বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

মন্দধারণার পরও তওবা করা চাই : মুফতি আশরাফুল ইসলাম

হাকিম তিরমিযি রহ. একজন নামকরা মুহাদ্দিস ও চিকিৎসক ছিলেন। তিনি সেই সময় রোগী অপারেশন করে মাটির নিচে ব্যাংকার বানিয়ে তাকে সেখানে রাখতেন যেন কোন জীবাণু স্পর্শ করতে না পারে । তিরমিযি রহ. যুবক বয়সের ঘটনা, এক দিন তিনি সকল রোগী দেখা প্রায় শেষ করলেন। ঠিক সে সময়ে একজন মহিলা শুধু দেখার বাকী ছিলেন। হাকিম সাহেব শেষ রুগী হিসেবে তাকে আসতে বললেন। কিন্তু এই মহিলা হাকিম তিরমিযি রহ. এর সামনে এসেই বোরকার নেকাব খুলে ফেললেন! অসাধারণ সুন্দরী মুখশ্রী হাকিম সাহেবকে দেখিয়ে বলতে লাগলেন- ‘আমি অনেক সুযোগ খুঁজে আজকের এই মুহূর্তে আপনাকে সামনে পেয়েছি। আপনাকে আমার অনেক ভাল লাগে। তাই আজ আপনি আমার মনের বাসনা পুরো করে দেন। হাকিম তিরমিযি রহ. মেয়েটির এই কথা শুনে তাকে কড়া কথা শুনিয়ে কামড়া হতে তাৎক্ষণিক বের করে দিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে বৃদ্ধ বয়সে হাকিম তিরমিযি রহ. এক দিন ওযু করছিলেন। তখন তার যৌবনকালের সেই সুন্দরী মহিলার চাহিদা মিটানোর প্রস্তাবের কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও ভাবতে লাগলেন – ”সেদিন তো সুযোগ ছিল ঐ মহিলার চাহিদা মিটিয়ে তাকে আনন্দ দেবার এবং নিজেও আনন্দ পাবার! আজ না হয় তওবা করে নিতাম, আল্লাহ্ ও মাফ করে দিতেন!
ব্যাস, এত টুকু ভাবার পর তার ঈমান তাকে নাড়া দিয়ে উঠল। চুল সাদা , দাঁড়ি সাদা, শরীরে শক্তি নেই, চামড়া ভাঁজ পড়ে গেছে আর আমি জীবনের এত এত বছর পর বৃদ্ধ বয়সে সেই নারীর পাপাচার প্রস্তাবের সমর্থনের খেয়াল করছি!!
সাথে সাথে যোহরের নামাজের ওযু করে তিনি নামাজ পড়ে এই খারাপ খেয়ালের জন্য ‘আল্লাহ্র দরবারে ‘কাঁদতে লাগলেন, আসর পর্যন্ত কাঁদলেন, তারপর মাগরিব পর্যন্ত কাদলেন, তারপর তিনি এশা পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লেন।’ আল্লাহু আকবার’ যখন আল্লাহ্র ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লেন তখন রাসূল সা. স্বপ্নে তার সামনে এসে তাকে বলতে লাগলেন- ‘কি ব্যাপার এত কান্নার কি আছে?’
হাকিম তিরমিযি রহ. বললেন- ‘হে রাসূল সা.! যৌবনকালে এই সুন্দরী নারীকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে আমি সেই গুনাহর খেয়াল করলাম তাই আল্লাহ্ নারাজ হলেন কিনা সেই ভয়ে কাঁদছিলাম। রাসূল! এই বয়সে কেন ঐ খেয়াল আমার আসলো?
রাসূল সা. তাকে বললেন- খেয়ালের ওপর আল্লাহ্  পাকড়াও করবেন না। ভয় নেই। আর খেয়াল এখন কেন আসলো জান- ‘তুমি যখন যুবক ছিলে তখনকার সময়টা আমার যামানার নিকটবর্তী ছিল তাই যুবক বয়সে এই মেয়ের কোন প্রভাব পড়েনি কিন্তু তোমার বৃদ্ধ বয়সটা আমার যামানা হতে অনেক বছর দূরে সরে গেছে তাই এখন তোমার ওপর সেই নারীর আবেদনের প্রভাব পড়েছে।
বন্ধুগণ! এই ঘটনা হতে আমাদের পাপাচারের আড়ালে হাজার প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে আছে। হাকিম তিরমিযি রহ. এর সময় যদি রাসুলের যামানা হতে দূরে সরার কারণে এই অবস্থা হয় তাহলে আজকে তো রাসুলের যামানা আমাদের যামানা হতে ১৪০০ বছর দূরে তাহলে আমাদের কি অবস্থা?
আর গুনাহের খেয়ালের ওপর যোহর হতে এশা পর্যন্ত তিনি কেঁদেছেন কিন্তু আমরা কি ৫ মিনিট গুনাহ করে কখনও কেদেছি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন