শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

***** এপ্রিল ফুল কী *****


এপ্রিল ফুল দিবসটি সৃষ্টির সাথে রয়েছে মুসলমানদের করুণ ও হৃদয়র্স্পশী এক ইতিহাস। ১লা এপ্রিলের এই ইতিহাস অন্যান্য জাতি জানলেও অনেক মুসলিম জাতি না জানার কারনে এই বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছে।


তৎকালীন ইউরোপীয় দেশ স্পেনে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ এর নেতৃত্বে ৭১১ খ্রীস্টাব্দে ইসলামি পতাকা উড্ডীন হয় এবং মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। সুদীর্ঘ প্রায় আটশ বছর পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের গৌরবময় শাসন বহাল থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে আস্তে আস্তে মুসলিম সাম্রাজ্যে ঘুন ধরতে শুরু করে এবং মুসলিম শাসকরাও ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে মুসলিম দেশগুলোও ধীরে ধীরে মুসলমানদের হাত ছাড়া হয়ে খ্রীস্টানদের দখলে যেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আসে স্পেনের পালা। মুসলিম শাসনে নেমে আসে পরাজয়ের কাল ছায়া। খ্রীস্টান জগত গ্রাস করে নেয় স্পেনের বিজয় পতাকা।

এক পর্যায়ে মুসলিম নিধনের লক্ষ্যে খ্রীস্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড বিয়ে করে পর্তুগীজ রানী ইসাবেলাকে। যার ফলে মুসলিম বিরোধী দুই বৃহৎ খ্রীস্টান শক্তি সম্মিলিত শক্তি রুপে আত্মপ্রকাশ করে। রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড খুঁজতে থাকে স্পেন দখলের মোক্ষম সুযোগ। পরবর্তীতে মুসলিম সভ্যতার জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল গ্রানাডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এক পর্যায়ে মুসলমানদের অসতর্কতার সুযোগে খ্রীস্টান বাহিনী ঘিরে ফেলে গ্রানাডার তিন দিক। এক মাত্র মহাসমুদ্রই বাকী থাকে মুসলমানদের বাঁচার পথ। অবরুদ্ধ মুসলমানগন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এদিক সেদিক ছুটতে থাকে। মুসলমানদের এই অসহায় অবস্থায় রাজা ফার্ডিন্যান্ড প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি দেশব্যাপী ঘোষনা করে দেন - "যারা অস্ত্র ত্যাগ করে মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেবে এবং সমুদ্র পাড়ে রক্ষিত নৌযানগুলোতে আরোহন করবে তাদেরকে সব রকমের নিরাপত্তা দেওয়া হবে"। এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে মুসলমানগন যেন আশার আলো খুঁজে পায়। সরল মনে বিশ্বাস করে মুসলমানগন মসজিদ ও নৌযানগুলোতে আশ্রয় গ্রহন করে। কিন্তু ইতিহাসের জঘন্য নরপিশাচ প্রতারক রাজা ফার্ডিন্যান্ড তালা লাগিয়ে দেয় মসজিদগুলোতে এবং মাঝ দরিয়ায় ভাসিয়ে দেয় নৌযানগুলোকে। এরপর বিশ্ব মানবতাকে পদদলিত করে ঐ মানুষ নামের পশু ফার্ডিন্যান্ড আগুন লাগিয়ে দেয় মসজিদগুলোর চার পাশে এবং মধ্যসমুদ্রে ডুবিয়ে দেয় নৌযানগুলোকে। ফলে অগ্নিদগ্ধ ও পানিতে হাবুডুবু খাওয়া লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ আর নিষ্পাপ শিশুর আর্ত চিৎকারে ভারি হয়ে উঠে স্পেনের আকাশ বাতাস। মুহূর্তের মধ্যে নির্মমভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় সাত লক্ষ মুসলমানের তাজা প্রান। আর এরই মধ্যে ইতি ঘটে স্পেনের আটশ বছরের মুসলিম শাসনের, আর পৃথিবীর ইতিহাসে রচিত হয় মনবতা লঙ্ঘনের নির্মম অধ্যায়। যেদিন এই মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন ছিল ১৪৯২ খ্রীস্টাব্দের ১লা এপ্রিল। তখন থেকে মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেওয়ার সেই নিষ্ঠুর ইতিহাস স্মরনার্থে খ্রীস্টানরা প্রতি বছর এপ্রিল ফুল পালন করে আসছে।

দুঃখের সাথে বলতে হয় "এপ্রিল ফুল" এর প্রকৃত ইতিহাস সর্ম্পকে না জানার কারণে আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের দুর্ভাগ্যকে আনন্দের খোরাক বানিয়ে এপ্রিল ফুল পালন করছি।

আমরা আর কতকাল আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকব ? নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য সর্ম্পকে অজ্ঞতার ধারা আর কতদিন আমাদের মধ্যে বিরাজ করবে। অথচ এই অজ্ঞতাই আমাদের জন্য সবচেয়ে মারাত্নক কাল হয়ে দেখা দিয়েছে।


এপ্রিলের ৬ তারিখ পবিত্র কাবার সুনাম-ধন্য ইমাম ড,আঃরহমান সুদাইসী বাংলাদেশে আসতেছেন ৷


এপ্রিলের ৬ তারিখ পবিত্র কাবার সুনাম-ধন্য ইমাম ড,আঃরহমান সুদাইসী বাংলাদেশে আসতেছেন ৷
সোহরাওয়ার্দীর মাঠে বিকাল 3 টা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সকলেই আসবেন ইনশাআল্লাহ ৷
(ইসলামি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রনে আসতেছেন)

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

শরয়ী মানদণ্ডে “ডিজিটাল ছবি ভিডিও ও টেলিভিশন”


জামিয়া দারুল উলুম করাচী ,পাকিস্তান ৷

এই ফাতওয়ায় তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে:
১. প্রাণীর ছবি সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের মতামত।
২. ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে ডিস্ক ও সিডিতে ধারণকৃত দৃশ্যের হাকিকত।
৩. বর্তমানে টিভির শরয়ী বিধান।
**************************
প্রথম অধ্যায়:
১. প্রাণীর ছবি সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামের মতামত-
প্রাণীর ছবি বানানো ও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম এই হুকুম অসংখ্য সহীহ হাদীস, সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবেয়ীগণের বক্তব্য ও আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই চার মাযহাবের ইমামগণ এবং ফুকাহায়ে কিরাম একান্ত প্রয়োজন ব্যতীরেকে প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার উপর ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। তবে বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কিরামের মাঝে কিছু মতানৈক্য পাওয়া যায়।

ফুকাহায়ে কিরামের মতামতের সারসংক্ষেপ হতে তিন ধরনের ছবির বর্ণনা পাওয় যায়।
১. দেহবিশিষ্ট বা ত্রিমাত্রিক ছবি
২. দেহবিহীন বা অংকিত ছবি।
৩. ফটোগ্রাফী ও ডিজিটাল ছবি।
*******************************
দেহবিশিষ্ট ছবি-
এমন ছবি, যাতে কোন প্রাণীর জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহ বিদ্যমান রয়েছে এবং একেবারে ছোটও নয় ও খেলনা জাতীয় পুতুলও নয়। এ জাতীয় ছবি বানানো ও ব্যবহার হারাম হওয়ার ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরাম ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। এত কারো কোন দ্বিমত নেই।
***********************************
দেহবিহীন ছবি-
এমন ছবি যা কাগজ কিংবা কাপড়ে অংকিত এবং যার প্রকৃত কোন ছায়া নেই। এ জাতীয় ছবির ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতানৈক্য বিদ্যমান।
জমহুর ফুকাহায়ে কিরামের নিকট এমন ছবিও নাজায়েয। ইমাম মালেক রহ. হতে এ ব্যাপারে দ্বিমুখী বর্ণনা পাওয়া যায়।
মালেকী মাযহাবের মুহাক্কিক আলেমদের মধ্য হতে আল্লামা ইবনুল কাসেম মালেকী, আল্লামা ইব্বী মালেকী, আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মাওয়াক্ব, আল্লামা মুহাম্মদ আল উলাইশ আল মালেকী প্রমুখ এমন ছবি জায়েয হওয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
এমনিভাবে হাম্বলী মাযহাবেও এ ব্যাপারে দ্বিমুখী বর্ণনা পাওয়া যায়।
হাম্বলী মাযহাবের মুহাক্কিক আলেম আল্লামা ইবনে কুদামা রহ. তার কিতাব المغنى:৭/২১৫، ১০/২০১ এর মধ্যে এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তার কিতাব فتح البارى:১০/৩৮৩،৩৮৮ এর মধ্যে হাম্বলী মাযহাবের বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, হাম্বলী মাযহাবের কাপড়ের উপর অংকিত ছবি হারাম নয়। এছাড়াও আল্লামা আবুল হাছান আলী বিন সুলাইমান আল মুরদাবী রহ. আল্লামা শাইখ ইবনে উকাইল, আল্লামা ইবনে হামদান হাম্বলী প্রমূখ এমনই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
এরূপভাবে মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাব ছাড়াও সালফে সালেহীনের মধ্যে হতে আল্লামা কাসেম বিন মুহাম্মদ বিন আবু বকর রহ. সহ সাহাবী এবং তাবেয়ীদের কারো কারো থেকে ছায়া বিশিষ্ট ছবি এবং ছায়া বিহীন ছবি এর মাঝে পার্থক্য করার বর্ণনা পাওয়া যায়।
****************************

ফটোগ্রাফী বা প্রিন্টকৃত ছবি-
এমন ছবি যা হাত দ্বারা বানানো নয়, বরং ক্যামেরার মাধ্যমে তৈরিকৃত। এ পার্থক্যের কারণে বর্তমান সময়ের কতিপর আলেম এ জাতীয় ছবিকে নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভূক্ত করেননি, বরং তা জায়েয বলে উল্লেখ করেছেন।
যেমন আরবের বিশেষজ্ঞ আলেমদের মধ্য হতে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনু সালেহ আল উসাইমিন, আল্লামা শাইখ ছালুস, শাইখ আহমাদ আল খতীব উস্তাদ আহমদ মুহাম্মদ জামাল, শাইখ মুহাম্মদ আল খিজির হুসাইর (শাইখে আযহার) আল্লামা হুসাইন মুহাম্মদ মাখলুক (মুফতিয়ে মিসর) শাইখ সায়্যিদ সাবেকসহ প্রমূখ আলেমগণ ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তূর্ভূক্ত করেননি।
আল্লামা শাইখ সায়্যিদ সাবেক তার কিতাব فقه السنة এর মধ্যে লিখেন-
أما الصور التي لا ظل لها، كالنقوش في الحوائط وعلى الورق والصور التي توجد في الملابس والستور والصور الفوتو غرافية فهذه كلها جائزة.( فقه السنة: ২/৫৮)
অনুবাদ: ছায়াহীন ছবি। যেমন দেয়াল, পয়সা, কাপড়, পর্দা ইত্যাদিতে অংকিত ছবি এবং ফটোগ্রাফী এ সকল ছবি জায়েয।
উক্ত বক্তব্যের সমর্থন আল্লামা শাইখ মুহা. বুখাইত (মুফতিয়ে মিসর) এর লিখিত রিসালাহ الجواب الشافى فى اباحة التصوير الفتوغرافى:২০০ তে পাওয়া যায়।
এমনিভাবে আল্লামা শাইখ ড. ইউসুফ আব্দুল্লাহ আল কারাযাভী দা.বা. তার কিতাব الحلال والحرام فى الاسلام এর ১৪ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
اما تصوير اللوحات وتصوير الفوتوغرافى فقد قدمنا الأقرب الى روح الشريعة فيهما هوالاباحة …. الخ (الحلال والحرام فى الاسلام:১৪)
অনুবাদ-
বিভিন্ন জিনিসে অংকিত ছবি এবং ফটোগ্রাফী বৈধ হওয়াই হল روح شريعة শরীয়তের চাহিদার অনুকুল।

বিজ্ঞ আলেমদের অনেকে ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করেছেন এমনকি উপমহাদেশের প্রায় সকল আলেম এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, ফটোগ্রাফী এবং হাতে বানানো ছবি উভয়টি না জায়েয হওয়ার দকি থেকে কোন পার্থক্য নেই। আর উপমহাদেশের সকল দারুল ইফতা এই ফাতওয়া প্রদান করছে যে, একান্ত প্রয়োজন এবং বৃহৎস্বার্থ ব্যতীত কোন অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি তোলা বৈধ নয়।
করাচীসহ সকল দারুল ইফতার অবস্থান এখন পর্যন্ত এটাই যে, ছবি শুধু কলম, রং কিংবা এ জাতীয় পদার্থ দ্বারা কাগজ, কাপড় দেয়াল ইত্যাদির উপর হাত দ্বারা বানানো অথবা পাথর ইত্যাদি দ্বারা তৈরি ভাস্কর্যই নয়, বরং ওই সকল পদ্ধতিও ছবির অন্তর্ভূক্ত যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর স্পষ্ট আকৃতি কাগজ, কাপড়, দেয়াল ইত্যাদি এ জাতীয় কোনো বস্তুর উপর এমনভাবে অংকন করা যে, এ আকৃতি ওই বস্তুর উপর স্থির হয়ে যায়। চাই তা পুরাতন কিংবা নতুন যন্ত্রের মাধ্যমে হোক না কেন। যেমন Non Digital ক্যামেরার নেগেটিভ এর উপর অংকিত আকৃতি অথবা ফটাগ্রাফীর মাধ্যমে নির্মিত ছবি তথা প্রিন্টকৃত ছবি।
তাই আমাদের আকাবিরিনে কেরাম ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবি হতে পৃথক মনে করেন অথবা ফটোগ্রাফী দ্বারা নির্মিত ছবিকে হারাম ছবি মনে করেন না এ ধারণা করা সঠিক নয়।
বিস্তারিত تكملة فتح الملهم ৪/১৬২-১৬৩

এমনিভাবে মুফতি শফী রহ. তার রিসালাহ تصوير كى شرعى احكامএর মধ্যে দলীলের আলোকে প্রমাণ করেছেন যে, ছবি চাই তা হাতে বানানো হোক কিংবা নবআবিস্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে হোক তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। যন্ত্রের পরিবর্তনের কারণে হুকুমের মাঝে কোন পরিবর্তন হবে না।
*******************************

ফটোগ্রাফী এবং ডিজিটাল ক্যামেরার দৃশ্যের মধ্যে পার্থক্য
আমাদের আকাবিরগণ ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করেছেন। কেননা ছবি হল, কোনো জিনিসের চিত্র স্থীর হওয়ার নাম অর্থাৎ সেটা কোন বস্তুর উপর এমনভাবে অবস্থান করা যে, তা ওই বস্তুর উপর স্থীর হয়ে যায়। আর এটাই হলো কোনো জিনিস ছবি হওয়া বা না হওয়ার মাঝে মূল পার্থক্য।
সুতরাং যদি কোনো প্রাণীর আকৃতি কোন বস্তুর উপর স্থীর হয়ে যায় তাহলে তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। আর যদি তা স্থীর না হয় তা শরয়ী দৃষ্টিতে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত হবে না। কেননা হারাম ছবির মূল বৈশিষ্ট হল স্থির হওয়া যা এখানে পাওয়া যায়নি।
আর ফটোগ্রাফীর মধ্যে যেহেতু হারাম ছবির মূল বৈশিষ্ট ( কোন বস্তুর উপর স্থির হওয়া) পাওয়া যায় তাই তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। এ জন্য Non Digital ক্যামেরার মাধ্যমে প্রাণীর যে ছবি তোলা হয় তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। কেননা, চাই তা Rim তথা Negative অবস্থায় হোক কিংবা কাগজে ছাপানো হোক সর্বাবস্থাতেই তাতে স্থীরতা পাওয়া যায়।
এর সম্পূর্ণ বিপরীত হলো ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি। কেননা, উক্ত ছবি যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিন্ট করা না হয় তা স্ক্রীন এর সীমার মধ্যে স্থীর হয় না।
ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্যাবলী সাধারণত কিছু আলোকরশ্মীর আকৃতিতে সিডি কিংবা মেমোরীতে এমনভাবে সংরক্ষিত থাকেব, যা খারিল চোখে দেখা যায় না। এমনকি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। কারণ তা ছবি আকৃতিতে সেখানে বিদ্যমানই থাকে না।
আর যখন তা সিডি বা মেমোরী হতে স্ক্রীনে কিংভা পর্দায় প্রকাশ করা হয় তখন তা অস্থায়ী আলোক রশ্মীর মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায়। এক মুহুর্তের জন্যও তা স্থীর থাকে না। এ জন্য ছবির মূল বৈশিষ্ট স্থীর হওয়া এতে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং Non Digital ক্যামেরার ছবি সন্দেহাতীতভাবে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। আর Digital ক্যামেরার দৃশ্যাবলী হারাম ছবির হুকুমে নয়।
ডিজিটাল এবং Non Digital ক্যামেরা এর মধ্যে উক্ত পার্থক্য বিজ্ঞানীরা তাদের লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যেমন মার্শাল ব্রেইন তার গ্রন্থ How Stuff Works এর মধ্যে উল্লেখ করেন How digital cameras work?…….
এমনিভাবে উইকিপিডিয়া ইনসাইক্লোপিডিয়া তে Understanding resolution নামক শিরোনামে উল্লেখ আছে-

**************************************
২য় অধ্যায় ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে ডিস্ক ও সিডিতে ধারনকৃত দৃশ্যের হাকীকত
প্রশ্ন:
ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্যাবলী কম্পিউটার মনিটর, সিডি, ভিডিও ক্যাসেট ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষণ করে স্ক্রীন, মনিটর টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত কি-না?
উত্তর:
تكملة فتح الملهم:৪/১৬২-১৬৩ এর মধ্যে লেখা রয়েছে যে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধারনকৃত দৃশ্যাবলী কাগজ ইত্যাদিতে প্রিন্ট হওয়ার পূর্বে ছবির আকৃতিতে কোথাও স্থীর হয় না। এজন্য তাকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করা খুবই দূরুহ ব্যাপার।
এ বিষয়টি তাহকীকের জন্য تجلس تحقيق مسائل حاضرة كراسى বিজ্ঞ মুফতিদের প্রথমে ২৩ মুর্হারম ১৪২৫ হি. জামিয়া দারুল উলুম করাচীতে, পরবর্তীতে ১৬ সফর ১৪২৫ হি. একটি Confarance (সভা) এর আহ্বান করা হয়। অতপর এ বিষয়ে ২ রবিউল আউয়াল ১৪২৭ হি. ১২ মে ২০০৬ ইং তারিখে দারুল উলুম করাচীর দারুল ইফতায় একটি বিশেষ বৈঠক করা হয়। উক্ত বৈঠকে পাকিস্তানের দেশ বরেন্য বিজ্ঞ মুফতিদের প্রায় ৩৫জন অংশ গ্রহন করেন।
****************************************

উক্ত কনফারেন্সে যে সকল সিদ্ধান্ত হয় তার সারসংক্ষেপ নিম্বরূপ-
১.
এ বিষয়ে সকলে একমত যে, ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়র দৃশ্যাবলী ছবি কি ছবি নয় বিষয়টি কোন দিকই চূড়ান্ত নয় বরং তা مجتهد فيه তথা ইজতিহাদী একটি বিষয়। এবং এতে সমসাময়িক আলেমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
২.

এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, টিভি অসংখ্য ফিতনার কারণ তাই বর্তমানের টিভি ঘরে রাখা হতে বিরত থাকাই উচিত।
৩.

ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ধারনকৃত দৃশ্যের ব্যাপারে তিনটি মতামত পাওয়া যায়।
ক.
সম্পূর্ণ হারাম।
খ.

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দৃশ্যাবলী হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত নয়। এ জন্য শরয়ী কোন নিষেধাজ্ঞা না জাওয়া যাওয়ার শর্তে তা ব্যবহার বৈধ।
গ.

শুধুমাত্র জিহাদের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করার অনুমতি আছে।
দারুল উলুম করচীর ফাতওয়া-
উপরে আলোচিত তিনটি মতামতের মধ্যে হতে দারুল উলুম করাচীর ফাতওয়া দেয়ার ক্ষেত্রে ২য় মতটিই গ্রহনযোগ্য মনে করা হয়। হাকীকত হলো, Digital যন্ত্রের মাধ্যমে স্ক্রীন এর উপর প্রাণীর যে, চিত্র দৃশ্যমান হয় তা প্রকৃতপক্ষে ছবিও নয়عكس (প্রতিবিশ্ব) ظل (প্রতিচ্ছবি)ও নয়। ظل না হওয়ার বিষয়ে প্রায় সকলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং তা স্পষ্ট।
*******************************************

ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্যাবলী কেন ছবি নয়?
কোনো আকৃতি বা প্রতিবিম্বকে ওই সময়ই ছবি বলা চয় যখন তা কোন কিছুর উপর স্থীর হয়। কিন্তু ভিডিও ক্যাসেট, সিডি USB হার্ডডিস্ক, ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত ডাটা ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে CD এবং Analog to digital Converter এর সাহায্যে কোন عكس(প্রতিবিম্বের) আলোকরশ্মী দ্বারা কিছু Im pormation গ্রহন করে থাকে। আর এই ওস Im pormation ছবির আকৃতিতে সেখানে সংরক্ষিত হয় না, বরং ডিজিটাল কিছু সাংকেতিক চিহ্নের আকৃতিতে এমনভাবে সংরক্ষিত হয় যে, তা দেখাও যায় না পড়াও যায় না, এমনটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র এর মাধ্যমেও দেখা যায় না।
সুতরাং ভিডিও ক্যাসেপ, সিডি ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত সাংকেতিক চিন্নসমূহ ছবি না হওয়াটা একেবারে স্পষ্ট। আর ভিডিও ক্যাসেট সিডি ইত্যাদি চালানোর পর স্ক্রীনে যা দৃশ্যমান হয় তাও ছবি নয় এজন্য যে, সেটি বাস্তবে Electronic Signals বা Digital ক্যামেরা অথবা Digital মেশিনে বিদ্যমান এক বিশেষ Device অথবা ABC এর সাহায্যে দেয়াল অথবা স্ক্রীন এর উপর অস্থায়ী আকৃতিতে প্রকাশিত হয়ে সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায়।
সুতরাং এ সমস্ত দৃশ্যাবলী প্রিন্ট করার পূর্বে স্ক্রীন এর সীমার মধ্যে স্থায়ীভাবে কোথায় ও স্থীন হয় না, এজন্য এ সমস্ত দৃশ্যাবলী ছবির হুকুমে নয়। যেমনটি মার্শাল ব্রেইন তার বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
আমারদের আকাবিরগণের অনেকে ছবি ও প্রতিবিম্ব . এর মাঝে পার্থক্য বুঝাতে গিয়ে স্থীন ও স্থায়ীত্বকেই মূলনীতি হিসেবে গ্রহন করেছেন।
যেমন আল্লামা মুফতি শফী সাহেব রহ. তার কিতাব تصوير كى شرعى احكام:৫১ এর মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
আল্লাম যফর আহমদ উসমানী রহ. তার কিতাব امداد الاحكام:৪/৩৮৪ এর মধ্যে ছবি ও ফটো সম্পর্কৃত এক প্রশ্নের জবাবে উক্ত পার্থক্ত তুলে ধরেন-
سب سے بٹرا فرق تو دونوں مسين يہی ہے کہ آيئنہ و غیرہ کا عکس پائدار نہیں ہوتا اور فوتو کا عکس مسالہ لگاکر قائم کرلیا جاتاہے: پس وہ اسی وقت تک عکس ہے جب تک مسالہ سے اسے قائم نہ کیا جا‌‌ۓ اور جب اسکو کسی طریقہ سے قائم اور پا‌ئندار کرلیا جا ‍‌‌‌‍ۓ وہی تصویر بن جاتا ہے
আল্লামা রশীদ আহমদ লুদইয়ানভী রহ. তার কিতাব :৮/৩০৬ احسن الفتاوی এর মধ্যে عکس প্রতিবিম্ব এবং এর মাঝে পার্থক্য তুলে ধরেন-
تصویر و عکس دونوں بالکل متضاد چیز ں ہیں تصویر کسی چیز کا پائدار اور محفوظ نقش ہوتاہے عکس نا پائیدار اور وقتی نقش ہوتا ہے اصل کے غائب ہوتے ہی اس کا عکس بھی غائب ہوتاہے
তদ্রুপ আল্লামা জামিল আহমাদ থানভী রহ. টিভি স্ক্রীনে দৃশ্যমান আকৃতি সম্পর্কৃত ফাতওয়া লিখতে গিয়েও উক্ত পার্থক্য তুলে ধরেন। الاشراف:৪/৬০, شعبان১৪০৯هــ
*******************************

ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্যাবলী
عكس বা প্রতিবিম্ব কেন নয়?
ذوالعكس তথা عکس বিশিষ্ট জিনিস হতে স্থানান্তরিত হয়ে কোন জিনিসের উপরিভাগের সাথে ঘর্ষন লেগে আলোর যে, প্রতিফলন হয় তাকে عکس বলে। আর Digital স্ক্রীন এর উপর যে আলোকরশ্মী দৃশ্যমান হয় তা এরকম নয় যা ذوالعكس থেকে স্থানান্তরীত হয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। তই এটা عكس নয়।
তবে স্ক্রীনে দৃশ্যমান আলোকরশ্মী ছবির তুলনায় عكس এর সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
***********************************************

৩য় অধ্যায়
বর্তমান যুগে টিভির শরয়ী বিধান
টেলিভিশন দূর দুরান্ত হতে তথ্য সরবরাহের একটি যন্ত্র বা মাধ্যম। যা জায়েয ও নাজায়েয উভয় কাজেই ব্যবহার উপযোগী এমন কতিপয় যন্ত্র যেমন রেডিও, টেপরেকর্ডার, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি। সুতরাং টিভি একটি যন্ত্র হিসেবে তাকে না জায়েয বলা যাবে না। বরং তা জায়েয কাজে ব্যবহার করলে বৈধ। না জায়েয কাজে ব্যবহার করলে অবৈধ।
বর্তমান যামানায় যেহেতু টিভির মাধ্যমে অশ্লীলতা ও বিভিন্ন প্রকার খারাফি ছড়াচ্ছে। তাই বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামسد الباب টিভি চ্যানেল অশ্লীলতা ও শরীয়া বিরোধী কোন প্রকার প্রোগ্রাম প্রচার না করে থাকে, কিংবা কোন আলেম শরয়ী গন্ডির মধ্যে থেকে সকল প্রকার কাজ হতে বিরত থেকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদী আলোচনার জন্য টিভি চ্যানেলে আসে, অথবা টিভি প্রোগ্রামে কোন ওয়াজ নসীহত করে, দাওয়াত ও তাবলীগ এর কাজ করে কিংবা শরয়ী শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, তাহলে এ সকল অনুষ্ঠান, দেখা শ্রবন করা শুধুমাত্র ছবি হওয়ার অজুহাতে না জায়েয বলা যাবে না।
উক্ত ফাতওয়া শুধু দারুল উলুম করাচীর নয়, বরং ভারতীয় উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় দারুল ইফতা এবং বিশেষজ্ঞ মুফতিয়ানে কিরাম এমন ফাতওয়া দিয়েছেন।
টেলিভিশন ও ইন্টারনেট দ্বীনি কাজে ব্যবহার বিষয়ে ادارۃ مباحث فقھیۃ جمیعۃ علماء ھندد কর্তৃক আয়োজীত ৮ম ফিকহী সেমিনার (২৭,২৮,২৯ এপ্রিল ২০০৫) সংগঠিত হয়। এতে প্রায় ১৫০ জনের অধিক বিজ্ঞ মুফতি অংশগ্রহন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রখ্যাত মুুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী তার মাকালাতে টেলিভিশনকে تصویرআখ্যায়িত করে না জায়েয বলে মন্তব্য করেন।
উক্ত মাকালা নিরীক্ষণ করতে গিয়ে উক্ত কনফারেন্সে এর সভাপতি আল্লামা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী বলেন-

اتنی شدت مناسب نہیں ہے پر چیز کو قطعی حرام قرار دینے سے کام نہیں چلےگا، علماء کو امت کو انتشار سے نکالنے کی صورت پر توجہ دینی چاہے۔ لوگ ٹیلی ویرن پر قادیانوں، عیسائیوں کی طرف سے نشن ہونے والے پر وگر اموں کو دیکھ کر مرتد ہور ہے ہیں، کیا لوگوں کو ارتداد سے بچانے اور ان تک صحیح معلومات پہنچانے کے لئے ایسی صورت نہیں نکالی جاسکتی ہے، جیسی کہ شنافتی کا رڈ، پا سپورٹ وغیرہ کے لئے تصویر کے سلسلہ مین نکالی گئی ہے پھر فرمایا کہ ….
অনুবাদঃ এত কঠোরত উচিত নয়। প্রত্যেক বিষয়কে হারাম বলা যাবে না। উলামায়ে উম্মতকে গোমরাহী হতে বাচানোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া চাই। লোকজন টেলিভিশনে কাদীয়ানী, খ্র্স্টিানদের প্রচারকৃত অনুষ্ঠান দেখে দেখে মুরতাদ হয়ে যাচ্ছে। লোকদেরকে গোমরাহী থেকে বাচিয়ে সঠিক পথ দেখানোর জন্য এমন কোন পথ কি বের করা যাবে না? যেরমকভাবে ID কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির ক্ষেত্রে ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে?
নফল হজ্ব, ওমরা, সফর ইত্যাদির জন্য ছবি তোলা কি প্রয়োজন হিসেবে মেনে নেয়া হয়নি?
এছাড়াও দারুল উলুম ওয়াকফে দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা সালেম কাসেমী, জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর এর প্রধান মুফতি জামিল আহমদ থানভী, জামিয়া ইসলামিয়অ বান্নুরী টাউন এর শায়খ ও মুফতি আল্লামা নেজার উদ্দিন সাহেব প্রমুখ বিজ্ঞ আলেম টিভি, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে শরয়ী গন্ডির মধ্যে থেকে দ্বীন প্রচারের অনুমতি দিয়েছেন।


বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

হে রাসুল (সা) আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না - হাদিসটির পর্যালোচনা :-

উক্ত হাদিসটিকে জাল বানানোর অপচেষ্টা করছে লা মাজহাবী আহলে হাদিস ফিরকার জাহিল গুলি , তাদের কথার পক্কে একই দলিল যেঁ , আল্বানীর তাহকিক অনুজায়ী এই হাদিস জাল । বাস্থবে ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত মুহাদ্দিসিনে কেরাম এই হাদিস কে নির্ভর যোগ্য বলেছেন । এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা কিছু প্রমান তুলে ধরব ।

হাদিস ১ : 
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্নিত,

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك

অনুবাদ-
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, হযরত আদম আঃ থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।] তখন তিনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, 
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাঃ এর ওসীলায় আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন অহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (সা) কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাকে কখনো দেখ নি)? তখন তিনি বলেন-যখন আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মুহাম্মদ সাঃ এর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই 
যার নাম আপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।
তখন অহী নাজীল হল-তিনি সর্বশেষ নবী। তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে। 
যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।
Reference :-
★ ইমাম বায়হাকী রহঃ : দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ : ৫/৪৮৯ পৃ
★ ইমাম হাকেম নিশাপুরী রহঃ মুসতাদরাকে হাকেম : ২/৪৮৬ পৃ : হাদিস : ৪২২৮
★ ইমাম হাকেম নিশাপুরী রহঃ আল মাদখাল : ১/১৫৪ 
★ তাবরানী : আল মুজামুল আওসাত : ৬/৩১৩ : হাদীস নং-৬৫০২
★ তাবরানী : আল মুজামুস সগীর : ২/১৮২ : হাদীস নং-৯৯২,
★ তাবরানী : মুজমায়ে কবীর’
★ ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২২৭
★ ইমাম আজলুনী : কাশফুল কাফা : ১/৪৬ ও ২/২১৪
★ আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
★ আল্লামা সুবকী রহঃ শেফাউস সিকাম
★ ইবনে আসাকির : নিজ ‘তারিখে দিমাশক’: ৭/৪৩৭ পৃ
★ ইবনুল জাওজী : আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মোস্তফা : ৩৩
★ ইবনুল জাওজী : বয়ানুল মীলাদুন্নবী (সা) : ১৫৮
★ ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/১৮ পৃ
★ ইবনে হাজর হায়সামী : মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫৩
★ শিহাবউদ্দীন খাফাজী : ‘নাসীম আর-রিয়াদ’ 
★ ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১২ : হাদিস ১২
★ ইমাম সুয়ুতী : আদ দুররে মানসুর : ১/১৪২
★ আল্লামা কাসতাল্লানী রহঃ আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ : ১/ ৮২ ও ২/৫২৫
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৭২
★ ইমাম হালাবী : সীরাতে হালাবিয়্যাহ : ১/৩৫৫ 
★ মুহাদ্দিসে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী : তফসীরে আজিযী : ১/১৮৩
★ ইমাম নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক : ১৩৭
★ ইমাম নাবহানী : আনোয়ার-ই-মোহাম্মাদীয়া : ৯-১০
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪
★ ইমাম নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৩১ পৃ ও ৭৯৫ পৃ
(মাকতুবাত এ তাওফিক হিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর)
★ আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩৭
★ আশরাফ আলী থানবী : নুশরাত্বীব : ২৮
★ ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭, উর্দু এডিশন


হাদিসের মান পর্যালোচনা :
যে সকল মুহাদ্দিসগন এ হাদিস সহিহ বলেছেনঃ
১) ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ।
আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
২) ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০
৩) ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
৪) ইমাম কস্তল্লানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ১/১৬৫
৫) ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
৬) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসাইসঃ১/৮
৭) ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন।মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯
‘যদি মুহাম্মাদ না হতেন, তবে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
এ হাদীসটি পূর্বের কথাকে কথাকে শক্তিশালী করেছে।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উল ফাতাওয়া- ২/১৫৯
৮) বাতিল 
দের 
জবাবে ইমাম ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন, এই হাদীসটি বানোয়াট নয়। এটা দ্বারা নির্দ্বিধায় দলীল প্রদান করা যাবে।
রেফারেন্সঃ
আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫
৯) বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন, একথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।রেফারেন্সঃ
আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫


হাদিস ২ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ:)-কে বলেছেন, ওহে ঈসা! মহানবী (দ:)-এর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো। 
রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।”
Reference :
★ ইমাম হাকিম নিশাপুরী : আল মোসতাদরেক’ : ২/৬৭১ : হাদিস ৪২২৭
★ ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
★ ইমাম ইবনে সাদ : তানাকাতুল কোবরা 
★ ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী : ‘শিফাউস্ সিকাম ৪৫ 
★ শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী : ফতোওয়ায়ে সিরাজিয়া ১/১৪০
★ ইবনে হাজর রচিত ‘আফদালুল কোরা 
★ আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ ও ৪/১৬০
★ ইবনে কাসীর : কাসাসুল আম্বিয়া : ১/২৯ পৃ
★ ইবনে কাসীর : সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০
★ ইবনে কাসীর : মুজিজাতুন্নবী (সা) : ১/৪৪১
★ ইবনে হাজর আসকালানি : লিসানুল মিযান : ৪/৩৫৪
★ ইমাম যাহাবী : মিজানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯, রাবী নং ৬৩৩৬
★ ইবনে হাজর হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/৪২
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১২/২২০
★ আবু সাদ ইব্রাহীম নিশাপুরী : শরহে মোস্তফা : ১/১৬৫
★ ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১৪ : হাদিস ২১
★ ইমাম ইবনে হাইয়্যান : ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী : ৩/২৮৭
★ কানযুল উম্মাল- হাদীস ৩২০২২
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১/২৯৫, হাদিস : ৩৮৫
★ ইবনে শামী সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩ 
হাদিসের মান পর্যালোচনা :
★ ইমাম দায়লামী : হাদিসটির মান সনদের দিক থেকে হাসান।
আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২


হাদিস ৩ :
হযরত সালমান ফারিসী (রা:)-কে, যিনি বলেন: “হযূর (দ:)-এর কাছে জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী, ‘(হে রাসূল) আপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আমি সৃষ্টি করি নি। আমি বিশ্বজগত ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না, যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”
Reference :
★ ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/৫১৭
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৮২
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২৮৯
★ কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/১০৫


হাদিস ৪ : 
তাবেয়ী হযরত কাবুল আহবার (রা) থেকে বর্নিত,
(বিশাল বর্ননার পর).... 
যদি তিনি [রাসুল (সা)] না হতেন তাহলে আমি না তোমাকে [আদম (আ)] সৃষ্টি করতাম, না আসমান, জমীন সৃষ্টি করতাম।
Reference :
★ ইমাম কুস্তালানী : আল মাওয়াহেব : ১/৩৩
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৫২
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/৭৮
★ আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩১
★ ইমাম তুগরিব : আল মাওলুদ শরীফ : ১৪২


হাদিস ৫ : এই হাদিসের ২টা সনদ সহকারে উল্লেখ্য করলাম :
১ম সনদ :
হযরত ইমাম হাকিম নিসাপুরী 
হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 
হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 
জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,


২য় সনদ :
ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি 
হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি 
হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি,
সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,
-حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاريحدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لامحمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد


” মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে। 
যদি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতাম না, যদি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। 
আর যখন আমি পানির উরর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যেلا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।”
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।
‪‎Reference :
★ মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিশাপুরী (রহ), 
কিতাব : তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহিআলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন
খন্ড : ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা
★ মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা 
মুহাদ্দিসে কেরাম থেকে :
১)ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন: আল্লাহতা’লা যখন হযরত বাবা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ তিনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”এয়া আল্লাহ! আপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন ’আবূ মোহাম্মদ’ (মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (দ:)-এর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম (আ:) জিজ্ঞেস করেন, “এয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?” আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী (দ:)-এর জন্ম। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং জমিনে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। আমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।”
২)সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর ‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন: “প্রিয়নবী (দ:) হলেন সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ (অসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না।”

৩)ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর কৃত ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।”

৪ইমাম বুসিরী (রহ:)-এর কাব্যের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন: “হুযূর করীম (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল হতো না। হযরত আদম (আ:)-কে আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে আমি তোমোকে সৃষ্টি করতাম না। হযরত আদম (আ:) হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা, আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে সৃষ্ট। তাই হযরত আদম (আ:)-কে যেহেতু রাসূলে খোদা (দ:)-এর অস্তিত্বের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী (দ:)-এর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, সকল অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন বিশ্বনবী (দ:)।”
৫)কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা খালেদ আযহারী মন্তব্য করেন: “রাসূলে পাক (দ:)-এর কারণেই দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।”
৬)মোল্লা আলী কারী লেখেন: ”রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগত অস্তিত্ব পেতো না এবং আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল থাকতো না।”
৭ ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর আসকালানী বলেন, “এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত করে যে মহানবী (দ:)-কে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহতা’লা আসমান-জমিন, বেহেশ্ত-দোযখ, চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।”


৮ )আল্লামা আবূল আয়াশ আবদুল আলী লাখনৌভী নিজ ‘ফাওয়াতিহ আর-রাহমূত শরহে মোসাল্লাম আস্ সুবূত’ পুস্তকে লেখেন: “রাসূলে খোদা (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে সৃষ্টিকুল আল্লাহর রহমত-বরকত (আশীর্বাদ)-ধন্য হতো না।”
আল্লাহ্‌ আমাদের সঠিক বুজার তাওফিক দান করুন , আমীন ।

নামাযে যিরার উপর যিরা রাখা


আরবীতে হাতের আঙুলের মাথা থেকেই কনুই পর্যন্ত অংশকে ‘যিরা’ বলে। সম্প্রতি কিছু মানুষ যিরার উপর যিরা রাখাকে সুন্নাহ মনে করেন এবং ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর না রেখে ডান হাতের যিরা বাম হাতের যিরার উপর রাখেন। হাত বাঁধার ক্ষেত্রে এটাও একটা বিভ্রান্তি ও বিচ্ছিন্নতা। কোনো সহীহ হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগেও এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না এবং কোনো মুজতাহিদ ইমাম এই নিয়মের কথা বলেননি। যারা একে সুন্নাহ মনে করেন তারা এ বিষয় কোনো সহীহ-সরীহ নস (বিশুদ্ধ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য) উপস্থাপন করতে পারেননি। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে, দুটো সহীহ হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা।
নীচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
প্রথম হাদীস : সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, ‘লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন তার ডান হাত বাম যিরার উপর রাখে।’
হাদীসটির আরবী পাঠ এই-
كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة. قال أبو حازم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم.
-মুয়াত্তা মালিক পৃ. ৫৫ ; সহীহ বুখারী ১/১০৪
এই হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই। বাম যিরার উপর ডান হাত রাখার কথা আছে।
দ্বিতীয় হাদীস : ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের একটি পাঠ। তাতে আছে, ‘(আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর রাখলেন।’
রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد
-মুসনাদে আহমদ ৩১/১৬০, হাদীস : ১৮৮৭০; সুনানে আবু দাউদ ১/৪৮৩, হাদীস : ৭২৭
এই বর্ণনাতেও বলা হয়নি ডান যিরা রেখেছেন। বলা হয়েছে, ডান হাত রেখেছেন।
এই দুই হাদীসে ডান হাত অর্থ ডান হাতের যিরা-এর কোনো প্রমাণ নেই; বরং এই ব্যাখ্যা করা হলে তা হবে এই দুই হাদীসের শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা। কারণ হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম ও ভাষ্যকার এই ব্যাখ্যা করেননি।
উল্লেখিত পাঠটি কি ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মূল পাঠ
ওয়াইল ইবনে হুজর রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায পড়েছেন এবং যেভাবে তাঁকে নামায পড়তে দেখেছেন তা বর্ণনা করেছেন। তাঁর এই বিবরণ বেশ কয়েকজন রাবীর সূত্রে পাওয়া যায়। যেমন : ১. আলকামা ইবনে ওয়াইল ২. আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল। (এরা দু’জন ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর পুত্র। আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল তার বড় ভাই আলকামা ইবনে ওয়াইল রাহ. থেকেই পিতার বিবরণ গ্রহণ করেছেন। দেখুন : সহীহ মুসলিম ফাতহুল মুলহিম ২/৩৯) ৩. হুজর ইবনুল আম্বাস, ৪. কুলাইব ইবনে শিহাব, প্রমুখ। শেষোক্ত কুলাইব ইবনে শিহাব রাহ.-এর বর্ণনাই আমাদের আলোচ্য বিষয়।
কুলাইব ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন তার পুত্র আসিম ইবনে কুলাইব রাহ.। আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. থেকে অনেক রাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন
শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ
বিশর ইনুল মুফাদ্দাল
কায়স ইবনুর রাবী
আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ
খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ
আবু ইসহাক
আবুল আহওয়াস
আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস
মুসা ইবনে আবী আয়েশা
আবু আওয়ানা ও
যাইদা ইবনে কুদামা প্রমুখ।
শেষোক্ত রাবী যাইদা ইবনে কুদামা-এর বর্ণনার পাঠ সকলের চেয়ে আলাদা। এ কারণে তার পাঠকে আসিম ইবনে কুলাইবের বর্ণনার মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
এই সকল বর্ণনা সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয়য, ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস থেকে যিরার উপর যিরার নিয়ম গ্রহণ করার অবকাশ নেই। 
কারণ :
এক. আগেই বলা হয়েছে, আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্যান্য ছিকা রাবী উপরোক্ত শব্দে বর্ণনা করেননি। যাইদার রেওয়ায়েতের পাঠ তাদের সবার রেওয়ায়েতের পাঠ থেকে আলাদা। সুতরাং যাইদার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, এটিই আসিম ইবনে কুলাইবের পাঠ। অর্থাৎ আসিম ইবনে কুলাইব হুবহু এই শব্দে বর্ণনা করেছেন।
দুই. আলোচিত হাদীসের মূল রাবী হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.। আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্র ছাড়া আরো বেশ কিছু সূত্রে তাঁর বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে। সেসব রেওয়ায়েতের পাঠও যাইদার পাঠের চেয়ে আলাদা। সুতরাং তাঁর পাঠটিকেই ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণের মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
তিন. যাইদার পাঠটিও স্পষ্টভাবে ‘যিরার উপর যিরার’ নিয়ম নির্দেশ করে না; বরং সামান্য চিন্তা করলেই বোঝা যায়, এই পাঠের অর্থও তা-ই যা এ হাদীসের অন্য সকল পাঠ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে পূর্ণ ‘সায়িদ’ (যিরা) উদ্দেশ্য নয়। সায়িদের কিছু অংশ উদ্দেশ্য, যা কব্জি সংলগ্ন।
চার. আসিম ইবনে কুলাইবের বিবরণ বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে। এসব বিবরণের মৌলিক পাঠ দু’ ধরনের : ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। যেসব রেওয়ায়েতে أخذ বা إمساك (ধরা) শব্দ আছে সেখানে হাত দ্বারা যে হাতের পাতা উদ্দেশ্য তা তো বলাই বাহুল্য। আর যেসব রেওয়ায়েতে وضع (রাখা) শব্দ আছে সেখানে কনুই পর্যন্ত হাত বোঝানো হয়েছে-এই দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ এর অর্থ হবে আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজরের যে বিবরণ উল্লেখ করেছেন, পরবর্তী রাবীদের বর্ণনায় শব্দগত পার্থক্যের কারণে একে দুই বিবরণ ধরে নেওয়া হয়েছে : একটি হল, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাত ধরা। আরেকটি ডান যিরা বাম যিরার উপর বিছিয়ে রাখা!
এক্ষেত্রে সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত চিন্তা হচ্ছে, যেসব বর্ণনায় ‘ডান হাত রাখা’ আছে তারও অর্থ ডান হাতের পাতা রাখা, কনুই পর্যন্ত রাখা নয়।
পাঁচ. এটা আরো শক্তিশালী হয় যখন দেখা যায়, এ হাদীসের অসংখ্য বর্ণনার মাঝে একটি সহীহ রেওয়ায়েতেও ‘ডান হাতের যিরা’ বাম হাতের উপর রেখেছেন এমন কথা পাওয়া যায় না।
সুতরাং যিরার উপর যিরা একটা আরোপিত ব্যাখ্যা, হাদীস শরীফের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণেই হাদীস ও ফিকহের কোনো নির্ভরযোগ্য ইমাম থেকে হাদীসের এই ব্যাখ্যা এবং হাত বাঁধার এই নিয়ম বর্ণনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, উপরোক্ত নিয়মটি যেমন হাত বাঁধার বিচ্ছিন্ন ও নবউদ্ভাবিত একটি নিয়ম তেমনি এই নিয়ম দ্বারা হাদীস শরীফের ব্যাখ্যাও একটি শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা।
ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ কী ব্যাখ্যা করেছেন
যাইদা ইবনে কুদামার এই পাঠ হাদীস ও ফিকহের প্রাচীন গ্রন্থসমূহে উদ্ধৃত হয়েছে। বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ তার অর্থ করেছেন ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর রাখা।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযায়মা রাহ. (৩১১ হি.) সহীহ ইবনে খুযায়মায় হাদীসের এই পাঠ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘যিরার উপর যিরা’র অর্থ গ্রহণ করেননি। তিনি এই হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন-
باب وضع بطن الكف اليمنى على كف اليسرى والرسغ والساعد جميعا.
অর্থাৎ ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখা। (দেখুন : সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, বাব : ৯০)
বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, নামাযে হাত এমনভাবে রাখা উচিত, যাতে ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার কিছু অংশ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। তাঁরা ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই পাঠ এবং হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, (নামাযে) ডান হাত বাম হাতের কব্জি ও তৎসংলগ্ন অংশের উপর রাখা মুস্তাহাব। কারণ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের বিবরণ দিয়েছেন এবং সে বিবরণে বলেছেন, ‘অতপর তিনি তাঁর ডান হাত রাখলেন তার বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’
ويستحب أن يضعهما على كوعه وما يقاربه لما روى وائل بن حجر أنه وصف صلاة النبي صلى الله عليه وسلم وقال في وصفه : ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد.
-আলমুগনী ২/১৪১
একই কথা বলেছেন আল্লামা ইবনে কুদামা মাকদেসী রাহ. (৬৮২ হি.)। তাঁর বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-
ويضعهما (كذا) على كوعه أو قريبا منه لما روى وائل بن حجر أنه وصف صلاة النبي صلى الله عليه وسلم وقال في وصفه : ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد.
-আশশারহুল কাবীর (আলমুগনীর সাথে মুদ্রিত) ১/৫৪৯
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) ‘‘শরহুল মুহাযযাব’’ গ্রন্থে (৪/৩২৭) শাফেয়ী মাযহাবের মনীষীদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে, তাকবীরে (তাহরীমার) পর দুই হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে এবং ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া এবং কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ ধরবে। কাফফাল বলেছেন, ডান হাতের আঙ্গুল আড়াআড়িভাবে কব্জির উপর রাখা বা বাহুর উপর ছড়িয়ে দেওয়া দুটোরই অবকাশ আছে।
এরপর বলেন, (পৃ. ৩২৯) আমাদের মনীষীগণ সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস দ্বারা এ নিয়ম প্রমাণ করেছেন। তেমনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে, ‘অতপর (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’
واحتج أصحابنا أصحاب بحديث أبي حازم عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل يده اليمنى على ذراعه في الصلاة، قال أبو حازم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم، رواه البخاري وهذه العبارة صريحة في الرفع إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، وعن وائل بن حجر أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم رفع يديه حين دخل في الصلاة، ثم التحف بثوبه، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى، رواه مسلم بهذا اللفظ، وعن وائل بن حجر ايضا قال : قلت لانظر إلى صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف يصلي فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم فاستقبل القبلة فكبر فرفع يده حتى حاذى أذنيه، ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد، رواه أبو داود بإسناد صحيح ... .
ইমাম আবুল ওয়ালিদ আলবাজী রাহ. (৪৯৪ হি.) হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে, ডান হাত কব্জির উপর রাখবে। কারণ ডান হাত বাম হাতের পাতার উপর রাখা যাবে না। তা রাখতে হবে বাম হাতের গোড়া ও কব্জির উপর। আর তার উপর ভর দেওয়া যাবে না। আরবী পাঠ এই-
قوله أن يضع الرجل يده اليمنى على ذراعه اليسرى، يريد أن يضعها على رسغه، لأن يده اليمنى لا يضعها على كف يده اليسرى، وإنما يقتصر بها على المعصم والكوع من يده اليسرى، ولا يعتمد عليها.
-আলমুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা ২/১৬৪
ইমাম আবুল আববাস আহমদ ইবনে উমার আলকুরতুবী রাহ. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের আলোচনায় বলেন, ইবনুল মাজিশূন ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (নামাযী) ডান হাত দ্বারা তার বাম হাতের গোড়া ও কব্জি পেঁচিয়ে ধরবে। উপরের হাদীসটি তার দলীল। ...
আরবী পাঠ -
قوله : ثم وضع يده اليمنى على اليسرى اختلف فيه على ثلاثة أقوال : فروى مطرف وابن الماجشون عن مالك أنه قال : يقبض باليمنى على المعصم والكوع من يده اليسرى تحت صدره، تمسكا بهذا الحديث، وروى ابن القاسم : أنه يسدلهما وكره له ما تقدم، ورأى أنه من الاعتماد على اليد في الصلاة المنهي عنه في كتاب أبي داود، وروى أشهب التخيير فيهما والاباحة.
-আলমুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম ২/২১
ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও ইবনে হাযম রাহ.
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. নামাযে হাত বাঁধার নিয়ম সম্পর্কে বলেন, ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর দুই হাত ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর এমনভাবে রাখবে যে, ডান হাত দ্বারা কব্জির গোড়ার হাড় পেঁচিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির উপর এমনভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলিসমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে। ডান হাত যদি কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির নিচে বাম পাতার উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’
এরপর তিনি হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস, যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা, সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস ও হুলব রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।
আলোচনার আরবী পাঠ এই-
يعني : إذا انقضى التكبير فإنه يرسل يديه ويضع يده اليمنى فوق اليسرى على الكوع، بأن يقبض الكوع باليمنى، أو يبسط اليمنى عليه، ويوجه أصابعه إلى ناحية الذراع، ولو جعل اليمنى فوق الكوع أو تحته على الكف اليسرى، جاز لما روى وائل بن حجر أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم حين دخل في الصلاة، ثم التحف بثوبه ثم وضع يده اليمنى على اليسرى، رواه مسلم، وفي رواية لأحمد وأبي داود : وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد، وعن أبي حازم عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة، قال أبو حازم : ولا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم. رواه أحمد والبخاري.
وعن قبيصة بن هلب عن أبيه قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه، رواه أحمد وأبو داود وابن ماجه والترمذي وقال : حديث حسن، وعليه العمل عند (أكثر) أهل العلم من أصحاب النبي والتابعين ...
-শরহুল উমদা পৃ. ৬৫-৬৬
আল্লামা ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) ‘‘আলমুহাল্লা’’ গ্রন্থে (৩/২৯-৩০) নামাযে হাত বাঁধার বিষয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব এই যে, নামাযী কিয়ামের হালতে তার ডান হাত বাম হাতের পাতার গোড়ায় রাখবে।’
এরপর তিনি সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসসহ আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আলোচনার শেষে বলেন, ‘আবু মিজলায, ইবরাহীম নাখায়ী, সায়ীদ ইবনে জুবাইর, আমর ইবনে মায়মূন, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন, আয়্যুব ছাখতিয়ানী ও হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকেও আমরা বর্ণনা পেয়েছি যে, তাঁরাও (নামাযে) এভাবে করতেন (হাত বাঁধতেন)।
আর এটি আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমদ ও দাউদ-এর সিদ্ধান্ত। আরবী পাঠ এই-
مسألة : ويستحب أن يضع المصلي يده اليمنى على كوع يده اليسرى في الصلاة في وقوفه كله فيها ... ومن طريق مالك عن أبي حازم عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة ... وروينا فعل ذلك عن أبي مجلز، وإبراهيم النخعي، وسعيد بن جبير، وعمرو بن ميمون، محمد بن سيرين، وأيوب السختياني، وحماد بن سلمة : أنهم كانوا يفعلون ذلك، وهو قول أبي حنيفة، والشافعي، وأحمد، وداود.
আল্লামা শাওকানী রাহ.ও (১২৫৫ হি.) ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাদীসের অর্থ এই যে, ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখবে। তবারানীর রেওয়ায়েতে আছে, (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযে তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে। (ইমাম) শাফেয়ী রাহ.-এর শাগরিদরা বলেছেন, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ পেঁচিয়ে ধরবে। হাদীসটি হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখার বৈধতা প্রমাণ করে। এটিই অধিকাংশ মনীষীর গৃহীত নিয়ম। ...’ এরপর তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ আলোচনা করেন।
তার আলোচনার আরবী পাঠ এই-
والمراد أنه وضع يده اليمنى على كف يده اليسرى ورسغها وساعدها. ولفظ الطبراني : وضع يده اليمنى على ظهر اليسرى في الصلاة قريبا من الرسغ، قال أصحاب الشافعي : يقبض بكفه اليمنى كوع اليسرى وبعض رسغها وساعدها.
والحديث يدل على مشروعية وضع الكف على الكف، وإليه ذهب الجمهور ...
-নায়লুল আওতার ২/১৮১
এরপর হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘যিরার কোন অংশে ডান হাত রাখা হবে তা এ হাদীসে অস্পষ্ট। তবে আহমদ ও আবু দাউদের রেওয়ায়েতে (যাইদা ইবনে কুদামার সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস) যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে পাওয়া যায়।
قوله على ذراعه اليسرى أبهم هنا موضعه من الذراع، وقد بينته رواية أحمد وأبي داود في الحديث الذي قبله
-প্রাগুক্ত ২/১৮৯
সুতরাং শাওকানী রাহ.-এর মতেও সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের অর্থ হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখা, তবে এমনভাবে, যেন তা যিরার কিছু অংশের উপর থাকে।
সারকথা
নামাযে ‘যিরার উপর যিরা’ রাখা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে পরবর্তী শত শত বছর এই নিয়মের কোথাও কোনো অস্তিত্ব ছিল না। নিকট অতীতে আবিষ্কৃত এই নিয়ম প্রমাণের জন্য হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. ও হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত দুটি হাদীসের যে ব্যাখ্যা করা হয় তা ভুল ব্যাখ্যা। হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম এই ব্যাখ্যা করেননি। বস্ত্তত এই ভুল ব্যাখ্যাই হচ্ছে উপরোক্ত শায ও বিচ্ছিন্ন নিয়মটির প্রধান সূত্র।

স্রটা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন?

    '
    সাজিদ পত্রিকাটি ব্যাগে রাখতে রাখতে বললো - 'দাদা, ধরো, এই ৫জনকে কোর্টে তোলা হলো আর তুমি হলে বিচারক। এই ৫ জন যে আসল অপরাধী তার সমস্ত রকম তথ্য-প্রমাণ তোমার কাছে পেশ করা হয়েছে। এখন একজন নাবালিকার উপরে এরকম নির্মমভাবে নির্যাতন করার জন্য তুমি কি তাদের শাস্তি দিবে?।

    ...


    দেবজিৎদা দাঁত মুখ খিচে বললেন। -'শাস্তি দিবো মানে? শূয়োরের বাচ্চাগুলোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবো।
    সাজিদ মুচকি হাসলো। বললো - সত্যিই তাই?

    -হ্যাঁ, একদম। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এদের মাংস শেয়াল-কুকুর দিয়ে খাওয়াতে পারলে আমার গা জুড়োবে। '
    দেবজিৎদা'র চোখ মুখ লালাবর্ণ ধারণ করেছে। উনাকে এরকম অবস্থায় আগে কখনো দেখি নি।
    সাজিদ এক গ্লাস পানি উনার দিকে বাড়িয়ে দিলো। পানিটা ঢকঢক করে পান করে উনি শার্টের হাতা দিয়ে মুখ মুছলেন। উনি তখনও প্রচন্ড রেগে আছেন বোঝা যাচ্ছে।
    সাজিদ বললো- 'আমি যে দেবজিৎ দাদাকে চিনি, সে কিন্তু এতোটা হিংস্র না। আমি তাকে জানতাম।দয়ালু, ক্ষমাশীল, মহানুভব হিসেবে। সে যে কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবার কথাও ভাবতে পারে, সেটাই বিরাট আশ্চর্য লাগছে।
    দেবজিৎদা সাজিদের দিকে তাকালেন। তাকানোতে একটা তাচ্ছিল্যতা আছে।
    বললেন, 'শোন সাজিদ, আমি দয়ালু, মহানুভব ঠিক আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি কোন অন্যায় দেখে চুপ করে থাকবো। আমার ক্যারেক্টারের ক্রাইটোরিয়াতে যেমন দয়ালু, মহান, উদার এসব আছে, ঠিক তেমনি আমি ন্যায়বিচারকও। অন্যায়ের কোন প্রশ্রয় আমার কাছে নেই। '
    -'বিচারক হিসেবে তুমি চাইলে ঐ ৫ জন অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতেই পারো। ' সাজিদ বললো।
    -'হ্যাঁ পারি। কিন্তু তাহলে যে ঐ নিষ্পাপ মেয়েটার সাথেই অন্যায় করা হবে। অবিচার করা হবে। আমি সেটা পারবো না। '
    -তাহলে কি ধরে নিবো যে তুমি পাষাণ? কঠিন হৃদয়ের? তোমার মাঝে কোনো ভালোবাসা নেই, মমতা নেই?
    দেবজিৎদা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, 'আশ্চর্য! তোর বুদ্বিসুদ্বি কি সব লোপ পেয়েছে রে সাজিদ? ৫ জন লোক ঘোরতর অন্যায় করেছে। তাদের অন্যায়ের জন্য আমি শাস্তি দিবো এটাই স্বাভাবিক। একজন বিচারক হিসেবে এখানে ন্যায়ের পক্ষ নেওয়াটাই আমার ধর্ম, আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা। এটা কি প্রমাণ করে যে আমি পাষাণ?
    সাজিদ আবার মুচকি হাসলো। বললো- 'দাদা, তোমাকে উত্তেজিত করার জন্য দুঃখিত। তুমি না আসলেই খুব ভালো।

    আরিফ আজাদ

    চলবে.... ইনশাআল্লাহ

'স্রটা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন? '


সৃষ্টিকর্তা যেমন পরম দয়ালু, ক্ষমাশীল, ঠিক তেমনি তিনি একজন ন্যায়বিচারকও। তিনি কারো সাথে বিন্দু পরিমানও অন্যায় হতে দেন না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট রুলস তৈরি করে দিয়েছেন। এখন কিছু লোক এই রুলস ফলো করে যদি তার দেওয়া বিধান মতো জীবনযাপন করে, তাদের তিনি পুরুস্কার হিসেবে জান্নাত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন একদল লোক নামাজ-কালাম পড়ে, মিথ্যে কথা বলে না, লোক ঠকায় না, চুরি রাহাজানি করে না, ...সুদ-ঘুষ খায় না, মানুষ খুন করে না, মোদ্দাকথা, সকল প্রকার অন্যায় থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে কেবল স্রষ্টার সান্নিধ্যে লাভ এবং তাঁর প্রতিশ্রুত জান্নাতের জন্য।
অপরদিকে আরেকদল লোক এসব থোড়াই কেয়ার করে যদি ভোগ বিলাসে মেতে উঠে, সকল অন্যায় কাজ করে, স্রষ্টার অবাধ্য হয়, তাহলে স্রষ্টা যদি দয়াপরবশ হয়ে তাদের আগের দলের সাথে জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়, তাহলে এটা কি ন্যায় হলো? প্রথম দলকে ঠকানো হলোই, সাথে কি পরের দলের সকল অন্যায় কি মনে নেওয়া হলো না? প্রশ্রয় দেওয়া হলো না? তুমি যেভাবে বিচারকের আসনে বসে ক্ষমতা পরও ঐ ৫ জনকে ক্ষমা করে দিতে পারো না কেবল ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, স্রষ্টাও কি সেটা পারে না?'
দেবজিৎদা কিছু বললেন না। সাজিদ আবার বললো- 'এটা হলো স্রষ্টার ক্রাইটোরিয়া। তিনি যেমন পরম দয়ালু, ঠিক সেরকম ন্যায় বিচারকও।
আরেকটু পরিস্কার করি। ধরো, একজন বাবার দুটি সন্তান। দুই সন্তানের প্রথমজন দ্বিতীয়জনকে বিনা কারণেই ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। যাকে ধাক্কা দিলো সে মাটিতে পড়ে খুব ব্যথা পেলো এবং চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
এখন বাবা এসে যদি প্রথমজনকে তার অন্যায়ের জন্য কোন শাস্তি না দেয়, তাহলে সেটা তার দ্বিতীয় সন্তান, যে নিষ্পাপ, তার প্রতি কি অন্যায় করা হবে না?
-'হু'- দেবজিৎদা বললেন।
- 'স্রষ্টা এরকম নন। এজন্যই তিনি জান্নাত আর জাহান্নাম দু'টোই তৈরি করে রেখেছেন। আমাদের কর্মফলই নির্ধারণ করে দেবে আমাদের গন্তব্যস্থল। এতে কোনো দুই নাম্বারি হবে না। কারো সাথে চুল পরিমানও অন্যায় হবে না। '
দেবজিৎদা বললেন - 'তা বুঝলাম। কিন্তু তিনি যেহেতু স্রষ্টা, তিনি আমাদের চেয়ে হাজার গুণ দয়ালু হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই তিনিই আবার আমাদের কর্ম পরিচালনা করছেন, আবার তিনিই আমাদের ধরে ধরে জাহান্নামে পাঠাচ্ছেন। ব্যাপারটা কেমন না সাজিদ? '
সাজিদ বললো- 'দাদা ' স্রষ্টা আমাদের একটা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সাথে পাঠিয়েছেন একটা গাইডবুক। এখন এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করেই আমরা সিদ্বান্ত নিই যে আমরা কি তাঁর দেখানো পথে চলবো, কি চলবো না। যদি চলি, আমরা জান্নাতে যাবো। যদি না চলি, আমরা জাহান্নামে যাবো। মোদ্দাকথা, আমরা কোথায় যাবো তা আমরাই নির্ধারণ করি আমাদের কর্মের মাধ্যমে। তবে দাদা, ব্যাপার হলো, আমাদের কর্মের ব্যাপারে উনি ওয়াকিবহাল। কারণ উনি সর্বজ্ঞাত। তিনি আলিমুল গায়েব। তাই, তিনি আগ থেকেই জানেন বলেই তা আমাদের ভাগ্যলিপি হিসেবে লিখে রেখেছেন। '
আরিফ আজাদ
চলবে.... ইনশাআল্লাহ

পহেলা বৈশাখঃ হিন্দু কতৃক ইংরেজ দালালী আর মুসলিমবিদ্বেষিতার ইতিহাস

অন্য মানুষের জিনিসকে আমরা নিজেদের বলে চালাতে ভারি ভালোবাসি।আকবর প্রজা শোষণের সুবিধার্থে, কৃষকদের গলায় গামছা বেঁধে উৎপাদিত ফসলের ভাগ ছিনিয়ে নিতে চালু করলো তারিখ-ই-ইলাহি। মুসলিমদের হিজরি সালকে মন্ত্র পড়িয়ে, গলায় পৈতে ঝুলিয়ে করা হল সৌরবছর। সেই তারিখ-ই-ইলাহি-ই আজকের তথাকথিত বঙ্গাব্দ ।
এতো গেল বছর শুরু হবার হিসেবের কথা। পয়লা বৈশাখ যাকে বাঙালি সর্বজনীন উৎসবের দাবী করা হয় তা উদযাপনের শুরুর ইতিহাস কি আমরা জানি ? প্রথম ঘটা করে নববর্ষ পালন হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। ব্রিটিশরাজের বিজয় কামনা করে ১৯১৭ সালের পয়লা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করে কলকাতার হিন্দু মহল। 
১৯১৭ সালের দিকে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিলো তখনকার ভারতবর্ষের হিন্দু ব্রাক্ষ্মনরা সাধারন হিন্দুদের মধ্যে এই কথা ছড়িয়ে দিলো যে মুসলমানরা হিন্দুদের পুরনো সৌরসন ধ্বংশ করে তাদের চাহিদা মত বাংলা সন তৈরি করেছে এবং তারা চাচ্ছিলো সেই সৌরসন আবার প্রণয়ন করতে কিন্তু দির্ঘ ৪০০/৪৫০ বছর ধরে সেই তারিখ গননা না হওয়াতে পুনরায় সেই সন প্রনয়ন করাটা সাধ্য হয়ে উঠেনি তাই হিন্দু ব্রাক্ষ্মনরা সাধারন হিন্দুদের সঙ্গে নিয়ে পহেলা বৈশাখ তারিখ ঠিক করলো যেদিন বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশদের জয় কামনা এবং তাদের ভাষ্যমতে হিন্দুদের সন বিকৃত করার দায়ে 'মুসলমানদের ধ্বংশ চেয়ে' মুর্তি-পূজা হোম কীর্তন এবং ভগবান আর্চণার সময় নির্ধারিত করলো এবং পহেলা বৈশাখ তারিখে বেশ ঘটা করে এই আয়োজন সম্পন্য করলো!

১৯৩৮ সাল থেকে পুনরায় ভারতবর্ষের মুসলীমদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিরোধীতার সূত্র ধরে পালিত হয় একই কর্মকান্ড। ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর আবার বেশ কিছুদিন এই উদযাপন বন্ধ থাকে। পরবর্তিতে ১৯৬৭ সাল থেকে পুনরায় আবার যথারীতি পহেলা বৈশাখ পালিত হয় এবং যেটা আজও পালিত হয়ে আসছে!
---মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস:-
১৯১৭ সালে যেদিন পূজা আর্চণা করা হয়েছিলো সেদিন মুসলমানদেরকে বিশ্বের ভয়ংকর প্রানী ডাইনোসরের সাথে তুলনা করে ডাইনোসরের একটা প্রতিকৃতি বানানো হয় এবং যেটাকে সম্মিলিত ভাবে কাঁধে করে নিয়ে গঙ্গা পাড়ে পোড়ানো হয! এখান থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন হয়েছে! যেটা পরবর্তিতে খন্ড খন্ড ভাবে পালিত হয়ে আসছিলো এবং পরবর্তিতে ১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিত চলে আসছে এই শোভাযাত্রা!! যেখানে প্রধান আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন প্রানীর মুখোশ লাগিয়ে ঘুরে ফেরা।

যে দিবস হিন্দু কতৃক বৃটিশদের পদলেহন আর মুসলিমবিদ্বেষীতায় ভরপুর আজ সে দিবসই মুসলমান পালন করে! নিজেকে অসাম্প্রদায়িক আর বাঙ্গালী প্রমান করতে মুসলমান আজ মুসলিমবিদ্বেষি বৈশাখী পূজায় গণহারে গমন করে! 
যে জাতি নিজের ইতিহাস ভুলে গিয়ে পরগাছার মত অন্য জাতির সংস্কৃতি আকড়ে ধরে সে জাতির মত দুর্ভাগা আর কেউ নেই। সে জাতির কপালেই জুটে কাফির-মুশরিক কতৃক লাঞ্চনা আর নির্যাতন। বাংলাদেশের মুসলমান সে পথেই এগুচ্ছে!

আলবার্ট আইন্সটাইন"


আলবার্ট আইন্সটাইন" -বিজ্ঞান ভুবনজয়ী এক অপূর্ব নাম।উনবিং শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী তিঁনি।তাঁকে নিয়ে গত দু'বছর আগে হঠাৎ আমার বেশ কৌতূহল জন্মেছিল।ধীরেধীরে তাঁকে নিয়ে স্টাডি করতে শুরু করলাম, এক এক করে জানলাম উনার অসাধারণ বেড়ে উঠার জিন্দেগী, পড়াশোনা ও গবেষণার জীবনকাহিনী সহ বিজ্ঞান যাত্রায় তার মনোনিবেশ। 

উনাকে নিয়ে একটা গল্প বই পড়েছিলাম।যেখানে গল্পকারে উনার জীবনের অসাধারণ কিছু কাহিনী তুলে ধরা হয়েছিল।একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখেছিলাম, যেখানে উনার জীবনের বেশ কিছু আশ্চর্যরকম বিষয় ফুটে তুলা হয়েছিল।বেশ ভালোলাগা এক বিজ্ঞানী!

উনি পৃথিবী ব্যাপী "আপেক্ষিক তথ্যের"জন্য বিখ্যাত। কিন্তু দু:খের ব্যাপার হলেও সত্য যে,উনার সেই তথ্যটাকে এখন পর্যন্ত কেহ পূর্ণাঙ্গ হৃদয়াঙ্গম করে উঠতে পারেনি।উনি যখন এই তথ্য আবিষ্কার করেন,তখন তৎকালীন বিজ্ঞানীগণ উনার আবিস্কার তথ্যের বিরোধিতায় না খেয়ে উঠে পড়ে লাগেন।উনি বললেন : 'আমার তথ্য যদি ভুলই হয়ে থাকে, তাহলে এতো মানুষের পিছনে পড়ার দরকার কী?যেকোন একজনে আমার ভুলটা প্রমাণ করে দেখালেই তো চলে।" 

সে'বিশালাকার বিজ্ঞানীর আজ জন্ম দিন।জীবন বিসর্জনের বদলে পৃথিবীর মানবসম্প্রদায় -কে অনেক কিছু দিয়ে ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকলেও,ইসলাম নামক মহান নেয়ামতের সাক্ষাত না পাওয়ায় উনার পরকাল জীবনকে দুর্দশাপন্ন ও লাঞ্চনাকর করে নিয়েছেন।
 — feeling বিজ্ঞানপ্রিয়.



'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ'


'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' আমার প্রথম বই। হতে পারে শেষ বই-ও। কথা সেটা নয়। কথা হচ্ছে, এ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডে আমি কোনদিন যুক্তিবিদ্যার বই হাত দিয়ে ধরেও দেখিনি। উচ্চমার্গের যুক্তি-তর্ক করতে হলে কতোটা পড়াশুনা করতে হয়, জানাশোনা থাকতে হয়- তা আমি জানি না।
ওয়াল্লাহি, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে আমি নাম-ডাক কুড়াবো, মানুষ আমাকে বাহ বাহ দিবে, মাথায় তুলে নাচবে- এরকম কোন ইন্টেনশান নিয়ে আমি এটা শুরু করিনি।
আমি একজন যুবক। যখন আমি মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে আমার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, আমার পবিত্রতম রাসূল, উনার পবিত্র চরিত্র, আমাদের রব মহান আল্লাহ এবং তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে নানান প্রশ্ন, নানান ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ দেখি, তখন আমার খুব খারাপ লাগে।
রাসূলের চরিত্রের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে, আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে, আল্লাহর গুণাবলী উল্লেখ করে, কোরআনের সত্যতা নির্ণয় করে, ইসলামের কালজয়ী আদর্শকে নিয়ে প্রচুর বই বাংলায় বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে লিখেছেন। প্রচুর তাফসির খন্ড, সীরাত গ্রন্থ লেখা হয়েছে, বাংলায় অনুবাদ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্‌। তবুও, আমি অনুভব করেছি- আমার মতো ইচড়ে পাঁকা যারা আছে, যারা তত্ত্বকথা গিলতে পারেনা, যারা মজায় মজায় কিছু জানতে চায়, বুঝতে চায়, লেকচার শুনলে যাদের ঘুম পায়, তাদের জন্য কি কিছু করা যায় না?
হুমায়ুন আহমেদের সমসাময়িক ভালো উপন্যাস তো অনেকেই লিখেছেন। তবু, যুবকরা উনার রচনার প্রতি ঝুঁকে পড়লেন কেনো? উনার রচনা তেমন গভীর না। সহজ-সরল, প্রাঞ্জল। ভারি ভারি সাহিত্যিক শব্দগুচ্ছ নেই। ভারি ভারি আলোচনা নেই। তবু কেনো যুবকেরা উনাকে পাঠ করে? কারণ, উনি যুবকদের মন বুঝতেন।
হুমায়ুনকে পাঠ করলেই মনে হয়- 'আরে, কম্পিউটার নিয়ে বসলে এরকম দু চার খন্ড আমিও তো লিখে ফেলতে পারবো।' 
আসলেই তাই। হুমায়ুন হলেন সাধারণ পাঠকদের, যারা ভারি সাহিত্য বুঝেনা। বুঝলেও, ভারি সাহিত্য যাদের টানেনা। এইজন্যে, ভারি সাহিত্যিক এবং ভারি সাহিত্য বোদ্ধাদের কাছে হুমায়ুন আহমেদ একজন বাজারি লেখক।

আমারও মনে হয়েছে ইসলামমনা যুবকশ্রেণীর যে অংশ, যারা তাফসির পড়তে পারেনা, পড়লেও বুঝতে পারেনা, যারা আমার মতোই লেকচার টাইপ কিছু হজম করতে পারেনা, তারা বাংলার ইসলাম বিদ্বেষীদের নানান প্রশ্নবাণে যখন ক্ষত-বিক্ষত হয়, তখন তাদের জন্য একদম সহজবোধ্য, প্রাঞ্জল ভাষায় কিছু একটা হওয়া দরকার। যেখানে বিজ্ঞানের ভারি ভারি শব্দ থাকবে না। থাকবেনা জটিল-কঠিন কোন বিষয়। খুব সহজ-সরল ভাষায় কিছু বলা থাকবে। খুব সহজ-সরল-সস্তা কিছু যুক্তি থাকবে যেগুলোর সাথে মানুষ প্রাত্যহিক পরিচিত।
আমি সেই কাজটা করতে চেয়েছি। আমি কখনোই দাবি করিনি যে আমি এই বই লিখে নাস্তিকদের কুপোকাত করে দিয়েছি। আমি কখনোই দাবি করিনি যে, আমি এই বইতে খুব উচ্চমার্গের যুক্তি,দর্শন, বিজ্ঞান ব্যবহার করেছি। আমি একজন মানুষ। মানুষ মাত্রেরই সীমাবদ্ধতা আছে। আমি জানি আমার যুক্তিগুলো দূর্বল। খুব সিলি। কিন্তু তবুও, আমি চেয়েছি- কিছু একটা শুরু হোক।
বইমেলায় গিয়ে আমার ভাইয়েরা হুমায়ুন আজাদ, আরজ আলি মাতব্বর, অভিজিৎ রায়দের 'আমার অবিশ্বাস', 'অবিশ্বাসের দর্শন' 'আমি কেন নাস্তিক' ইত্যাদি বইয়ের ভিড়ে তাদের বিপরীতে একটি বই খুঁজে। বলে, 'ইশ! এসবের বিপরীতে আমাদের কেউ যদি লিখতো।' 
আমি এটাই শুরু করতে চেয়েছি। হয়তো দূর্বল শুরু। কিন্তু করেছি তো, আলহামদুলিল্লাহ্‌।

আমি বারবার বলেছি, এই বই তাদের জন্য যারা আমার মতোই সাধারণ। যারা ভারি ভারি যুক্তি,দর্শন, বিজ্ঞান ক্যাচ করতে পারেনা। যাদের আমার মতো পড়াশুনা কম, জানাশোনা কম। যারা খুব একটা যুক্তি বুঝেনা, দর্শন বুঝেনা, বিজ্ঞান বুঝে না। আমি কখনোই দাবি করিনি যে- আমি পিএইচডি করা কোন প্রফেসরের জন্য এই বই লিখেছি। পিএইচডি গবেষকদের এই বই পড়ার কোন দরকারই নেই। আমি বলিনি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু ক্লাশে পড়া কোন বিরাট জ্ঞানী ধার্মিক ছেলেটার জন্য আমি এই বই লিখেছি। একদম না। তাদের জন্যও আমি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখিনি। আমি লিখেছি কেবল আমার মতোই থার্ডক্লাশ, লো ক্লাশ, সোজা বাংলা এবং আমার হাই প্রোফাইলওয়ালা ভাইদের ভাষায় 'তৃতীয় শ্রেণীর' মানুষগুলোর জন্যই।
আমি আরিফ আজাদ এরকম সস্তা, দূর্বল আর গ্রাম্য যুক্তি দিয়ে সমাজের থার্ডক্লাশ মানুষগুলোর জন্য কিছু কাজে হাত দিয়েছি। আমার উদাত্ত আহ্বান আমার সেই হাই প্রোফাইলওয়ালা ভাইদের প্রতি, যাদের কাছে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' একটি নিম্নমানের, অরুচিকর, তৃতীয় শ্রেণীর বই বলে বিবেচ্য, তারা দয়া করে মাঠে নামুন। সমাজের হাই প্রোফাইল শ্রেণীর জন্য আপনারা লিখুন। শক্ত যুক্তি, দর্শন, বিজ্ঞান দিয়ে বই লিখে নাস্তিকদের কবল থেকে আমাদের সমাজের উঁচু স্তরকে বাঁচান। আমিও চাই আপনাদের সেই বই নিয়ে থিসিস হোক। দেশ বিদেশে আপনাদের সুনাম হোক। আপনাদের নিয়ে রিসার্চ হোক। সমাজের উঁচু আস্তিক শ্রেণীর ঈমান রক্ষার দায়িত্ব নিন। আপনারা এগিয়ে আসুন। আসুন, সমালোচনা বাদ দিয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করি।
আপনারা উঁচু স্তর নিয়ে কাজ করুন। আমি সস্তা মানুষ। লো ক্লাশ মানুষ। আমি সমাজের তৃতীয় শ্রেণীটা নিয়ে থাকি।

মা'আসসালাম।



বিদেশী ভাষা শিখা ও আমার অভিজ্ঞতা

শুরুতেই বলি, মাতৃভাষার গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশী বা ভিনভাষা শিখার জন্য সকলের অল্প হলেও ইচ্ছা থাকে।বিশেষত মাদ্রাসা ছাত্রদের আরবী ভাষা শিখা ও স্কুল,কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রদের ইংরেজি ভাষা শিখার প্রতি বেশ আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে। শিখার মাধ্যম হিসেবে তাঁরা একাডেমীক বই পুস্তক ছাড়াও আনুষঙ্গিক বইয়ের সাহায্য নিয়ে থাকে।সর্বধরণের চেষ্টা,পরিশ্রম করে থাকে।কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় -তদুপরি আমাদের দেশের ছেলেরা কেন সহজে ভিনভাষা আয়ত্ত করতে পারে না?

হ্যাঁ,খুবই দিব্যি একটা কারণ আছে। আর তা হলো -আমাদের শিক্ষিত সমাজের অনুৎসাহ প্রদান ও ভুলের প্রতি তিরস্কার করণ। একটু ব্যাখ্যা দিয়ে বলছি:-
১.
মনে করুণ, একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আরবীতে একটুআধটু কথা বলতে শুরু করছে।মাতৃভাষার গণ্ডি পেরিয়ে ভিনভাষায় পদার্পণ করছে,সে হিসাবে তাঁর একটুআধটু ভুলের অবকাশ থাকবেই।কিন্তু এটাকে আমাদের শিক্ষিত সমাজ মেনে নিতে পারে না।তার এই ভুলের জন্য এমন তিরস্কার করা হবে,যাতে আর কখো সে এই পথে না যায়।বাস!ছাত্র এখানেই থেকে যায়।

মনে করুণ, একজন ছাত্র আরবী ফা'য়িল (কর্তা) এর জা'গায় মাফউল বলে ফেলছে -তাকে নিয়ে তিরস্কারের সর্বোচ্চ অনুশীলন শুরু হয়ে যাবে।বলা হবে সর্বনাশ! তুমি এখনো আরবীর ফা'ইল,মাফুলের ব্যবহার জান না?ইংরেজির ক্ষেত্রে সাব্জেক্টের আগে ভার্ব বসিয়ে ফেললে শিক্ষককেরা বলবে :'গাধা! এখনো বাক্যগঠনরীতি শিখতে পারলে না।তোর দ্ধারা কিছুই হবে না '।মোদ্দাকথা, আমাদের দেশে ভিনভাষা শিখার ও বলার ক্ষেত্রে 'গ্রামারকে' এতোই গুরুত্ববহ করা হয় যে,যেন পৃথিবীতে যারাই কথা বলে, সবাই ব্যাকরণ অনুকরণ করে কথা বলে।
অথচ,চিন্তা করে দেখুন! আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলি। ব্যাকরণ কতটুকু অনুসরণ করি? বিদেশীরা তাদের ভাষা (ইংলিশ +আরবী) ব্যবহার করে,তাঁরা কতটুকু ব্যাকরণ অনুকরণ করে? নিশ্চিত, আমরা যেমন মাতৃভাষা (বাংলাভাষা) বলতে ব্যাকরণ অনুকরণ শূন্যের কোটায়,তাঁদের ও অবস্থান সমান কোটায়। কেননা জানা বাহুল্য যে,মাতৃভাষা হোক কিংবা যেকোন ভাষা হোক -কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে 'মনের ভাবকে অন্যের কাছে ফুটিয়ে তুলা।ব্যাকরণ দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে বলার নাম না। ব্যাকরণ দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে বলা ও লিখার নাম হচ্ছে সাহিত্য'।আর সাহিত্য দিয়ে সবার মনকে জয় করা যায়না ;তাই সর্ক্ষেত্রে ব্যাকরণনীতি চালানো যাবে না'।আসল কথা হচ্ছে, ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক -যেকোন উপায়ে অন্যকে নিজের মনোভাব বুঝাতে সক্ষম হওয়া।এই মৌন পার্থক্যটা আমাদের বুঝতে হবে।
২.
আগেও বলেছি, দেশে থাকতে আরবী ও ইংরেজি ভাষা শিখার জন্য বেশ আগ্রহী ও পরিশ্রমী ছিলাম।কিন্তু আশাতীত শিখতে পারি নাই।তার জন্য আমি মোটেও নিজেকে দায়ী করি না;কেননা আমার হিসাবে পরিশ্রম যথাসাধ্য ছিল।কিন্তু সমাজের ইতিবাচক প্রভাব ও উপর্যুক্ত সঙ্গীর শূন্যতা বিরাজ ছিল। কারণ জানার দরকার ;তাই নিচে তুলে ধরলাম :

→আমাদের সমাজে কথা বলতে গিয়ে ভুল বলে ফেলা লজ্জাজনক, তাই কথা বলতে লজ্জা।
→ভুল বলে ফেললে উৎসাহ এর বদলে একরাশ তিরস্কার ও অনুৎসাহ-কটুবাক্য শ্রবণ।
→অনুশীলন এর জন্য সহপাঠী বা শ্রেণীর শূন্য অবস্থান।তথা প্রেক্টিস মাঠ নাই।
→ভিনভাষা শিখার প্রতি যথাযথ উৎসাহ প্রদান ও উপর্যুক্ত প্রয়োগ বিধান নাই।

কি এসব ভুল বললাম নাকি? না,আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে যা সত্য তাই বললাম।এবার আসি, বাস্তবতার মাঠে এসে কি শিখলাম :-
৩.
বিদেশের মাটিতে পা'বাড়াবা মাত্রই একরাশ হতাশা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।দীর্ঘ সময় আরবী+ইংরেজি ভাষা শিখার তরে ব্যয় করে এসে এখন বোবার মত করে যেতে হচ্ছে।অর্থাৎ, উপযোগী কথা বলতে পারতাম না। ভার্সিটিতে পৌঁছে কারো কথা তেমন বুঝতাম না।বোকের বাম পাশে প্রায়শই ব্যথা অনুভূত করতাম। কিন্তু যথাযোগ্য শিখার ময়দানে এসে সব জড়তা ও অজ্ঞতা দূর হলো। কিভাবে -হ্যাঁ, এক এক করে বলতেছি :-

আরবী ভাষা শিক্ষা :-
(আমি প্রথমেই বলে রাখি যে,আমি এই পোস্টের মাধ্যমে সাহিত্যালোচনা করছি না বরং ভিনভাষায় কথা বলার যোগ্যতা নিয়ে বলছি।)
আমাদের লেকচার ভার্সন আরবী।পরিক্ষা ও পড়াপদ্ধতি সবকিছুই আরবী।কিন্তু আমি যে সাদামাঠা ভাতেমারা বাঙ্গালী। প্রথম দিকে কিছু ভয়ভীতি ছিলই বটে;তবে অল্প সময়ে সেই ভয় কেটে গেছে।ক্লাসে রীতিমত বসে শিক্ষকদের রসালো আলোচনা ও লেকচারের ভাবভঙ্গিমা অবসার্ভ করতাম। খুদ আরবী ভাষিদের থেকে আরবী কথা বলার ভঙ্গিমা ও থিয়োরি ফলো আপ করতাম। খুব সহজ! সিরিয়াসলি খুব সহজ! শিক্ষকদের কথা বুঝতে আমার কাছে তেমনি মনে হতো, যেমনি বাংলাভাষা বুঝতে উপলব্ধি হতো। কেননা :-
→আরবীরা কথা বলতে মনোভাব ফুটাতে সহজ সরল ভাষা প্রয়োগ করেন।ব্যাকরণাদি অল্প অনুসরণ করেন। ফলে সহজেই ছাত্ররা বুঝতে পারে।
→ছাত্ররা কখনো ভুল বলছে কি না, তা না দেখে কি বুঝাতে চাচ্ছে - বুঝার ও হৃদয়াঙ্গম করার চেষ্টা করতেন।
→অত:পর, গুরুতর ভুল কিছু হলে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক শব্দাবলী প্রয়োগ করে শুদ্ধাচার করতেন।

আর এভাবেই আমি/আমরা অর্থাৎ অনারবী ছাত্ররা কথা বলার একটা উপলব্ধি জ্ঞান পেয়ে গেলাম।
তা হলো, কথা বলার ক্ষেত্রে আগে ব্যাকরণনীতি অনুসরণ নয় ;বরং সহজ সরল কথার অনুকরণ। তখন থেকে পূর্বেকার চিন্তা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলেছি। আগে কথা বলার পূর্বে ব্যাকরণ নীতি চিন্তা করতাম,আর এখন মনোভাব ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ সহজ পথ অনুসরণ করি।কেননা, চিন্তা করে দেখেন -কথা বলার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ নীতি যদি এতোই অপরিহার্য হত,তাহলে সমাজের মূর্খ লোকেরা কথা বলতে পারত না।কিন্তু,তারাও তো শিক্ষিত সমাজে বসবাস করে একে অপরের সাথে কমিউনিকেট করছে।

৪.
ইংরেজি ভাষা শিক্ষা :-

ইংরেজি ভাষা নিয়ে আমার কৌতূহলীর শেষ নাই।চেষ্টা পরিশ্রম ও সাধনার অন্ত নাই।তবে তিরস্কার অর্জনেও কমতি নাই।
আগে ভাবতাম, ইংরেজি একটা বাক্য বলার ক্ষেত্রে সাব্জেক্ট,ভার্ব অত:পর অব্জেক্ট ইত্যাদি রুপ এর ব্যবহার না হলে তাকে ইংলিশ বলাই হয় না।কিন্তু খুদ বৃটেন ও আমেরিকান ছাত্রদের সাথে মিশে দেখি আমার আগেরকার ধারণা নিছল ধোঁকা ছিল।তারা যেভাবে কথা বলে,ব্যাকরণ নীতিতে গেলে আপনার হৃদয়াঙ্গম বিপরীতমূখী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।তাদের সাথে বেশ কমিউনিকেট জড়ো করে আমার একথাই শিক্ষা হলো যে, ইংরেজিতে কথা বলে মনোভাব প্রকাশের জন্য ব্যাকরণ ধর্তব্য না।বরং সহজ সরল ওয়ার্ড ব্যবহার করে যেকোন উপায়ে শ্রুতাকে বুঝাতে সক্ষম হওয়া।
আরবীদের সাথে মিশে আরবী শিখার অভিজ্ঞতা ও ইংলিশদের সাথে মিশে ইংরেজি শিখার অভিজ্ঞতা থেকে একথাই সর্বেশেষ বলতে চাই -
পৃথিবীর যেকোন ভাষা অর্জন করতে হলে আগে ভুল বলতে শিখুন। প্রথমে শুদ্ধ বলে আপনি কখনো ঠাই পাবেন না।আপনি নিজেকে একটা শিশু বাচ্চার সাথে তুলনা করেন!(কেননা,ভিনভাষা শিখার ক্ষেত্রে আমি ছোটই) একটা বাচ্চা যখন কথা বলতে শুরু করে,তখন ভুল কথা দিয়েই শুরু করে। অত:পর,আস্তে আস্তে শুদ্ধাচারী হতে থাকে।ঠিক তেমনি আপনিও আরবী, ইংলিশ কিংবা অন্যভাষা শিখার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ নীতি পরিহার করে সহজলভ্য ভাষা ও কথা দিয়ে বলার চেষ্টা করুন।দেখবেন, একদা আপনিও ভিনভাষা শিখে ফেলছেন।
তাহলে চলুন! আজ থেকে সহপাঠীদের নিয়ে ভুলেশুদ্ধে কথা বলা শুরু করি।সর্বোচ্চ অনুশীলন অব্যাহত রাখি।বিদেশীদের সাথে সাধ্যমতো যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য 'অশেষ শুভ কামনা 'রইল।