প্রিয় পাঠক, রমাদান মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। রামাদান মাসে একজন মুমিনের করনীয় আমলগুলোর (৮ম পর্ব) আজকে দেয়া হলঃ
(৩৩) যাকাত আদায় করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার যাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপ সৃষ্টি করা হবে, যার দুটি চোঁয়াল থাকবে, যা দ্বারা সে তাকে কিয়ামতের দিন পেঁছিয়ে ধরবে, অতঃপর তার দু’চোয়াল পাকড়ে বলবে: আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধন”। (বুখারি: ৮৪০৩)
(৩৪) ইতেকাফ করাঃ ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। রামাদান মাসের শেষ দশদিন ইতেকাফে বসা অতি উত্তম ইবাদাত। ইতেকাফ করা সুন্নাত।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]।
(৩৫) রামাদানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করাঃ রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আল-কুরআনের ঘোষণা, ‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রিতে (নামাযে) দাঁড়ায়, তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০২)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের শেষ দশ রাতে নিজে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকতেন এবং পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের শেষ দশদিনে আল্লাহর ইবাদাতে এতটা পরিশ্রম করতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৫)
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘‘যখন রামাদানের শেষ দশদিন এসে যেত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরনের কাপড় মজবুত করে বাঁধতেন। (অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুতি নিতেন) এবং নিজে রাত্রে জাগতেন এবং পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৪)
সুবহানাল্লাহ। প্রিয় বন্ধু আজকের পর্ব দিয়েই শেষ করলাম রমাদান মাসে করনীয় আমলের বিষয়গুলো। আল্লাহ, আমাদের সকলকে রমাদানের প্রতিটি করনীয় এবং বর্জনীয় আমল পরিপূর্ণভাবে করার তৌফিক দান করুক। আমীন...।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন