শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আব্বাসীয় শাসনামলে তাদের রাজধানী শহর বাগদাদ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়।


আব্বাসীয় শাসনামলে তাদের রাজধানী শহর বাগদাদ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক শামসুল হকের ভাষায়, 'আব্বাসীয় আমলে (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.) বাগদাদ নগরীর গৌরবের মূলে যেসব কারণ ছিল, তাদের মধ্যে এখানকার সুসমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলো ছিল অন্যতম।' বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে 'বায়তুল হিকমা'র খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। 

‘বায়তুল হিকমা’ বা জ্ঞানের ভবন, যেখানে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই বিশ্ব জ্ঞানবিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মূল্যবান গ্রন্থ সংগ্রহ করে তারা তা আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন। গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র ও শিক্ষা বিষয়ের প্রাধান্য ছিল। বহু নান্দনিক বিখ্যাত গ্রন্থ হারিয়ে যেত যদি না সেগুলো প্রথমে আরবি এবং পরে তুর্কি, ফার্সি, হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হতো। মুসলিম পণ্ডিতেরা প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, রোমান, চীনা, ভারতীয়, পারসি, মিসরীয়, উত্তর আফ্রিকীয়, গ্রিক ও বাইজেন্টাইনীয় সভ্যতা থেকে বহু মূল্যবান জ্ঞান-ভাণ্ডার সংগ্রহ ও সঙ্কলন করেন। 

'বায়তুল হিকমা' গ্রন্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার গ্রন্থ ওই গ্রন্থাগারটিতে সংরক্ষিত ছিল। খলিফা হারুন ও তার উজির বার্মাক ইয়াহিয়া বিন খালিদের উদ্যোগে ফারসি, গ্রিক, মিসরীয়, কালদীয় প্রভৃতি ভাষার বই গ্রন্থাগারটিকে সমৃদ্ধ করেছিল। খলিফা হারুন-অর-রশিদের পর খলিফা আবদুল্লাহ আল মামুনও (৮১৩-৮৩৩ খ্রি.) পিতার মতো বায়তুল হিকমার উন্নয়নে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় বায়তুল হিকমার পরিসর বৃদ্ধি পায়। ওই সময় গ্যালেন, হিপোক্রেটিস, ডায়োস-কোরইডিসের রচনাবলি, প্লেটোর রিপাবলিক এবং এরিস্টটলের ক্যাটেগরিজ, ফিজিঙ্ ও ম্যাগনা মরালিয়াসহ প্রভৃতি গ্রন্থ আরবিতে অনূদিত হয়। খলিফা মামুনের খেলাফতকালে শুধু গ্রিক রচনাবলি অনুবাদ করতেই বায়তুল হিকমা থেকে প্রায় তিন লাখ দিনার ব্যয় করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ওই সময়ে ইসলামের আগের যুগের দুষ্প্রাপ্য সম্পদ, প্রাচীন আরবের কসিদা ও কবিতা, চিঠিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, সন্ধিপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবদুল মুত্তালিবের স্বহস্তলিখনও বায়তুল হিকমাতে সংরক্ষিত ছিল।

বায়তুল হিকমা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিকের মধ্যে সাহল ইবন হারুন, সাঈদ ইবন হারুন এবং সালাম অন্যতম ছিলেন। ওই তিনজন গ্রন্থাগারিককে 'সাহিব' উপাধি প্রদান করা হয়। বীজগণিতের জনক মুহাম্মদ ইবন মুসা আল খারেজমি (৭৮০-৮৫০ খ্রি.)ও খলিফা মামুনের সময় গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রন্থাগার ছাড়াও বায়তুল হিকমার সঙ্গে একটি মানমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই মানমন্দিরে জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা হতো। খ্যাতিমান জ্যোতির্বিদ ইয়াহিয়া ওই মানমন্দিরে গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন।

-- আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার একটি নিবন্ধ ও ইন্টারনেট অবলম্বনে


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন