শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

ইসলামপন্থীরাই ইসলামবিদ্বেষীদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে! মুহিউদ্দিন কাসেমি

(একবছর আগের লেখা এটি। ফেসবুক স্মরণ করিয়ে দিল। আজ আবার পোস্ট করলাম। প্রত্যেকটি লেখা আমার ব্যক্তিগত চিন্তার পরচয় বহন করে। চেহারার ভিন্নতার সঙ্গে চিন্তার ভিন্নতাও মানুষের বৈশিষ্ট্য।)
.
বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা কত? ষোল কোটি।
ষোল কোটির মধ্যে অমুসিলম কতজন? ধরেন দুই কোটি (অমুসলিম নামের অমুসলিম এবং মুসলিম নামের অমুসলিম- সবাই)।
বাকি চৌদ্দ কোটির মধ্যে ইসলামবিদ্বেষীদের সংখ্যা কত?
ইসলামবিদ্বেষীদের সংখ্যা জানার আগে ইসলামপন্থীদের সংখ্যা জানার চেষ্টা করা যাক :
১. বাংলাদেশে মসজিদ কতটি? অনেকে বলেন চার লাখ। ধরে নিলাম চার লাখ। চার লাখ মসজিদে গড়ে একজন ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন আছে। তাহলে আট লাখ হচ্ছে। এ আট লাখের পরিবার ও একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে গড়ে দশজন করে। যারা সবাই ইসলামকে ভালোবাসে। আট লাখকে দশ দিয়ে পূরণ দিলে আশি লাখ হয়। ধরেন এক কোটি।
২. চার লাখ মসজিদে সাধারণ মুসুল্লির সংখ্যা কত? জুমুআর নামাযের হিসাব করলে কয়েক কোটি হয়ে যাবে। এদের মধ্যে অনেকে আছে সাপ্তাহিক মুসুল্লি। তবে যারা ফজরের নামায জামাতে পড়ে তারা অবশ্যই খাঁটি মুসুল্লি। তাদের সংখ্যা কত? ধরেন এক কোটি।
৩. তাবলিগ জামাতে নিয়মিত এবং অনিয়িমিত সময় লাগায় তাদের সখ্যা কত? ধরেন পঞ্চাশ লাখ।
৪. কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী মিলে হলে ২০/২৫ লাখ।
৫. আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী মিলে ২৫/৩০ লাখ।
৬. সরকারি কিংবা বেসরকারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসলামিক স্টাডিজ/ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়েন/পড়ান তাদের সংখ্যা ৫ লাখ।
৭. চরমোনাই, ফুরফুরা, শরষিনা, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি হকপন্থী (কিংবা আংশিক সমস্যা রয়েছে) পীর ও তাদের মুরিদের সংখ্যা কত? ধরেন ১০ লাখ।
৮. ইসলাকিমকরাজনৈতিক দল ও দলের সক্রিয় সদস্য কত? (চার দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ও এর বাইরের ইসলামিক দলগুলো); ৫০ লাখের বেশি হবে।
৯. সাধারণ মুসলমান যারা ইসলামের বিধি-বিধান পুরোপুরি মানতে না পারলেও ইসলামকে ভালোবাসেন তাদের সংখ্যা কত? অন্তত ওয়াজমাহফিলে যারা যান তারা ইসলামপন্থী। আল্লামা সাঈদী, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাও. যুবায়ের আহমদ আনসারী, মাও. মামুনুল হক, মাও. ফয়জুল করীম, মাও. রেজাউল করীম, মাও. তারেক মুনাওয়ার, মাও. আবুল কালাম আজাদ বাশার- আরো বিখ্যাতসব বক্তাদের ওয়াজ শুনেন। কিংবা ওয়াজ না শুনলেও ইসলামকে ভালোবাসেন তাদের সংখ্যা ৩ কোটি। এদের অনেকে আবার নারী।
১০. উপরের পরিসংখ্যানের বাইরে বিভিন্ন ছোট-খাটো ইসলামি সংগঠন,আহলে হাদিস সংগঠন, জিহাদী সংগঠন (জঙ্গিবাদ নয়), সংস্থা, ইসলামী ব্যাংকগুলো ও বীমাগুলোর লোকজন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, বিভিন্ন পেশার লোকজন, সাংবাদিক। এদের সংখ্যা ১০ লাখ ধরেন।
রাজারবাগী, দেওয়ানবাগী এরা ভণ্ড, তবে সরাসরি কাফের বলা যায় না। এরাও তো ইসলামই চায়।
এবার সবগুলো যোগ করেন। কত হয়? প্রায় সাত কোটি।
১৪ কোটি মুসলমানের দেশে সাত কোটি ইসলামপন্থী হওয়া সত্ত্বেও বারবার ইসলামবিদ্বেষী শক্তিগুলো ক্ষমতায় আসে কেন?
ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় বসা তো দূরে থাক ক্ষমতাসীনরা তাদের ওপর কারণে-অকারণে ভয়াবহ জুলুম করেই যাচ্ছে। অন্তত হেফাজতের ওপর স্টিমরোলার চালানোর পর আর কারো অস্পষ্ট থাকার কথা নয়।
হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট অনুমিত হয়, ইসলামপন্থীরাই ইসলামবিদ্বেষীদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কীভাবে?
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
أعمالكم عمالكم
অনুবাদ : তোমাদের আমল-কাজ হচ্ছে তোমাদের প্রশাসক।
অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে :
كما تكونوا يولى عليكم
অনুবাদ : তোমরা যেমন হবে সেরকম প্রশাসক তোমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
রেওয়ায়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলি কারী রহ. বলেন :
إن كانوا خيارا سلط الله عليهم أخيارا منهم وإن كانوا أشرارا سلط الله عليهم أشرارا منهم
অনুবাদ : তারা যদি ভালো হয় তাহলে তাদের জন্যে ভালো প্রশাসক নিযুক্ত করবেন; আর তারা খারাপ হলে মন্দ প্রশাসক তাদের ওপর চাপিয়ে দিবেন। (মেরকাত শরহে মেশকাত : খ.১৭, পৃ. ২৭৫)
এবার আমরা যারা ইসলামের জন্যে কাজ করি, ওপরের সাত কোটির আমলের হিসাব নেন। দেখুন আমরা বাস্তবে ইসলামের কয়টি আদেশ-নিষেধ মেনে চলি। ইসলামপন্থীদেরই এই অবস্থা তাহলে বাকি সাত কোটির অবস্থা কেমন!
আমাদের মানে ইসলামপন্থীদের আমলগুলো লক্ষ্য করুন :
১. ইসলাম বলেছে ঐক্যের কথা; আমাদের মাঝে ঐক্য আছে?
২. আমাদের লেনদেন ইসলামসম্মত না।
৩. সরকারি মাদরাসাগুলোতে ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, ঘুষ ছাড়া বেতন তোলা যায় না।
৪. অনেক কওমি মাদরাসায় শরিয়তসম্মত আয়-ব্যয় হয় না। যাকাতের টাকা, কুরবানির টাকা কোনো হীলা না করেই বেতন নিয়ে যায়। এটা সরাসরি হারাম।
৫. অধিংকাশ কওমি মাদরাসার মুহতামিম জালিম, খায়েন, বেওফা।
৬. আমরা ছোট-খাটো জিনিস নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ শুরু করে দিই। অথচ কোনো বিষয় নস-সম্মত হলে কেউ সেটার ওপর আমল করলে তাকে মন্দ বলা যাবে না।
এছাড়া আরো অনেক আমল আছে যা ইসলাম সমরথন দেয় না। সুতরাং আমাদের আমল ঠিক না হওয়ার আগে ইসলামবিদ্বেষীরাই ক্ষমতা দখল করে থাকবে। এ কারণেই ইনু-মেননের মতো লোকেরা বছরের পর বছর এমপি-মন্ত্রী হয়ে আমাদেরকে গালিগালাজ করার সুযোগ পায়। অথচ ইনুকে বাংলাদেশের যে কোনো এলাকায় মেম্বর পদে খাড়া করে দিলেও জামানত হারাবে। আমরা এটা মেনে নিই; কী আজিব দেশ!
আমি ইসলামী আন্দোলনকে অপছন্দ করলেও চরমোনাই পীর সাহেব এমপি হলে আমি দারুণ খুশি হব। মওদুদি সাহেবের মতামত মেনে না নিলেও সাঈদী সাহেব এমপি হলে মুসলমানদের খুশি হওয়া উচিত। যদি এমন করতেই থাকি, ছোটখাটো বিষয়ে মতানৈক্য করি, উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থের কথা না ভাবি, তাহলে ইনু-মেননের পর আরো জঘণ্য লোকদেরকে আল্লাহ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিবেন। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন