জন্ম নিয়ন্ত্রণের যে আন্দোলন ইদানিং খুব জোরে শোরে চলছে, এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে কার্যত বাস্তায়ন করার পূর্বে তিনটি কষ্টি পাথর খুব ভালভাবে পরখ করে নেয়া উচিৎ।
এক, সর্ব প্রথম আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ, যে মতবাদ আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি তা ইসলামের সেসব মূলনীতির বিপরীত তো নয় যা মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পথের দিশা প্রদান করে।
দুই, আমাদের এটাও চিন্তা করা উচিৎ যে এই আন্দোলন বিবেকের বিচারে গ্রহণযোগ্য কিনা?
তিন, এরপর আমাদের আশেপাশে দৃষ্টি মেলে দেখা উচিৎ যে এই মতবাদ কোথাও বাস্তÍবায়ন হয়েছে কিনা? যদি কোথাও বাস্তবায়ন হয়ে থাকে তাহলে এর ফলাফল কীরূপ হয়েছিল?
দুই, আমাদের এটাও চিন্তা করা উচিৎ যে এই আন্দোলন বিবেকের বিচারে গ্রহণযোগ্য কিনা?
তিন, এরপর আমাদের আশেপাশে দৃষ্টি মেলে দেখা উচিৎ যে এই মতবাদ কোথাও বাস্তÍবায়ন হয়েছে কিনা? যদি কোথাও বাস্তবায়ন হয়ে থাকে তাহলে এর ফলাফল কীরূপ হয়েছিল?
তাই আমি জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উক্ত তিনটি বিষয়েই আলাদাভাবে স্বারগর্ভ আলোচনা করব। যেন আলোচ্য বিষয়টি সংশয়হীনভাবে বিস্তারিত আমাদের সামনে উঠে আসে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের ইসলামী বিধান:
জন্ম নিয়ন্ত্রণের ইসলামী বিধান:
ইসলামি শরিয়াতের ভিত্তি হলো পবিত্র কোরআন ও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে নিসৃত বাণী তথা আল-হাদীস। জন্ম নিয়ন্ত্রণ কোন নতুন বিষয় নয় । বরং বিভিন্ন প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পন্থায় সব যুগে, সবদেশেই এর পর্যালোচনা লক্ষণীয়। নববী যুগ ও কোরআন নাযিলের সময়ও এর বিভিন্ন দিক বিভিন্ন কারন ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে আলোচনা পাওয়া যায়। এ ব্যপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এ প্রশ্নগুলোই করা হলে তাঁর পবিত্র জবানে এর সুন্দর সমাধান প্রদান করেন। একজন মুসলমান তার যাবতীয় সমস্যার সমাধান চাইলে এটাই এর যথার্থ সমাধান। এর আলোকেই কোন বিষয়ের শরয়ী দিক নির্ণয় হতে পারে। পবিত্র কোরআন ও হাদীস গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে উক্ত বিষয়টির দুটি দিক সামনে আসে।
একটি হলো “স্হায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ” অর্থাৎ এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যার দরুন সারা জীবনের জন্য পুরুষ তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
দ্বিতীয়টি হলো “সাময়িক জন্ম বিরতিকরণ” অর্থাৎ পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা অক্ষুন্ন রেখে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা যার দ্বারা সন্তান জন্মনো সাময়িকভাবে বাধা প্রাপ্ত হয়। আমি এই উভয় বিষয়ের উপর কোরআন হাদীস এর ব্যাখ্যা বিশদভাবে তুলে ধরছি যাতে মাসআলাটি বুঝতে ও এর ফলাফল বের করতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ না থাকে।
একটি হলো “স্হায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ” অর্থাৎ এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যার দরুন সারা জীবনের জন্য পুরুষ তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
দ্বিতীয়টি হলো “সাময়িক জন্ম বিরতিকরণ” অর্থাৎ পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা অক্ষুন্ন রেখে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা যার দ্বারা সন্তান জন্মনো সাময়িকভাবে বাধা প্রাপ্ত হয়। আমি এই উভয় বিষয়ের উপর কোরআন হাদীস এর ব্যাখ্যা বিশদভাবে তুলে ধরছি যাতে মাসআলাটি বুঝতে ও এর ফলাফল বের করতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ না থাকে।
স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
এর যে পদ্ধতি খোলাফায়ে রাশেদার যুগে প্রচলিত ছিলো তা হলো “ইখতেসা” (ভেসেকটমি) তথা পুরুষ স্বীয় অন্ডকোষ কর্তণ করে ফেলে দিয়ে চিরতরে বিলুপ্ত করে দেয়া । হাদীস শরীফে এসেছে, এব্যাপারে রাসূলের দরবারে কয়েকটি প্রশ্ন উথ্যাপিত হয়, সব প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) একাজ কঠোর ভাষায় নিষেধ ও হারাম সাব্যস্ত করে দেন।
এর একটি ঘটনা ছহীহ বুখারীতে “বাবু মা য়ূকরাহু মিনাত্তাবাত্তুল ওয়াল খিসা” অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে,আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জিহাদে যেতাম, যৌবনের তাড়নায় যৌনত্তেজনা আমাদের খুব অস্থির করে তুলত আর এজন্য আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট “এখতেসা” তথা অন্ডকোষ কেটে ফেলার অনুমতি প্রার্থনা করলাম যাতে এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে পুরোপুরি জিহাদে মনোযোগী হতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এর থেকে কঠোরভাবে বারন করলেন। আর এই কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
“হে মুমিনগন তোমরা আল্লাহ কর্তৃক সে সকল পবিত্র বস্তুসমূহকে নিজের উপর হারাম করোনা যেগুলো তিনি তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, আর সীমালংঘন করোনা, কেননা আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেননা।”(সহীহ বুখারী ৭৫৯)
উক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় যে এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা, যার দ্বারা যৌন চাহিদা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তা নাজায়েজ ও হারাম, চাই এতে যত রকম উপকারিতার কথা বলা হোকনা কেন!
দ্বিতীয়ত : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) দারিদ্রতার কারণে বিবাহ করা ও হকসমূহ আদায় করার মত তাঁর নিকট কিছুই ছিলনা। এ কারনে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট “ইখতেসা” এর অনুমতি চান যেন জৈবিক চাহিদা দূর হয়ে যায় এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ভয় থেকে রেহাই পেয়ে যান।
এ উভয় হাদীস থেকে বোঝা যায় স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ হালালকে হারাম সাব্যস্ত করা এবং আল্লাহর বাণীর বিরুদ্ধাচরন অর্থাৎ সীমালংঘন করার কারনে হারাম। উভয় সাহাবীর উযর শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ থাকা সত্তেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইখতেসার হুকুম দেননি।
তৃতীয়ত : এমনই আরেকটি প্রশ্ন করেছিলেন হযরত উসমান বিন মাযউন (রাঃ) তাঁর আকাংক্ষা ছিল যে, কোন উপায়ে জৈবিক চাহিদাকে মিটিয়ে দিয়ে সার্বক্ষনিক ইবাদাত ও আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন, তাঁকেও রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন এবং বেশী পরিমানে রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
হাফেজ ইবনে আব্দুল র্বা (রহি.) “আল-ইসতিয়াব” কিতাবে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, হযরত আলী ও আবু যর গিফারী (রাঃ) থেকেও একই রকম প্রশ্নোত্তর তিনি তাতে উল্লেখ করেছেন। এতে বোঝা গেল, এমন কোন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা যাতে জৈবিক চাহিদা চিরতরে শেষ হয়ে যায় ও সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা লোপ পায় নিঃশর্ত হারাম ও নাজায়েয তাতে যতই উকার নিহিত থাকুক না কেন! আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রাহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق
অর্থ্যাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি অবলম্বন সর্ব সম্মতক্রমে হারাম।
এর যে পদ্ধতি খোলাফায়ে রাশেদার যুগে প্রচলিত ছিলো তা হলো “ইখতেসা” (ভেসেকটমি) তথা পুরুষ স্বীয় অন্ডকোষ কর্তণ করে ফেলে দিয়ে চিরতরে বিলুপ্ত করে দেয়া । হাদীস শরীফে এসেছে, এব্যাপারে রাসূলের দরবারে কয়েকটি প্রশ্ন উথ্যাপিত হয়, সব প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) একাজ কঠোর ভাষায় নিষেধ ও হারাম সাব্যস্ত করে দেন।
এর একটি ঘটনা ছহীহ বুখারীতে “বাবু মা য়ূকরাহু মিনাত্তাবাত্তুল ওয়াল খিসা” অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে,আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জিহাদে যেতাম, যৌবনের তাড়নায় যৌনত্তেজনা আমাদের খুব অস্থির করে তুলত আর এজন্য আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট “এখতেসা” তথা অন্ডকোষ কেটে ফেলার অনুমতি প্রার্থনা করলাম যাতে এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে পুরোপুরি জিহাদে মনোযোগী হতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এর থেকে কঠোরভাবে বারন করলেন। আর এই কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
“হে মুমিনগন তোমরা আল্লাহ কর্তৃক সে সকল পবিত্র বস্তুসমূহকে নিজের উপর হারাম করোনা যেগুলো তিনি তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, আর সীমালংঘন করোনা, কেননা আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেননা।”(সহীহ বুখারী ৭৫৯)
উক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় যে এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা, যার দ্বারা যৌন চাহিদা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তা নাজায়েজ ও হারাম, চাই এতে যত রকম উপকারিতার কথা বলা হোকনা কেন!
দ্বিতীয়ত : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) দারিদ্রতার কারণে বিবাহ করা ও হকসমূহ আদায় করার মত তাঁর নিকট কিছুই ছিলনা। এ কারনে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট “ইখতেসা” এর অনুমতি চান যেন জৈবিক চাহিদা দূর হয়ে যায় এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ভয় থেকে রেহাই পেয়ে যান।
এ উভয় হাদীস থেকে বোঝা যায় স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ হালালকে হারাম সাব্যস্ত করা এবং আল্লাহর বাণীর বিরুদ্ধাচরন অর্থাৎ সীমালংঘন করার কারনে হারাম। উভয় সাহাবীর উযর শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ থাকা সত্তেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইখতেসার হুকুম দেননি।
তৃতীয়ত : এমনই আরেকটি প্রশ্ন করেছিলেন হযরত উসমান বিন মাযউন (রাঃ) তাঁর আকাংক্ষা ছিল যে, কোন উপায়ে জৈবিক চাহিদাকে মিটিয়ে দিয়ে সার্বক্ষনিক ইবাদাত ও আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন, তাঁকেও রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন এবং বেশী পরিমানে রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
হাফেজ ইবনে আব্দুল র্বা (রহি.) “আল-ইসতিয়াব” কিতাবে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, হযরত আলী ও আবু যর গিফারী (রাঃ) থেকেও একই রকম প্রশ্নোত্তর তিনি তাতে উল্লেখ করেছেন। এতে বোঝা গেল, এমন কোন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা যাতে জৈবিক চাহিদা চিরতরে শেষ হয়ে যায় ও সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা লোপ পায় নিঃশর্ত হারাম ও নাজায়েয তাতে যতই উকার নিহিত থাকুক না কেন! আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রাহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق
অর্থ্যাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি অবলম্বন সর্ব সম্মতক্রমে হারাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন