জুমুআর পূর্বে দুই খুতবা দিতে হয়। খুতবার ভাষা নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। স্থানীয় ভাষায় হবে, নাকি আরবি ভাষায়?
দালিলিক কোনো আলোচনায় যাব না। দুনো পক্ষের দলিল-প্রমাণ সবিস্তারে পড়েছি। প্রবন্ধও লিখেছি ও লিখিয়েছি- আলহামদুলিল্লাহ।
দুপক্ষের লোকজনের কাছে বিনীত দুয়েকটি আরজ :
বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদে আরবিতে খুতবা হয়। আমিও নীতিগতভাবে আরবি খুতবার পক্ষে।
খুতবার পূর্বে বয়ান বা ওয়াজ হয়। বাংলা ভাষায়। খতিব সাহেব বয়ানের পর ভুলে এক খুতবা দিয়ে নামায পড়ালেন। প্রশ্ন হল, নামায শুদ্ধ হবে কিনা?
সবাই উত্তর দিতে বাধ্য যে, নামায হয়ে যাবে। বয়ানকে প্রথম খুতবা ধরা হবে।
খুতবা মানেই তো বয়ান বা ওয়াজ। খুতবার পূর্বে কীসের বয়ান আবার?
তাও মিম্বরে বসে?
খুতবা তো বসেও জায়েয। মাকরুহ হবে।
মিম্বরে বসে বা দাঁড়িয়ে বয়ান করলে তা খুতবা হওয়া প্রায় নিশ্চিত। যদি তাই হয় তাহলে বয়ানের পর আরো দুটি খুতবা। এ হিসেবে তিনটি খুতবা হয়ে গেল। এটাকে বিদআত আখ্যায়িত করা যায় না?
বয়ানের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
তাই বয়ান করতে হলে মিম্বরের বাইরে চেয়ারে বা অন্য কোথাও বয়ান করা উচিত।
ভারত ও পাকিস্তানে জুমুআর খুতবার আগে কোনো বয়ান হয় না। স্বয়ং দারুল উলুম দেওবন্দে নিজ চোখে দেখেছি কোনো বয়ান হয় না। দুটি আরবি খুতবা হয়।
.
যারা বাংলায় খুতবা দেন তাদের যুক্তি দারুণ। কিন্তু ঐতিহাসিক কোনো দলিল নেই। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণ আরব অঞ্চলের বাইরেও অবস্থান করেছিলেন, তারা স্থানীয় ভাষায় খুতবা দিয়েছেন বলে কোনো প্রমাণ আছে?
হ্যাঁ, বাংলা খুতবার শুরুতে আরবিতে হামদ, ছানা এবং কুরআনের আয়াত ও হাদিস পাঠ করা হয়। এর দ্বারা আরবি খুতবা আদায় হয়ে যায় বলে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাক্কিক বর্তমান পৃথিবীর খ্যাতিমান আলেম মাও. খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি সাহেব জাদিদ ফেকহি মাসায়েলের প্রথম খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠা থেকে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, অনারবি খুতবাকে বিদআত বলাও অনুচিত। এ বিষয়ে আরবিতেও বিরাট বিরাট প্রবন্ধ সঙ্কলিত হয়েছে।
বাংলায় খুতবা পছন্দকারীদের প্রতি প্রশ্ন, দুটো খুতবাই বাংলাতে না হয়ে একটি বাংলায় আরেকটি আরবিতে কেন?
প্রথম খুতবার শুরুতে আরবি বলার পর বাংলায় বয়ান করা হয়। তদ্রূপ দ্বিতীয় খুতবায় করা হয় না কেন? এটা কি বিদআত নয়?
দ্বিতীয় খুতবাও প্রথম খুতবার মতো আরবি-বাংলার মিশ্রণে দিলে সমস্যা কোথায়?
.
খুতবা আরবিতে হওয়াই অধিক শ্রেয়। প্রয়োজনে জুমুআর নামাযের আগে বা পরে অথবা অন্য কোনো দিন বয়ান করা হল। জুমুআর আগেই বয়ান করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন