বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তি

Mohiuddin Quasemi
হযরত ওয়াহশি রা. ছিলেন একজন বিখ্যাত সাহাবি। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি এক কুরাইশ নেতা জুবায়ের ইবনে মুতঈমের গোলাম ছিলেন। সে সময় উক্ত কুরাইশ নেতার পরিবারে একজন পুত্রসন্তান জন্মলাভ করে। নবজাতকের নাম রাখা হয় উবায়দুল্লাহ। তার পিতার নাম আদি ইবনে খিয়ার। প্রাচীন আরবে প্রথা ছিল, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার অল্প কিছুদিন পরই তাকে দুধ পান করানোর জন্য অন্যত্র দুধমাতাদের নিকট প্রেরণ করা হত। সে প্রথা অনুযায়ী উবায়দুল্লাহকে অন্যত্র প্রেরণ করার সময় হলে, অভিজাত বংশের এই শিশুকে নিজের কাছে পাওয়ার জন্য অনেক উঁচু পরিবারের ধাত্রীরা সমবেত হল। ওয়াহ্শি রা.-এর মালিক সমবেত মহিলাদের মধ্য হতে একজনকে দেখিয়ে বলল, বাচ্চাটি অমুকের কাছে দিয়ে দাও। 
 অতঃপর বাচ্চাটি সেই মহিলাকেই দেওয়া হল। বাচ্চাটিকে মহিলার হাতে সোপর্দ করার সময় ওয়াহশির দৃষ্টি একবার তার পায়ের ওপর পড়ল। তখন বাচ্চার বয়স ছিল মাত্র তিন দিন। এরপর বেশ কয়েক বছর পার হয়ে যায়। কত ঘটনা-দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এ দিকে বদর যুদ্ধে ওয়াহশির মনিব জুবায়ের ইবনে মুতঈমের চাচা তোআইমা ইবনে আদি ইবনে খিয়ারকে হত্যা করেন হযরত হামযা রা.। তখন সে ওয়াহশিকে বলল- “যদি তুমি আমার চাচা হত্যার প্রতিশোধস্বরূপ হামযাকে হত্যা করতে পার, তাহলে তোমাকে মুক্ত করে দিব।” এরপর থেকেই তিনি সুযোগের সন্ধানে কাল যাপন করতে থাকেন। পরিশেষে ওহুদ যুদ্ধে হামযাকে শহিদ করে তিনি দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তি লাভ করেন।
অতঃপর মক্কা-বিজয় উত্তরকালে যখন তিনি মুসলমান হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে হাজির হলেন তখন নবীজী তাকে বললেন : “তোমাকে দেখলে চাচার কথা স্মরণ হয়ে আমার খুব কষ্ট হয়; সুতরাং তুমি আমার সামনে এসো না।” এরপর থেকে তিনি সিরিয়ার হিমসে বসবাস করতে লাগলেন। ইতোমধ্যে ত্রিশবছর অতিবাহিত হয়ে যায় এবং আদির পুত্র উবায়দুল্লাও ত্রিশ বছরের যুবকে পরিণত হয়। তখন একবার সে বিশেষ প্রয়োজনে সিরিয়া গমন করে। 
এদিকে সিরিয়াতে প্রসিদ্ধ ছিল যে, ওয়াহশি-ই হযরত হামযার হত্যাকারী। এজন্য বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তাকে দেখতে আসত। উবায়দুল্লারও ওয়াহশিকে দেখার আগ্রহ জাগল। সে খোঁজ নিয়ে ওয়াহশির বাড়ি বের করে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হল। তখন উবায়দুল্লাহর পা ও চোখ দু’টি ব্যতীত সমগ্র শরীর চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। সে ওয়াহশিকে জিজ্ঞাসা করল আপনি কি আমাকে চিনেন? তিনি তার পা দু’টির দিকে তাকিয়ে তাকে চিনে ফেললেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে চিনেছি। আর এতে সন্দেহ নেই যে, আদি ইবনে খিয়ার উম্মে কিতাল নাম্নী এক মহিলাকে বিবাহ করেছিল এবং তার গর্ভ থেকে এক পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। সেই শিশুর জন্য আমিই ধাত্রীর ব্যবস্থা করেছিলাম। ধাত্রী পাওয়ার পর তাকে ধাত্রীর হাতে সোপর্দ করার সময় তার পা-যুগলের ওপর আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়; আমার প্রবল ধারণা যে, সেই সন্তানটি তুমি ছাড়া অন্য কেউ নয় এবং তোমার মধ্যে যেন আমি সে পা দু’টি দেখতে পাচ্ছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ৩৮৪৪; বাব : باب قتل حمزة بن عبد المطلب رضي الله عنه )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন