Mohiuddin Kasemi
মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞানের উৎস। আল্লাহ পাকের পরিচিতি, মানবসৃষ্টির ইতিবৃত্ত, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের পন্থা, নাগরিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিনির্মাণ, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতা ও মুক্তি লাভের পদ্ধতি ইত্যাকার হাজারো জ্ঞানের আধার এ কুরআন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক রয়েছে যা পবিত্র কুরআনে নেই? মানবকল্যাণের এমন কোনো পন্থা আছে যার নির্দেশ কুরআন দেয় নি? মানব-মনের এমন কোনো জিজ্ঞাসা রয়েছে যার সমাধান কুরআনে নেই?
কাজি আবুবকর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আরাবি রহ. লিখেন : পবিত্র কুরআনে সত্তর হাজার ইলম রয়েছে। বিগত ১৪শ বছর ধরে ওলামায়ে কেরাম কুরআনের মর্মবাণী উপলব্ধি করার জন্য যে অক্লান্ত সাধনা করছেন এর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই এ বিষয়ে কিঞ্চিৎ ধারণা লাভ করা যাবে।
মুসনিদুল হিন্দ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. লিখেন : পবিত্র কুরআনে যে জ্ঞানভাণ্ডার রয়েছে তাকে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি। এগুলো সামনে রেখে কুরআনচর্চায় লিপ্ত হলে কুরআনের মর্ম ও ভাব হৃদয়ঙ্গম করা সহজতর হবে :
১. : علم الاحكام বিধি-বিধান সম্পর্কিত জ্ঞান। অর্থাৎ ইবাদত, মুআমালাত-লেনদেন, গার্হস্থ্য-ব্যবস্থা, সামাজিক আচার-আচরণ ও রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ের বিধি-বিধান; যেমন : ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরুহ ও হারাম সম্পর্কিত জ্ঞান। কুরআনে কারিমের পাঁচশত আয়াত বিধি-বিধান সংবলিত। এ প্রকার জ্ঞানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দায়িত্ব ফিক্হশাস্ত্রবিদগণ ও মুফতি সাহেবদের ওপর।
২. : علم الجدل তর্কবিদ্যা। অর্থাৎ ইহুদি, খ্রিস্টান, মুশরিক ও মুনাফিক- এই চার পথভ্রষ্ট দলের সাথে তর্ক ও বাদানুবাদ সম্পর্কিত জ্ঞান। কুরআনের এ জ্ঞানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা ও একে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত করার দায়িত্ব متكلم তথা ধর্মতত্ত্ববিদগণ আলেমদের ওপর ন্যস্ত।
৩. : علم التذكير بآلآء الله আল্লাহর নেয়ামতসমূহ উল্লেখপূর্বক উপদেশদান সম্পর্কিত জ্ঞান। যেমন- আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা। মানুষকে প্রাকৃতিকসূত্রে তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শিক্ষাদান ও আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলির বর্ণনা।
৪. : علم التذكير بايام الله অনুগত বান্দাদেরকে অনুগ্রহদান এবং অপরাধীদেরকে শাস্তিপ্রদান সম্পর্কিত যেসব ঘটনা আল্লাহ তাআলা অতীতকালে সংঘটিত করেছেন সেগুলো উল্লেখপূর্বক মানুষকে উপদেশদান সম্পর্কিত জ্ঞান।
৫. : علم التذكير بالموت ومابعده মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী বিষয়াদি যেমন- পুনরুত্থান, হাশর বা সমবেতকরণ, হিসাব-নিকাশ, পাপ-পুণ্য পরিমাপের তুলাদ- এবং জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদি বর্ণনা করে মানুষকে উপদেশ সম্পর্কিত জ্ঞান।
শেষোক্ত এ তিন বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণদান এবং আনুষঙ্গিক হাদিস ও সাহাবাদের বাণী উল্লেখ করা মুবাল্লিগ, ওয়ায়েজ ও খতিবগণের দায়িত্ব। (আল-ফাউযুল কাবির, প্রথম বাব)
এ ছাড়া কুরআনে আকাঈদ তথা ধর্মবিশ্বাসের আলোচনাও বিধৃত হয়েছে। উল্লিখিত পাঁচ প্রকারের তৃতীয় প্রকারে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। হযরত মাও. আবদুল হক হাক্কানি রহ. ইলমে নাহু, সরফ, তাজবিদ, মাআনি, বালাগাত, ফিক্হ, ফারায়েজ এবং ইলমে তাসাওউফসহ আরো অনেক ইলমের উল্লেখ করেছেন।
মূলত পবিত্র কুরআন জ্ঞানের মহাসমুদ্র। সমুদ্রের মণি-মুক্তা ও ভা-ার যেমনি যুগ-যুগান্তরে আহরণ করেও শেষ করা যায় না, তেমনি কুরআনের মহাসমুদ্র থেকে জ্ঞান আহরণ করা হচ্ছে এবং হবে; তবুও এ জ্ঞানভা-ার কখনো নিঃশেষ হবে না, ফুরিয়ে যাবে না। গোটা মানবতার মুক্তির সনদ ও সাবির্ক কল্যাণের নিশ্চিত সংবিধানরূপে অবতীর্ণ হয়েছে এ পবিত্র কুরআন। সর্বোপরি কুরআনের জ্ঞান শাশ্বত, চিরন্তন, অনন্ত, অসীম ও অফুরন্ত। সকল জ্ঞানের আধার ও মূল উৎস এ পাক কুরআন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন