শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

আল কোরআনের চ্যালেঞ্জ ১ম পর্ব


যদি পৃথিবীর সমস্ত মানবকুল ও জ্বীন জাতি একত্রে মিলিয়াও চেষ্টাকরে তবুও কোরআনের অনুরূপ একটি গ্রন্থ রচনা করতে সক্ষম হবে না। এমন চ্যালেঞ্জ কোরআনের [১৭-৮৮] আয়াত এবং আরও কিছু আয়াত দ্বারা করা হয়েছে। 
নাস্তিক, অবিশ্বাসী হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান তথা সমস্ত ইসলাম বিদ্দেশীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ ইসলামকে মিথ্যা প্রমাণ করার। গ্রহণ করুন একটি গ্রন্থই তো মাত্র। এবং দেখুন কি ভাবে তা রচনা করা সম্ভব তার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো । কোরআনের অনুরূপ গ্রন্থ রচনা করতে হলে একটি মাত্র নিয়ম অনুসরন করতে হবে আর সেটি হলো ১৯ সংখ্যা। দেখুন এই ১৯ সংখ্যাটি কি। নাস্তিক ও অমুসলিম ভাইগণ একটু সময় নিয়ে পাঠ করুন এবং নোট করুন কি ভাবে কোরআন রচনা করা সম্ভব।
যারা কোরআন সম্পর্কে প্রশ্ন করে তাদের জন্য প্রথমেই একটি অতিগুরুত্বপুর্ণ তথ্য। আর সেটি হলো পবিত্র কোরআনের সংখ্যাতাত্ত্বিক মাহাত্ম্য। 
আল-কোরআনে এক অত্যাশ্চার্য সংখ্যাতাত্ত্বিক জটিল জাল পাতারয়েছে যা অতি অভিনব এবং অতিশয় বিস্ময়কর। এটি ১৯ সংখ্যার সুদৃঢ় বুনন। এ সম্পর্কে রায় দিয়েছে সর্বাধুনিক কম্পিউটার। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বে পড়েছে এক বিপুল সাড়া। চুড়ান্ত বিশুদ্ধতায় অত্যান্ত নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত এসেছে আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে আরব ম্রুর এক অক্ষরজ্ঞানহীন উম্মীর উপর অবতীর্ণ কোরআন সম্পর্কে। প্রকাশ পেয়েছে এক বিস্ময়কর ফলাফল – সমস্ত পৃথিবীর মানুষ যদি সম্মিলিতভাবে পৃথিবীর সমস্ত বয়স জুড়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যেত অনুরূপ একখানি গ্রন্থরচনার উদ্দেশ্যে, তবু তা চিরদিন থেকে যেত সম্ভাব্যতার সীমানা থেকে অনেক বাইরে। কোরআনে যে সব নিয়ম – কানুন-শৃংখলা মানা হয়েছে ,১৯ সংখ্যার জটিল জালকে যেভাবে এটে দেয়া হয়েছে এর মধ্যে-তেমনিভাবে সমশব্দে সম বাক্য সংখ্যায় সমানসংখ্যক অক্ষরে একটি অনুরূপ বৈশিষ্ট্যের গ্রন্থ রচনার জন্য প্রয়োজন পড়ত ৬.২৬x১০২৬ বছর। তাও আবার একটি মানুষ যদি এইটুকু পরিমাণগত কাজ [ volumetric work ] প্রতিমাসে একটি করে করার ক্ষমতা রাখেন, তার জন্য এই পরিমাপ। 
কত এর মান উল্লিখিত সেপটিলিয়ন সংখ্যাটির? এর পরিমাপ ভাষায় প্রকাশ করা সুকঠিন এবং তা অনুধাবনের অনেক বাইরে। সখ্যাগতভাবে এর প্রকাশ ৬২৬.০০০.০০০.০০০. ০০০.০০০.০০০.০০০.০০০ [ ৬২৬ পর ২৪টি শূন্য ] পাঠকদের নিশ্চয় জানা আছে পৃথিবীর বয়স কত? তা মাত্র ৪৫০.০০০০০০০[৪৫০ কোটি বছর ] জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতি শীর্ষতম। আমরা যদি আজকের দুনিয়ার ৫০০ কোটি মানুষকে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুরূপ একখানি গ্রন্থ লেখার কাজে নিয়োজিত বলে ধরে নেই , তবে উক্ত কম্পিউটার লব্দ ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, মানুষ জাতির এই মহাসম্মিলন প্রসূত কাজের অগ্রগতির মাত্রা মান হবে ৪৫০.০০০০০০০ x ৫০০. ০০০০০০০=২২৫ x ১০
কর্ম-বছর যা সেপটিলিয়ন সংখ্যাটির একশ কোটি ভাগের মাত্র ৩৫ ভাগের সমান; অর্থাৎ পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যার সমান সংখ্যক মানুষ যদি পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে থাকত কোরআনের অনুরূপ কোন গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যে তবে ৪৫০ কোটি বছর বয়সে আজকের দিন পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে স্ক্ষম হত, তার পরিমাণ হত সমুদয় প্রকল্পটির মোট কাজকে একশ কোটি ভাগ করে তা থেকে মাত্র ৩৫ ভাগ নিলে যতটুকু [ ০০০০০০০৩৫] যা হিমালয়ের পদদেশে ছোট্র একটি নুড়ির মত তুল্য। আর এই প্রকল্পের শর্ত হল এই যে, প্রতিটি মানুষেরই আয়ুষ্কাল ৪৫০ কোটি বছর হওয়া বাঞ্জনীয়।
ভাবাবেগহীন পক্ষপাত দোষমুক্ত ইলেকট্টনিক কম্পিউটার এই রায় ডেকে আনে কোরআনেরই দুটি আয়াতকে তার পাশে। ১৪০০ বছর পূর্বে অবতীর্ণ কোরআনের আয়াতের বক্তব্য এবং বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নের যন্ত্র বিচারকের রায় যখন এক হয়ে পড়ে, তখন বিস্ময় জাগে । মনে হয় আজকের কম্পিউটার শুধু এই সত্যই আবিস্কার করেছে যা আল-কোরআনের ভাষায়—
[ হে মোহাম্মদ ] বল, যদি এই কোরআনের অনুরূপ গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যে মানবকুল ও জ্বীন জাতি সমবেত হয় পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায়, তবু তাহারা উহা সম্ভব করিতে পারিবে না [১৭ঃ ৮৮ ] বল, আমার প্রভুর বাণীসমুহ লিখিবার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবও আমার প্রভুর বাণীসমুহ শেষ হওয়ার পূর্বে সমুদ্র শেষ হইয়া যাইবে , যদিও অনুরূপ আরো অন্যান্য সমুদ্রকে সাহায্যের জন্য আনয়ন করা হয় [১৮ঃ ১০৯]
লেবাননের অধিবাসী ডঃ রশীদ খলিফা মিসরী সর্ব প্রথম এই পরিক্ষাটি সম্পন্ন করেন। কোরআনকে সম্পুর্ণ নির্ভুল্ভাবে “সেট” করেন কম্পিউটারে। তারপর শুরু হয় পরিক্ষা নিরিক্ষা। যারা জনাব ফরিদ উদ্দিন মাসাউদ কর্তৃক অনুদিত আশ্চর্য এই কোরআন পাঠ করেছেন, তারা বিষয়টির সহজ বিবরণ ইতিমধ্যেই অবগত রয়েছেন।
হিন্দু, নাস্তিক, ইহুদী-খৃষ্টান এবং বৌদ্ধ, বিশেষ করে যারা ইসলাম নিয়ে হীনমান্যতায় ভোগেন , প্রতিনীয়তই যারা ইসলামের দোষ খুজে মাথাকুটে মরে তাদের জন্য লক্ষনীয় বিষয় ।
কোরআনের ৭৪ নম্বর সূরার ৩০ নম্বার আয়াতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন। প্রস্তাবিত আয়াতটি হল, আলাইহা তিসআতা আশারা। বাংলা এবং ইংরেজী অনুবাদ্গুলো এর বিভিন্ন অর্থ করেছে। তবে এখানে আমি জ্ঞানী তরজমাকারীগণের সঠিক অর্থটি তুলে দিচ্ছি। ব্যবহৃত আলা শব্দটির মূল ধাতু আলো যার অর্থ হয় সর্বোচ্চ, সবচেয়ে ভাল, উচ্চতা, মহত্ত্ব ইত্যাদি [ topmost, best part, height, greatness, be high, highly situated, be at the summit of ] ইত্যাদি। আলা শব্দের অর্থ হয় তুলে ধরা, উচ্চতর করা, উপর, সম্ভ্রান্ত হওয়া, উচ্চতর হওয়া [ To rise, tower up, greatness, ascend, mount, be highelevated, raise, lift up ] ইত্যাদি অনেক । আবার এই আলা শব্দের অর্থই হতে পারে সবার উপরে [ on top of ]। একই শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত “হা” এর অর্থ হয় জেনে রাখ, ধর, সেখানে ইত্যাদি [ নির্দেশ সূচক সর্বনাম বা Demonstrative pronoun এর পূর্বে ], এবং তৃতীয় পুরুষে [স্ত্রী] এক বচন বাচক শব্দের শেষ অংশে শব্দের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে এর ব্যবহার রয়েছে যার অর্থ দাড়ায় অব্যয়সূচক র, এর ইত্যাদি। অতএব, আলাইহা এর অর্থ হতে পারে ইহার/তাহার উপরে, উহার মাহাত্ম্য ইত্যাদি। তিসআতা আশারা এর অর্থ হল ১৯। তা হলে সম্ভাব্য যে কয়টি উপায়ে আয়াতটির অনুবাদ করা যায়, সেগুলো হলঃ-
[ ক ] তাহার/উহার উপর উনিশ [ ১৯ ]
[ খ ] ইহার মাহাত্ম্য [ greatness of ] উনিশ [ ১৯ ]
বর্ণিত অর্থগুলো প্রচলিত ও রীতিভিত্তিক। মজার বিষয় যে কোরআনে কোন কোন স্থানে অত্যান্ত রহস্যঘেরা ব্যাকারণের লংঘন দেখা যায়। এমন একটি লংঘনকে এ ক্ষুদ্র আয়াতের ক্ষেত্রে মেনে নিলে প্রচলিত অর্থসমূহের বাইরে আরো একটি রহস্যময় অর্থ আমাদের সন্মুখে উন্মচিত হয়, তা হল –যেনে রাখ, সবার উপরে উনিশ !
এবার ফিরে চলুন একটু ইতিহাসের দিকে। কোরআন অবতীর্ণ হবার ইতিহাসের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের একটির উপর আলোকপাত করা যেতে পারে। মোট ২৩ বছরে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হয় আল কোরআন। এ প্রসঙ্গে দলিল রয়েছে কোরআনেই, আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি অল্প অল্প করিয়া [৭৬ঃ ২৩] ২৩ বছরের এই ব্যাপ্তিতে নাযেলকৃত কোরআনে প্রতিক্ষণ যে বিন্যাস বিভাগ ও কাঠামো রচিত হয়েছে , তাতে ১৯ – এর বিবেচনা অত্যান্ত প্রকট। কোরআনের সংরক্ষণের ইতিহাস থেকে এগুলো প্রমাণিত সত্য। সর্বপ্রথম নাযেলকৃত ৫টি আয়াতঃ- 
পড় তোমার প্রভূর নামে, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন [৯৬ঃ ১ ]
যিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন,- যাহা সে জানিত না” [৯৬ঃ ৫ ]
এই সুরার স্থানাঙ্ক শেষ দিক থেকে ১৯তম। এতে আয়াতের সংখ্যাও ১৯। দিতীয় বার স্বর্গীয়দূত জীব্রিল নিয়ে এলেন ৬৮ নম্বর সূরার কতিপয় আয়াত। 
তৃতীয়বার ৭৩ নম্বর সূরার কিছু আয়াত। চতুর্থ বারে ৭৪ নম্বর সূরার ৩০টি আয়াত নিয়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ [ সঃ ]- এর নিকট অবতীর্ণ হন। এই ৩০ আয়াতটিই হল একটি ১৯ –এর প্রস্তাব – ইহার উপরে ১৯ “, কিংবা জেনে রাখ সবার উপরে ১৯” কিংবা ইহার মাহাত্ম্য ১৯।
ইসলাম ও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে যারা হিনমান্যতায় ভোগে চ্যালেনঞ্জ তাদের প্রতি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন