ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এক মুসলিম ঐতিহাসিক লিখেছিলেন, ‘আমি খিলাফাহ আর রাশিদাহ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল শাসকের জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছি। উমার ইবন আব্দুল আজিজের পর আর কাউকে পাইনি যিনি নুরুদ্দীন জেঙ্গির চেয়ে বেশী মুত্তাকী ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন।’ হাত খুলে তিনি মুসলিম জনগণের জন্য খরচ করতেন। নির্মাণ করেছেন অসংখ্য মাদ্রাসা; পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ইবনুন নাফিস সহ অসংখ্য মুসলিম বিজ্ঞানীর। দামেশকে তিনি যে হাঁসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন আজ পর্যন্ত তার নজির খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তিন শতক পর্যন্ত এ হাঁসপাতালে রোগীদের বিনা পয়সায় শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা, ওষুধ আর খাবারই শুধু দেয়া হতোনা, যাওয়ার সময় রোগীর হাতে কিছু টাকাও দেয়া হতো যাতে পরিবারের আর্থিক সমস্যা না হয়।
নুরুদ্দীন মাহমুদ ইবন ইমাদুদ্দীন জেঙ্গি ছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীতে ইরাক ও শামের মুসলিম শাসক। এসময় ফিলিস্তিন ছিল ক্রুসেডার দখলদারদের অধীনে আর আব্বাসীয় খিলাফাহ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এক মুসলিম বিশ্ব অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘ইমারতে’ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এসব ইমারাহর ‘আমীর’রা ফিলিস্তিনে দখলদার কাফেরদের সাথে লড়াই করার পরিবর্তে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘ইমারাত’ রক্ষায় ব্যাস্ত ছিল, অনেকে এমনকি নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ক্রুসেডারদের সাথে হাত মিলিয়ে অন্য মুসলিম শাসককে ধ্বংস করতেও দ্বিধা করতোনা। তার পিতা ইমামদুদ্দীন জেঙ্গি ছিলেন এর ব্যাতিক্রম।
মসুলের ক্ষমতা হাতে পাবার পরই ইমাদুদ্দীন ক্রুসেডারদের মোকাবেলা করার জন্য শামে অগ্রসর হন। হালাব মুক্ত করার পর ইমামুদ্দীন ইন্তেকাল করলে জিহাদের ঝান্ডা তুলে নেন তার সুযোগ্য পুত্র নুরুদ্দীন। একের পর এক ক্রুসেডার দুর্গের পতন ঘটান তিনি। ইউরোপে খৃস্টানরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। তারা দ্বিতীয়বারের মত ক্রুসেড ঘোষণা করে আল্লাহর এই সিংহকে থামাতে। কিন্তু খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত এই বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে; নুরুদ্দীন তাদের অন্যতম নেতা রেমন্ডের মাথা কেটে তা বাগদাদে আব্বাসী খলিফার দরবারে পাঠিয়ে দেন।
নুরুদ্দীন বুঝতে পেরেছিলেন বাইতুল মাকদিসে হামলার আগে মুসলিম ভূমি থেকে ক্রুসেডারদের পাপেট শাসকদের থেকে উৎখাত করে ঐক্য আনা জরুরী। তিনি নিজে ক্রুসেডারদের পাপেট “মুসলিম” শাসকের হাত থেকে দামেস্ক মুক্ত করতে নেতৃত্ব দেন; আর মিসরের ভূমি রাফিদাদের শিরক থেকে মুক্ত করতে পাঠান তার বিশ্বস্ত সেনাপতি শেরকুহ আর সালাহউদ্দীন আইয়ুবীকে। বাইতুল মাকদিস মুক্ত করে আল আকসা মসজিদে স্থাপন করবেন বলে একটা চমৎকার মিনবার বানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার স্বপ্ন সালাহউদ্দিনের হাতে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া দেখতে পাবার আগেই সব মুসলিমকে কাঁদিয়ে #ইতিহাসের_এই_দিনে ১৫ মে, ১১৭৪ সালে ৫৯ বছর বয়সে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তিনি।
তার নিজের হাতে নির্মিত দামেশকের মাদ্রাসা কমপ্লেক্সে (ছবিতে) এ মুজাহিদকে দাফন করা হয়। রহিমাহুল্লাহ তাআ’লা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন