বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

তাবলীগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগী হয়েছেন দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজের মুরব্বি (আমির) মাওলানা সাআদ কান্ধলভী।


Emran Hossain Adib
তাবলীগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগী হয়েছেন দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজের মুরব্বি (আমির) মাওলানা সাআদ কান্ধলভী।
উদ্যোগ হিসেবে তিনি শুরুতেই তাবলীগের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি হজরতজি মাওলানা ইবরাহিম দেওলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
জানা যায়, ২২ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় মাওলানা ইবরাহিম দেওলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মাওলানা সাদ। এ সময় তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে দিল্লির মারকাজ মসজিদে আসার অনুরোধ করেন।
মাওলানা সাদ কান্ধলভী ইবরাহিম দেওলাকে অনুরোধ করে বলেন, হজরত বুখারী শরিফ আপকে লিয়ে এনতেজার কর রাহে হে, আপকে কামরা এনতেজার কর রাহে হে। (বুখারী শরিফ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, আপনার রুম আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
সাক্ষাতে উপস্থিত প্রতিনিধিদের একজন আওয়ার ইসলামকে ভয়েজবার্তায় জানান, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আগমনে এসময় পুরো রুমে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। উপস্থিত সবার মধ্যে অন্য রকম চাঞ্চল্য দেখা যায়।

হজরতজি মাওলানা ইবরাহিম দেওলা মাওলানা সাদের আগমনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ভাই মেরে লিয়ে দোয়া করো। (ভাই আমার জন্য দোয়া করো)
উল্লেখ্য, হজরতজি মাওলানা ইবরাহিম দেওলা এক সময় নিজামুদ্দীন মারকাজ মাদরাসার বুখারী শরিফের উস্তাদ ছিলেন। দীর্ঘ জীবন তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সঙ্গে নিজেকে কুরবানী দিয়ে আসছেন। তিনি তাবলীগ জামাতের মুরব্বি এবং হজরতজি ইলিয়াস রহ. এর দৌহিত্র মাওলানা সাদের একাধিক কিতাবের উস্তাদ।
দিল্লির নিজামুদ্দীনে শূরা নিয়ে সঙ্কট শুরু হলে তিনি মারকাজ থেকে চলে যান। দীর্ঘ প্রায় এক বছর তিনি মারকাজের বাইরে থাকায় তাবলীগের সাথীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।
তবে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর গতকালের সাক্ষাৎ নিয়ে নিজামুদ্দীনে চলমান সঙ্কট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন মুরব্বিগণ।

মাওলানা সাদ কান্ধলভী শুক্রবার রাতে তাবলীগের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি মাওলানা আহমদ লাটের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ভোপাল সফর করবেন বলেও সূত্রটি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ভারতের শীর্ষ মুরব্বিদের সঙ্গে ধারাবাহিক এ সাক্ষাৎ চালু থাকবে বলেও জানা গেছে।
দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজ থেকে মাওলানা সাদের সঙ্গে প্রতিনিধি দলে ছিলেন, মাওলানা সাঈদ, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা আবদুস সাত্তার, মাওলানা শওকত আলী, মুফতি শাহাজাদ, ভাই মুরসালিন ও ভাই হারুন প্রমুখ।
তাবলীগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম দীর্ঘ দিন ধরেই নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সে ধারাবাহিকতায় একাধিকবার আলেমগণ তাবলীগের মুরব্বিদের কাছে চিঠিপত্র আদান প্রদান করেছেন। একাধিক ঘরোয়া বৈঠকও করেছেন উভয় পক্ষ।

গত ২৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বিষয়টি নিয়ে কাকরাইলের শূরার সদস্য ও শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সঙ্কট নিরসনে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। গঠন করা হয় ৫ সদস্যের কমিটিও।
এছাড়াও গত ১১ নভেম্বর উত্তরায় উলামা মাশায়েখ পরামর্শ সভার আয়োজন করেন আলেমগণ। সেখানেও তাবলীগের চলমান সমস্যা দ্রুত নিরসনের জন্য তাগিদ পেশ করেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা হজরত।
গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় তাবলীগের শূরার সদস্য ও আলেমদের বৈঠক। বৈঠকে শীর্ষ পাঁচ আলেমকে তাবলীগের উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়।
উপদেষ্টাগণ হলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের মুহাতামিম আল্লামা আশরাফ আলী, মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ও মিরপুর মারকাযুদ দাওয়া’র আমিনুত তালিম মাওলানা আবদুল মালেক।
ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আলেমদের ইতিবাচক এসব প্রচেষ্টা দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজে প্রভাব ফেলেছে এবং সেখান থেকেই মাওলানা সাদ সঙ্কট নিরসনে শীর্ষ মুরব্বিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন