হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন,
كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ. صحيح البخاري (٧٤٠ )، موطا مالك برواية أبي مصعب الزهري (৪২৬)، مسند أحمد (২২৮৪৯)، مستخرج أبي عوانة (১৫৯৭)، الطبراني في الكبير (৫৭৭২)، البيهقي (২৩২৬)، البغوي في شرح السنة (৫৬৮)، الأوسط لابن المنذر (১২৮৬).
অর্থ : মানুষকে এই আদেশ দেওয়া হতো যে, তারা যেন নামাযে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখে। বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৭৪০; মুআত্তা মালেক, হাদীস নং ৪২৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২২৮৪৯; মুসতাখরাজে আবী আওয়ানা, হাদীস নং ১৫৯৭; তাবারানী ফিল কাবীর, হাদীস নং ৫৭৭২; বায়হাকী, হাদীস নং ২৩২৬; শারহুস সুন্নাহ, হাদীস নং ৫৬৮; আওসাত লিইবনিল মুনযির, হাদীস নং ১২৮৬।
২. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন,
قُلْتُ لأَنْظُرَنَّ إِلَى صَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَيْفَ يُصَلِّى فنظرت إليه فَقَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا بأُذُنَيْهِ ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى كَفِّهِ الْيُسْرَى وَالرُّسْغِ وَالسَّاعِدِ. أخرجه أبو داود (٧٢٧) والنسائي (٨٨٩) واللفظ له وأحمد ٤/٣١٨ وابن خزيمة (٤٨٠) وابن حبان (১৮৬০) وابن الجارود في المنتقى (২০৮) والبيهقي في السنن (২/২৭) بإسناد صحيح.
অর্থ: আমি (মনে মনে) বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায পড়েন তা আমি লক্ষ্য করবো। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন এবং উভয় হাত কান বরাবর তুললেন। অতঃপর তাঁর ডান হাত বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন।
আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭২৭; নাসাঈ শরীফ, হাদীস নং ৮৮৯; মুসনাদে আহমদ ৪খ, ৩১৮পৃ; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং ৪৮০; ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ১৮৬০; আলমুনতাকা লিইবনিল জারূদ, হাদীস নং ২০৮ ও বায়হাকী ২খ. ২৭ পৃ.। এ হাদীসটি সহীহ।
ইবনে খুযায়মা র. উক্ত হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন,
باب وضع بطن الكف اليمنى على الكف اليسرى والرسغ والساعد جميعا
অর্থাৎ ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহু সবগুলোর উপর রাখবে।
একইভাবে ইবনুল মুনযির রহ. তার আল আওসাত গ্রন্থে শিরোনাম দিয়েছেন,
ذكر وضع بطن كف اليمنى على ظهر كف اليسرى والرسغ والساعد جميعا
অর্থাৎ ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠ কব্জি ও কব্জিসংলগ্ন বাহুর উপর রাখার আলোচনা।
وعند الدارمي ١/٢٨٣ بإسناد صحيح في حديث وَائِلٍ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى قَرِيباً مِنَ الرُّصْغِ .
অর্থাৎ দারিমী র. এর এক বর্ণনায় সহীহ সনদে ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডান হাত বাম হাতের কব্জির কাছাকাছি রাখতে দেখেছি। সুনানে দারিমী, ১খ, ২৮৩পৃ।
আবূ দাউদ শরীফের আরেক বর্ণনায় আছে,
ثم أخذ شماله بيمينه
অর্থাৎ অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরলেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭২৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৮৫০; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১২৬৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ৪৭৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৯৪৫; মুজামে কাবীর লিত তাবারানী, ২২/৩৩; সুনানে বায়হাকী, হাদীস ২৫১৬।
৩. হযরত হুলব আততাঈ রা. বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه. أخرجه الترمذي (٢٥٢) وابن ماجه (٨٠٩) وابن أبي شيبة (٣٩٥٥) والدارقطني ١/٢٨٥ وقال الترمذي: حديث حسن.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন। তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরতেন। তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৫২; তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান। ইবনে মাজা, হাদীস নং ৮০৯; ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৯৫৫।
মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় আছে, বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার বিবরণ দিতে গিয়ে ইয়াহইয়া র. ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখেছেন।
৪. হযরত ওয়াইল রা. বর্ণনা করেন,
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كان قائما في الصلاة قبض بيمينه على شماله. أخرجه النسائي رقم ٨٨٧ ، والدارقطني رقم ١١٠٤. وقال الألباني : صحيح الإسناد
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি যখন নামাযে দাঁড়াতেন ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে ধরতেন। নাসাঈ, হাদীস নং ৮৮৭, দারাকুতনী, হাদীস নং ১১০৪। আলবানী বলেছেন, সনদ সহীহ।
৫. হযরত শাদ্দাদ ইবনে শুরাহবীল রা. বলেন,
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قائما يده اليمنى على يده اليسرى قابضا عليها يعني في الصلاة . رواه البزار والطبراني .ذكره الهيثمي في مجمع الزوائد ٢/٢٢٥ وقال: وفيه عباس بن يونس ولم أجد من ذكره تعليق-١
অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে ধরে আছেন। অর্থাৎ নামাযে। বাযযার ও তাবারানী এটি উদ্ধৃত করেছেন। (দ্র, মাজমাউয যাওয়াইদ, ২খ, ২২৫ পৃ)
৬. জারীর আদ দাব্বী বলেন,
كان عليّ إذا قام في الصلاة وضع يمينه على رسغه .أخرجه ابن أبي شيبة (٣٩٦١) موصولا والبخاري تعليقا قبل حديث رقم ١١٩٨. كتاب العمل في الصلاة ، باب إستعانة اليد في الصلاة الخ ولفظ البخاري : ووضع عليّ كفه على رسغه الأيسر إلا أن يحكَّ جلدا أو يصلح ثوبا.
অর্থ: আলী রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তাঁর ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৯৬১; বুখারী শরীফ, ১১৯৮নং হাদীসের পূর্বে, বায়হাকী, হাদীস নং ২৩৩৩। এ হাদীসটির সনদ সহীহ।
বুখারী শরীফে এটি এভাবে এসেছে, আলী রা. তার (ডান) হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখেন। তবে শরীর চুলকানো বা কাপড় ঠিক করার জন্য হলে ভিন্ন কথা। (অর্থাৎ তখন ডান হাত সরানোর প্রয়োজন পড়ত।)
এ হাদীসগুলোর কোন কোনটি থেকে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন। আর কোন কোনটি থেকে বোঝা যায়, তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরতেন। কিন্তু বাম হাতের কোন জায়গা চেপে ধরতেন? অধিকাংশ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি বাম হাতের কব্জি চেপে ধরতেন।
এসব হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চার মাযহাবের আলেমগণ সেই পদ্ধতিকেই অবলম্বন করেছেন যেভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ আমল করে থাকেন।
ইমাম মুহাম্মদ বলেছেন, ويضع بطن كفه الأيمن على رسغه فيكون الرسغ في وسط الكف অর্থাৎ ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রেখে নাভির নীচে বাঁধবে। তাহলে কব্জি হাতের তালুর মাঝখানে থাকবে। (কিতাবুল আছার, হা. ১২০)
হালবী র. মুনয়াতুল মুসাল্লী এর ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন,
السنة أن يجمع بين الوضع والقبض جمعا بين ما ورد في الأحاديث المذكورة إذ في بعضها ذكر الأخذ وفي بعضها ذكر وضع اليد وفي البعض وضع اليد على الذراع فكيفية الجمع أن يضع الكف اليمنى على الكف اليسرى ويحلق الإبهام والخنصر على الرسغ ويبسط الأصابع الثلاث على الذراع فيصدق أنه وضع اليد على اليد وعلى الذراع وأنه أخذ شماله بيمينه اهـ
অর্থাৎ উল্লিখিত হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের পর সাব্যস্ত হয় যে, হাত রাখা ও বাঁধা দুটির উপরই একসঙ্গে আমল করা সুন্নত। কারণ, কিছু হাদীসে চেপে ধরার কথা এসেছে। আর কিছু হাদীসে হাত রাখার কথা এসেছে। অপর কিছু হাদীসে বাহুর উপর হাত রাখার কথা এসেছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের পদ্ধতি হলো, ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে, বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দ্বারা কব্জি চেপে ধরবে, আর বাকি তিন আঙ্গুল বাহুর উপর বিছিয়ে দিবে। তাহলে হাতের উপর হাত রাখা, বাহুর উপর হাত রাখা এবং ডান হাত দ্বারা বাম হাত (চেপে) ধরা, সবগুলোই হাসিল হবে।
লক্ষ্য করুন, হানাফী আলেমগণ কিভাবে হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সবগুলো অনুসারে আমল করতে বলেছেন! একেই বলে হাদীসের অনুসরণ!
উল্লেখ্য যে, আহলে হাদীস ভাইয়েরা যেভাবে বাহুর উপর বাহু রাখেন তাতে ওয়াইল রা., হুলব রা. ও শাদ্দাদ রা. প্রমুখ সাহাবীগণ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস তিনটি অনুযায়ী কোন আমল হয় না। কারণ এ তিনটি হাদীসে ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে ধরার কথা বলা হয়েছে।
ইমাম মালেক র. এর প্রসিদ্ধ মত হলো ফরজ নামাযে হাত বাঁধবে না, ছেড়ে রাখবে। সুন্নত ও নফল নামাযে হাত বাঁধবে। হাত বাঁধলে কিভাবে বাঁধবে? আল্লামা উব্বী মালেকী র. মুসলিম শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন,
واختار شيوخنا أن يقبض بكف اليمنى على رسغ اليسرى واختار بعضهم مع ذلك أن تكون السبابة والوسطى ممتدين على الذراع اهـ ٢/٢٧٨
অর্থাৎ আামাদের শায়েখগণ বলেছেন, ডান হাতের তালু দ্বারা বাম হাতের কব্জি চেপে ধরবে। কেউ কেউ একথাও যোগ করেছেন, শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলি যেন বাহুর উপর বিস্তৃত থাকে। (২খ, ২৭৮পৃ)
শাফেয়ী মাযহাব সম্পর্কে ইমাম নববী র. তার ‘আর রাওজাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন,
السنة وضع اليمنى على اليسرى فيقبض بكفه اليمنى كوع اليسرى وبعض رسغها وساعدها ١/٣٣٩
অর্থাৎ সুন্নত হলো ডান হাত বাম হাতের উপর এভাবে রাখবে যে, ডান হাতের তালু দ্বারা বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ার হাড় এবং কব্জি ও বাহুর অংশবিশেষ চেপে ধরবে। (২খ, ৩৩৯পৃ)
হাম্বলী মাযহাব সম্পর্কে ইবনে মানসূর হাম্বালী র. আররাওযুল মুরবি’ গ্রন্থে লিখেছেন,
ثم يقبض كوع يسراه بيمينه ويجعلهما تحت سرته اهـ ١/١٦٥ وكذا في الإنصاف للمرداوي ٢/٤٥ والفروع لابن مفلح ١/٣٦١
অর্থাৎ অতঃপর বাম হাতের কব্জি ডান হাত দ্বারা চেপে ধরবে, এবং নাভির নীচে রাখবে। (১খ, ১৬৫পৃ); মারদাবী র. আল ইনসাফ গ্রন্থে (২/৪৫) ও ইবনে মুফলিহ র. আল ফুরু’ গ্রন্থে (১/৩৬১) একই কথা বলেছেন।
ইবনে হাযম রহ. এর মত :
আল মুহাল্লা গ্রন্থে ইবনে হাযম জাহিরী লিখেছেন,
ويُستحب أن يضع المصلي يده اليمنى على كوع يده اليسرى في الصلاة.
অর্থাৎ মুস্তাহাব হলো মুসল্লী নামাযে তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। (মাসআলা নং ৪৪৮)
শায়খ সালেহ ইবনে ফাওযানের মত :
আরব বিশ্বের খ্যাতিমান আলেম শায়খ সালেহ ইবনে ফাওযানও বলেছেন, السنة أن يقبض المصلي كفه اليسرى بيده اليمنى অর্থাৎ সুন্নত হলো ডান হাত দিয়ে বাম হাতে কব্জি চেপে ধরবে। (ফাতাওয়ায়ে সালিহ ইবনে ফাওযান)
লক্ষ করুন, পৃথিবীর অধিকাংশ আলেম-ওলামার মত কি, আর লা-মাযহাবী ভাইয়েরা কি করেন?
হাদিসের একটি ভুলব্যাখ্যা ও তার জবাব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন