তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যহার করবে। তাদেরকে সৃষ্টী করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে।যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। তোমাদেরকে ওসীয়াত করা হল নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যহার করার। বুখারী শরিফের ৪৮০৭ নং হাদিস
আরেক টি হাদিস উল্লেখ করছিঃ ৪৮০৬ আবদুল আযীয ইব’ন আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়। যদি তোমরা তাকে একেবারে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং, যদি তোমরা তাদের থেকে লাভবান হতে চাও, তাহলে ঐ বাঁকা অবস্থাতেই লাভবান হতে হবে। (বুখারী) নিশ্চয় হাদিস দুইটির মধ্যেকার পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন। একটি হাদিসে বলা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের মতো এবং আর একটি হাদিসে বলা হচ্ছে পাঁজরের হাঁড় হতে সৃষ্টি।এখন হাদিস দুইটির পক্ষে অনেকগুলি ব্যাখ্যা হতে পারে।আমি সেগুলো উল্লেখ করবো তবে তার আগে দেখে নি কুরআন কি বলে?
আগে বলে নি পাঁজরের হাঁড়ের প্রসঙ্গ খ্রিষ্টানধর্মগ্রন্ধ ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থে আরো রঙচঙ মাখা অবস্থায় পাওয়া যায়।এখন পাঁজরের হাঁড়ের কথা কেন বলা হল? “এটা এভাবে বলা যায় যে, হাদিসটি দ্বারা মহিলাদের সাথে ব্যবহারের একটা স্কেল পাওয়া যায়।এখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশের কথা বলা হয়নি,যাতে নারীকে মাথায় চাপানো না হয়, পায়ের নিচের কোনো অংশের কথা বলা হয় নি,যাতে তাদের পদদলিত না করা হয়।
তাদের পাঁজরের হাঁড়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে; যা পুরুষের হৃদয়ের নিকটবর্তী।সত্রীর স্থান স্বামীর হৃদয়ে, তার সাথে সদ্ব্যবহার করবে, তার ক্ষমতার অধিক চাপ সৃষ্টি করবে না,তার সাথে ইনসাফ করবে এটাই হাদিসটির মূল শিক্ষা।
এখন দেখি কুরআন হযরত হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে কি বলা হয়েছেঃ সূরা নিসার এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﻔْﺲٍ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٍ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ ﻭَﺑَﺚَّ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﺭِﺟَﺎﻟًﺎ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀً ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺗَﺴَﺎﺀَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺭَﻗِﻴﺒًﺎ “হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।যিনি তোমাদের একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন।যিনি তাদের দু’জন থেকে পৃথিবীতে বহু নর-নারী বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর,যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে আবেদন কর। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।”
কুরআনেও বলা হচ্ছে হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে;তবে কোন প্রক্রিয়ায় তা মহান আল্লহ উল্লেখ করেন নি।
যুক্তিখন্ডনঃ
----------------
হযরত হাওয়া (আঃ) পাঁজরের হাঁড় থেকে সৃষ্টি করা হয়; তবে এখানে অবমাননার কি আছে আমি জানি না? আল্লাহ বলেন-‘কর্দমকে-ছাঁচে আকার দিয়ে, শব্দকারী মাটি হতে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা হিযর,আয়াত ২৬]
এখন প্রশ্ন, হযরত হাওয়া (আঃ) কে যদি পাঁজরের হাঁড় থেকেই সৃষ্টি করা হয় তাহলে কাকে অবমাননা করা হল?হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হলো মাটি দিয়ে হযরত হাওয়া (আঃ) কে পাঁজরের হাঁড় দিয়ে; তাহলে এখানে অবমাননা পরিমাপের মাপকাঠি কি?প্রশ্ন রয়ে গেল? দেখে তো মনে হচ্ছে হযরত আদম (আঃ) কেই অবমাননা করা হয়েছে!
(নাউজুবিল্লাহ)।
হযরত হাওয়া (আঃ) ও পাঁজরের হাঁড় নিয়ে কিছু কথা প্রচলিত আছে।যেমনঃ নারীদের পাঁজরের হাঁড়ের সংখ্যা পুরুষের হাঁড়ের সংখ্যার চেয়ে একটি বেশি।এ কথাটি অযৌক্তিক।নারী-পুরুষের পাঁজরের হাঁড়ের সংখ্যা সমান।বাবার যদি এক আঙ্গুল কাটা থাকে; তার মানে এ নয় যে,সন্তানও এক আঙ্গুল কাটা বাদে জন্মাবে! এটা অযৌক্তিক।এ রকম কথা কুরআন হাদিসে কোথায় পাবেন না।
আরেকটি প্রচলিত কথা যেমন হযরত আদম (আঃ) ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তার বাম পাঁজরের পিছন হতে হযরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।তারপর আদমের ঘুম ভেঙ্গে তাকে দেখলে তিনি আকৃষ্ট হোন এবং তার মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হয়।এ কথাগুলো পুরোপুরি খ্রীষ্টানদের বাইবেলের; এটা বাইবেলের গল্প মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
2:21 And the LORD God caused a deep sleep to fall upon Adam, and he slept: and he took one of his ribs, ৩.
আর বিভিন্ন তাফসীরে এ ধরণের হাদিস দেখবেন যা হয়তো সাহাবীরা বর্ণনা করেছেন।তবে সেগুলো রাসূল সাঃ এর সূত্রে বর্ণনা করা হয় নি; বরং আহলে কিতাবদের সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ভুল থাকা স্বাভাবিক। কেননা বর্তমান আহলে কিতাব নেই এগুলি মানুষের বানানো
হাদিসে বলা হচ্ছে পাঁজরের হাঁড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে ।পাঁজরের একটা কনসেপ্ট
সূরা তারিক এর ৫ থেকে ৭নং আয়াতে আল্লহ কি বলছেন দেখিঃ ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦ ﺑَﻴْﻦِ ﺍﻟﺼُّﻠْﺐِ ﻭَﺍﻟﺘَّﺮَﺍﺋِﺐِ ﺧُﻠِﻖَ ﻣِﻦ ﻣَّﺎﺀ ﺩَﺍﻓِﻖٍ ﻓَﻠْﻴَﻨﻈُﺮِ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥُ ﻣِﻢَّ ﺧُﻠِﻖَ
“অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও পাঁজরের মধ্য থেকে।” এখন মহান আল্লাহ এ বিষয়ে কি বলতে চাচ্ছেন তা হয়তো ভবিষ্যত্বে আমরা জানতে পারব। বিভ্রান্তির নিরসনঃ উপরে হাদিস দুইটিতে একটিতে পাঁজরের হাড় হতে সৃষ্টির করেছেন আরেকটিতে বলা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের মতো
।অনেক ইসলামি scholar এটার আক্ষরিক অর্থই মেনে নিয়েছেন।কারণ এ কথার স্বরুপ আজও অজানা।তবে অনেকে এটা মেনে নেন নি।তারা বলেছেন, এখানে পাঁজরের হাঁড় কথাটি সাংকেতিক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ হাদিসটিতে প্রথম অংশে বলা হচ্ছে নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর; আর শেষ অংশেও ঠিক একই নির্দেশনা। হাদিসটিতে তো বলা হচ্ছেই পাঁজরের হাড়ের মতো! এবং একটি শক্তিশালী যুক্তি হলো created from সৃষ্টি করা হয়েছে বলতে এটা জরুরি না যে,নারী সৃষ্টির উপাদান পাঁজরের হাড়।
বরং এখানে তাদের প্রকৃতি বা ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।এবং তাদের যুক্তি আরো শক্তিশালী হয়
কুরআনের এ আয়াত দ্বারা- সূরা আম্বিয়ার ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ﺧُﻠِﻖَ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥُ ﻣِﻦْ ﻋَﺠَﻞٍ ﺳَﺄُﺭِﻳﻜُﻢْ ﺁَﻳَﺎﺗِﻲ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺴْﺘَﻌْﺠِﻠُ “মানুষ দ্রুততাপ্রবণ সৃষ্টি।
মানে বীর্যের যেমন মাটি পানি আগুন বাতাস এগুলি সবই দ্রতগামী।
চলবে
ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন
আহকার বান্দা মো বিনইয়ামিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন