মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়ার সম্পদের কুরআনিক বণ্টনরীতিকে শরয়ী পরিভাষায়- “ফারায়েয” বলে। “ফারায়েজ” বান্দার জন্য মিরাসী সম্পদ নির্ধারণে আল্লাহর সীমারেখা। (فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ (নিসা-১১)। এই বণ্টনরীতির কিছু বিষয় আমাদের বাহ্যত বুঝে আসে, আবার কিছু বিষয় বুঝে আসেনা। আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক যে শরয়ী জীবন বিধান, তাকে প্রত্যাখান করে বস্তুবাদী, পুঁজিবাদী জীবন ব্যবস্থায় আস্থাবান হয়ে উঠলে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। কথা হচ্ছে মুতাওয়াতির পন্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের পর্যন্ত আগত, সঠিক ব্যাখ্যায় উপস্থাপিত, কুরআনের কোন আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার বান্দার নেই। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ঈমানও ক্রমান্নয়ে প্রশ্নবিদ্ধ, পরিবর্তন পরিবর্ধন ও প্রত্যাখ্যান হতে বাধ্য।
কিছু পরিচিত মুসলিম ভাই কুরআনের বর্ণিত “ফারায়েয” আইনের একটি আইন-অর্থাৎ কেউ শুধু কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে, তার রেখে যাওয়া সম্পদের বণ্টননীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তাকে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি আল্লাহর কাছে তাদের এই ধৃষ্টতার জন্য আশ্রয় চাই। “ফরায়েয” নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা না করে তাদের উল্লেখিত নীতি এবং তার বিরোধিতা প্রশ্নে মৌলিক কিছু কথা বলছি।
কুরআনের সুরা নিসা’র ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
فَإِن كُنَّ نِسَاء فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ
“ অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক”।
অর্থাৎ- কুরআন বলছে; কেউ শুধু কণ্যা সন্তান রেখে মারা গেলে- কণ্যা যদি একের অধিক হয় তাহলে তারা পাবে মোট সম্পদের তিনভাগে দুই ভাগ। আর যদি কন্যা শুধু একজন হয় তাহলে সে পাবে মোট সম্পদের অর্ধেক। বাকী অর্ধেক নিয়মানুযায়ী অন্যান্য ওয়ারিশগণ পাবেন।
এখানে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে; মৃত ব্যক্তির সম্পদের উত্তরাধিকার একমাত্র সন্তান ছাড়া অন্যরা হবে কেন?
এর সাধারণ উত্তর হল; কুরআন “ফারায়েজ” বা বণ্টনরীতিতে পারিবারিক ওয়ারিশান নির্বাচনে “সব সময়ের, সম্ভাব্য সকল বাস্তবতাকে” সামনে রেখে আইন প্রণয়ন করেছে। একই সাথে কুরআন “পূঁজিবাদী অর্থে” সম্পদের ব্যক্তি মালিকানায় বিশ্বাসের ক্ষতিকর দিকগুলোকেও সামনে রেখে, সম্পদকে কুক্ষিগত করার রাস্তাকে বন্ধ করে সার্বিকভাবে সম্পদের প্রবহমান রীতি অনুসরণ করেছে।
দিত্বীয়ত; আমরা যদি এই দাবি করি যে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি শুধু তার সন্তানরাই পাবে, তাহলে প্রথম সমস্যা হবে মৃত ব্যক্তির নিজেরই সম্পদ সংগ্রহের পারিবারিক উৎসগুলো সংকুচিত হয়ে আসবে। যার প্রভাব পড়বে তার সন্তানদের উপর। এতে আমরা এমন সমস্যার মুখোমুখি হব যে, এমন বহু মানুষ মারা যায়, যে আদতে তার সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেনি। অন্যদিকে সন্তানহীন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের কোন ওয়ারিশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্যই ইসলাম বণ্টননীতিকে একটি শরয়ী নীতিমালার আলোকে বিস্তৃত করে দিয়েছে। যাতে সম্পদের মালিকানায় প্রত্যেকের একটি অংশ থাকে এবং সেই অর্থে দায়িত্ব, কর্তব্য ও পারিবারিক সম্পর্ক অটুট থাকে।
তৃতীয় কথা হল; কোন ব্যক্তি শুধু একটি কন্যা সন্তান রেখে মারা যাওয়ার পর, তার সম্পদে অন্যরা অংশ পায় কেন। অন্যরা এই জন্য পায়- যাতে এই “অন্যের” রেখে যাওয়া কন্যা সন্তানরা স্বাভাবিক জীবন ধারণে আল্লাহর নির্ধারিত পারিবারিক সহযোগিতা পায়। এই আইন না মানলে কখনো এমন অবস্থার তৈরী হবে যে, বহু কন্যা তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ না থাকায় একদম রিক্তহস্ত হয়ে যাবে। সহজ কথায়, আপনি কণ্যার পিতার রেখে যাওয়া যে সম্পদে, তার পূর্ণ মালিকানা দাবি করছেন; হতে পারে সে সম্পদ তার এমন চাচা থেকে ওয়ারিশি প্রাপ্ত, যে কিনা এক কণ্যা রেখে মারা গেছে। এখন কুরআনে বর্ণিত আইন মানলে, আপনি অর্ধেক পাবেন। আর আইন না মানলে প্রথমে কন্যা তার বাবার সম্পদ (যা চাচার কাছ থেকে ওয়ারিশি সুত্রে পেয়েছে) অস্বিকার করতে হবে। যদি এমনই হয় তাহলে কন্যার জন্য আর কিছুই বাকী থাকলোনা।সম্পদ দেয়ার আইনকে যদি প্রত্যাখ্যান করতে চান, তাহলে গ্রহণের আইনকেও প্রত্যাখ্যান করুন। কোনটা অধিক সুবিধাজনক বিবেচনা করুন।
কাজেই কুরআনের সম্পদ বণ্টনরীতি সমগ্রিকভাবে বান্দার উপর আল্লাহর অনগ্রহ।
আমরা ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ (আইন দাতা) নেই।
--
মুহাম্মদ আফসার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন