বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

কওমি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি প্রকল্পে আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী (দাঃবাঃ) এর কিছু প্রস্তাব



সংগ্রহ করেছেন: বিশিষ্ট্য মুহাদ্দিস শাইখ জুলফিকার মাহমুদী

দ্বীনী মাদরাসা সমূহে আরবী ভাষার যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা কিন্তু আজ আমাদের মাদরাসাগুলোতে আরবী সাহিত্য চর্চা দুঃখজনক ভাবে বিলুপ্তির পথে ৷ প্রথম বিভাগে উত্তির্ণ শতকরা 5-6 জন ব্যতিত শুন্যের কোঠায় ৷ না পারে শুদ্ধভারে আরবী লিখতে, না পারে বলতে, এমনকি কিতাবের “মতন ” পড়ার ছাত্রও দিন দিন বিলুপ্তির পথে ৷ এমন কিছু মাদরাসা আমার সফর হয়েছে যেখানে এক জন ছাত্রও পাইনি শুদ্ধ করে “মতন ” পড়ার ৷ আমাদের মাদরাসা সমূহে আরবী আদব,সরফ ,নাহু , বালাগাত শিক্ষার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করা হয় কিন্তুু ফলাফল শুন্য ৷ কেন? গতানুগতিক পড়ানোর পদ্ধতি ছাড়া আমরা আমাদের ছাত্রদের এর বাহিরে নিয়ে যেতে পারিনা ৷ মনগড়া উপস্থাপনা করেই কান্ত হয়ে যাই ৷ কিতাবের দু চারটি উদহারন দিয়েই শেষ করি ৷ কুরআন হাদীস এর উদহারন একেবারেই গৌণ ৷ আমাদের বুঝা উচিত বর্তমানের ছাত্ররা সচেতন হলেও মেধায় অনেক সংক্ষিপ্ত ৷ তাই তাদের অবস্থা বিবেচনা করে, পাঠ্য তালিকা, পাঠদান ব্যবস্থা সাজাতে হবে ৷ এর জন্য প্রশিক্ষণ ব্যাবস্থা করতে হবে ৷ “ইনশার” কিতাবের নোট এটি আরো মারাত্বক ক্ষতিকর ৷ কিন্তুু আমরা যেন বুঝতেই চাইনা কি হচ্ছে, আর কি করছি ৷
যাই হোক এগুলো থেকে উত্তরনের জন্য আমার প্রস্তাব ৷ (ক) প্রাথমিক স্তর থেকেই আরবী আদব, ইনশা,সরফ, নাহু বিষয়ক এমন ধরনের কিতাব রচনা করে একক পাঠ্য তালিকা সংযোজন করা চাই যেগুলোর মধ্যে নিয়মাবলী বর্ণনা করার সাথে সাথে প্রয়োগ ও ব্যবহারের নিয়ম থাকে ৷ সাথে সাথে কুরআন হাদীসের উদহারন দিয়ে আত্মস্থ করানো হয় ৷ পুরাতন ধাচের কিতাব গুলো বর্তমান ছাত্রদের মেধাশক্তির অনুকূলে না থাকায় উপকৃত হতে পারছেনা ৷ আরব বিশ্বে এ জন্য বহু কিতাব রচিত হয়েছে ৷ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যেমন, ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﻮﺍﺿﺢ ـ ﺍﻟﻨﺤﻮﺍﻟﻮﺍﻓﻲ ـ ﻣﺬﻛﺮﺍﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﻭﺍﻟﺼﺮﻑ ـ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻚ ইত্যাদী পাঠ্যতালিকায় লাগানো উচিত৷ (খ) আরবী আদব / সাহিত্য শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে “ইনশা “তথা আরবী রচনা শিখানোর জন্য আলাদা সময় নির্বাচন করে নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলন করানো জরুরী ৷ এ জন্য বহু কিতাব পাওয়া যায় ৷ যেমন, ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻚ ـ ﺍﻻﺳﻠﻮﺏ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻟﻼﻧﺸﺎﺀ ـ ﻣﻌﻠﻢ ﺍﻻﻧﺸﺎﺀ ইত্যাদী ৷ এমনিভাবে “বালাগাত শিক্ষার ক্ষেত্রে শুধু ﻣﺨﺘﺼﺮ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ـ কিতাব যথেষ্ট নয় ৷ তাই এখনোও কিছু কিতাব সংযোজন করতে হবে ৷ (গ) আরবী সাহিত্যের রস সৃষ্টির জন্য সবচে উপকারী, গুরুত্বপুর্ন হলো, মাদরাসার পরিবেশে আরবী প্রচলন ঘটানো ৷ এটির জন্য আমার দৃষ্টিতে চতুর্থ শ্রেণী থেকে নিয়ে উপরের ক্লাস আরবীতে হওয়া উচিত ৷ হঠাত এ কাজ মুশকিল যদি হয় তবে কমপক্ষে মাদরাসার সমস্ত ঘোষণা, অফিসিয়াল কাগজ পত্র ও কার্যক্রম পরিক্ষার প্রশ্ন পত্র ও ফলাফল আরবী হওয়া চাই ৷ যাতে ধীরেধীরে সম্পুর্ণ আরবী হয়ে যায় ৷ ( ঘ) আসাতিযা ও ছাত্রদের পরস্পরের কথাবার্তায় আরবী কথোপকথনে হিম্মত বাড়ানো চাই ৷ ( ঙ) একমাস দু মাস পর পর আরবী ভাষণ, রচনার অনুষ্ঠান, আরবী মুকালামার অনুষ্ঠান, হওয়া উচিত ৷ (চলবে ৷)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন