পাকিস্তানি মুহাজির, মুজাহিদ ‘আব্দুর রহমান বে’ উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পেশাওয়ারের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তিনি ভর্তি হন ভারতের বিখ্যাত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসময় জানতে পারেন ইউরোপীয়রা উসমানীয় খিলাফতকে ধ্বংস করার জন্য চারিদিক থেকে হামলা করছে। আফ্রিকার মরক্কো ও আলজেরিয়ায় দখলদারিত্ব চালাচ্ছে ফ্রান্স, লিবিয়াতে হামলা শুরু করেছে ইতালি আর মিসর-সুদানে লুটপাট চালাচ্ছে ব্রিটেন। অন্যদিকে ইউরোপের বলকানে রাশিয়ার ইন্ধনে খৃস্টানরা যুদ্ধ শুরু করেছে।
তরুণ আব্দুর রহমান তখন আলীগড়ের পড়াশোনা ছেড়ে উসমানীয় খিলাফতের পক্ষে যুদ্ধ যাবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। ভারতের দখলদার ব্রিটেন সরকার তো আর তাকে এমনিতেই যেতে দিবেনা। বলকান যুদ্ধের জন্য ভারত থেকে একটা মেডিকেল টিম যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। উনি গেলেন নাম লেখাতে; কিন্তু তিনি তো ডাক্তারও নন, নার্সও নন। মেডিকেল টিমের প্রধান ড. আনসারী এই তরুণের জযবা দেখে খুশি হলেন। তাকে স্ট্রেচ বহনকারী হিসেবে দলে নেয়া হল। বাসায় জানালে পিতা তাকে অনুমতি দিবেননা এ ভয়ে তিনি বাসায় না জানিয়ে নিজের সমস্ত কিছু বিক্রি করে যাত্রার খরচ যোগাড় করলেন।
১৯১২ সালে তিনি খিলাফাহর পক্ষে প্রথম বলকান যুদ্ধে যোগ দেন। সে যুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকা পুরো সেনাবাহিনীর মাঝে প্রশংসিত হয়। যুদ্ধ শেষে মেডিকেল টিমের সবাই ফেরত গেলেও আব্দুর রহমান ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি ইস্তাম্বুলে মিলিটারি কলেজে অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর এমন কোন যুদ্ধ ছিলো না যাতে তিনি অংশগ্রণ করেননি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গাল্লিপলি সেক্টরে তিনি সাহসিকতার সাথে তার সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন। গাল্লিপোলিতে তার বিপক্ষে, ব্রিটেনের পক্ষে যারা যুদ্ধ করছিল তাদের অনেকেই ছিল ভারত-পাকিস্তানে জন্ম নেয়া “মুসলিম”।
গাল্লিপলির এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয় মুসলিমেরা।
১৯২৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপালনরত অবস্থায় আফগানিস্তানে আততায়ীর হাতে নিহত হন তিনি। রহিমাহুল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন