বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ওয়াজ শোনার সময় চিৎকার করা, লাফানো

কোনো লেখাই কারো বিরুদ্ধে লিখি না। সহিহ সুন্নাহ ও ফিকহে ইসলামীর আলোকে লেখার চেষ্টা করি। কারো বিরুদ্ধে চলে গেলে আমাকে মাজুর মনে করার অনুরোধ রইল)
--
ওয়াজ শুনতে হয় অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে। গভীর ধ্যান ও খেয়ালের সাথে ওয়াজ শ্রবণ করাই সাহাবিদের তরিকা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওয়াজ করতেন, কথা বলতেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম এমন মনোযোগের সাথে শুনতেন যে, তাঁদের মাথার ওপর পাখিও বসে যেত! 
মালিকুল উলামা আল্লামা কাসানি রহ. স্বীয় বিখ্যাত কিতাব বাদায়েউস সানায়েতে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন : 
عن قَيْسِ بن عُبَادَةَ أَنَّهُ قال كان أَصْحَابُ رسول اللَّهِ صلى اللَّهُ عليه وسلم يَكْرَهُونَ الصَّوْتِ عِنْدَ ثَلَاثَةٍ عِنْدَ الْقِتَالِ وَعِنْدَ الْجِنَازَةِ وَالذِّكْرِ.
অর্থ : হযরত কায়েস ইবনে উবাদা হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ যুদ্ধ, জানাযা ও জিকরের সময় কণ্ঠস্বর বুলন্দ করা অপছন্দ করতেন। (বাদায়েউস সানায়ে : খ. ১, পৃ. ৩১০) 
এখানে জিকর শব্দ দ্বারা ওয়াজ-নসিহত উদ্দেশ্য। আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ. বলেন : وَالْمُرَادُ بِالذِّكْرِ الْوَعْظُ
শামসুল আইম্মা সারাখসি রহ. বলেন, উপরের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কুরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজের সময় আওয়াজ বুলন্দ করা মাকরুহ।

তদ্রƒপ ওয়াজ শোনার সময় লাফালাফি করা, দৌঁড়াদৌঁড়ি করা, কাপড় ছিড়ে ফেলা সবই মাকরুহ ও অপছন্দনীয় কাজ। এসব হতে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ. ইমাম সারাখসি রহ. এর অভিমত উল্লেখ করেন : 
وقال الْإِمَامُ شَمْسُ الْأَئِمَّةِ السَّرَخْسِيُّ فَفِي هذا الحديث بَيَانُ كَرَاهَةِ رَفْعِ الصَّوْتِ عِنْدَ سَمَاعِ الْقُرْآنِ وَالْوَعْظِ فَتَبَيَّنَ بِهِ أَنَّ ما يَفْعَلُهُ الَّذِينَ يَدَّعُونَ الْوَجْدَ وَالْمَحَبَّةَ مَكْرُوهٌ لا أَصْلَ له في الدِّينِ وَتَبَيَّنَ بِهِ أَنَّهُ يُمْنَعُ الْمُتَقَشِّفَةُ وحمقاء ( وحمقى ) أَهْلِ التَّصَوُّفِ مِمَّا يَعْتَادُونَهُ من رَفْعِ الصَّوْتِ وَتَمْزِيقِ الثِّيَابِ عِنْدَ السَّمَاعِ لِأَنَّ ذلك مَكْرُوهٌ في الدِّينِ عِنْدَ سَمَاعِ الْقُرْآنِ وَالْوَعْظِ.
(আল-বাহরুর রায়েক : খ. ৫, পৃ. ৮২)

আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহ. ফাতাওয়া আলমগিরির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : 
( قَوْلُهُ وَإِزْعَاجُ الْأَعْضَاءِ ) قَالَ فِي الْهِنْدِيَّةِ : رَفْعُ الصَّوْتِ عِنْدَ سَمَاعِ الْقُرْآنِ وَالْوَعْظِ مَكْرُوهٌ ، وَمَا يَفْعَلُهُ الَّذِينَ يَدَّعُونَ الْوَجْدَ وَالْمَحَبَّةَ لَا أَصْلَ لَهُ ، وَيُمْنَعُ الصُّوفِيَّةُ مِنْ رَفْعِ الصَّوْتِ وَتَخْرِيقِ الثِّيَابِ ، كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ .
(ফাতাওয়া শামী : খ. ৪, পৃ. ১১৪) 
--
তবে কেউ যদি ওয়াজ শুনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, তখন তার যে কোনো কাজ গোনাহ হবে না। তার আকল ও জ্ঞান না থাকার কারণে। যাদের এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাদের ওয়াজ না শোনাই উত্তম; যেন তার কারণে অন্যের ওয়াজ শুনতে সমস্যা না হয়।
শায়খ Mohiuddin Quasemi

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন