রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রীষ্টানদের পরিচালিত ধর্মযুদ্ধ তথা ক্রুসেডের ইতিহাস। মুসলিমদের বিজয়


মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রীষ্টানদের পরিচালিত ধর্মযুদ্ধ তথা ক্রুসেডের ইতিহাস। পর্ব ১: আক্রমণের শুরু

মুসলিমদের হাত থেকে পবিত্র ভূমি অর্থাৎ জেরুজালেম এবং কন্সটান্টিনোপল এর অধিকার নেয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০৯৫ - ১২৯১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে। প্রথমে ক্রুসেড বলতে মুসলমানদের কাছ থেকে জেরুসালেম শহর ফিরিয়ে নেওয়ার ইউরোপীয় প্রচেষ্টাকে বোঝানো হত। পরবর্তীতে অ-খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের যেকোন সামরিক প্রচেষ্টাকে ক্রুসেড বলা শুরু হয়।

ক্রুসেড মুসলিম এবং খ্রিষ্টান বিশ্বকে যেমনটা নাড়া দিতে পেরেছিল, খুব কম সংখ্যক ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রেই তেমনটা হয়েছে। পূণ্য ভূমির জন্য দুই ধর্মের এই লড়াই পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপ আর দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। ক্রুসেডের সময়কার যোদ্ধাদের বিনয়, সাহসিকতা আর দৃঢ় সংকল্পের বীরত্বপূর্ণ অনেক ঘটনাই রূপকথার মত চলে আসছে। এই সিরিজে আমরা ধাপে ধাপে ক্রুসেডের সূচনা, গতি এবং ফলাফল নিয়ে আলোচনা করবো।

দশম শতাব্দীতে মুসলিম বিশ্ব রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় যে পরাক্রমশালী আব্বাসিয় সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল, এই সময় এসে তা শুধু নিজের ছায়া হিসেবেই ছিল। যদিও পুতুল খলিফাই ক্ষমতার শীর্ষে ছিল, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা ছিল সেলজুক সেনাপতিদের মত তুর্কিদের হাতে। সেলজুকরা আনাতোলিয়ায় সেলজুক সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাদের অধীনে ছিল সিরিয়া, ইরাক আর পারস্য। যাই হোক, এগুলো কোন একক রাষ্ট্র ছিল না। বরং প্রত্যেক এলাকারই আলাদা আমির ছিল যারা আবার অধিকাংশ সময়ই পার্শ্ববর্তী এলাকার আমিরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো! উত্তর আফ্রিকায় বিদ্রোহী ইসমাইলি শিয়ারা ফাতেমিয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ফাতেমিয়রা প্রায়ই সুন্নি সেলজুক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য বাড়ানোর চেষ্টা চালাতো। এই আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল জেরুজালেমের পবিত্র ভূমির যথাসম্ভব কাছাকাছি আসা।

এই বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্হিতির মধ্যেও সেলজুকরা বাইজেনটাইন পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়। ১০৭১ সালে মানজিকার্দের যুদ্ধে সম্পূর্ণ বাইজেনটাইন তাদের পদাবনত হয় এবং তা আনাতোলিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেলজুকরা বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলের প্রান্তদেশে এসে উপস্হিত হলে বাইজেনটাইন শাসক এলেক্সিওস আতংকিত হয়ে রোমে পোপ আরবান দ্বিতীয়ের কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠান। এই চিঠি পরবর্তীতে সাহায্যের চেয়েও আরো অনেক বেশি কিছু নিয়ে হাজির হয়।

পোপ আরবান চিঠিটি জেরুজালেমকে নিজের চার্চের আওতায় আনতে একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। তিনি পবিত্র ভূমি জেরুজালেমে ল্যাটিন সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখতেন এবং মনেপ্রাণে রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি হিসেবে মুসলিমদের ধ্বংস কামনা করতেন। ক্লারমন্ট শহরের এক সভায় পোপ খ্রিষ্টান সমাজ এবং রাজন্যবর্গকে একটি বিশাল বাহিনী গঠন করার আহ্বান জানান। এরই ফলস্বরূপ ৩০০০০ সৈন্যর একটি দল জেরুজালেমের দিকে যাত্রা করে। এমনকি মহিলা, শিশু আর বৃদ্ধদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ক্রুসেডের মুখোমুখি হওয়া প্রথম মুসলিম ছিল আনাতোলিয়ার তুর্কিরা। রুম সালতানাতের একজন সেলজুক আমির আরসালান তার এলাকায় প্রথম দিককার কিছু ছোট খাটো যুদ্ধে জয় লাভ করেন। যাই হোক, ক্রুসেডারদের বিশাল বহর তুর্কিদের জন্য অনেক বেশি ছিল। ফলে ক্রুসেডাররা আনাতোলিয়া যাওয়ার পথে যেসব গ্রাম পড়ছিল সেগুলো স্রেফ লুট করে যাচ্ছিল, তাদের যাত্রাপথের পাথেয় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে, যদিও গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দাই ছিল খ্রিষ্টান।

১০৯৭ সালে ক্রুসেডাররা দূর্গ শহর এন্টিওকে এসে পৌঁছায়, বর্তমানে যা দক্ষিণ তুরস্কে সিরিয়ার বর্ডারের একেবারে কাছেই অবস্হিত। সেলজুক আমির ইয়াগি-সিয়ান তার ৬০০০ সৈন্য নিয়ে শহরটিকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন। ৩০ হাজার ক্রুসেডারের বিরুদ্ধে ৬ হাজার সৈন্য কিছুই ছিল না। কিন্তু তবুও এন্টিওক প্রায় অজেয় ছিল। শহরটি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কিছু প্রাচীর বেষ্টিত ছিল এবং একটি নদী, একটি পাহাড় আর একটি উপত্যকা একে রক্ষা করে যাচ্ছিল। ক্রুসেড হয়তো এন্টিওকের দেয়ালে এসেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু দু'টি বিষয় মুসলিমদের জন্য বিপর্যয় বয়ে নিয়ে এসেছিল: বিভক্তি আর বিশ্বাসঘাতকতা।

ইয়াগি-সিয়ান তার আশেপাশের শহরগুলোর আমিরদের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠালেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে তুর্কি আমিরদের মনোভাব ছিল "যার যার সমস্যা তার নিজের ব্যাপার" ধরনের। নিজেরা আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিপন্ন কোন আমিরকে সাহায্য করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও তাদের ছিল না। ফলস্বরূপ সমগ্র সিরিয়ার আমিররা তার সাহায্য বার্তাকে অগ্রাহ্য করলো। অনেকে তো এটাও ভেবে বসলো যে ক্রুসেডারদের হাতে এন্টিওকের পতন হলেই বরং তাদের লাভ! অন্তত ইয়াগি-সিয়ান তো দূর হবে। এত কিছুর পরও এন্টিওক হয়তো টিকে যেত, কিন্তু শহরেরই ভিতরে থাকা একজন লোক সব ভুন্ডুল করে দিলো।

ফিরোজ ছিল একজন অস্ত্র নির্মাতা, যাকে এই অবরোধের সময় এন্টিওকের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়ে ছিল। ক্রুসেডাররা আসার আগে কোন এক সময়, কালোবাজারির অভিযোগে ইয়াগি-সিয়ান তাকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছিল। সে ভাবলো এটাই হলো প্রতিশোধ নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ১০৯৮ সালের জুন মাসের ঘটনা। অবরোধের ২০০ দিন পার হয়ে গেছে। এক গভীর রাতে, ফিরোজ কিছু ক্রুসেডারকে তার ঘরের জানালা দিয়ে শহরে প্রবেশ করার ব্যবস্হা করে দিল। এই ক্রুসেডাররা মূল বাহিনী প্রবেশের জন্য গেট খুলে দিলো এবং সকাল হওয়ার আগেই এন্টিওকের পতন হলো। পুরুষ, মহিলা আর শিশুদের রাস্তায় টেনে এনে হত্যা করা হলো। পুরো শহর জ্বালিয়ে দেয়া হলো। আর এই সবই হয়েছিল শুধুমাত্র একজন অস্ত্র নির্মাতার কারণে, যে কিনা তার জরিমানা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল!

যাত্রাপথের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহরটির পতন ঘটিয়ে ক্রুসেডাররা জেরুজালেমের দিকে এগিয়ে চললো। অন্যান্য শহরগুলোতেও এন্টিওকের মত বিশ্বাসঘাতকের অভাব ছিল না। অধিকাংশ শহরের আমিরই এন্টিওকের পরিণতি দেখে ক্রুসেডারদের বিনা বাধায় রাস্তা ছেড়ে দিয়েছিল।

১০৯৯ সালের ৭ই জুন। ক্রুসেডাররা তাদের লক্ষ্য জেরুজালেমে পৌঁছে গেল। শহরটির নিজস্ব প্রতিরক্ষার কিছুই ছিল না। মাত্র এক বছর আগেই এই শহরের দখল নিয়ে মিশরের ফাতেমিয়দের সাথে তুর্কিদের যুদ্ধ হয়েছে। দেয়ালগুলো সব ভেঙে পড়েছিল আর কয়েক হাজার সৈন্য ছাড়া কিছুই ছিল না। অন্য কারো সাহায্য পাওয়ারও কোন আশা ছিল না।

এক মাস অবরোধের পর, পবিত্র শহর জেরুজালেম, সেই শহর যেখান থেকে নবীজি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসরা আর মিরাজের সময় স্বর্গের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার পতন হলো। ৭০ হাজারেরও বেশি মুসলিম আর ইহুদিকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। মুসলিমরা পালিয়ে মাসজিদ আল-আকসায় আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু সেই পবিত্র মাসজিদেও তাদের হত্যা করা হয়। একজন ক্রুসেডার তো এতটুকু পর্যন্ত বলেছিল যে, মুসলিমদের রক্ত জমে তাদের পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। মাসজিদ আল-আকসা লুট করা হয় আর মাসজিদগুলোর চরম অবমাননা করা হয়। কাছের Dome of the Rock কে খ্রিষ্টান চার্চে পরিণত করা হয়। উমার ইবন আল-খাত্তাবের পর সেই দিনই প্রথমবার, আল কুদসের রাস্তায় আযান শুনা যায় নি আর মাসজিদে সালাত আদায় করা হয় নি।

মর্যাদার দিক দিয়ে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্হানটিতে ঘটে যাওয়া এই অকস্মাৎ আর মর্মান্তিক ঘটনার পরও বাকি মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাজনক। এই শহরকে মুক্ত করার মত সত্যিকারের প্রচেষ্টা শুরু করতে আরো অনেক বছর সময় লেগেছিল।

দ্বিতীয় পর্ব(আগামীকাল) পড়ুন : মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রীষ্টানদের পরিচালিত ধর্মযুদ্ধ তথা ক্রুসেডের ইতিহাস। পর্ব ২: মুসলিম ভূমিতে খ্রীষ্টানদের দখলদারিত্ব

মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রীষ্টানদের পরিচালিত ধর্মযুদ্ধ তথা ক্রুসেডের ইতিহাস। পর্ব ২: মুসলিম ভূমিতে খ্রীষ্টানদের দখলদারিত্ব

অনুবাদঃ ইমরান হেলাল

১০৯৯ সালের ৯ই আগস্ট, জুমাবার। দিনটি ছিল রমাদান মাসের ২৯ তম দিন। আবু সাদ আল-হারাওয়ি নামের একজন সম্মানিত কাজী, বাগদাদের প্রধান মাসজিদে সহসা ছুটে এসে প্রবেশ করলেন এবং রমাদান মাসেই প্রকাশ্য দিবালোকে খেতে শুরু করলেন। তিনি মাত্রই তিন সপ্তাহের সফর শেষে দামাস্কাস থেকে জেরুজালেমের পরাজয়ের খবর নিয়ে ফিরেছেন। তিনি ভেবে দেখলেন, রমাদান মাসে খাবার গ্রহণ করার চেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের ভালো উপায় আর কিছু নেই। বাগদাদের লোকেরা হারানো পবিত্র শহরের শোকে মাতম শুরু করে দিলো। আল-হারাওয়ি তৎকালীন খলিফা আল-মুসতাজির, যিনি ছিলেন একেবারেই অল্প বয়ষ্ক, তার কাছে মামলা দায়ের করলেন। খলিফা সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। কিন্তু ঐ আশ্বাস কখনো বাস্তবে রূপ নেয় নি।

তৎকালীন মুসলিমরা শক্তিশালী ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত কোন অবস্থানেই ছিল না। ছোটখাটো আমিরেরা তখনো একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল আর শহর এবং গ্রামগুলোকে নিজেরাই ধ্বংস করে যাচ্ছিল। স্বয়ং খলিফারই নিজস্ব কোন ক্ষমতা ছিল না। তিনি তুর্কি জেনারেলদের স্রেফ হাতের পুতুল ছিলেন। বিগত শতাব্দীগুলোতে যে বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য ছিল, এ পর্যায়ে এসে তা রূপকথায় পরিণত হয়েছিল।

অপরদিকে ক্রুসেডাররা ছিল শক্তিশালী, একতাবদ্ধ আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ; মুসলিমরা ঠিক এই গুণগুলোই হারিয়ে ফেলেছিল। ক্রুসেডাররা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে চারটি ল্যাটিন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এবং ফ্রান্স বা জার্মানির মত ইউরোপিয়ান নীতিতে সেগুলো পরিচালনা করতে শুরু করে। যদিও মুসলিমরা জাতিগতভাবে জেরুজালেম, এন্টিওক বা বৈরুতের মত দখলকৃত শহরগুলো থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, অধিকাংশ আরব (মুসলিম ও খ্রিষ্টান) গ্রাম্য কৃষক তখনো ঐ অঞ্চলগুলোতেই থেকে গিয়েছিল। শুধুমাত্র জেরুজালেম রাজ্যেই তিন লক্ষ আরব বাস করত।

এই দখলদারিত্বের একটি অনন্য ব্যাপার হলো ক্রুসেডাররা ধীরে ধীরে মুসলিম সংস্কৃতির সাথে একীভূত হয়ে যাচ্ছিল। ক্রুসেডের অনেক আগে থেকেই মুসলিমরা বিজ্ঞান, দর্শন, প্রযুক্তি আর সংস্কৃতিতে অনেক এগিয়ে ছিল। ইউরোপ যখন অজ্ঞতার অন্ধকার যুগে হিমশিম খাচ্ছিল, সেই সময় মুসলিম বিশ্বের জীবনযাত্রার মান ইউরোপিয়ানদের কল্পনারও বাইরে ছিল। ক্রুসেডের সমসাময়িক আরব ব্যাখ্যাকার উসামা ইবন মুনাক্বিদ লিখেন, "যারা ফ্রাংকদের (জার্মানদের একটি গোত্র যারা পরে ফ্রেঞ্চ হয়ে গিয়েছিল) সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত ছিল, তারা তাদেরকে পশু হিসেবেই বিবেচনা করত, যারা কিছুটা সাহস আর শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে লড়াই করত, ঠিক পশুরা যেমন শক্তি আর আক্রমণে দক্ষ তেমনটাই।"

ধীরে ধীরে মুসলিমদের বিভিন্ন অনুশীলন দখলদার বাহিনীর ভিতরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। মুসলিমদের যখন এই সময় ইউরোপিয়ান কায়দায় দূর্গ তৈরির কিছু কৌশল ছাড়া আর কিছুই শেখার মত ছিল না, ক্রুসেডাররা তখন প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুকরণ করতে শুরু করল। মুসলিম চিকিৎসাবিদ্যা, ভাষা, প্রকৌশলবিদ্যা আর গণিত এই ক্রুসেডের মাধ্যমেই পাশ্চাত্যে পৌঁছায়। এমনকি দাবা খেলা পর্যন্ত! যার উৎপত্তি হয়েছিল পারস্যে, ইউরোপে এই সময়ই পরিচিতি পায়।

যাই হোক, ক্রুসেডারদের আক্রমণ মুসলিম বিশ্বে বহু ধর্ম বিশিষ্ট কোন সমাজের উদ্ভব ঘটাতে পারেনি (মুসলিম স্পেনে যেমনটা ছিল)। মুসলিমরা সর্বদা বিদেশি ইউরোপিয়ানদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকত। উদাহরণস্বরূপ, ক্রুসেডারদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১০৯৮ সালের নভেম্বরে সিরিয়ার মা'আররা শহরের প্রত্যেকটি নাগরিককে হত্যা করা হয় এবং ক্রুসেডাররা এরপর তাদের মাংস খেতে শুরু করে! ফ্রাংকদের এধরনের নিষ্ঠুরতার গল্প ধীরে ধীরে মুসলিম বিশ্বের ঘুম ভাঙাতে শুরু করে। কিন্তু একাদশ শতাব্দীর শুরুতে, বিজয় এখনো অনেক দূরে মনে হচ্ছিল।

যতদিন না পর্যন্ত ১১৩০ সালের দিকে, ইমাম আল-দীন জঙ্গি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধের গতিপথ উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করে। 

তৃতীয় পর্ব পড়ুন: মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রীষ্টানদের পরিচালিত ধর্মযুদ্ধ তথা ক্রুসেডের ইতিহাস। পর্ব ৩: মুসলিমদের বিজয়

ক্রুসেডারদের আক্রমণের প্রেক্ষিতে প্রথমদিকে মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই দুঃখজনক। বাগদাদের এক ক্ষমতাহীন খলিফা নিজেদের পবিত্র স্হানটিকে পুনরুদ্ধারে কোন ভূমিকাই পালন করতে পারেন নি। সেলজুক আমিরেরা তখনো নিজেদের মধ্যে যুদ্ধেই ব্যস্ত। অপরদিকে মিশরের শিয়া ফাতেমিয়রা সুন্নি সেলজুকদের যথাসম্ভব ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবেই ক্রুসেডারদের সাহায্য করে যাচ্ছিল। অর্থাৎ মুসলিমরা কোনদিক দিয়েই ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত অবস্হায় ছিল না।

সর্বপ্রথম যিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ান, তিনি হলেন ইমাম আদ-দিন জঙ্গি। তিনি ছিলেন আলেপ্পো (বর্তমানে সিরিয়া) এবং মসুল (বর্তমানে ইরাক) এর আমির। অন্যান্য তুর্কি আমিরদের সাথে অনেক সাদৃশ্য সত্ত্বেও, দীর্ঘ দিন পর একমাত্র তিনিই, একজন মুসলিম নেতা হওয়ার মত যোগ্যতা দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও তার রাজ্যে তার থাকার মত প্রাসাদের কোন অভাব ছিল না, তবুও তিনি তার অধীনস্থ একজন সাধারণ সৈনিকের মতই জীবনযাপন করতেন। তিনি এতই অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন যে, বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক ইবন আসির তাকে "মুসলিমদের জন্য স্বর্গীয় আশির্বাদ" হিসেবে বর্ণনা করেন।

তার সুশৃঙ্খল এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী নিয়ে জঙ্গি মুসলিম সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের কাজে লেগে পড়েন এবং ১১৪৪ সালে এডেসা দখল করতে সক্ষম হন। ক্রুসেডারদের প্রথম আক্রমণের সময় তারা এই শহরটিকেই প্রথম বেস হিসেবে ব্যবহার করেছিল আর এখন পবিত্র শহর পুনরুদ্ধারের পথে এই শহরটিই প্রথম দখল করা হলো। জঙ্গি ক্রুসেডারদের উপর পূর্ণ মুসলিম শক্তির সম্মিলিত আক্রমণের অনেক বড় চিন্তাভাবনা করতেন। কিন্তু ১১৪৫ সালে তার এক ফ্রাংকিশ দাস তাকে আকস্মিকভাবে হত্যা করে। ইমাম আদ-দিন যেহেতু মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর খুব বেশি জোর দিতেন, তারই ফলস্বরূপ তার মৃত্যুর পরও তার ছোট্ট সাম্রাজ্য ভেঙে যায় নি। বরং তার ছেলে নুর আদ-দিন খুব ভালভাবেই তা রক্ষা করতে সক্ষম হন। নুর আদ-দিন তার পিতার পথ অনুসরণ করে দামাস্কাসের আমিরের সাথে মিত্রতা করে একত্রে এন্টিওক আক্রমণ করেন। এভাবে নুর আদ-দিন কয়েক দশক ধরে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন।

এই সময়ই মিশরে শিয়া ফাতেমিয় সাম্রাজ্য দূর্বল হয়ে পড়ে। তারা এতদিন ধরে যাদের সাহায্য করে আসছিল, সেই ক্রুসেডাররাই ১১৬০ সালে মিশর আক্রমণ করে তা দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর যাদের তারা এতদিন হিংসা করে আসছিল, সেই সুন্নি সেলজুকদের নেতা নুর আদ-দিন তাদের বাঁচাতে তার বাহিনীকে মিশর পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঐ বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি শিরকুহ নামক একজন কুর্দি জেনারেলকে নিযুক্ত করেন। শিরকুহের সাথে তার ভাতিজা সালাহ্ আদ-দিনও মিশর অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন।

মুসলিম সেনাবাহিনী সময়মতই মিশরে গিয়ে উপস্হিত হয় এবং ক্রুসেডারদের পরাজিত করে মুসলিমদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই বিজয়ের কিছু দিনের মধ্যেই শিরকুহ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে মুসলিম বাহিনী এবং মিশরের নেতৃত্বের ভার এসে পড়ে তার ভাতিজা সালাহ্ আদ-দিনের কাঁধে। ফাতেমিয় শিয়া খিলাফতের এখানেই মৃত্যু ঘটে।

সালাহ্ আদ-দিনের পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক অবস্হা আলোচনার পূর্বে তার চরিত্র এবং গুণাবলির দিকে একটু দৃষ্টি ফেরান যাক। মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই, মিশরের অধিপতি হিসেবে সালাহ্ আদ-দিনকে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু সেই সময়কার মুসলিম এবং খ্রিষ্টান বর্ণনা গুলোতে তার বিনয় আর নম্রতার কথাই আলোচিত হয়েছে বেশি। তিনি নিজের আরাম আয়েশের ব্যাপারে চরম উদাসীন ছিলেন। তার সমস্ত ভাবনা চিন্তা ছিল শুধু একটি বিষয়কে ঘিরে, মুসলিম ভূমির স্বাধীনতা। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি কোন পরিস্হিতিতে কখনো হাসতেন না পর্যন্ত। তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেছিলেন, "আমি কিভাবে হাসতে পারি, যখন মাসজিদ আল-আকসা ক্রুসেডারদের দখলে?" তার কোষাধ্যক্ষদের খুব সাবধানে কোষাগারে সোনা জমিয়ে রাখতে হতো। কোনভাবে যদি তিনি সামান্য পরিমাণ সোনারও অস্তিত্ব টের পেয়ে যেতেন, সাথে সাথে সেটা তার বাহিনীকে আরো একটু উন্নত করার কাজে ব্যয় করে ফেলতেন। তার আশেপাশে থাকা লোকেরা বলত, তিনি নিজের ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন কিন্তু অন্যদের জন্য ছিলেন কুসুম কোমল। ঠিক যেমনটা ছিলেন খুলাফায়ে রাশেদা, ইসলামের প্রথম চারজন সত্যনিষ্ঠ খলিফা। মুসলিম ভূমিকে মুক্ত করতে ঠিক এই ধরনের চরিত্রের নেতৃত্বেরই প্রয়োজন ছিল।

সালাহ্ আদ-দিন মিশরের ক্ষমতা গ্রহণ করায় বিশ্লেষকরা আমির নুর আদ-দিনের সাথে তার সংঘর্ষের সংশয় প্রকাশ করেন। কিন্তু সালাহ্ আদ-দিন এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেন এই বলে যে তিনি নুর আদ-দিনের প্রতি বিশ্বস্ত এবং তার সাথেই একত্রে ক্রুসেডারদের মোকাবিলা করতে চান। ঘটনা যাই হোক, নুর আদ-দিন জঙ্গি ১১৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে সালাহ্ আদ-দিনের হাতে মিশর আর সিরিয়ার কতৃত্ব চলে আসে এবং ফিলিস্তিনের ক্রুসেডাররা কার্যত তার সাম্রাজ্য দিয়ে ঘেরাও হয়ে যায়।

সালাহ্ আদ-দিন এটা নিশ্চিত করেন যে, ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার সময় মুসলিমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই তাকে ফাতেমিয় শিয়াদের অবশিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মোকাবিলা করতে হয়, যারা অ্যাসাসিন নামে পরিচিত ছিল। তারা মুসলিম এবং ক্রুসেডারদের নেতৃবৃন্দকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টায় ছিল।

এসব কাজে কয়েক বছর সময় নষ্ট হয়। অবশেষে ১১৮০ সালের প্রথম দিকেই সালাহ্ আদ-দিন ক্রুসেডারদের দখলদারিত্ব থেকে জেরুজালেমকে উদ্ধারের জন্য একটি শক্তিশালী বাহিনী দাঁড় করাতে সক্ষম হন। এসময় ক্রুসেডারদের অবস্হা ছিল খুবই করুণ। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এবং অন্তর্কোন্দলের ফলে তারা দূর্বল হয়ে পড়েছিল। ৮০ বছর আগে মুসলিমরা যে অবস্হায় ছিল, ঠিক সেই ধরনের অবস্হায়। ১১৮২ সালে, সালাহ্ আদ-দিন ক্রুসেডারদের এলাকায় ঢুকে পড়েন এবং সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

তুলনামূলকভাবে সালাহ্ আদ-দিনের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল চ্যাটিলনের রেনাল্ড। এই চরম অমার্জিত লোকটি প্রায়ই দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার চালাত এবং হাজ্জ্ব কাফেলাগুলোর উপর আক্রমণ চালিয়ে লুটপাট করতো। এমনকি এক পর্যায়ে সে মক্কা আর মদিনা আক্রমণ করার হুমকি দেয়। সালাহ্ আদ-দিন খোদ ইসলামের সাথে এই বেয়াদবি বরদাশত করতে পারেননি এবং রেনাল্ডকে নিজের হাতে এর উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার শপথ করেন।

সালাহ্ আদ-দিন ১১৮৭ সালে হাট্টিনের যুদ্ধেই তার সুযোগ পেয়ে যান। ক্রুসেডাররা এই যুদ্ধের জন্য জেরুজালেম থেকে তাদের মূল বাহিনীর বড় অংশ হাজির করে এবং ২০ হাজার সৈন্যর একটি বাহিনী গঠন করে। অপরদিকে সম্মিলিত মুসলিম বাহিনী ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে তাদের জবাব দিতে প্রস্তুত হয়। ক্রুসেডাররা ইউরোপিয়ান কায়দায় যুদ্ধ করতো। তারা অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মার্চ করে মরুভূমির উপর দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে আসতে থাকে। কিন্তু পথিমধ্যে তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। ফলে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, যুদ্ধ করা তো দূরের কথা,তাদের ঠিকমত দাঁড়ান আর হাঁটারই শক্তি ছিল না। দ্রুত এবং চূড়ান্ত একটি আক্রমণের মধ্য দিয়ে ক্রুসেডার বাহিনী সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত হয় এবং রেনাল্ডকে বন্দি করা হয়। অন্যান্য ক্রুসেডার নেতাদের যেখানে ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়, সালাহ্ আদ-দিন নিজের হাতে রেনাল্ডকে হত্যা করেন। তার গোঁড়ামি আর অমার্জিত আচরণের এটাই ছিল উপযুক্ত শাস্তি।

মূল বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাওয়ায়, সালাহ্ আদ-দিন জেরুজালেম যাত্রা করেন এবং সামান্য বাধা দূর করে তা দখল করে নেন। এভাবে ১১৮৭ সালের ২রা অক্টোবর, ৮৮ বছর ২ মাস ১৭ দিন পর, হারানো জেরুজালেম শহর পুনরুদ্ধার হয়।

শহরের খ্রিষ্টানদের সাথে বিজয়ী সালাহ্ আদ-দিনের আচরণ ছিল অভূতপূর্ব। ৮৮ বছর আগে, ক্রুসেডাররা যখন অধিবাসীদের উপর নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছিল "গোড়ালি রক্তে ডুবে যাওয়া" পর্যন্ত, সালাহ্ আদ-দিন সেখানে ঘোষণা করলেন যার যা খুশি তা নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সবাই শহর ত্যাগ করতে পারে। সামান্য কর নির্ধারণ করা হয়। যাদের এই সামান্য কর দেয়ারও সামর্থ্য ছিল না, তাদের কর ছাড়াই শহর ত্যাগ করার অনুমতি দেয়া হয়।

জেরুজালেমের স্বাধীনতা ১১৮৯ সালে আরেকটি ইউরোপিয়ান ক্রুসেডের জন্ম দেয়। এই ক্রুসেডের নেতৃত্বে ছিলেন রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট। সালাহ্ আদ-দিন আর রিচার্ডের মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধের পর এই ক্রুসেড ব্যর্থ হয় এবং জেরুজালেম মুসলিমদের হাতেই থেকে যায়। এই যুদ্ধগুলোতেও সালাহ্ আদ-দিন তার উদারতা আর যোদ্ধা সুলভ বিনয় প্রদর্শন করেন। একবার যুদ্ধাবস্থায় তিনি লক্ষ্য করেন যে, রিচার্ডের ঘোড়া নিহত হয়েছে। সালাহ্ আদ-দিন মুসলিম আস্তাবল থেকে তার জন্য একটি ঘোড়া পাঠিয়ে দেন। কারণ তিনি মনে করতেন, কোন সেনাপতিরই ঘোড়া ছাড়া নিজ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়াটা ভাল দেখায় না। তার উদারতা আর ক্ষমাশীলতার কথা শত্রু শিবির এবং খ্রিষ্টান ইউরোপে রূপকথার মত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মনে তিনি শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

সালাহ্ আদ-দিনের নেতৃত্ব আর নিবেদিত প্রাণ ভূমিকা মুসলিম ঐক্যের এক নতুন যুগের সূচনা করে। এমনকি তার মৃত্যুর পরও তার প্রতিষ্ঠিত আইয়্যুবিয় সাম্রাজ্য এবং পরবর্তীতে মামলুক সাম্রাজ্যও তার আদর্শকে ধরে রাখে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে শত শত বছর ধরে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়। ফিলিস্তিন এবং জেরুজালেমের পবিত্র ভূমি মুসলিমদের হাতেই রয়ে যায়, যতদিন না পর্যন্ত ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ বাহিনী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে তা দখল করে নেয়।

যদিও সালাহ্ আদ-দিনের সেই সময় অনেক আগেই অতীত হয়েছে এবং আমরাও আজ নিত্যনতুন সমস্যার মুখোমুখি, তবুও ক্রুসেডের সময় মুসলিমদের সেই ঐক্যের কথা আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। যখন মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাদের রাস্তায় কোন শক্তিই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

বিজয় তো শুধুমাত্র এক আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন