ইংলেন্ডের আকাশে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ডিউজবেরী মার্কাজ মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মুবালল্লীগ, দা'য়ী ও দেশ বিদেশের জামাতে মুখরিত থাকে। পুরো ইউরোপে দ্বীন জিন্দা করার ফিকির হয় এখান থেকেই। এখান থেকেই আধুনিক বিশ্বের নারী পুরুষ, বাচ্ছাদের মাঝে ইসলামকে বিকশিত করার ফিকির হয়ে থাকে। আজকের ইউরেপে ইসলাম কবুলের যে জয়জয়কার ক্যাথলিকদের মাঝে, তা এই মার্কাজের ফিকির ও মেহনতেরই ফসল।
ডিউজবেরী মার্কাজ ব্রিটেনে তাবলীগ জামাতের প্রধান মার্কাজ। জগতখ্যাত দা'য়ী হাফেজ আহমদ পাটেলকে দিয়ে ইউরোপে জামাত তৈরি করে নিযামুদ্দীন মার্কাজে হেদায়তি বয়ানে বলেছিলেন, "মানুষ মক্কা মদীনাকে এখন ইউরোপ বানানোর প্রতিযোগীতা করছে, আর তোমরা ইউরোপে গিয়ে এই ভাবে হক আদায় করে দাওয়াতের মেহনত কবে যেন ইউরোপ সাহাবাদের জামানার মক্কা মদীনা হয়ে যায়।তোমরা যদি একাজের শতভাগ হক আদায় করে করতে থাকো আগামী একশত বছরের ভিতরে ইউরোপ আবার মুসলমানদের নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে ইনশাল্লাহ"
ইউরোপে যখন জামাত পৌছে, সেদিন থাকার মতো এমন মসজিদ খোঁজে পাননি তারা পুরো লন্ডনে। এর পরের সংগ্রামী ইতিহাস আর মুজাহিদদের কোরবানীর কথা ও আত্মত্যাগের অসংখ্য ঘটনা কমবেশি সবারই জানা। মাওলানা আহমদ মাতেল রহ. হাফেজ প্যাটেল রহ. ও বাংলাদেশের আব্দুল মুকিত দা.বা এর বিপ্লবী মেহনত আর ইউরোপে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের নব জাগরন এখন বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয়।
গোটা ইউরোপে অর্ধলক্ষ মসজিদ আর শতাধিক তাবলীগ মার্কাজ, অসংখ্য দাওরায়ে হাদীস ও ছোট বড় কওমী মাদরাসা এই দাওয়াতের মেহনতের ফসল। যে ভাবে দাওয়াতের মেহনতের মাধ্যমে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ গোটা ইউরোপে ইসলাম গ্রহন করছে, তাতে আমারা আশা করতে পারি আগামী ৪০ বছর অর্থাৎ ২০৫৬ সালের ভেতর ইনশাল্লাহ ইউরোপ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
_____হযরতজীর ভবিষৎদানী হয়তো ফলে যেতে পারে। ১৯৬৫ সালে প্রথম জামাত নিয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন। আর তখন থেকেই সেখানে তাবলীগের মেহনত খুব জোরে শোরে শুরু হয়েছে। এর বর্তমান ফলাফল সবারই জানা। দুনিয়ার যেসব দেশ আজ সারা দুনিয়ার দ্বীনী তাকাজা পুরা করছে তাদের মাঝে ইংল্যান্ড অন্যতম।
____তাবলীগওয়ালারা অনেক গীর্জা ক্রয় করে মসজিদে রূপান্তিত করে। এমনকি খ্রীষ্টানদের তীর্থস্থান খ্যাত রুমের ভ্যাটিকেন সিটিতে যে তাবলীগ মার্কাজটি তৈরি করা হয়েছে এটা ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার, যেখানে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ ইসলাম গ্রহন করে।
____এই মেহনতের কারণে বর্তমানে ব্রিটেনেই কেবল সেখানে দুই হাজারেরও অধিক মসজিদ আছে। সম্প্রতি লন্ডন সিটিতে তাবলীগ সাথীরা একটি বৃহৎ কোম্পানীর পুরো এলাকা ক্রয় করে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মসজিদ ও মার্কাজ নির্মানের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। যা হবে মুসলমানদেনর আগামী দিনের ইউরোপ জয়ের সদর দপ্তর বা হেডকোয়ার্টার।
শুধু লন্ডনে (বিলাতে) বর্তমানে তাবলীগ জামাতের পাঁচটি বড় বড় মার্কাজ মসজিদ রয়েছে,
১.ডিউজবেরী মার্কাজ
২.গাসর্গে মার্কাজ
৩.লন্ডন মার্কাজ
৪.বার্মিংহাম মার্কাজ
৫.ওয়েস্ট হোম মার্কাজ (মসজিদে ইলিয়াস রহ)।
এটা সূর্যের ন্যায় দ্যদিপ্যমান যে, গোটা ইউরোপে এমনকি, চিন, রাশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকায় উলামায়ে দেওবন্দের দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্বব্যাপি সর্বজনীন মেহনত ছাড়া অন্য কোন দ্বীনী আন্দোলন নেই। ইউরোপের মসজিদে মসজিদে নামাজের পর এই এলান হয় প্রতিদিন "বাকি নামাজের পর ঈমান আমলের মেহনত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হবে, সবাই বসার চেষ্টা করি,ইনশাল্লাহ অনেক ফায়দা হবে"। একই ত্বরীকায় গাশত, তালিম, চিল্লা আর ৬নাম্বারের মোজাকার হয়ে থাকে। ১৯৬৫সাল থেকে ডিউজবেরি মার্কাজের তত্ববধানে গোটা ইউরোপে তাবলীগের কাজ একই গতিতে চলে আসছে।
_ইউরোপের কোন মসজিদে অন্য কোন ত্বরীকার এইহবে, সেই হবে, এমন হালকা বসে না। এই একই সিস্টেমে সারা দুনিয়াতে দাওয়াতের মেহনত চলার মূল সুতিকাগার হলে দেশে দেশে তাবলীগ মার্কাজ। একটি জামাতের মকবুলিয়তের জন্য এর চেয়ে বড় আমল কি হতে পারে, যে গোটা জগতে একই কথা, একই পরামর্শে, একইভাবে চলে।
কেউ যদি ভাবেন এমন একটি বিশ্বজনীন মেহনতকে হীন মিথ্যা অপ্রপ্রচার করে দমিয়ে দিবেন , তাহলে তা হবে চরম হাস্যকর ও ভন্ডামি। তীর দেখিয়ে কামান তাড়ানোর মত। যা দীর্ঘদিন ধরে মাইজভান্ডার, আটরশি, রেজভি, দেওয়ানবাগ ত্বরিকার দরবারে লাখো মানুষের মজমা থেকে ভন্ড পীররা তাবলীগের বিরুদ্ধে মানুষকে মিথ্যা বলে ক্ষেপিয়ে তুলার চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু কোন কাজ হয় নি তাবলীগের বিশ্বব্যাপি লিওয়াজহিল্লাহ মেহনতের ফলে।
ইউরোপ সহ গোটা পৃথিবীর সকল মার্কাজ (ইসলামিক সেন্টার) ভারত থেকে দেওবন্দের উলামায়ে কেরাম নিয়ন্ত্রন করেন। দিল্লীর নিজামুদ্দিনের মার্কাজ সদর দপ্তর বা হেডকোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই মার্কাজ মসজিদ গুলো থেকে সমগ্র ইউরোপে প্রতিদিন অসংখ্য জামাত পাঠানো হয়।
এর মাঝে লন্ডনের পাদদেশে ডিউজবেরী মার্কাজ মসজিদ হল তাবলীগের প্রধান মার্কাজ। ইউরোপের ইতিহাসে ইসলামের এক নতুন যুগ বির্নিমাণ করে চলছে। সেই সময় খুব দূরে নয় যেদিন ইউরোপ চলে আসবে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রনে।
.
হে আল্লাহ,
এই মেহনতকে যেভাবে সারা দুনিয়ায় কবুল করেছ, আমাদেরকেও সেভাবে এই মেহনতের জন্য কবুল কর দয়াময়।- সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন