রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ঈমান ও হেদায়েত মুসলমানের মূল্যবান সম্পদ : মুফতী মোহাম্মদ আমীন- অনুবাদ: মাওলান আলী উসমান

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি  অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [সূরা আনকাবুত : ৬৯]

হেদায়েত পৃথিবীর সবচেয়ে মূলবান ধন। আল্লাহ তাআলার নিকট যত সম্পদের ভা-ার রয়েছে তারমধ্যে হেদায়েত সবচেয়ে দামী। হেদায়েতের মূল্য এত উঁচুমানের যে, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ও নি¤œ পর্যায়ের একজন মানুষকে যে হেদায়েত দান করা হয়েছে তা সারা দুনিয়া ও তার মাঝে যে সম্পদ রয়েছে তা মিলেও এর মূল্য হতে পারে না। যেমন একজন ব্যক্তি যার দুনিয়ার কোনো সম্পদ নাই, আরাম আয়েশ, ভোগবিলাসিতার কোনো উপকরণ তার কাছে নাই। ছিড়াফারা কাপড় পরিধান করে জঙ্গলের কুড়ে ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে হেদায়েত দান করেছেন, তাহলে ঐ ব্যক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে সফলকাম ব্যক্তি। কারণ সেই ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনেও সফলকাম আখেরাতের জীবনেও সফলকাম। অপর দিকে এক ব্যক্তি, সমস্ত দুনিয়ার নেতৃত্ব যার হাতে, তার হুকুমে চলে দুনিয়ার সমস্ত রাজা বাদশাহগণ, কিন্তু তার কপালে হেদায়েত জুটে নাই অথচ সে হেদায়েতের মুহতাজ তাহলে সে এতসব কিছু পেয়েও দুনিয়ার জীবনে বিফল আখেরাতের জীবনেও আজীবনের কষ্টে নিপতিত হবে। এ কথাটি আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সুন্দর করে ইরশাদ করেন- ‘যদি গোনাহগারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তবে অবশ্যই তারা কেয়ামতের দিন সে সবকিছুই নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দেবে। অথচ তারা দেখতে পাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন শাস্তি যা তারা কল্পনাও করত না। [সূরা যুমার : ৪৩]
প্রিয় পাঠক! এখন ভাবার বিষয় হলো, কাফের সম্প্রদায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ এমন কোন মূলবান জিনিসটির জন্য বিনিময় হিসেবে দিয়ে দিতে চায়? সেটা কি জিনিস? যা একজন সাধারণ মুসলমানের কাছে বিদ্যমান; অথচ প্রভাবশালী কাফেরের কাছে তা নাই, যার ফলে তারা পেরেশানিতে লিপ্ত থাকে? সে জিনিসটা আর কিছু নয় তা হলো হেদায়েত, যার জন্য একজন কাফের সারা পৃথিবীর সম্পদ দিতে তৈরি হয়ে যাবে। সুতরাং বুঝা যায় হেদায়েত হলো সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ যার বিনিময় সারা দুনিয়া দিয়েও পুরা হবে না।
سبحان الله বলার ফযীলত
একবার হযরত সুলাইমান আ. বাতাসে চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তাঁর সম্পর্ক ছিল উর্ধ্বাকাশে আল্লাহর সাথে। সুলাইমান আ.কে সিংহাসনসহ বাতাসে উড়তে দেখে এক গ্রাম্য ব্যক্তি যমীনে বসে বলল,
আল্লাহ তাআলা সুলাইমান আ. কে ঐ ব্যক্তির سبحان الله বলার আওয়াজ শুনিয়ে দিলেন। সুলাইমান আ. বাতাসকে হুকুম করলেন গ্রাম্য ব্যক্তির কাছে যাওয়ার জন্য। বাতাস সিংহাসন নিয়ে  নির্দিষ্ট গ্রামে গিয়ে থামল এবং সুলাইমান আ. গ্রাম্য ব্যক্তিকে তলব করলেন। বেদুইন তো ভয়ে আঁটসাঁট। তিনি শান্তনা দিয়ে বললেন, তুমি আমার সিংহাসন আকাশে উড়তে দেখে কি বাক্য উচ্চারণ করছিলে? গ্রাম্য লোকটি বলল, আশ্চর্য হয়ে আমি  سبحان الله  বলেছিলাম।
সুলাইমান আ. বলেন  سبحان الله  শব্দটি বলার মূল্য একজন সুলাইমানের রাজত্বের কি দাম! যদি সারা পৃথিবীও এর মুকাবেলায় দেয়া হয় তাও এর সমান মূল্য হবে না।
হাদীস শরীফে আবু মালেক আশআরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন-   الحمد لله  মিযানের পাল্লা ভারি করে দেয় এবং  سبحان الله  والحمد لله  যমীন এবং আসমানের মধ্যবর্তী জায়গা সওয়াব দ্বারা ভরে দেয়। নামায কিয়ামতের দিন নূর হবে এবং সাদকা বান্দার পক্ষে দলিল হবে, আর ধৈর্য্য কিয়ামতের দিন তোমার জন্য আলো আর পবিত্র কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল হবে। [মুসলিম, রিয়াজুস সালেহীন, ধৈর্য্য অধ্যায়]
হেদায়েত এত মূল্যবান হওয়ার কারণে এটা অর্জন করাও কঠিন হওয়ার কথা ছিল। কারণ যে জিনিস দামী তার অর্জনও কষ্টের এবং কঠিন হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা হেদায়েতেরমত মহামূল্যবান সম্পদ যা সারা পৃথিবীর চেয়েও মূল্যবান তার অর্জন দয়াময় প্রভু এতটা সহজ করে দিলেন যে, এর চেয়ে সহজ বস্তু পৃথিবীতে আর কোথাও খোঁজে পাওয়া যাবে না। এর কারণ হলো আল্লাহ তাআলার বিশ্বজাহান সৃষ্টির শুরু থেকেই একটি নিয়ম চলে আসছে, যে জিনিসের প্রয়োজন মানুষের কম লাগে তার অর্জন আল্লাহ কঠিন করে দিয়েছেন। আর যে জিনিস মানুষের অহরহ প্রয়োজন তা আল্লাহ তাআলা সহজ করে দিয়েছেন।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি- চারটি জিনিস পৃথিবীতে আছে যেমন- (১) সোনা রোপা (২) পরিধেয় কাপড় (৩) পানি (৪) বাতাস।

প্রথম সোনা চান্দি
এই সমস্ত ধাতু খুব কমই মানুষের ব্যবহারে লাগে। ব্যবহার তো দূরের কথা যদি সারা জীবন কেউ তার দেখা নাও পায় তবুও তার জিন্দেগী আরামের সাথে অতিবাহিত হয়। আমাদের চারিপাশে সামাজিক পরিবেশে অনেক পরিবার তো এমন পাওয়া যায়, যারা সোনা চান্দি কোনো দিন দেখেই নাই। যেহেতু সোনা রোপা মানুষের খুব কম ব্যবহারে লাগে। সে জন্য আল্লাহ তাআলা তা অর্জন করা কঠিন করে দিয়েছেন। অনেক কষ্ট মেহনত করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হয়তবা অল্প কিছু অর্জন করা যায়।

দ্বিতীয় পরিধেয় কাপড়
কাপড় মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। সোনা রূপার তুলনায় এর ব্যবহার অনেক বেশি। কাপড় ব্যতীত মানুষের জীবন যাপন কঠিন। কিন্তু এমন না যে একজন মানুষ কাপড় ছাড়া বাঁচবে না। পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গায় এমনও তো দেখা যায় যে, কাপড় ছাড়া মানুষ জীবন যাপন করছে। যেমন আফ্রিকার কোনো কোনো জায়গায় এমনটা মাঝে মাঝে দৃষ্টিগোচর হয়। মোটকথা, পরিধেয় কাপড় সোনা রূপার তুলনায় মানুষের ব্যবহারে বেশি প্রয়োজন পরে এবং এ কাপড় সংগ্রহ করাও সোনা রূপার তুলনায় সহজ।

তৃতীয় পানি
পানি মানুষের বেশি প্রয়োজন পড়ে। পানির প্রয়োজন সোনা চান্দি, পরিধেয় কাপড় ইত্যাদি থেকেও বেশি প্রয়োজন হয়। এমনকি পানি ছাড়া মানুষের জিন্দেগী অতিবাহিত করা বা বেঁচে থাকার চিন্তাও করা যায় না। যদি পানি না থাকে তাহলে মানুষ বাঁচতে পারে না। এরপরেও এমন না যে পানি ছাড়া দুই একদিন বাঁচতে পারবে না। তাই দয়াময় আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল করে পানিকে সোনা রূপা, পোশাক পরিচ্ছেদ ইত্যাদি থেকে সহজ করে দিয়েছেন। সাধারণত কোনো টাকা পয়সা ছাড়াই পানি পাওয়া যায়। তারপরও বেশি সংকট দেখা দিলে কখনও অল্প টাকাতেও পানি পাওয়া যায়।

চতুর্থ হলো বাতাস
বাতাস এমনি একটি পদার্থ যা ছাড়া মানুষ ক্ষণিকের জন্যও বাঁচতে পারে না। বাতাসের প্রয়োজন মানুষের জন্য সোনা চান্দি, কাপড়, পানি ইত্যাদি থেকেও বেশি প্রয়োজন। বাতাস যদি না থাকে মানুষ তো শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারবে না। বাতাস ছাড়া মানুষ এক মিনিটও বাঁচতে পারে না। অথচ বাতাসকে আল্লাহ তাআলা এত সহজ করে দিয়েছেন যে একজন ব্যক্তি চাই সে বাদশা হোক বা ফকির, ধনী হোক বা গরীব, মুসাফির হোক বা মুকিম ব্যবসায়ি হোক বা চাকুরিজীবি বা আরো যত পেশা তার হতে পারে প্রত্যেকের জন্য যতটুক প্রয়োজন ততটুকুই গ্রহণ করতে পারে। এটার জন্য না কোনো টাকা পয়সার প্রয়োজন না কোনো কষ্ট পোহাতে হয় আর না কেহ তা গ্রহণ করতে বাঁধা দেয়। এককথায় যে জিনিসের প্রয়োজন যতটুকু আল্লাহ তাআলা সেই জিনিসকে বান্দার জন্য তত সহজ করে দিয়েছেন। আর যে জিনিসের প্রয়োজন তুলনামূলক যত কম আল্লাহ তাআলা তা অর্জন করাও তত কঠিন করে দিয়েছেন।

হেদায়েত মানুষের জন্য সবচেয় প্রয়োজন
এখন চিন্তার বিষয় হলো উল্লিখিত চারটি জিনিস ছাড়া এমন কোনো জিনিস আছে যা মানুষের বেশি প্রয়োজন পরে? সাধারণত মানুষের সোনা রূপা, পেশাকা পরিচ্ছদ, পানি এবং বাতাসের প্রয়োজন বেশি পরে। যদি চিন্তা করা হয় তবে দেখা যাবে যে এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে আরেকটি জিনিসের তার নাম হলো ‘হেদায়েত’। বাতাস ছাড়া মানুষ কমছেকম ৩০ সেকে- থাকতে পারে। কিন্তু হেদায়েত ছাড়া একজন মানুষ এক সেকে-ও থাকতে পারে না। কেননা যদি মানুষ এই হেদায়েতের সম্পদ অর্জন করতে না পারে, আর সোনা রূপা, ধন-সম্পদ হাসিল করে। পানি বাতাস তার কাছে প্রচুর পরিমানে থাকে, তাহলে তার দুনিয়ার জীবন হয়তো সুখেই অতিবাহিত হবে; কিন্তু এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। কেননা মানুষের হায়াত তো এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। এটাকে না কোনো বাদাশার বাদশাহি ধরে রাখতে পারবে, যারা রেশমের সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করে এবং দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পাতাসের বেগে চড়ে বেড়ায়। না কোনো সম্পদশালীর সম্পদ ফিরিয়ে রাখতে পারবে, যারা দুনিয়ার বড় বড় অট্টালিকায় বাস করে আর এরকম দুনিয়ার অত্যাধুনিক জাহাজে করে ঘুরে বেড়ায়। আর না কোনো ডাক্তারের ডাক্তারী এই হায়াতকে বেধেঁ রাখতে পারবে। আবার ঝুপড়িতে বসবাসকারী শুকনা রুটি খেয়ে ছেড়া কাপড় পরিধান করে দিনাতিপাতকারী ব্যক্তির জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। হয়ত তাদের জন্য সেই জীবনটা হবে ক্ষণিকের জন্য কষ্টের। তারপরও একদিন হইজীবনের ইতিটানবে দুনিয়ার সকল মানুষের। আল্লাহ তআলা ইরশাদ করেন- প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিনে তোমাদের প্রাপ্য পুরোপুরি তোমাদের আদায় করা হবে। কাজেই যাকে আগুন থেকে বহুদূরে রাখা হবে ও স্বর্গোদ্যানে প্রবিষ্ট করা হবে, নিঃসন্দেহ সে হল সফলকাম। আর এই দুনিয়ার জীবন ধোঁকার সন্বল ছাড়া কিছুই নয়। [সূরা আল ইমরান : ১৮৫]
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন- প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আর আমরা তোমাদের পরীক্ষা করি মন্দ ও ভাল দিয়ে যাচাই করে। আর আমাদের কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। [সূরা আম্বিয়া : ৩৫]
কিন্তু আফসোসের বিষয়, যদি দুনিয়া থেকে একজন মানুষ এভাবে চলে যায় যে তার হেদায়েত নসীব হয় নাই, তাহলে সে দুনিয়ার জীবনেও বরবাদ হতভাগ্য; আখেরাতের অসীম, অনন্ত জীবনও বরবাদ ও দুর্ভোগে পোহাতে হবে। হেদায়েতহীন ব্যক্তি সারা জীবন শান্তি, আরাম আয়েশ ও প্রশান্তির খোঁজে জীবন পার করে দেয়; কিন্তু তা সে খোঁজ পায় না। বরং দুনিয়ার যিন্দেগীতে সে হায় হুতাশ, অস্থির, দুঃখ কষ্ট ও অশান্তিতে কাটায়।
মোটকথা, হেদায়েত মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই তা হাসিল করাও সহজ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। রাজা বাদশা, ধনী গরিব, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমির উমারা রাজ প্রাসাদের উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ে থেকেও যেমন হেদায়েত অর্জন করতে পারে, তেমনি একজন গরীব ফকীর রাস্তার ভিখারীও আল্লাহর অলী, গাউস, কুতুব বুজুর্গ হতে পারে। হেদায়েত হাসিল করার জন্য আল্লাহ তাআলা সকলের জন্য তা ব্যাপক করে দিয়েছেন। যেন কিয়ামতের দিন কোনো ভিক্ষুক একথা বলতে না পারে যে, হে আল্লাহ! হেদায়েত তো অনেক দামী জিনিস আর আমার কাছে তো কোনো টাকা পয়সা ছিল না। খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে ইসলামের প্রতিটি আহকাম যেমন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে সমাসীন আমীর উমারা, রাজা বাদশা আদায় করতে পারে, তেমনি তা পালন করতে পারে সমাজের সাধারণ থেকে সাধারণ ফকীর, মিসকিন, খেটে খাওয়া মজদুরও। যেমন নামায, রোযা, পর্দা, সুন্দর ব্যবহার ইত্যাদি  একজন বাদশা যেমন পালন করতে পারে একজন ফকীর বা খেটে খাওয়া একজন আদায় করতে পারে।
ঈমান ও হেদায়েত অর্জনের তরিকা
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে হেদায়েত লাভের দুটি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন-
প্রথম পদ্ধতি: যেহেতু হেদায়েতের মালিক আল্লাহ তাআলা। পবিত্র কুরআনে ঘোষাণ হয়েছে-  হে নবী! আপনি যাকে ভালবাসেন তাকে হেদায়েত দিতে পারেন না। [সূরা কাসাসা : ৫৬] তাই তার কাছেই হেদায়েত চাইতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা দয়া করে নিজ মেহেরবানিতে হেদায়েতের দৌলত দান করবেন। এজন্য বেশি বেশি দোআ করতে হবে। আর আল্লাহ তাআলা সেই হেদায়েত চাওয়ার দোআও শিখিয়েছেন- اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ  (হে আল্লাহ!) আমাদের তুমি সহজ-সঠিক পথে পরিচালিত করো। [সূরা ফাতিহা : ৪]
এই দোআটি সূরা ফাতিহাতে উল্লেখ করেছেন। এজন্য এই সূরার এক নাম হলো ‘তালিমুল মাসআলা’। আল্লাহ তাআলা এই সূরা দিয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়া শিখিয়েছেন। এখানে যে সওয়াল করা শিখিয়েছেন এটা দুনিয়াবী কোনো সম্পদ চাওয়া শিখাননি; বরং তিনি মানুষের জীবনের সবচেয় মূল্যবান জিনিস হেদায়েত চাওয়া শিখিয়েছেন। আর এই চাওয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। কেননা বাদশাহ নিজেই দরখাস্ত লিখে বান্দাকে দিয়েছেন এবং বলেছেন তোমরা এভাবে আমার কাছে চাও। আর এর কবুলিয়তের কথা তো তিনি অন্য আয়াতে ঘোষণা করেছেন এভাবে- ‘আর যখন আমার বান্দারা আমার সন্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন  তো! আমি নিঃসন্দেহ অতি নিকটে। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার জবাব দিই যখনি সে আমাকে আহ্বান করে। কাজেই তারা আমার প্রতি সাড়া দিক আর আমাতে ঈমান আনুক, যাতে তারা সুপথে চলতে পারে। ’ [সূরা বাকারা : ১৮৬]

দ্বিতীয় তরিকা: আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন-
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ পক্ষান্তরে যারা আমার জন্য সংগ্রাম করে, আমি অবশ্যই তাদের পরিচালিত করব আমার পথগুলোয়। আর আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সৎকর্মীদের সাথেই রয়েছেন। [সূরা আনকাবুত : ৬৯]
অর্থাৎ হেদায়েতওয়ালা মেহনত করা হলে অবশ্যই হেদায়েত দেওয়া হবে। দ্বীনের মেহনত করলে আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করছেন যারা দ্বীনের জন্য মেহনত করে তারা হেদায়েতের জন্যই মেহনত করে।
আয়াতে لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا এর অর্থ হলো, আমি অবশ্যই তাদের পরিচালিত করব আমার পথগুলোয় অর্থাৎ আমি আমার সত্ত্বা পর্যন্ত পৌঁছা যাবে এমন রাস্তা অবশ্যই তাদের দান করব। দুনিয়ার বাস্তব জীবনে দেখা যায়, যে ব্যক্তি যে জিনিসের উপর মেহনত করে সে সেটা পেয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা দুধ বিক্রি করে, দুধের তালাশে সারাদিন ঘুরে তাহলে অবশ্যই তার ঘরে দুধ পাওয়া যাবে। তেমনিভাবে একজন রুটি তৈরিকারী সে সারাদিন রুটি বানায় তাহলে তার ঘরের মানুষ, তার সন্তানাদিরা না খেয়ে থাকবে না। অবশ্যই রুটি খাবে, যদিও গ্রামের অন্য ঘরের লোকেরা না খেয়ে থাকে। এভাবে আমরা আমাদের চতুরপার্শ্বে লক্ষ করলে দেখতে পাবো, দুনিয়াতে যারা যে জিনিসের উপর মেহনত করে প্রতিদান স্বরুপ সে তা অর্জন করে। যেখানে দুনিয়ার সামান্য জিনিসের উপর মেহনত করলে তা পাওয়া যায়, তাহলে হেদায়েতের জন্য মেহনত করলে মহান আল্লাহ তাআলা বুঝি মাহরুম রাখবেন? এটা কখনই হতে পারে না। দ্বীনের মেহনত করার জন্য, হেদায়েতের মেহনত করার জন্য আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার আম্বিয়া কেরাম কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন এবং সকলেই হেদায়েতের মেহনত করেছেন আর উনারা প্রত্যেকেই হেদায়েত প্রাপ্ত ছিলেন। তাঁরা রাত দিন নিজ নিজ উম্মতের পিছনে পিছনে ঘুরেছেন, তাদের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন ঈমান ও হেদায়েত লাভের জন্য। যাদের ভাগ্যে হেদায়েত ছিল তারা হেদায়েত পেয়েছে আর যাদের ভাগ্য মন্দ তারা বঞ্চিত হয়েছে।
মোটকথা, হেদায়েত লাভের দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো, হেদায়েতওয়ালী মেহনত করতে হবে। আল্লাহ পাকের ওয়াদা রয়েছে হেদায়েতের মেহনতকারীদের অবশ্যই হেদায়েত দিবেন। মনে করেন, একভাই অন্য ভাইকে বলল, নামায পড়েন। তাহলে প্রথম ভাই কিভাবে নামায না পড়ে থাকতে পারে? অথবা বলল, আপনি রোযা রাখুন তাহলে সে নিজে কিভাবে রোযা ভাঙ্গবে? অথবা বলল, ভাই, আপনারা চুরি করবেন না, তাহলে সে নিজে কিভাবে চুরি করতে পারে?

হেদায়েতের মেহনতের প্রকারভেদ
হেদায়েত লাভের জন্য বিভিন্ন প্রকারের মেহনত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে কোনো এক প্রকার গ্রহণ করলেও সেটা হেদায়েতের মেহনত বলে গণ্য হবে। হেদায়েতের মেহনতকে কোনো একটি পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ করা ঠিক না। সারা দুনিয়ায় দীন জিন্দা করার জন্য এখলাসের সাথে যে সমস্ত মেহনত চলছে সবগুলোই হেদায়েতের মেহনতের বিভিন্ন প্রকার। যেমন তাবলীগ জামাতের নামে সারা দুনিয়ায় একটি দল কাজ করছে, এটাও হেদায়েতে মেহনত। কেউ কেউ আবার দীন প্রতিষ্ঠার জন্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করছেন, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন এবং সেখানে পড়ছেন পড়াচ্ছেন। আবার কেউ এলায়ে কালিমাতুল্লাহ তথা দীনকে আল্লাহর যমীনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শত্রুদের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় শসস্ত্র যুদ্ধ করছেন। এ সব কিছুই দ্বীনের জন্য মেহনত তথা সবাই হেদায়েতের রাস্তায় আছেন। কারো এটা ভাবার কোনো যুক্তি নাই যে দ্বীনের জন্য আমি যে পদ্ধতি গ্রহণ করছি একমাত্র এটাই হেদায়েতের পথ। উদারহরণস্বরূপ বলা যায়- আল্লাহর রাস্তায় ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান সশস্ত্র জিহাদকারী যুবকদের এটা ভাবার কোনো সুযোগ নাই যে, আসল কাজ তো আমরাই করছি আর বাকি মাদরাসার উলামা হযরত এবং তাবলীগ জামাতের লোকেরা সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই করছে না। তেমনি তাবলীগ জামাতের লোকদেরও এটা ভাবার কোনো সুযোগ নাই যে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে বা মাদরাসায় পড়াচ্ছেন পড়ছেন তারা অনর্থক সময় নষ্ট করছেন। এররকমভাবে মাদরাসার উলামাগণ, তাদেরও এমন ধারণা করা ঠিক না। এর একটি দৃষ্টান্ত হলো- একটি ঘরের ছাদের ওজন ঘরের চার দিকের দেওয়াল বহন করছে। এখন যদি উত্তর দিকের দেওয়াল বলে ছাদের সমস্ত ভর আমি একা বহন করছি তাহলে তার এ দাবী ভুল প্রমাণিত হবে, যখন অপর তিনটি দেওয়াল সরিয়ে ফেলা হবে। ঠিক তেমনি ইসলাম নামের ইমারাতের ভার বহনের ক্ষেত্রে দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত এখলাসের সাথে কর্মকারী সকল দলই শরিক। বরং প্রত্যেকেই মনে করতে হবে যে দ্বীনের মেরুদ- তিনটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। ১. দাওয়াত ২. তালিম ৩. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
রাসূল সা. এর সাহচর্যের বরকতে সাহাবায়ে কেরাম রা. এমন শক্তি অর্জন করেছিলেন, যে তাঁরা একসাথে সব কাজই করতে পারতেন। তারা একই সময় আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ ছিলেন, দাঈ ছিলেন, মুফাসসির, ফকীহ এবং মুহাদ্দিস ছিলেন। পরবর্তীতে মানুষের মাঝে যখন ঈমানী দুর্বলতা আসতে শুরু করল, আস্তে আস্তে দ্বীনের এসমস্ত কাজ ভাগ হতে লাগল। একই সাথে একজনের জন্য সবগুলো করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে ইল্লা মাশাআল্লাহ যারা যে লাইনে পারদর্শী তারা সে লাইনে মেহনত করবে এবং অন্যদের জন্য যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করবে কমছেকম দোআর মধ্যে সকলকে শামিল করবে। তাদের বিরোধিতা করবে না। কেননা এসবই দ্বীনের কাজ, হেদায়েতের মেহনত। বারাবাড়ি আর ছাড়াছাড়ি থেকে নিজেকে বাঁচানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
অনেকের মনে শয়তানে প্রশ্ন জাগাতে পারে যে, আমাদের তো হেদায়েতের দৌলত আছেই। আমরা তো মুসলমানদের ঘরেই জন্ম নিয়েছি এবং কালিমা পড়ছি। আমাদের নামও মুসলমান। নামায পড়ি, রোযা রাখি। আমাদের কি প্রয়োজন যে আমরা হেদায়েতের জন্য মেহনত করব হেদায়েতের জন্য দোআ করব? এই কষ্ট করার কি প্রয়োজন?
উত্তরে বলব- প্রথমত আমাদের হেদায়েতেরমত দৌলত আছে, কিন্তু যতটুকু হেদায়েত আমাদের আছে তা অপরিপূর্ণ। পরিপূর্ণ হেদায়েত অর্জনের জন্য দোআ করতে হবে এবং মেহনতও করতে হবে। পরিপূর্ণ হেদায়েত হলো চব্বিশ ঘন্টার যিন্দিগী আল্লাহ তাআলার হুকুমে এবং রাসূল সা. এর সুন্নত তরিকায় অতিবাহিত করা। আল্লাহ তাআলা যেসব কাজের হুকুম করছেন তা পুরোপুরি পালন করা এবং যা থেকে নিষেধ করছেন তা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা। আর রাসূল সা. এর প্রতিটি সুন্নত নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। তাহলে এখন আমরা নিজেরাই চিন্তা করি আমরা কতটুকু হুকুম পালন করছি এবং রাসূলের সুন্নাত আমার যিন্দিগীতে কতটুকু আসছে, যেহেতু রাসূলের সুন্নাত এবং আল্লাহর হুকুম পুরোপুরি পালন করতে পারছি না, বুঝা গেল আমার হেদায়েত অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। তাই এই নাকেস হেদায়েত কামেল করার জন্য আল্লাহর কাছে  হেদায়েতের জন্য দোআ ও পুরোপুরি মেহনত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মেনে নিলাম আমার হেদায়েত নাকেস তবুও এটা এত দামী যে সারা দুনিয়া দিয়ে হলেও এর মূল্য হবে না। কেননা যার কাছে যত দামী জিনিস থাকে তার ভয়ও সেরকম, না জানি কখন লুটেরার দল লুট করে নিয়ে যায়। ঠিক আমাদেরও সেইরকম দামী জিনিস হেদায়েতের দৌলত রয়েছে। এটাও তো লোট করে নেয়ার ভয় আছে। শয়তান এবং মনের কুপ্রবৃত্তি সর্বদায় আমার পিছনে লেগে আছে কিভাবে আমার মহামূল্যবান সম্পদ হেদায়েত ছিনিয়ে নেওয়া যায়। সে জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হেদায়েতের পিছনে ঈমানের পিছনে মেহনত করতে হবে। যেন আল্লাহ তাআলা ছিনতাইকারীদের ছিনতাই থেকে আমাদের ঈমান ও হেদায়েতকে রক্ষা করেন।

আব্দুল কাদের জিলানী রহ. এর ঈমানী পরীক্ষা
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রহ. শেষ বয়সে একটি জঙ্গলে বসবাস করছিলেন। তিনি সেখানে মুরাকাবায় মগ্ন ছিলেন। হঠাৎ মেঘের আকৃতিতে আকাশের দিক থেকে একটি নূরের ঝলকানি ছায়াপাত করল এবং সেখান থেকে আওয়াজ আসল- হে আব্দুল কাদের! আমি তোমার খোদা, তুমি মেহনত করে আমার অনেক ইবাদত করেছ, অনেক মুজাহাদা করেছ, অনেক চেষ্টা সাধানা করেছ, অনেক কষ্ট করে আমাকে খুশি করেছ। আমি খুশি হয়ে আজ তোমার উপর থেকে নামায মাফ করে দিলাম, রোযা মাফ করে দিলাম। এমনকি তোমার উপর থেকে দ্বীনের সব আহকামাত রহিত করে দিলাম। আজ থেকে তুমি স্বাধীন। তোমাকে দ্বীনের ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হবে না। তোমার মন যা চায় তা করে বেড়াও। আব্দুল কাদের জিলানী রহ. তাৎক্ষণিক বললেন-

দূর হয়ে যা। তুই অভিশপ্ত শয়তান, ধোঁকাবাজ ইবলিস। আল্লাহর প্রিয় বান্দা আম্বিয়ায়ে কেরামের চেয়ে বেশি কষ্ট সাধনাকারী ইবাদতগুজার বান্দা আর কে হতে পারে? দ্বীনের জন্য মুজাহাদা, রিয়াজত করা তাদের চেয়ে বেশি আর কে আছে করতে পারে? অথচ আল্লাহ তাআলা তাদের থেকে নামায রোযাসহ দ্বীনের কোনো আহকামাত রহিত করেননি। আর আমি কে, যে আমার থেকে তা উঠিয়ে নেয়া হবে? হে আল্লাহ! অভিশপ্ত শয়তান হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
দ্বিতীয়বার আবার আওয়াজ আসল, হে আব্দুল কাদের! প্রায় সত্তর জন আবদাল দুনিয়া হতে অতিবাহিত হয়েছে যাদের শেষ বয়সে আমি ধোঁকা দিয়ে গোমরা করেছি, কিন্তু আজ তোমার ইলম তোমাকে আমার ধোঁকা থেকে বাচিয়েছে। অন্যথায় তুমিও পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। আব্দুল কাদের রহ. দ্বিতীয়বার আবার বললেন-                                        দূর হয়ে যা। জালেম! এটা তোর দ্বিতীয় হামলা। আমার ইলম আমাকে বাঁচাতে পারেনি; বরং আল্লাহর রহমত এবং তার সাহায্য না পেলে আমিও তোর ধোঁকায় পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম।
সুতরাং বুঝা গেল আমাদের হেদায়েত নাকেস বা অপূর্ণাঙ্গ। তাকে পরিপূর্ণ করা আমাদের উচিত। তাছাড়া যতটুকু হেদায়েত আমাদের আছে তাও লুটে নেয়ার সমূহ ভয় রয়েছে। এ জন্য এটা সংরক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্ব। এজন্য আল্লাহ তাআলা সূরা ফাতিহাতে যেমন হেদায়েত চাওয়ার নিয়ম শিখিয়েছেন, সূরা আলে ইমরানেও এভাবে দোআ শিখিয়েছেন-
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ  আমাদের রব! আমাদের অন্তরকে বিপথগামী করো না আমাদের হেদায়েত করার পরে, আর তোমার নিকট থেকে আমাদের করুনা প্রদান কর। নিশ্চয় তুমি নিজেই পরম বদান্য। [সূরা আলে ইমরান : ৮]
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার এবং আমল করার তাওফিক দান করুন আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন