা, বাদশাহের বাদশাহী তার সৈন্য বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল।
বাদশাহ উত্তর দিলেন, কি উপায় অবলম্বন করলে লোকজন আমার সাথে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। উজির বলল, বাদশাহকে সব সময় অনুগ্রহশীল ও দাতা হতে হবে। তাহলে সকলেই তার সাহায্যকারী হবে। দয়া করলে, আপনার সম্পদ নিয়ে নিশ্চিতভাবে ও নিরাপদে বসে থাকতে পারবেন। কিন্তু আপনি এ দুটি গুণের একটি গুণের অধিকারী হননি।
নিজের উজিরের এমন উপদেশপূর্ণ কথা বাদশাহর মনঃপুত হল না। তার কথা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং উজিরকে জেলখানায় বন্দি করল। অল্পদিনের মধ্যে বাদশাহর চাচার ছেলেরা তাদের পিতার রাজ্য দাবী করল, প্রজাবৃন্দ যারা বাদশাহর জুলুমে অত্যাচারে নিষ্পেষিত হচ্ছিল, তারা তাদের সাথে এসে যোগ দিল এবং শক্তি বাড়িয়ে দিল। যুদ্ধে বাদশাহ পরাজয় বরণ করল এবং রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গেল। চাচার ছেলেরা রাজত্ব পেল।
প্রজাদের ওপর জুলুম অত্যাচারকে যে বাদশাহ বৈধ মনে করে, তার বন্ধুরাও অসময়ে তার ঘোর শত্র“রূপে আত্মপ্রকাশ করে। প্রজাদের সাথে সন্ধি করে শত্র“দের আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকো। কেননা, প্রজাবৃন্দ ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর সৈন্য স্বরূপ।                                                            খাদিজা আক্তার, শান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন