'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' আমার প্রথম বই। হতে পারে শেষ বই-ও। কথা সেটা নয়। কথা হচ্ছে, এ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডে আমি কোনদিন যুক্তিবিদ্যার বই হাত দিয়ে ধরেও দেখিনি। উচ্চমার্গের যুক্তি-তর্ক করতে হলে কতোটা পড়াশুনা করতে হয়, জানাশোনা থাকতে হয়- তা আমি জানি না।
ওয়াল্লাহি, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে আমি নাম-ডাক কুড়াবো, মানুষ আমাকে বাহ বাহ দিবে, মাথায় তুলে নাচবে- এরকম কোন ইন্টেনশান নিয়ে আমি এটা শুরু করিনি।
আমি একজন যুবক। যখন আমি মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে আমার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, আমার পবিত্রতম রাসূল, উনার পবিত্র চরিত্র, আমাদের রব মহান আল্লাহ এবং তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে নানান প্রশ্ন, নানান ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ দেখি, তখন আমার খুব খারাপ লাগে।
রাসূলের চরিত্রের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে, আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে, আল্লাহর গুণাবলী উল্লেখ করে, কোরআনের সত্যতা নির্ণয় করে, ইসলামের কালজয়ী আদর্শকে নিয়ে প্রচুর বই বাংলায় বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে লিখেছেন। প্রচুর তাফসির খন্ড, সীরাত গ্রন্থ লেখা হয়েছে, বাংলায় অনুবাদ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্। তবুও, আমি অনুভব করেছি- আমার মতো ইচড়ে পাঁকা যারা আছে, যারা তত্ত্বকথা গিলতে পারেনা, যারা মজায় মজায় কিছু জানতে চায়, বুঝতে চায়, লেকচার শুনলে যাদের ঘুম পায়, তাদের জন্য কি কিছু করা যায় না?
হুমায়ুন আহমেদের সমসাময়িক ভালো উপন্যাস তো অনেকেই লিখেছেন। তবু, যুবকরা উনার রচনার প্রতি ঝুঁকে পড়লেন কেনো? উনার রচনা তেমন গভীর না। সহজ-সরল, প্রাঞ্জল। ভারি ভারি সাহিত্যিক শব্দগুচ্ছ নেই। ভারি ভারি আলোচনা নেই। তবু কেনো যুবকেরা উনাকে পাঠ করে? কারণ, উনি যুবকদের মন বুঝতেন।
হুমায়ুনকে পাঠ করলেই মনে হয়- 'আরে, কম্পিউটার নিয়ে বসলে এরকম দু চার খন্ড আমিও তো লিখে ফেলতে পারবো।'
আসলেই তাই। হুমায়ুন হলেন সাধারণ পাঠকদের, যারা ভারি সাহিত্য বুঝেনা। বুঝলেও, ভারি সাহিত্য যাদের টানেনা। এইজন্যে, ভারি সাহিত্যিক এবং ভারি সাহিত্য বোদ্ধাদের কাছে হুমায়ুন আহমেদ একজন বাজারি লেখক।
আমারও মনে হয়েছে ইসলামমনা যুবকশ্রেণীর যে অংশ, যারা তাফসির পড়তে পারেনা, পড়লেও বুঝতে পারেনা, যারা আমার মতোই লেকচার টাইপ কিছু হজম করতে পারেনা, তারা বাংলার ইসলাম বিদ্বেষীদের নানান প্রশ্নবাণে যখন ক্ষত-বিক্ষত হয়, তখন তাদের জন্য একদম সহজবোধ্য, প্রাঞ্জল ভাষায় কিছু একটা হওয়া দরকার। যেখানে বিজ্ঞানের ভারি ভারি শব্দ থাকবে না। থাকবেনা জটিল-কঠিন কোন বিষয়। খুব সহজ-সরল ভাষায় কিছু বলা থাকবে। খুব সহজ-সরল-সস্তা কিছু যুক্তি থাকবে যেগুলোর সাথে মানুষ প্রাত্যহিক পরিচিত।
আমি সেই কাজটা করতে চেয়েছি। আমি কখনোই দাবি করিনি যে আমি এই বই লিখে নাস্তিকদের কুপোকাত করে দিয়েছি। আমি কখনোই দাবি করিনি যে, আমি এই বইতে খুব উচ্চমার্গের যুক্তি,দর্শন, বিজ্ঞান ব্যবহার করেছি। আমি একজন মানুষ। মানুষ মাত্রেরই সীমাবদ্ধতা আছে। আমি জানি আমার যুক্তিগুলো দূর্বল। খুব সিলি। কিন্তু তবুও, আমি চেয়েছি- কিছু একটা শুরু হোক।
বইমেলায় গিয়ে আমার ভাইয়েরা হুমায়ুন আজাদ, আরজ আলি মাতব্বর, অভিজিৎ রায়দের 'আমার অবিশ্বাস', 'অবিশ্বাসের দর্শন' 'আমি কেন নাস্তিক' ইত্যাদি বইয়ের ভিড়ে তাদের বিপরীতে একটি বই খুঁজে। বলে, 'ইশ! এসবের বিপরীতে আমাদের কেউ যদি লিখতো।'
আমি এটাই শুরু করতে চেয়েছি। হয়তো দূর্বল শুরু। কিন্তু করেছি তো, আলহামদুলিল্লাহ্।
আমি বারবার বলেছি, এই বই তাদের জন্য যারা আমার মতোই সাধারণ। যারা ভারি ভারি যুক্তি,দর্শন, বিজ্ঞান ক্যাচ করতে পারেনা। যাদের আমার মতো পড়াশুনা কম, জানাশোনা কম। যারা খুব একটা যুক্তি বুঝেনা, দর্শন বুঝেনা, বিজ্ঞান বুঝে না। আমি কখনোই দাবি করিনি যে- আমি পিএইচডি করা কোন প্রফেসরের জন্য এই বই লিখেছি। পিএইচডি গবেষকদের এই বই পড়ার কোন দরকারই নেই। আমি বলিনি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু ক্লাশে পড়া কোন বিরাট জ্ঞানী ধার্মিক ছেলেটার জন্য আমি এই বই লিখেছি। একদম না। তাদের জন্যও আমি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখিনি। আমি লিখেছি কেবল আমার মতোই থার্ডক্লাশ, লো ক্লাশ, সোজা বাংলা এবং আমার হাই প্রোফাইলওয়ালা ভাইদের ভাষায় 'তৃতীয় শ্রেণীর' মানুষগুলোর জন্যই।
আমি আরিফ আজাদ এরকম সস্তা, দূর্বল আর গ্রাম্য যুক্তি দিয়ে সমাজের থার্ডক্লাশ মানুষগুলোর জন্য কিছু কাজে হাত দিয়েছি। আমার উদাত্ত আহ্বান আমার সেই হাই প্রোফাইলওয়ালা ভাইদের প্রতি, যাদের কাছে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' একটি নিম্নমানের, অরুচিকর, তৃতীয় শ্রেণীর বই বলে বিবেচ্য, তারা দয়া করে মাঠে নামুন। সমাজের হাই প্রোফাইল শ্রেণীর জন্য আপনারা লিখুন। শক্ত যুক্তি, দর্শন, বিজ্ঞান দিয়ে বই লিখে নাস্তিকদের কবল থেকে আমাদের সমাজের উঁচু স্তরকে বাঁচান। আমিও চাই আপনাদের সেই বই নিয়ে থিসিস হোক। দেশ বিদেশে আপনাদের সুনাম হোক। আপনাদের নিয়ে রিসার্চ হোক। সমাজের উঁচু আস্তিক শ্রেণীর ঈমান রক্ষার দায়িত্ব নিন। আপনারা এগিয়ে আসুন। আসুন, সমালোচনা বাদ দিয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করি।
আপনারা উঁচু স্তর নিয়ে কাজ করুন। আমি সস্তা মানুষ। লো ক্লাশ মানুষ। আমি সমাজের তৃতীয় শ্রেণীটা নিয়ে থাকি।
মা'আসসালাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন