সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭

সাহাবিদের জীবনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ



যুগান্তরে খবর এসেছে, অনন্ত  জলিল সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর জীবনীকে উপজীব্য করে সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
তার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাতে পারছি না। কারণ, ইসলাম কখনই এ ধরনের সিনেমা সমর্থন করে না। আমরা জনাবকে অনুরোধ করব, আপনি আপনার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। 
কারণগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
১. 
পৃথিবীতে যেই চার-পাঁচটি ধর্মের অনুসারী সবচেয়ে বেশি, সেগুলোর মধ্যে ইসলামই সবচেয়ে নবীন। খৃষ্টধর্ম, হিন্দুধর্ম, ইয়াহুদিজম ও বৌদ্ধধর্ম- এই চারটি ধর্মের সবগুলোই ইসলামের চেয়ে অনেক অনেক পুরনো। ইসলাম এসেছে এগুলোর অনেক অ-নে-ক পরে। কিন্তু পৃথিবীবাসীর মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে ইসলাম। এ কারণে ইসলামই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বর্ধনশীল ধর্ম। পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষ ইসলাম অনুসরণ করে থাকে।
লক্ষ্যণীয় হল, ইসলামের এই প্রচার-প্রসার সম্পূর্ণ নিজস্ব শৈলী ও পন্থায় হয়েছে। এই প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে তাকে অন্য কোনো ধর্ম বা সভ্যতা থেকে কোনো কিছু ধার করতে হয়নি। আগামীতেও হবে না ইনশাআল্লাহ। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত।
বিগত চৌদ্দশ বছরে ইসলাম পৃথিবীর বুকে নিজস্ব শৈলীতেই ছড়িয়েছে। কোনো নাটক, সিনেমা, চলচিত্র বা থিয়েটারের মাধ্যমে ইসলাম ছড়ায়নি। ইসলামের সঙ্গে এগুলোর দূরতম সম্পর্ক নেই। কাজেই সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি বিষয় একটি অপরটির উপকারে যে আসবে না, তা বলার জন্যে নতুন কোনো যুক্তি নিষ্প্রয়োজন।
২. 
ধরে নিলাম, আপনি নিষ্ঠার সঙ্গেই উদ্যোগটি নিয়েছেন; কিন্তু প্রশ্ন হল, আপনি কাকে দিয়ে সাহাবিদের চরিত্রে অভিনয় করাবেন? আজ যে লোকটি এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করবে, কাল যদি তাকে কোনো নষ্ট ও অবৈধ কাজ করতে দেখি, তাকে যদি শাহবাগের মোড়ে বিয়ার হাতে ঘুরতে দেখি, যদি কোনো দিন তার কোনো নগ্ন ভিডিও ক্লিপ অন্তর্জ্বালে ছড়িয়ে পড়ে বলুন, তা কি দর্শকের মনে দাগ ফেলবে না। তা কি সাহাবি চরিত্রকে খুবই হালকা করে ফেলবে না?
৩. 
আমরা দেখেছি, উপন্যাস, গল্প, কবিতায় কখনো সত্যিকারের ইতিহাস প্রতিবিম্বিত হয় না। পাঠককে আকর্ষণ করার জন্যে লেখক অবশ্যই কল্পিত ডাল-পালা ছড়িয়ে একটি প্লট তৈরি করবেন। চিত্রকল্পকে কল্পনার রঙে রাঙিয়ে অতিমানবিক করে তুলবেন। এখান থেকেই শুরু হবে ইতিহাসের বিকৃতি। আজ আমরা হিন্দুধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে রাম, সীতা, ব্রক্ষ্মদের যেই চরিত্র দেখতে পাই, তা কতটুকু সত্যি। এমন আশংকা কি নেই যে, বাস্তবে তারা সৎ মানুষ ছিলেন; কিন্তু কাহিনীকার ও গল্পকাররা আজ তাদেরকে নারীভোগী, পরকীয়াবাজ ভণ্ডে পরিণত করেছে। জলিল সাহেবদের সিনেমা কি আমাদের মহান সাহাবিদের এমন বানাবে না!
৪. 
আমরা আপনাকে অনুরোধ করব যে, ইসলামের সেবা করার অনেকগুলো ক্ষেত্র এখনো শূন্য পড়ে আছে। শক্তি-সামর্থ থাকলে আপনি সেগুলো ভরাট করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি এ সংক্রান্ত তালিকা চান তাহলে আপনার সামনে আমি লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরতে পারব। দয়া করে ইসলামের সেবার নামে এমন কোনো উদ্যোগ নেবেন না, যা ইসলামের পবিত্র অবয়ব কলুষিত করবে। 
নিখাদ ইসলামের সেবক হন, মডারেট ইসলামের নয়। ইসলাম আপন বৈশিষ্ট্য সহকারে সর্বযুগেই আধুনিক। নতুন করে ইসলামকে আধুনিক বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন