Mohiuddin Kasemi
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আল্লাহ তাআলার পয়গাম অনেক পদ্ধতিতে এসেছে। হাদিস দ্বারা ছয়টি পদ্ধতির কথা জানা যায় :
১. صَلْصَلَةُ الْجَرَسِ (ঘণ্টার আওয়াজ) : ফেরেশতা যখন হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহি নিয়ে আসত; তখন তার ডানার আওয়াজ ঘণ্টির আওয়াজের মতো শুনা যেত। ওহির এ পদ্ধতি হুজুর সা. এর ওপর সবচেয়ে কঠিন ছিল। যেমনটি হযরত আয়েশা রা.-এর বর্ণনা দ্বারা জানা যায়। কোনো সময় এ প্রকার ওহির মৃদু আওয়াজ শুনা যেত। হযরত ওমর রা. বলেন, যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহি নাযিল হত, তখন তাঁর চেহারা মুবারকের কাছে মৌমাছির ভনভনের মতো ক্ষীণ আওয়াজ শুনা যেত।
২. تَمَثَّلُ مَلَك (ফেরেশতা কর্তৃক মানুষের আকৃতি ধারণ) : কোনো মানুুষের আকৃতি ধারণ করে হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহি নিয়ে আসত। অধিকাংশ সময় সুদর্শন সাহাবি হযরত দিহ্ইয়া কালবি রা. -এর সুরত ধারণ করতেন ফেরেশতা। আবার কখনো অপরিচিত মানবের আকৃতি ধরেও আসতেন। যেমন হাদিসে জিবরাইলে হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে। ওহির এ পদ্ধতি সহজতর।
আর এ ব্যাপারে প্রায় সব তাফসিরবিদের অভিমত এই যে, কুরআনে কারিম পুরোটাই হযরত জিবরাইল আ.-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে। যদিও অন্য ওহি অন্য ফেরেশতারা নিয়ে এসেছেন।
৩. ফেরেশতার আসল আকৃতি : হযরত জিবরাইল আ. নিজের প্রকৃত আকৃতি ধারণ করে হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন। এটা হুজুরের পুরো জীবনে মাত্র তিনবার হয়েছে।
প্রথমবার যখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিববরাইলকে তার আসল আকৃতিতে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
দ্বিতীয়বার শবে মেরাজে। আর তৃতীয়বার নবুওয়াতের একেবারে শুরু সময়ে মক্কার আজওয়াদ নামক স্থানে।
৪. رؤية صادقة (সত্যস্বপ্ন) হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন অবতরণের পূর্বে সত্যস্বপ্ন দেখতেন। রাতে যা স্বপ্ন দেখতেন সকালে তাই হুবহু বাস্তবায়িত হত। হযরত আয়েশা রা. বলেন :
أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةَ فِى النَّوْمِ فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহি আসার সূচনা ঘুমন্তাবস্থায় সত্যস্বপ্নের মাধ্যমে হয়; তিনি যা স্বপ্ন দেখতেন তা প্রভাতরশ্মির মতোই সত্য হত। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ৩ )
৫. كَلَامِ اِلهِى (আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথন) : হযরত মুসা আ.-এর মতো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সরাসরি আল্লাহ তাআলার সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তবে তা জাগ্রতাবস্থায় শুধু মেরাজের রজনীতে অর্জিত হয়। তাছাড়া ঘুমন্তবস্থায়ও একবার তিনি আল্লাহর সাথে কথা বলেন।
৬. نفث فى الروع (অন্তরে ঢেলে দেওয়া) : হযরত জিবরাইল আ. যে-কোনো আকৃতিতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে না এসে ওহির বিষয়বস্তু তার অন্তরে ঢেলে দিতেন। এক হাদিসে এসেছে :
إِنَّ رُوحَ الْقُدُسِ نَفَثَ فِي رُوعِي أَنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَكْمِلَ رِزْقَهَا
অর্থ : রুহুল কুদুস অর্থাৎ হযরত জিবরাইল আ. আমার অন্তরে এ কথা ঢেলে দিয়েছেন যে, কোনো মানুষের নির্ধারিত রিজিক শেষ করার পূর্বে তার মৃত্যু হবে না। (উলুমুল কুরআন-৩২; ইতকান : খ. ১, পৃ. ৯০)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন