শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

"দিল্লী থেকে তুরাগতীর (তাবলীগের মেহনতের সূচনা)

সেই মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ভুল করেছিলেন আদম নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাছে  গিয়ে। অতঃপর ভীত ও লজ্জিত আদমের প্রতি শ্রষ্টার অভয় ছিল -
‘তোমরা সবাই নেমে যাও’। অতঃপর পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা হওয়ার (বাক্বারাহ ২/৩০; ফাত্বির ৩৫/৩৯) মহান মর্যাদা প্রদান করে বললেন, -
.
তোমাদের নিকটে আমার পক্ষ থেকে হেদায়াত অবতীর্ণ হবে। যারা তার অনুসরণ করবে, তাদের জন্য কোন ভয় বা চিন্তার কারণ থাকবে না। কিন্তু যারা তা প্রত্যাখ্যান করবে ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তারা অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৮-৩৯)।
*
সেই থেকে শ্রষ্টা তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুগে যুগে যুগের প্রেক্ষিতানুযায়ী হেদায়েত বা পথনির্দেশিকা দিয়ে আসছেন। যার সর্বশেষ পথনির্দেশক ও সংস্কারক হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংস্কার ও দাওয়াতী জীবন পরবর্তী তার অনুসারীদের লেখা-লেখনী খানকাহী সংস্কার শিক্ষা ও দীক্ষার ধারাবাহিকতা নানাভাবে চলছেই। 
*
রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ সারা বিশ্বে ছড়ায়ে পড়েছিলেন এবং দাওয়াত ও দীনি দীক্ষা অব্যাহত রেখেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতার ফলেই আজ আমরা মুসলমান। বৃটিশ পূর্ব ভারতের ইসলাম প্রচার ও সংস্কারের একটি ঐতিহ্যগত দিকছিল মাদ্রাসা শিক্ষা যা তৎকালীন মানুষের ঈমানী চেতনা।
*
সামাজিক শিক্ষা ও সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখত বৃটিশ ভারতে ইসলামী শিক্ষা ও বৃটিশ-ভারতীয় সংস্কার, কোথাও চলতো যুগোপ্ত ভাবে কোথাও বা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যেতো। এক পর্যায়ে বৃটিশ বিরোধীতায় মাদ্রাসা শিক্ষা মাদ্রাসা কেন্দ্রিক এবং কেবল মাত্র প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। যার ফলে ঈমান আক্বিদার তা'লিম তাহযীব ও তমুদ্দন বিশেষ শ্রেণী পর্যন্ত আগ্রহী মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
*
বৃটিশ ভারতীয় যুগের শেষ প্রান্তে এসে ১৯২৭ সালে হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) যিনি কান্দাতে উত্তর প্রদেশে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং দিল্লিস্থ পশ্চিম নিজামুদ্দিনের বাঙলে মসজিদে সাধারণ অসচেতন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে কাতর কণ্ঠে অতিসাধারণ ভাষায় ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান জানাতেন। তিনি যেমন ঠিক করে দিতের মুখের সালাম ও কালাম, শুধরে দিতেন নামায তেমনই শুধরে দিতেন সামাজিক ও পারিবারিক জীবন। 
*
একাজ তিনি নিজেও করতেন এবং দলবদ্ধভাবে একটি দল বা জামাত গঠন করে দূরবর্তী কখনও বা কাছের কোন মহল্লায়ও পাঠাতেন। তৎকালীন বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামগণ এই সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রতি আহ্বান ও সংস্কারের প্রতি কেউ কেউ গভীর শ্রদ্ধার সাথে দেখতেন। কেউবা এ পদ্ধতিকেও বিদআ'ত বলে সমালোচনাও করতেন।
.
হযরত মাওলানা মঞ্জুর নোমানী (রহঃ) তার "তাবলিগ জামাতের সম্প্রসারিত দৃষ্টি কোন"। "জামাআ'তে তাবলিগ উসআতি নাযারিয়াত" পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন যে, একদা তৎকালীন আলেমগণ বললেন-মাওলানা তৃষ্ণার্ত ব্যক্তিই কুয়া বা পুকুরে যায়। পুকুর বা কুয়া কখনও তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির কাছে আসে না। আপনি যেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছেন তাতে কি কিছুটা ইলম বা দাওয়াত সস্তা ও তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছে না?
*
প্রতি উত্তরে হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) বলেছিলেন, ভাই আমি ইসলামী দাওয়াতের ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিত্ব ও আমার দাওয়াতী কার্যক্রমকে কুয়া বা পুকুর ভাবি না। বরং আকাশের বর্ষণমুখর মেঘ ভাবতে পছন্দ করি। যে কিনা বর্ষণকালে ভাবে না কোনটা গরীব এবং কোনটা আমীরের ক্ষেত, কোনটা সাধারণ আর কোনটা অসাধারণ।
*
নবুয়াত পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের দীন শিক্ষা ও বিস্তার তা হলে কিভাবে হবে? আমি ইসলামের কল্যাণী শিক্ষা নামায ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের পবিত্র ও প্রাথমিক পদ্ধতিকে ধনী-গরীব, সাধারণ-অসাধারণ, কাছে-দূরে এমনকি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। কেননা দীনি দাওয়াত মানবের প্রতি করুণা নয় বরং সৃষ্টি লগ্ন থেকেই অধিকার।
*
প্রশস্ত ও দরদী হৃদয়ের এই মহান সাধক ও সংস্কারক। চলে গেছেন দুনিয়া ছেড়ে রয়ে গেছে তার অভিনব অরাজনৈতিক দাওয়াত ও দীন শিক্ষার এই পদ্ধতি এবং ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, আরব, এশিয়া-আশিয়ানে বিশ্বময় সর্বত্র। সার্বজনিন এই তাবলিগের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশের টংগীর তুরাগতীরে। ইসলামী মহাশান্তি সম্মেলনের ক্ষেত্র তুরাগতীরের নামও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।
*
তাবলিগের কল্যাণে টংগী কেবল শিল্প নগরী নয়, আজ হেদায়েতী সম্মেলনের বিশ্বনগরও বটে। আল্লাহ্ আমাদের এই মেহনতের সাথে মৃত্যু পর্যন্ত জুড়িয়ে রাখুন ও সহীহ বুঝ দান করুন। আমিন।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন