সালাহুদ্দীন মাসউদ
প্রতিটি শিশুই বড়দের কাছে আদর পাওয়ার দাবি রাখে। সৃষ্টিগতভাবে আমার শিশু যেমন আমার আদর পেলে খুশি হয়, অন্যকেউ আদর দিলেও সে খুশি হয় ঠিক তেমনি যে শিশু আমার সন্তান নয়, সেও তার পিতা মাতার কাছে যেমন আদরের চাহিদা রাখে, অন্যের কাছেও তার আদর পাওয়ার চাহিদা রয়েছে। এ জন্য প্রত্যেকটি শিশুকেই আদর করতে হবে। এটা আমাদের নবীজির সা. শিক্ষা। বিশ্বনবি সা. মানবকুলের আদর্শ। নবিজি সা. বিশ্বের তাবৎ কর্মের দিকনির্দেশনার সঙ্গে শিশুদের ভালবাসার শিক্ষাও দিয়েছেন।
মুসলিম শরিফে এসেছে, একদা রাসুল সা. এর কাছে হজরত আকরা ইবনে হাবেস রা. উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একটু কঠিন প্রকৃতির মানুষ। তিনি রাসুল সা. কে দেখলেন হাসান ও হুসাইন রা. কে চুম্বন করছেন। স্বগতোক্তিতে তিনি বললেন, আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের চুম্বন করেন? আল্লাহর কসম! আমার দশজন সন্তান আছে আজ পর্যন্ত আমি তাদের কাউকে চুম্বন করিনি। রাসুল সা. কিছুটা রাগত স্বরে বললেন, তোমার অন্তর থেকে দয়ামায়া উঠে গেলে আমি কি করতে পারি?
অনেকেকেই শিশুদের সাথে কঠোর আচরণ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ ভাবে যে, শিশুদের কঠোরভাবে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। বিষয়টি নিতান্তই ভুল। বাচ্চাদেরও বুঝিয়ে শেখাতে হয়। এতে সে বিষয়টিকে মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে সক্ষম হয়। আমাদের নবিজি সা. এভাবেই বাচ্চাদের শেখাতেন।
হযরত জাবের বিন সামুরাহ রা. তখন শিশু ছেলে। তিনি বলেন, রাসুল সা. এর সাথে একবার ফজরের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে রাসুল সা. বের হলেন। বাইরেই সাক্ষাৎ হল কিছু বালকের সাথে। রাসুল সা. এক এক করে প্রত্যেক বালককে আদর করে চেহারায় হাত বুলাচ্ছেন। আমার চেহারায় ও তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন আমি তার হাত শুঁকে দেখলাম। মনে হল যেন তার হাতখানা এই মাত্র কোন আতরের সমুদ্র থেকে বের করা হয়েছে। তিনি তার গালে রাসুল সা. এর হস্ত স্পর্শের কথা ভুলে যাননি।
বিশ্বনবি সা. শুধু শিশুদের পছন্দ করতেন তাই নয়, একইসাথে তিনি অন্যদের বাস্তবে দেখিয়ে দিতেন, কিভাবে শিশুদের শ্রদ্ধা করতে হয়? তিনি বলতেন, ‘তোমরা শিশুদের শ্রদ্ধা কর এবং তাদের প্রতি দয়ালু হও।’ রাসূল সা. শিশুদের সাথে খেলতেন এবং এমনকি তাদের খেলনা ও পোষা প্রাণীরও খবর নিতেন? তিনি তাঁদের সাথে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে ও নিচু কণ্ঠে কথা বলতেন? বিশেষ করে নাতি ইমাম হাসান ও হোসাইনের প্রতি রাসুলের ভালোবাসা ও স্নেহের কথা সর্বজনবিদিত? তিনি হাসান ও হোসাইনকে শুধু দয়ালু নানা হিসেবেই আদর করতেন নয়, তাঁদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল আধ্যাত্মিক এবং মহান আল্লাহর নির্দেশ থেকে উৎসারিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন