বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১৬

আযান ও ইকামাতের সঠিক উত্তর Mohiuddin Kasemi

আযানের দুই ধরনের উত্তর হয়ে থাকে : মৌখিক ও কর্মগত। আযান শোনার পর আযানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জামাতে শরিক হওয়া প্রত্যেক সক্ষম পুরুষের জন্যে আবশ্যক। এই আবশ্যকতা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এটা হচ্ছে আযানের কর্মগত উত্তর। 
আর মৌখিক উত্তর হচ্ছে, মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে অথবা মুয়াজ্জিনের আযান বলার পর হুবহু মুয়াজ্জিনের মতোই আযানের শব্দাবলি বলা। তবে মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলবে তখন উত্তরদাতা বলবে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
এরপর যে কোনো একটি দুরুদ শরিফ পড়ার পর আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহি... আযানের এই দুআ বা অন্য কোনো পড়বে।
এটা হচ্ছে আযানের মৌখিক উত্তর দেওয়ার সুন্নত তরিকা। কিন্তু অনেকে মুয়াজ্জিনের আশহাদু আন-না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার পর দুরুদ শরিফ পড়ে, এটা চরম ভুল। 
আযানের উত্তরের ক্ষেত্রে কয়েকটি দুআ বর্ণিত হয়েছে, যে কোনো একটি পড়লেই যথেষ্ট।
আযানের উত্তরের মতোই ইকামতের উত্তর। তবে ইকামতের অতিরিক্ত অংশ কাদ-কামাতিস সালাহ, কাদ-কামাতিস সাল্লাহ বলার সময় উত্তরদাতা ‘আকামা-হাল্লাহু ওয়া আদামা-হা’ বলবে। 
এবার হাদিস থেকে দলিলগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক :

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ ». 
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শোন তখন তোমরা তাই বল যা মুয়াজ্জিন বলে। (বুখারি, হাদিস নং- ৫৮৬)। 
قَالَ يَحْيَى وَحَدَّثَنِي بَعْضُ إِخْوَانِنَا أَنَّهُ قَالَ لَمَّا قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ وَقَالَ هَكَذَا سَمِعْنَا نَبِيَّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ
ইয়াহয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে বলেছে যখন মুয়াজ্জিন হায়্যা আলাস সালাহ বলবে তখন তোমরা ‘লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলো। তারা আরো বলেন যে, আমরা নবীজিকে এমনই বলতে শুনেছি। (বুখারি, হাদিস নং- ৫৮৮; ১/৮৬)। 
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. فَقَالَ أَحَدُكُمُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. ثُمَّ قَالَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. ثُمَّ قَالَ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. ثُمَّ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ.قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ ». 
হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে তখন তোমাদের কেউ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে; মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তখন সেও আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, মুয়াজ্জিন আশহাদু আন-না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার পর সেও আশহাদু আন-না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে; মুয়াজ্জিন হাইয়্যা আলাস সালাহ বলার পর সে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে; মুয়াজ্জিন হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার পর সে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে; মুয়াজ্জিন আল্লাল্লাহু আকবার বলার পর সেও আল্লাহু আকবার বলে, তাহলে আযানের উত্তরদাতা ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ৫২৭)। 
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ ্র إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا 
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন : যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযানের শব্দগুলো বলতে শোন তখন তোমরা তাই বল যা মুয়াজ্জিন বলে। এরপর আমার ওপর দরুদ পড়। কেননা যে লোক আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিসের নং-৮৭৫)।
عَنْ جَابِرٍ- رَضِيَ اَللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اَللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ : - مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ اَلنِّدَاءَ 
frown emoticon
 اَللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ اَلدَّعْوَةِ اَلتَّامَّةِ , وَالصَّلَاةِ اَلْقَائِمَةِ , آتِ مُحَمَّدًا اَلْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ , وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا اَلَّذِي وَعَدْتَهُ , إِنَّكَ لاَ تُخْلِفُ الْمِيعَادَ .) حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ 
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি আযান শোনার পর আল্লাহুম্মা রাব্বা... এই দুআ পড়ে তাহলে কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাবে। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস নং- ২০০৯)।

عَنْ أَبِى أُمَامَةَ أَوْ عَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- أَنَّ بِلاَلاً أَخَذَ فِى الإِقَامَةِ فَلَمَّا أَنْ قَالَ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- « أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا ». 
হযরত আবু উমামা রা. কিংবা অন্য একজন সাহাবি থেকে বর্ণিত, হযরত বেলাল রা. যখন ইকামত দিতে গিয়ে কাদ-কামাতিস সালাহ বললেন তখন রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আকামা-হাল্লাহু ওয়া আদামাহু। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ৫২৮)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন