১.লুত আলাইহিস সালাম এর জাতি পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বসবাস করতো এ সম্পর্কে বর্তমানকালের গবেষকগণ বলেন, ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী এক স্থানে তারা বসবাস করতো। যাকে বর্তমনে ট্রান্সজর্দান বা ধুমজর্দান বলে।বাইবেল এই অঞ্চলের নাম বলেছে সুদুম। বর্তমান যে সাগরকে মৃত সাগর বা ডেডসি বলা হয় এর আশে পাশে কোথাও অবস্থিত ছিল বর্ণনা করা হয়।
২.লুত আলাইহিস সালাম এর জাতি তাদের প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রার সঙ্গে হয়ে উঠে বেপরোয়া। সমাজ জীবনে তারা জুলুম-অত্যাচার, মারামারি, নির্লজ্জতা ও কুকর্মের ক্ষেত্রে এ যুগের সকল জাতিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ জাতির চরিত্র ছিল অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। পৃথিবীতে পরিচিত এবং অপরিচিত অপরাধ ও এমন কোন অপরাধ নেই যা সেই জাতির ভিতর ছিল না। অন্যায় আর বেহায়াপনার সাগরে নিমজ্জিত ছিল সেই জাতি। সে সময় তারা আরো একটি অপরাধ অবিষ্কার করেছিল যা তখন পর্যন্ত কোন জাতির লোক এমন অপরাধের সাথে পরিচিত ছিল না। পবিত্র কোরআন হতে জানা যায় যে, তখন পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষ জানতো না, এই ধরনের কোন কু-কর্ম করা যায়।
৩.লূত আলাইহিস সালাম এর জাতিই সেই কুকর্মের জন্ম দিয়েছিল। সে কু-কর্মের নাম হলো সমকাম-ইংরেজিতে যাকে হোমোসেক্স বলে। সে জাতির পুরুষেরা নারীর সাথে যৌনক্রিয়া করার চেয়ে পুরুষে পুরুষে রতিক্রিয়া করতে অধিক আগ্রহী ছিল। এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। সুন্দরী নারীকে ত্যাগ করে তারা পুরুষের সাথে রতিক্রিয়া করতো।
৪.আজ হতে হাজার হাজার বছর পূর্বে এমন একটি জাতি এই ঘৃনিত ও জঘন্য প্রথার আবিষ্কার করেছিল, বর্তমান যুগের সভ্যতাগর্বী মানুষেরা যে জাতিকে অজ্ঞ অশিক্ষিত আর মূখ ছাড়া আর কিছুই বলেনা। কিন্তু সেই অজ্ঞ অশিক্ষিত ও মূর্খ জাতি কর্তৃক আবিষ্কৃত ঘৃণিত ও জঘন্য কর্ম সমকামকে বর্তমানের সভ্যতা গর্বিত মানুষ আনন্দের সাথে স্বাগত জানিয়েছে!!!
৫.আসমানী গযবের কবলে লুত আলাইহিস সালাম এর জাতি :
যেসব জাতির উপরে মহান আল্লাহ আসমানী গযন নাযিল করেছিলেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, কেন তাদের উপর গযব নাযিল করা হযেছিল, তাদরে অপরাধ কি ছিল তা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। লুত আলাইহিস সালাম এর জাতিকে কি কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন : " আর লূতকে আমি নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছি। তারপর স্মরণ করো যখন সে নিজ জাতির লোকদেরকে বললো, তোমরা কি এতদূর নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছো যে, তোমরা এমন সব নির্লজ্জতার কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রী লোকদেরকে ত্যাগ করে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা পুরন করে নিচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী জাতি। কিন্তু তার জাতির লোকদের জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, বের করে দাও এই লোকদেরকে তাদের নিজেদের জনপদ হতে, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র বলে দাবী করে। শেষ পর্যন্ত লূত ও তার ঘরের লোকদেরকে তার স্ত্রী ব্যাতিত যে পছন্দের লোকদের সাথে রয়ে গিয়েছিল, বেছে বের করে নিলাম। সেই জাতির লোকদের উপর এক প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। এরপর দেখ ওদের সেই অপরাধী লোকদের কি পরিণাম হলো। (সূরা আরাফ : ৮০-৮৪)
মহান আল্লাহ পাক সমগ্র জীব জাতীর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষের পার্থক্য রেখেছেন কেবলমাত্র বংশ রক্ষার উদ্দেশ্যেই নয় মানবজাতির ক্ষেত্রে এর পেছনে আরেকটি অতিরিক্ত উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। তা হলো এই যে, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে মিলে পরিবার গঠন করবে এবং তার ভিত্তিতে গড়বে সমাজ এবং সভ্যতা।
৬. গযবের ফেরেশতার আগমন :
এ প্রসঙ্গে কুরআন বলতেছে, "ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, হে ফেরেশতাগণ আপনারা কোন অভিযানে আগমন করেছেন? তারা উত্তর দিল, আমরা এক অপরাধি জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছি-যেন আমরা তাদের প্রতি পাক মাটির পাথর বর্ষণ করি। যা আপনার প্রতিপালক এর সীমা লংঘনকারীদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। পরে আমি সে সব লোকদেরকে বের করে দিলাম, যারা এই জনপদে মুমিন ছিল"। (সূরা যারিয়াত : ৩১-৩৫)
অবশেষে আযাবের ফেরেশতাগন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সাথে দেখা করে লুত আলাইহিস সালাম এর জাতির আবাসস্থল সুদুমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তারা অপূর্ব সুন্দর চেহারার কিশোর বালক বা তরুনের আকৃতি ধারণ করে লুত আলাইহিস সালাম এর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন আল্লাহর নবী মেহমানদের দেখে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন।
ইতিমধ্যে তার জাতির লোকজন জানতে পারলো যে, এমন কয়েকজন অদ্ভুত সুন্দর চেহারার তরুন তাদের শত্রু লুতের বাড়িতে এসেছে। তারা দলবদ্ধভাবে এসে লূত আলাইহিস সালাম এর বাড়ি ঘেরাও করলো। তারা তরুনদেরকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বারবার দাবি করতে লাগলো, অন্যথায় তারা শক্তি প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে নেওয়ারও হুমকি দিল। লুত আলাইহিস সালাম তাদের বুঝালেন এবং বললেন, এই দেশে সুন্দর নারীর অভাব নেই। আমরাও মেয়ে রয়েছে, যাকে ইচ্ছে করলে তোমরা বিয়ে করে স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে পার।
কিন্তু সুদুম জাতির লোকজন নবীর কোন যুক্তিই গ্রহণ করলো না। তারা শেষে সময় বেধে দিল, এই সময়ের মধ্যে সুন্দর তরুনদেরকে তাদের হাতে তুলে না দিলে তারা জোর করে বাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।
৭.রাতের এক অংশে যখন অপরাধী জাতি গভীর সুসুপ্তিতে নিমগ্ন ছিল, এমন সময় আল্লাহর ফয়সালা কর্যকর হয়ে গেলো। ভয়ংকর একটা গর্জন হলো, গোটা এলাকাটিকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে তা উল্টিয়ে ফেলে দেয়া হলো। উপর হতে পাথর নিক্ষেপ করে গোটা জনপদ নিশ্চিহৃ করে দেয়া হলো। অপরাধী জাতি তাদের অপরাধের বিনিময় এভাবেই আল্লাহর নিকট থেকে লাভ করেছিল।
৮.কেয়ামত পর্যন্ত যে মানব সভ্যতা এই পৃথিবীকে আবাদ করতে থাকবে, তাদের শিক্ষার জন্যই আল্লাহ সুদুম জাতির ধ্বংসের চিত্র পবিত্র কুরআনে একে দিয়েছেন। আল্লাহ সুদুম জাতির ইতিহাস এভাবে বর্ননা করেছেন-
"ফেরেশ্তাগণ যখন লুত আলাইহিস সালাম-পরিবারের নিকট আসিল, তখন লুত আলাইহিস সালাম বলিলেন, 'তোমরাতো অপরিচিত লোক'। তাহারা বলিল, 'না, উহারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তাহাই লইয়া আসিয়াছি। আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ লইয়া আসিয়াছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী। সুতরাং আপনি রাত্রির কোন এক সময়ে আপনার পরিবারবর্গসহ বাহির হইয়া পড়ুন এবং আপনি তাহাদের পশ্চাদানুসরণ করুন এবং আপনাদের মধ্যে কেহ যেন পিছন দিকে না তাকায়; আপনাদের যেখানে যাইতে বলা হইতেছে তোমরা সেখানে চলিয়া যান।" আমি তাহাকে এই বিষয়ে ফয়সালা জানাইয়া দিলাম যে, প্রত্যুষে উহাদের সমুলে বিনাশ করা হইবে। নগরবাসীগণ উল্লসিত হইয়া উপস্থিত হইল। তিনি বলিলেন, 'উহারা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইযযত করিওনা। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে হেয় করিও না।" উহারা বলিল, "আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনাই ?" লূত আলাইহিস সালাম বলিল, " একান্তই যদি তোমরা কিছু করিতে চাও তবে আমার এই কণ্যাগণ রহিয়াছে"। তোমার জীবনের শপথ, উহারা তো মত্ততায় বিমূঢ় হইয়াছে। অত:পর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল; আর আমি জনপদকে উল্টাইয়া উপর নীচ করিয়া দিলাম এবং উহাদের উপর প্রস্তর-কংকর বর্ষণ করিলাম। অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন রহিয়াছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যাক্তিদের জন্য। উহা তো লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই ইহাতে মুমিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন। (সুরা নাহল : ৬১-৭৭)।
ধ্বংস প্রাপ্ত এই এলাকাটি লোক চলাচলের পথের পাশে অবস্থিত, হিজাজ থেকে সিরিয়া এবং ইরাক হতে মিসর যাবার পথে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটি দেখা যায়। সাধারণত বাণিজ্য যাত্রীদল এ ধ্বংসের নিদর্শনগুলো দেখে থাকে। বার্তমানেও সমগ্র এলাকা জুড়ে এ ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
তাহলে যেসকল কাফিরেরা সমকাম এর মত জঘন্য কাজিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তাদের পরিনতি কি হবে ?
লুত জাতির মতই ধ্বংস।
২.লুত আলাইহিস সালাম এর জাতি তাদের প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রার সঙ্গে হয়ে উঠে বেপরোয়া। সমাজ জীবনে তারা জুলুম-অত্যাচার, মারামারি, নির্লজ্জতা ও কুকর্মের ক্ষেত্রে এ যুগের সকল জাতিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ জাতির চরিত্র ছিল অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। পৃথিবীতে পরিচিত এবং অপরিচিত অপরাধ ও এমন কোন অপরাধ নেই যা সেই জাতির ভিতর ছিল না। অন্যায় আর বেহায়াপনার সাগরে নিমজ্জিত ছিল সেই জাতি। সে সময় তারা আরো একটি অপরাধ অবিষ্কার করেছিল যা তখন পর্যন্ত কোন জাতির লোক এমন অপরাধের সাথে পরিচিত ছিল না। পবিত্র কোরআন হতে জানা যায় যে, তখন পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষ জানতো না, এই ধরনের কোন কু-কর্ম করা যায়।
৩.লূত আলাইহিস সালাম এর জাতিই সেই কুকর্মের জন্ম দিয়েছিল। সে কু-কর্মের নাম হলো সমকাম-ইংরেজিতে যাকে হোমোসেক্স বলে। সে জাতির পুরুষেরা নারীর সাথে যৌনক্রিয়া করার চেয়ে পুরুষে পুরুষে রতিক্রিয়া করতে অধিক আগ্রহী ছিল। এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। সুন্দরী নারীকে ত্যাগ করে তারা পুরুষের সাথে রতিক্রিয়া করতো।
৪.আজ হতে হাজার হাজার বছর পূর্বে এমন একটি জাতি এই ঘৃনিত ও জঘন্য প্রথার আবিষ্কার করেছিল, বর্তমান যুগের সভ্যতাগর্বী মানুষেরা যে জাতিকে অজ্ঞ অশিক্ষিত আর মূখ ছাড়া আর কিছুই বলেনা। কিন্তু সেই অজ্ঞ অশিক্ষিত ও মূর্খ জাতি কর্তৃক আবিষ্কৃত ঘৃণিত ও জঘন্য কর্ম সমকামকে বর্তমানের সভ্যতা গর্বিত মানুষ আনন্দের সাথে স্বাগত জানিয়েছে!!!
৫.আসমানী গযবের কবলে লুত আলাইহিস সালাম এর জাতি :
যেসব জাতির উপরে মহান আল্লাহ আসমানী গযন নাযিল করেছিলেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, কেন তাদের উপর গযব নাযিল করা হযেছিল, তাদরে অপরাধ কি ছিল তা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। লুত আলাইহিস সালাম এর জাতিকে কি কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন : " আর লূতকে আমি নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছি। তারপর স্মরণ করো যখন সে নিজ জাতির লোকদেরকে বললো, তোমরা কি এতদূর নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছো যে, তোমরা এমন সব নির্লজ্জতার কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রী লোকদেরকে ত্যাগ করে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা পুরন করে নিচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী জাতি। কিন্তু তার জাতির লোকদের জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, বের করে দাও এই লোকদেরকে তাদের নিজেদের জনপদ হতে, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র বলে দাবী করে। শেষ পর্যন্ত লূত ও তার ঘরের লোকদেরকে তার স্ত্রী ব্যাতিত যে পছন্দের লোকদের সাথে রয়ে গিয়েছিল, বেছে বের করে নিলাম। সেই জাতির লোকদের উপর এক প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। এরপর দেখ ওদের সেই অপরাধী লোকদের কি পরিণাম হলো। (সূরা আরাফ : ৮০-৮৪)
মহান আল্লাহ পাক সমগ্র জীব জাতীর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষের পার্থক্য রেখেছেন কেবলমাত্র বংশ রক্ষার উদ্দেশ্যেই নয় মানবজাতির ক্ষেত্রে এর পেছনে আরেকটি অতিরিক্ত উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। তা হলো এই যে, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে মিলে পরিবার গঠন করবে এবং তার ভিত্তিতে গড়বে সমাজ এবং সভ্যতা।
৬. গযবের ফেরেশতার আগমন :
এ প্রসঙ্গে কুরআন বলতেছে, "ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, হে ফেরেশতাগণ আপনারা কোন অভিযানে আগমন করেছেন? তারা উত্তর দিল, আমরা এক অপরাধি জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছি-যেন আমরা তাদের প্রতি পাক মাটির পাথর বর্ষণ করি। যা আপনার প্রতিপালক এর সীমা লংঘনকারীদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। পরে আমি সে সব লোকদেরকে বের করে দিলাম, যারা এই জনপদে মুমিন ছিল"। (সূরা যারিয়াত : ৩১-৩৫)
অবশেষে আযাবের ফেরেশতাগন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সাথে দেখা করে লুত আলাইহিস সালাম এর জাতির আবাসস্থল সুদুমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তারা অপূর্ব সুন্দর চেহারার কিশোর বালক বা তরুনের আকৃতি ধারণ করে লুত আলাইহিস সালাম এর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন আল্লাহর নবী মেহমানদের দেখে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন।
ইতিমধ্যে তার জাতির লোকজন জানতে পারলো যে, এমন কয়েকজন অদ্ভুত সুন্দর চেহারার তরুন তাদের শত্রু লুতের বাড়িতে এসেছে। তারা দলবদ্ধভাবে এসে লূত আলাইহিস সালাম এর বাড়ি ঘেরাও করলো। তারা তরুনদেরকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বারবার দাবি করতে লাগলো, অন্যথায় তারা শক্তি প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে নেওয়ারও হুমকি দিল। লুত আলাইহিস সালাম তাদের বুঝালেন এবং বললেন, এই দেশে সুন্দর নারীর অভাব নেই। আমরাও মেয়ে রয়েছে, যাকে ইচ্ছে করলে তোমরা বিয়ে করে স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে পার।
কিন্তু সুদুম জাতির লোকজন নবীর কোন যুক্তিই গ্রহণ করলো না। তারা শেষে সময় বেধে দিল, এই সময়ের মধ্যে সুন্দর তরুনদেরকে তাদের হাতে তুলে না দিলে তারা জোর করে বাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।
৭.রাতের এক অংশে যখন অপরাধী জাতি গভীর সুসুপ্তিতে নিমগ্ন ছিল, এমন সময় আল্লাহর ফয়সালা কর্যকর হয়ে গেলো। ভয়ংকর একটা গর্জন হলো, গোটা এলাকাটিকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে তা উল্টিয়ে ফেলে দেয়া হলো। উপর হতে পাথর নিক্ষেপ করে গোটা জনপদ নিশ্চিহৃ করে দেয়া হলো। অপরাধী জাতি তাদের অপরাধের বিনিময় এভাবেই আল্লাহর নিকট থেকে লাভ করেছিল।
৮.কেয়ামত পর্যন্ত যে মানব সভ্যতা এই পৃথিবীকে আবাদ করতে থাকবে, তাদের শিক্ষার জন্যই আল্লাহ সুদুম জাতির ধ্বংসের চিত্র পবিত্র কুরআনে একে দিয়েছেন। আল্লাহ সুদুম জাতির ইতিহাস এভাবে বর্ননা করেছেন-
"ফেরেশ্তাগণ যখন লুত আলাইহিস সালাম-পরিবারের নিকট আসিল, তখন লুত আলাইহিস সালাম বলিলেন, 'তোমরাতো অপরিচিত লোক'। তাহারা বলিল, 'না, উহারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তাহাই লইয়া আসিয়াছি। আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ লইয়া আসিয়াছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী। সুতরাং আপনি রাত্রির কোন এক সময়ে আপনার পরিবারবর্গসহ বাহির হইয়া পড়ুন এবং আপনি তাহাদের পশ্চাদানুসরণ করুন এবং আপনাদের মধ্যে কেহ যেন পিছন দিকে না তাকায়; আপনাদের যেখানে যাইতে বলা হইতেছে তোমরা সেখানে চলিয়া যান।" আমি তাহাকে এই বিষয়ে ফয়সালা জানাইয়া দিলাম যে, প্রত্যুষে উহাদের সমুলে বিনাশ করা হইবে। নগরবাসীগণ উল্লসিত হইয়া উপস্থিত হইল। তিনি বলিলেন, 'উহারা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইযযত করিওনা। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে হেয় করিও না।" উহারা বলিল, "আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনাই ?" লূত আলাইহিস সালাম বলিল, " একান্তই যদি তোমরা কিছু করিতে চাও তবে আমার এই কণ্যাগণ রহিয়াছে"। তোমার জীবনের শপথ, উহারা তো মত্ততায় বিমূঢ় হইয়াছে। অত:পর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল; আর আমি জনপদকে উল্টাইয়া উপর নীচ করিয়া দিলাম এবং উহাদের উপর প্রস্তর-কংকর বর্ষণ করিলাম। অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন রহিয়াছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যাক্তিদের জন্য। উহা তো লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই ইহাতে মুমিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন। (সুরা নাহল : ৬১-৭৭)।
ধ্বংস প্রাপ্ত এই এলাকাটি লোক চলাচলের পথের পাশে অবস্থিত, হিজাজ থেকে সিরিয়া এবং ইরাক হতে মিসর যাবার পথে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটি দেখা যায়। সাধারণত বাণিজ্য যাত্রীদল এ ধ্বংসের নিদর্শনগুলো দেখে থাকে। বার্তমানেও সমগ্র এলাকা জুড়ে এ ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
তাহলে যেসকল কাফিরেরা সমকাম এর মত জঘন্য কাজিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তাদের পরিনতি কি হবে ?
লুত জাতির মতই ধ্বংস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন