সাধারণত আমরা মাইয়েতের লাশ সামনে নিয়ে সালাতুল জানাযা আদায় করে থাকি। যদি লাশ সামনে না নিয়ে জানাযার নামায পড়া হয় তাকে গায়েবানা জানাযা বলে। হাদিস দ্বারা গায়েবানা জানাযা জায়েয প্রমাণিত হয় কি-না?
কোনো মুসলিম যদি এমন এলাকায় মারা যায় যেখানে তার জানাযার নামায পড়া হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে অন্য এলাকার মুসলমানদের জন্যে তার জানাযা পড়া জায়েয ও মাসনুন। হাবশার সম্রাট নাজাশি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত পেয়ে মুসলমান হয়ে যান। তার এলাকায় কোনো মুসলমান ছিল না। একদিন সে মারা গেল। তখন অহির মাধ্যমে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশির মৃত্যুসংবাদ জানতে পেরে তার গায়েবানা জানাযা পড়েছেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - قَالَ : (( نَعَى النَّبِيُّ - صلى الله عليه وسلم - النَّجَاشِيَّ فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ , خَرَجَ بِهِمْ إلَى الْمُصَلَّى , فَصَفَّ بِهِمْ , وَكَبَّرَ أَرْبَعاً
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে নাজাশির মৃত্যুর সংবাদ দেন। এরপর জানাযার জন্যে সামনে অগ্রসর হলেন। সাহাবিরা হুজুরের পেছনে কাতারবদ্ধ হলেন। অতঃপর রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে চার তাকবির দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ১২৫৫)।
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো জীবনে মাত্র একবারই এই নাজাশির গায়েবানা জানাযা পড়েছেন। গায়েবানা জানাযার দ্বিতীয় কোনো ঘটনা সহিহ হাদিস বর্ণিত নেই। সুতরাং যারা গায়েবানা জানাযা জায়েয বলেন তাদেরও দলিল উপরের হাদিস, যারা নাজায়েয় বলেন তাদেরও দলিল একই হাদিস।
জায়েয ও নাজায়েযের মতানৈক্য যার জানাযা পড়া হয়েছে তার জানাযার ব্যাপারে। কিন্তু যে মাইয়েতের জানাযা একবারও পড়া হয়নি তার গায়েবানা জানাযা জায়েয- উপরে আমরা তা বলে এসেছি।
অধিকাংশ ইমাম ও ওলামায়ে কেরাম গায়েবানা জানাযাকে নাজায়েয বলেন। কারণ, নাজাশির চেয়ে অনেক প্রিয় সাহাবি দূর-দূরান্তে ইন্তেকাল করা সত্ত্বেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েননি।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ. বলেন :
الصواب أن الغائب إن مات ببلد لم يصل عليه فيه صلي عليه صلاة الغائب كما صلى النبي على النجاشي لأنه مات بين الكفار ولم يصل عليه وإن صلي حيث مات لم يصل عليه صلاة الغائب لأن الفرض قد سقط لصلاة المسلمين عليه والنبي صلى على الغائب وتركه وفعله وتركه سنة وهذا له موضع وهذا له موضع
অর্থ : সঠিক কথা হচ্ছে, কেউ যদি এমন এলাকায় মারা যায় যেখানে তার জানাযা পড়া হয়নি, তাহলে তার জন্যে গায়েবানা জানাযা পড়া হবে। যেমন নাকি নাজাশি কাফেরদের মাঝে ইন্তেকাল করার কারণে তার জানাযা পড়ার মতো কেউ ছিল না। তবে যে মাইয়েতের জানাযা পড়া হয়েছে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হবে না। কেননা, মুসলমানগণ একবার জানাযা পড়ার দ্বারাই ফরজ আদায় হয়ে গেছে। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই একবারই গায়েবানা জানাযা পড়েছেন; আর বাকি জীবনে পড়েননি, অর্থাৎ গায়েবানা জানাযা ছেড়ে দিয়েছেন। স্মর্তব্য যে, রাসুলের কোনো কাজ করা ও ছেড়ে দেওয়া উভয়টিই সুন্নত। তবে প্রত্যেকটির ক্ষেত্র ভিন্ন।
মনে রাখতে হবে, গায়েবানা জানাযা জায়েয ও নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি ইজতেহাদী। আর ইজতেহাদী কোনো বিষয়ে কোনো একপক্ষকে মন্দ বলা যাবে না। কারণ, তাকে মন্দ বলার অর্থ হচ্ছে ওই নসকে মন্দ বলা। নাউজুবিল্লাহ।
এক্ষেত্রে নাজাশির ঘটনাই দুনো পক্ষের একমাত্র প্রধান দলিল। উপরে একপক্ষের ইজতিহাদ উল্লেখ হয়েছে। অন্যপক্ষ বলে, নাজাশির কাছে মুসলমানদের যাতায়াত ছিল, তাই সেখানে একজনও তার জানাযা পড়েনি তা হতে পারে না। সেখানে নাজাশির জানাযা পড়া হয়নিÑ এমন কোনো বর্ণনা কোথাও নেই। আউনুল মা’বুদে রয়েছে :
من المعلوم أن النجاشي أسلم وشاع إسلامه ووصل إليه جماعة من المسلمين مرة بعد مرة وكرة بعد كرة فيبعد كل البعد أنه ما صلى عليه أحد من بلده
অর্থ : জেনে রাখা দরকার, নাজাশি ইসলাম গ্রহণের তা গোপন থাকেনি, প্রচার হয়ে যায়। মুসলমানদের একের পর এক জামাত তার কাছে আসা-যাওয়া করত। তাই তার শহরে একজনও তার ওপর জানাযা পড়েনিÑ তা অসম্ভবই বটে। (আউনুল মা’বুদ : খ- ৯, পৃষ্ঠা-৬)।
আমি বলতে চাচ্ছি বিষয়টি ইজতেহাদী। আর ইজতেহাদী বিষয়ে কোনো এক পক্ষ অপর পক্ষকে নিন্দা করতে পারে না। হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
আজকে গায়েবানা জানাযাকে রাজনৈতিক জানাযা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। গায়েবানা জানাযার বিপরীতে মৃতব্যক্তির জন্যে দোয়া করার কথা অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাই কেউ মারা গেলে তার জানাযা হওয়ার পর আর জানাযা করার কী দরকার? দোয়া করাই সবচেয়ে নিরাপদ।
দুঃখ লাগে কিছু মানুষকে দেখি, গায়েবানা জানাযা পড়তে বেশ তৎপর; কিন্তু মৃতব্যক্তিদের জন্যে কুরআন তেলাওয়াত, ইস্তেগফার ও দোয়া করে না।
আজকে অনলাইনের কোথায় যেন দেখলাম, পাকিস্তানে তাদের দেশের খেলোয়াড়দের গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন