বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

খেলাধুলা ও বিনোদন সম্পর্কে ইসলামের মৌলিক বিধান

১. কুরআন ও হাদীসে যেসব খেলা ও বিনোদন মাধ্যমকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, তা সব সময়ের জন্য হারাম। যেমন, দাবা, কবুতরবাজি, বাদ্য, প্রাণীর ছবি আকা। ইত্যাদি।
২. যেসব খেলাধুলা ও বিনোদনে হারামের সংমিশ্রণ আছে। বা যার পরিণতিতে হারামে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশংকা আছে, তাতে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়। যেমন, বাদ্যের সাথে গান। বা অশ্লীল গান ও কবিতা। অর্থ বাজি রেখে খেলাধুলা করা। নারী-পুরুষের মেলামেশা বা পর্দাহীনতা। ইত্যাদি।
 ৩. যে খেলাধুলা বা বিনোদন ফরজ বা ওয়াজিব বিধান পালনের প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি করে, তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
৪. সে সব খেলাধুলা ও বিনোদন অর্থহীন এবং যা শুধু সময় কাটানোর জন্য করা হয়, তাতে লিপ্ত হওয়া ইসলাম অপছন্দ করে। কারণ, তা অবৈধ বিনোদনের প্রতি অনুরাগ বাড়ায়। শিথিলতা এনে দেয়। যেমন, বাদ্য ও অশ্লীলতা মুক্ত গান ও কবিতা।
৫. যেসব খেলাধুলা ও বিনোদন কুরআন ও হাদীসে অনুমোদিত এবং যা মানুষের জন্য উপকারী তাতে অংশ গ্রহণ করা বৈধ। যেমন, তীর ও বর্শা নিক্ষেপ। সাতার। দৌড় প্রতিযোগিতা। ইত্যাদি।
ইসলাম যেমন খেলাধুলা ও বিনোদন সমর্থন করে
১. ইসলাম মানুষের জন্য উপকারী খেলাধুলা, শরীর চর্চা, প্রতিযোগিতা ও বিনোদনের অনুমতি দিয়েছে। যেমন, সাতার, দৌড় ও তীর নিক্ষেপ। ইত্যাদি। ইরশাদ হয়েছে,
كل شئ ليس من ذكر الله لهو ولعب ، إلا أن يكون أربعة : ملاعبة الرجل امرأته ، وتأديب الرجل فرسه ، ومشى الرجل بنى الغرضين، وتعليم الرجل السباحة.
প্রত্যেক এমন জিনিস যা আল্লাহর জিকির নয়, তা ক্রীয়া ও কৌতুকের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু চারটি জিনিস তার ব্যতিক্রম। এক. স্ত্রীর সঙ্গে হাস্যরস করা। দুই. কাউকে ঘোড়ায় উঠার প্রশিক্ষণ দেয়া। তিন. দু’টি লক্ষ্য নির্ণয়ের জন্য চলা। চার. কাউকে সাতার শিক্ষা দেয়া। (কানযুল উম্মাল-৪০৬১২)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
المؤمن القوى خير واحب إلى الله من المؤمن الضعيف
‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিক প্রিয়।’ (কানযুল উম্মাল-৫৪০)
২. অশ্লীলতা ও বিদ্বেষ মুক্ত, চেতনা উদ্দীপক ও অর্থবহ কবিতা, সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চা ইসলাম সমর্থন করে। একাধিক হাদীস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) ইরশাদ করেন,কাফেরদের বিরুদ্ধে হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর ঈমানদীপ্ত কবিতার উচ্চ প্রশংসা করে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি জিহাদের ময়দানে চেতনা উদ্দীপক কবিতার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
 كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع لحسان منبرا في المسجد يقوم عليه قائما يفاخر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জন্য মসজিদে নববীতে একটি মেম্বার তৈরি করে দেন, যেখানে দাড়িয়ে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) এর পক্ষ থেকে গর্ব প্রকাশ করতো। (তিরমিজী শরীফ-২৮৪৬)
ইসলাম যেমন খেলাধুলা ও বিনোদন সমর্থন করে না
১. যেসব খেলাধুলা ও বিনোদনের জাগতিক ও পরকালীন কোনো উপকার নেই। যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও ধর্মীয় জীবন থেকে বিমুখ করে দেয়। সমাজে বিশৃংখল ও বিবাদ সৃষ্টি করে। যেমন, গান ও বাদ্য, মদ ও জুয়া, দাবা ও কবুতর বাজি। ইত্যাদি। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
إذا مررتم بهؤلاء الذين يلعبون بهذه الأزلام والشطرنج والنرد وما كان من هذه فلا تسلموا عليهم وإن سلموا عليكم فلا تردوا عليهم
‘যখন তোমরা এমন লোকদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে যারা (ভাগ্য নির্ণয়ের জন্য) তীর, দাবা ও পাশা দিয়ে খেলছে, তখন তাদেরকে তোমরা সালাম দিবে না। আর তারা তোমাদেরকে সালাম দিলে তার উত্তরও দিবে না।’ (কানযুল উম্মাল-৪০৬৪৪)
২. অশ্লীল ও অনর্থক কবিতা ও সাহিত্য চর্চা করা। ইরশাধ হয়েছে,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
‘একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে। এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লোকমান-৬)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন