বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানি রহ. -এর বদান্য


হযরত সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. -এর দান-দক্ষিণা ও অতিথিপরায়ণতা কেমন যেন তাঁর নামের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর নাম শ্রবণের সাথে সাথেই অন্তরে তাঁর অতুলনীয় বদান্যতার কথা স্মরণ হতো। সাধারণভাবেই তাঁর খাবারের মজলিসে ৪০/৫০ জন মেহমান উপস্থিত থাকত। আর তিনি সহাস্য চেহারায় তাদের খোঁজ-খবর নিতেন। কোনো কোনো মানুষ সাধারণ প্রয়োজনে দেওবন্দে আসত আর আহারকালে হযরতের এখানে এসে শরিক হতো। তথাপি তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন না। কেউ তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এসে যদি অন্য কোনো স্থানে অবস্থান করতেন বা অন্যত্র খানাপিনা করতেন, জানতে পারলে তিনি এ ব্যাপারে তার নিকট সঠিক কারণ জিজ্ঞেস করতেন। কখনো এমনও হয়েছে যে, কোনো মেহমানের মেহমাখানায় দীর্ঘদিন অবস্থানের দরুন কেউ যদি তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলত তাহলে জানতে পারলে তিনি তাকে ধমক দিতেন ও রাগান্বিত হতেন।
তিনি নিজে সব সময় মেহমানের সাথেই নাশতা ও আহার করতেন। শেষ বয়সে ডাক্তারগণ যখন তাঁকে বড় প্রাণীর গোশত খেতে নিষেধ করলেন এবং ছোট প্রাণীর গোশত খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তখন যতক্ষণ পর্যন্ত সকল মেহমানের জন্য ছোট প্রাণীর গোশতের বন্দোবস্ত না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ডাক্তারের পরামর্শ মানেন নি। মোটকথা তাঁর মধ্যে মেহমানদারির এতো উৎসাহ ও আগ্রহ ছিল যে, মেহমানের খাতিরে সর্বস্ব উজাড় করে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। অনেক সময় এমনও দেখা গেছে যে, মেহমানকে শীতকালে লেপ-কম্বল দিয়ে নিজে আবা-জুব্বা গায়ে দিয়ে রাত কাটিয়েছেন। 
তিনি বলতেন : আমার মনে চায় আমার ঘরে মেহমানদের প্রয়োজনাতিরিক্ত কোনো বস্তু না থাকুক। সফরকালে সঙ্গে মেহমান থাকলে সাথীদের টিকিট, পানাহার ইত্যাদি যাবতীয় ব্যয়ভার নিজেই বহন করার চেষ্টা করতেন। মদিনা শরিফের খেজুর এলে সারা হিন্দুস্তানের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ পাঠিয়ে দিতেন। মাদ্রাসার নির্দিষ্ট বেতন ছাড়া আয়ের তেমন কোনো উপায় না থাকা সত্ত্বেও তিনি বেশ কয়েকজন গরিব-দুঃখী ও বিধবাকে প্রতিমাসে নিজ পক্ষ থেকে ভাতা প্রদান করতেন। কেউ তাঁর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাকে খালি হাতে ফিরাতেন না। সাধ্যানুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। অনেক সময় অন্যদের ঋণও পরিশোধ করতেন। তিনি স্বীয় নিকটতমদের ঋণ পরিশোধ করে অতীত মনীষীগণের আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর এতো উদার প্রাণে ও মুক্তহস্তে ব্যয় করার কারণ এটাই যে, পার্থিবসামগ্রী ও অর্থ সম্পদের কোনো কদর তাঁর হৃদয়ে ছিল না। হযরতের এ আদর্শের নমুনা তাঁর সাহেবজাদা সাইয়েদ আসআদ মাদানি রহ. -এর মধ্যেও লক্ষ্য করা যেত। বর্তমানে তাঁর জীবিত সাহেবজাদা মাও. আরশাদ মাদানি ও মাও. আসজাদ মাদানি এবং গোাটা মাদানি পরিবারেই দানশীলতা ও মেহমানদারির ঐতিহ্য আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন