মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬

দোয়া কেন কবুল হয় না?

Mohiuddin Kasemi

প্রথমে বলে রাখা উচিত যে, আল্লাহর কাছে কারো দোয়া কবূল হওয়ার জন্য লোকটি মুমিন হতে হবে- এমন কোনো শর্ত নেই। কোরআন শরীফের একাধিক জায়গায় দেখা যায়, আল্লাহ ইবলীস ও কাফিরের দোয়া কবূল করেছেন তথা তাদের প্রার্থিত কামনা, বাসনা ও চাহিদা পূরণ করেছেন।
কাফির, মুনাফিক, ফাসিক ও খারেজীসহ সকল প্রকারের মানুষের সব দোয়া যেমন আল্লাহ কবূল করেন না, তেমনি খাঁটি মুমিনদেরও। তবে তিক্ত হলেও সত্য হচ্ছে, দুনিয়ার ভোগ-দখল ও সুখবিলাস সম্পর্কিত মুমিনের দোয়াগুলো আল্লাহ খুব কমই কবূল করেন। কারণ, আল্লাহর একটি অলঙ্ঘনীয় সিদ্ধান্ত হলো, যারা দুনিয়াতে যত বেশি সুখবিলাস করবে, আখেরাতে তারা ততবেশি বঞ্চিত হবে। আল্লাহ যেহেতু মুমিনদেরকে আখেরাতের সুখ-সম্মান থেকে বঞ্চিত করতে চান না, তাই তিনি তাদেরকে দুনিয়ার সুখ-সম্মানে ডুবিয়ে রাখতে চান না।
কাফিরদের দোয়া কবূল করে দুনিয়াটাকে দুঃখ-কষ্ট মুক্ত করা যেমন আল্লাহর জন্য কঠিন নয়, তেমনি মুমিনদের দোয়া কবূল করে সারা দুনিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়াও আল্লাহর জন্য কঠিন নয়। কিন্তু আল্লাহ চান উভয় দলকে দৌড়ের মধ্যে রাখতে। কেউ সুখবিলাসের জাহান্নামমুখী দৌড়ে জীবন শেষ করবে এবং আর কেউ সত্য ও সততার জান্নাতমুখী দৌড়ে জীন শেষ করবে।
আপনি মুমিন। আপনি নির্লোভ ও নিরীহ। আপনার যোগ্যতা ও সততা প্রশ্নাতীত। তাই বলে আল্লাহ আপনার সব দোয়া কবূল তথা আপনার সত্য ও সুন্দর কামনা, বাসনা ও চাহিদাগুলোর সবটিই আপনি চাহিবামাত্র পূরণ করে দিবেন- এমন কোনো গ্যারান্টি আল্লাহ কাউকে দেননি। আপনার কৃত দোয়া কবূল না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ
০১. আপনার দোয়া তথা প্রার্থিত বিষয়টির জন্য আপনি অনুপযুক্ত।
০২. অথবা আপনার প্রার্থিত বিষয়টি বা তার কোনো উত্তম বিকল্প আপনার লাভ করার বয়স/সময় আপনার এখনো হয়নি।
০৩. অথবা আপনার প্রার্থিত বিষয়টি বা তার উত্তম বিকল্প আপনাকে দেওয়া হবে শুধুমাত্র আখেরাতে।

মনে রাখবেন, আপনি মুমিনের দোয়া কবূলে তথা আপনার ভালো/সুন্দর কামনা, বাসনা ও চাহিদাগুলো পূরণে আল্লাহ মোটেই অক্ষম নন এবং কৃপনও নন। আপনি প্রকৃত মুমিন বা দীনদার হলে আপনাকে আল্লাহর নিয়মের سنة الله প্রতি খেয়াল রেখে পথ চলতে হবে এবং আপনার দৃষ্টিতে ইতিবাচক/নেতিবাচক তাঁর সকল সিদ্ধান্তের প্রতি আপনাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তবেই আপনি প্রশান্ত হ্রদয়ের মুমিন হতে পারবেন। এরকম হলে নির্দ্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুর ফেরেশতারা আপনাকে দুনিয়া নামক এ কারাগার থেকে সসম্মানে মুক্ত করে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে। মৃত্যুর সময় তিনি (আল্লাহ) আপনাকে ডাক দিয়ে বলবেন, يا أيتها النفس المطمئنة ارجعي إلى ربك راضية مرضية فادخلي في عبادي وادخلي جنتي. "হে প্রশান্ত মন/হ্রদয়! তুমি সন্তুষ্ট ও সন্তোষপ্রাপ্ত হয়ে তোমার প্রভুর কাছে ফিরে এসো। অতঃপর আমার (অনুগত) বান্দাদের কাতারে প্রবেশ করো এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।" [সূরা আলফজরঃ ২৭-৩০]।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রতি স্তুনষ্ট থাকার তৌফীক দান করুন।
--
মাও. আবুল হুসাইন আলেগাজী

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

খলীফার হারানো ছেলে

Atik Ullah

উমাইয়া খিলাফাহ তখন দুর্বল হয়ে এসেছে। আব্বাসীরা গোপনে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আব্বাসীদের দ্বিতীয় খলীফা ছিলেন ‘আবু জা‘ফর মানসুর’। তিনিও গোপন আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আন্দোলনের প্রয়োজনেই তাঁকে বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতে হতো। ছদ্মবেশ নিয়ে। এবার তার রোখ পড়লো ‘মসুলে’। অবিশ্রান্ত তৎপরতার জোরে শক্ত ঘাঁটি গড়ে উঠলো এখানে। সুযোগ বুঝে একটা বিয়েও করে ফেললেন। বিয়ের কিছুদিন পর আর মসুলে থাকা গেলো না। অবস্থান জানাজানি হয়ে যাওয়াতে। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অনিশ্চিত জীবন তার। কখন ধরা পড়ে যান! সাতপাঁচ ভেবে স্ত্রীকে রেখেই মসুল ছাড়লেন। রওনা হওয়ার আগে স্ত্রীকে একটা কাগজ দিলেন:
-কী আছে এতে?
-আমার বংশলতিকা! আমি নিজ হাতে লিখেছি। 
-মানুষটাকে কাছে না পেলে, তার নসবনামা দিয়ে আমি কী করবো?
-শোন, আমার জীবনটা খড়কুটোর মতো। কখন কোথায় যাই, কী করি, তার ঠিক ঠিকানা নেই। আমাদের ঘরে নতুন মেহমান আসবে। ছেলে হলে তার নাম রেখো: জা‘ফর। মেয়ে হলে তুমি পছন্দমতো একটা নাম রেখে দিও। নসবনামাটা তখন কাজে লাগবে!
.
সময় মতোই ঘর আলো করে এক পুত্রসন্তান জন্ম নিল। এদিকে আব্বাসী আন্দোলন সফল হলো। মসনদে বসলেন ‘আবুল আব্বাস’। প্রথম আব্বাসী খলীফা। খুশির খবর মসূলে পৌঁছতে দেরী হলো না। শিশু জা‘ফরও ততদিনে ডাগর হয়ে উঠেছে। কাছের লোকেরা ছেলের মাকে বললো: 
-তুমি আমীরুল মুমিনীনের কাছে গিয়ে সব খুলে বলছো না কেন? 
-তাকে বলে কী হবে? তিনি তো ছেলের বাবা নন!
-তবুও তিনি হয়তো একটা ব্যবস্থা নিবেন! 
-নাহ, তাকে বলার দরকার নেই। ছেলের বাবা হয়তো নানা ঘটনার ডামাঢোলে ছেলের কথা ভুলে গেছেন। কমদিন তো হলো না! দিজলা-ফোরাতে অনেক পানিই এতদিনে বয়ে গেছে! আর খলীফার ভাই-ই যে আমার স্বামী, তার প্রমাণ কি? আমি শুধু তার নামই জানি! নামে মিল হলেও, খলীফার ভাই ভিন্ন কেউও হতে পারেন!
-তুমি একবার নসবনামাটা সরাসরি গিয়ে দেখাও না!
-আমার যাওয়া সম্ভব নয়। শোভনীয়ও নয়। তোমরা বরং কেউ একজন গিয়ে, তাকে দেখে এসো। তার অবয়বটা কেমন, দেখে এসে আমাকে জানাও!
তাই করা হলো। একজন খবর নিয়ে এসে বিস্তারিত জানাল। মা বললেন: নাহ, এই মানুষ ছেলের বাবা হতে পারেন না। মিলছে না। মা এ-বিষয়ে আর আলোচনা বাড়তে দিলেন না। 
.
প্রথম খলীফা বেশিদিন বাঁচলেন না। নতুন খলীফা হলেন প্রয়াত খলীফার ছোট ভাই ‘আবু জা‘ফর মনসুর’। নানা ব্যস্ততায় মসূলে রেখে আসা বিবির কথা হয়তো তার মনেই নেই। বালক জা‘ফর এখন যুবক। বাবার মতোই লায়েক হয়েছে। মা সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে কসুর করেন নি। জা‘ফরের ঝোঁক দেখা দিল ‘লেখালিখির’ দিকে। মানে ‘নকলনবিশী’। একটা কিতাব দেখে আরেকটা ‘কপি’ করা। তখনকার বেশ চালু পেশা। এই পেশায় দক্ষতা অর্জনের পর, ভাগ্য অন্বেষণে বাগদাদে চলে এলো জাফর। কর্মদক্ষতাগুণে সেকালের সেরা নকলনবীশ ‘আবু আইয়ুব’-এর দপ্তরে চাকুরি জুটলো। আবু আইয়ুব ছিলেন, খলীফার খাস ‘নকলনবীশ’। রাষ্ট্রীয় গোপন চিঠিপত্র তিনিই কপি করতেন। জা‘ফর তার মনিবের আস্থা অর্জন করে ফেললো অল্প দিনেই। আবু আইয়ুব মাঝেমধ্যে খলীফার কাজও জাফরকে দিয়ে করাতে শুরু করলো। একদিন দপ্তরে কেউ ছিলো না। জাফর একা বসে কাজ করছিল। খলীফা জরুরী একটা চিঠি লেখাতে নিজেই চলে এলেন। লেখার কাজে জা‘ফরের নিমগ্নরূপ দেখে, তার বেশ ভাল লাগলো। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলেন:
-যুবক! তোমার নাম?
-জা‘ফর!
-জা‘ফর বিন....?
এবার যুবক আমতা আমতা করতে লাগলো। খলীফা বিস্মিত হয়ে কিছুটা ধমকের সুরে বললেন:
-জাফর বিন?
-জ্বি, জাফর বিন আবদুল্লাহ। 
-তোমার বাবা কোথায়?
-আমি জন্মের পর থেকেই আব্বুকে দেখিনি! আম্মু বলেছেন, আমার আব্বু একজন ভদ্রঘরের সন্তান। তার কাছে একটা কাগজ আছে। তাতে আমার নসবনামা লেখা আছে!
-নসবনামা? সেটা এখন বলতে পারবে?
-আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আলি বিন আবদুল্লাহ বিন আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব!
নসবনামা শুনেই খলীফার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। গলার স্বরটা কেমন যেন বদলে গেলো। চোখেমুখে গভীর চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। সামান্য ভেবে প্রশ্ন করলেন:
-তোমার আম্মু কোথায়?
-মসূলে!
-কোন মহল্লায়?
-অমুক মহল্লায়!
-তুমি ‘অমুক’ ব্যক্তিকে চেনো?
-জ্বি চিনি। তিনি আমাদের মহল্লার মসজিদের ইমাম। 
-আর ‘অমুক’কে চেনো?
-জ্বি। তিনি আমাদের এলাকার মুদি দোকানদার। 
-
খলীফাকে এত এত প্রশ্ন করতে দেখে, জা‘ফরের মনে ভয় ঢুকে গেলো। আবার ভয়ের পাশাপাশি অজানা কোনও এক কারনে তার দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। তার চোখে পানি দেখে খলীফার গলাও অনেকটা ধরে এলো:
-অমুক ‘মহিলা’কে চেনো?
-জ্বি। তিনিই আমার আম্মু!
খলীফা ফুঁপিয়ে উঠে, জা‘ফরকে জড়িয়ে ধরলেন:
-তুমি জানতে আমি তোমার বাবা?
-জ্বি। 
-আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি। আজকের পুরো ব্যাপারটা আবু আইয়ুবের কাছে গোপন রাখবে। সে এবং অন্যরা যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায় আমার-তোমার পরিচয়টা। খুব সাবধানে থাকবে। খুবই সাবধান। 
.
এরপর থেকে লেখালেখির বিভিন্ন কাজে, খলীফা আবু আইয়ুবের পাশাপাশি জাফরকেও ডেকে পাঠাতে শুরু করলেন। এটা দেখে আবু আইয়ুবের মনে ঈর্ষা জন্ম নিল। তার মধ্যে পদ হারানোর ভয় ঢুকে গেলো। একদিন খলীফা সুযোগ মতো জাফরকে বললেন:
-তুমি চিঠিটা নিয়ে তোমার মায়ের কাছে যাও! যত তাড়াতাড়ি পারো তাকে এবং পরিবারের অন্যদেরকে নিয়ে ফিরে এসো। 
.
বিষয়টা আবু আইয়ুবের দৃষ্টি এড়াল না। জাফর বাগদাদ ছেড়ে মসুলের দিকে রওয়ানা হলো। আবু আইয়ুবও তার পিছু পিছু একজন চর পাঠালো। তাকে বলে দিল:
-ওই যুবক একজন বিদ্রোহী। তাকে হত্যা করে, যা কিছু সাথে পাও, নিয়ে আসবে!
চর তাই করলো। থলের মধ্যে একটা চিঠি পাওয়া গেলো। সেটা পড়ার পর আবু আইয়ুব ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিল। ঝোঁকের বশে কী ভয়ংকর কাজ করে বসেছে, তার পরিণতি কল্পনা করে শিউরে উঠলো। ঘটনার কথা খলীফার কানে যেতে দেরী হলো না। আবু আইয়ুবকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। পরবর্তীতে যখনই দরবারে আবু আউয়ুবের প্রসঙ্গ উঠতো, খলীফা দুঃখ-ভারাক্রান্ত স্বরে বলতেন:
-এই লোক আমার কলিজার টুকরার হত্যাকারী!

আব্বাসী খিলাফতকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়:

Atik Ullah


ক: শক্তিশালি খলীফাদের যুগ। 
খ: দুর্বল খলীফাদের যুগ!
দ্বিতীয় ভাগের খলীফাগন স্বাধীন ছিলেন না। তাদের খিলাফতকাল ছিলো বিভিন্ন উপশক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন। দীর্ঘ সময় জুড়ে বাগদাদের খলীফাদের নিয়ন্ত্রণ করতো শী‘আরা। এছাড়া মুসলিম ভূখন্ডের বিভিন্ন স্থানেও শী‘আদের স্বশাসিত সালতানাত ছিল। 
.
তখন বাগদাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ‘বুয়াইহি’ শী‘আরা। আর মসূলের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো ‘হামদানী’ শী‘আরা। এরা এক দল আরেক দলকে দু’চোখে দেখতে পারতো না। বুয়াইহিরা চাইতো, মসুল থেকে হামদানীদের তাড়িয়ে দিতে। অপর দিকে হামদানীরা চাইতো বাগদাদ থেকে বুয়াইহিদের তাড়িয়ে খলীফার নিয়ন্ত্রণকারী হতে!
-
বুয়াইহি বাগদাদ দখল করার সময়, বিরোধ তুঙ্গে উঠে গেলো। হামদানীরা তাদের প্রতিরোধ করতে এলো মসূল থেকে। কিছুতেই বুয়াইহিদেরকে বাগদাদে প্রবেশ করতে দিবে না। এদিকে খবর পেয়ে বুয়াইহিরাও মসুলের দিকে রওয়ানা দিলো। হামদানীদের ঠেকাতে হবে। উভয় বাহিনী বিপুল বিক্রমে এগিয়ে চললো। চলতে চলতে হামদানীরা বাগদাদে পৌঁছে গেলো আর বুয়াইহিরা মসূলে পৌঁছে গেলো। ঘটনাক্রমে ভুলপথ ধরার কারনে, দু’দলের দেখা হলো না। 
-
হামদানীরা খুশি! বাগদাদ দখল হয়েছে। কিন্তু বুয়াইহিরা ছেড়ে কথা বলবে কেন? তারা বাগদাদ দখল করার জন্যে মসূল থেকে রওয়ানা দিলো। সংবাদ পেয়ে হামদানীরাও বাগদাদ থেকে বের হয়ে এলো। শহরের বাইরেই শত্রুর মোকাবেলা করবে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এবারও বুয়াইহিরা বাগদাদে পৌঁছে গেলো, ওদিকে হামদানীরা মসূলে পৌঁছে গেলো। দু’দরে মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই। কিভাবে যে কী হলো, সে এক রহস্য! 
.
ঘটনার অবিনবত্বে উভয় শিবিরই কিংকর্তব্যবিমূঢ়! বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বুয়াইহিরা চিঠি পাঠালো মসূলে:
-আমাদের উভয়ের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়াটা বোধ হয় আল্লাহর মর্জি নয়! তাই আসুন আমরা সন্ধি করে ফেলি!

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

হায়রে বাঙ্গালি এই লজ্জা কোথায় রাখবি............... ?

Emran Hossain Adib

হায় কতই না নির্লজ্জ তুমি ? নিজেকে বাঙ্গালি বলতে লজ্জা লাগে।মায়ানমার থেকে নিজের ঈমান এবং জান কে হেফাজতের লক্ষে নিজ ভূমি ছেঁড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কিছু রোহিঙ্গা মুহাজির মুসলমান।কিন্তু বাংলাদেশর কতিপয় জারজ তাদের এক মেয়েকে আশ্রয়ের নামে পালাক্রমে ধর্ষণ করে মৃত্যুর মুখে ঠলে দিলো। হায় জানিনা সে কোন মায়ের সন্তান ? ভাই কেন তুমি নিরীহ মুহাজিরার উপর এই অমানবিক পাশবিক নির্যাতন চালালে ? সত্যি এর চাইতে বেদনা দায়ক কাজ আর কি হতে পারে জানি না।
,
এই নিউজটি পড়ে সত্যি অনেক কষ্ট পেয়েছি,যা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। ভাই তুমি আজ অন্যায় ভাবে জুলুম করে নিজের যৌন পিপাসা পূরণ করছ। অন্যের সতীত্ব কে নষ্ট করে দিচ্ছ।একটু চিন্তা করেছ ? এই মেয়ে তার বাকি জীবন।সমাজে কিভাবে কাটাবে ? সমাজ তাকে কিভাবে দেখবে ? কে বিয়ে করবে এই মেয়েটিকে ? কেননা তুমি তো অন্যায়ের মাধ্যমেই তার উজ্জ্বল বাতি কে নির্বাপিত করে দিয়েছ।তুমি তার সতীত্ব কে লাঞ্ছিত করেছ।নষ্ট করে দিয়েছ তার ভবিষ্যৎ আশার প্রদীপ। 
,
এই মেয়েটি তো, কোন বাবা মায়ের সন্তান,সে তো কারো বোন,বা কারো ফুফু বা খালা।তাদের কাছে বিষয়টি কেমন লাগছে।কেন তুমি এই অন্যায়ের পথ বেছে নিলে ? আজ যদি ঐ মেয়ের স্থানে তোমার মা,বোন,বা অন্য কেউ হতো,তাহলে তুমি কি করতে ঐ ধর্ষক কে ? অথচ তুমিই আজ সেই পথের পথিক।,
,
শুনো সে দিন বেশি দূরে নয়, যখন তোমার সামনে তোমার মা বোন কে ধর্ষণ করবে।তুমি দেখবে কিন্তু কিছুই করতে পারবে না।আর তখন তুমি নিজেকে মাজলুম ভাববে,কিন্তু তুমি যে অন্যায় পথে কারো পর্দা উন্মোচিত করেছো সেটি তুমি ভুলে যাবে আর কাঁদবে।কিন্তু এই কান্না শুধু বেদনা কে বাড়িয়ে দিবে কোন ফায়দা হবে না।
,
কারন তারা মাজলুম মুহাজির মুসলমান,আর মাজলুের দোয়ার মাঝে কোন পর্দা থাকে না।আর তাই তুমি তার প্রতিদানের অপেক্ষায় থাকো।

মৃত্যু ও ইহবাদ : হায়! জীবন কেটে যায় ‘দুর্বৃত্ত হেন’

Mohiuddin Kasemi


[সম্প্রতি এক কবির মৃত্যুতে এক লেখকের মূল্যায়ন ছিল এরূপ- ‘মৃত্যুকে তিনি অগ্রাহ্য করেছিলেন’। এ প্রসঙ্গেই দুটি কথা।]
মৃত্যু এক অবধারিত সত্য, অনিবার্য বাস্তব। জগতের কোনো প্রাণী, কোনো কিছুই মৃত্যুহীন অবিনশ্বর নয়। لدوا للموت وابنوا للخراب জন্মাও মৃত্যুর জন্য আর নির্মাণ কর বিলুপ্তির জন্য। অর্থাৎ জন্মের পরিণাম মৃত্যু আর নির্মাণের পরিণাম ধ্বংস। আরবের এক কবির পুণ্য-পংক্তি-
أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللهَ بَاطِلُ + وَكُلُّ نَعِيمٍ لَا مَحَالَةَ زَائِلُ.
ওহে! আল্লাহ ছাড়া যা কিছু সবই মরণশীল। আর আনন্দের সকল কিছু নিঃসন্দেহে ধ্বংসশীল।
এই যে স্পষ্ট বাস্তবতা, কুরআন তা বর্ণনা করেছে এভাবে- كُلُّ نَفْسٍ ذائِقَةُ الْمَوْتِ.
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (৩ : ১৮৫; ২১: ৩৫; ২৯: ৫৭)
কুরআন এখানে এক বাস্তব সম্পর্কে সচেতন ও সচকিত করেছে। কারণ, যাদের জন্য কুরআন, সেই মানুষ তো উদাসীন হয়ে পড়ে প্রতিদিনের বাস্তবতা সম্পর্কেও। অথচ সচেতনতা ও চিন্তাশীলতার দ্বারা সে পেতে পারে সত্যের দিশা এবং হতে পারে সত্যপথের পন্থী। তাই কুরআন বারবার উল্লেখ করেছে জীবন ও জগতের বিভিন্ন বাস্তবতা।
চারপাশে কত জনের মৃত্যু! তবুও মানুষ ভুলে থাকতে চায় নিজের মৃত্যুকে। কিন্তু ভুলে থাকলেই যে তা দূরে থাকে না! তাই কুরআন স্মরণ করিয়ে দেয়, মৃত্যু শুধু ওদের জন্য নয়, যারা মারা গেল; বরং ওদেরও জন্য, যারা এখনো মারা যায়নি।
***
মৃত্যুর স্মরণে ক্ষতি নেই; বরং আছে উপকার, বহু উপকার। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে দান করে ক্ষণস্থায়িত্বের উপলব্ধি। এ উপলব্ধি মানুষের মোহমুক্তি ঘটায়। অর্থ-বিত্ত, পদ-পদবী, ভোগ-ফূর্তি এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মোহই তো সকল ব্যাধির মূল, ব্যক্তি ও সমাজের সকল অশান্তির কারণ। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে মুক্ত করে এই মোহগ্রস্ততা থেকে । তাই তা এক মহৌষধ মানুষের নৈতিক ও চারিত্রিক শুদ্ধির। আর তাই মানব-মনে মৃত্যুর যে আবেদন তা বিনষ্ট করা কোনো মঙ্গলকর্ম নয়, নয় সমাজের হিতসাধন; বরং তা শুদ্ধি ও সংস্কারের এক বড় অবলম্বনের বিনাশ সাধন।
***
মৃত্যুর পর মানুষের শুধু দেহটি থাকে, রূহ চলে যায়। রূহ কী? কুরআন পাকের ইরশাদ-
قُلِ الرُّوْحُ مِنْ اَمْرِ رَبِّیْ وَ مَاۤ اُوْتِیْتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ اِلَّا قَلِیْلًا.
বল, রূহ আমার রবের এক নির্দেশ। আর তোমাদের তো দেয়া হয়েছে জ্ঞানের খুব সামান্য অংশ। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৮৫
আল্লাহর আদেশে মানবদেহ প্রাণ লাভ করে, আবার তাঁরই আদেশে নিষ্প্রাণ হয়। মৃত্যুর পর মানুষ ফিরে যায় তার স্রষ্টার কাছে। কুরআন বলছে-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَیْنَا تُرْجَعُوْنَ.
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। -সূরা আনকাবুত (২৯) : ৫৭
তাই মৃত্যুর স্মরণ প্রেরণা যোগায় আপন স্রষ্টার সাথে পরিচিত হওয়ার।
যে জীবনটি মানুষ যাপন করে এবং যে পৃথিবীতে বিচরণ করে এতেই রয়েছে ¯্রষ্টার অপার নিদর্শন। কুরআন মাজীদের ইরশাদ-
وَ فِی الْاَرْضِ اٰیٰتٌ لِّلْمُوْقِنِیْنَ وَ فِیْۤ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ.
নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন আছে ধরিত্রীতে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তবুও তোমরা দেখছ না? -সূরা যারিয়াত (৫১) : ২০-২১
سَنُرِیْهِمْ اٰیٰتِنَا فِی الْاٰفَاقِ وَ فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُ الْحَقُّ اَوَ لَمْ یَكْفِ بِرَبِّكَ اَنَّهٗ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ شَهِیْدٌ.
আমি ওদের দেখাব আমার নিদর্শনাবলী, বিশ্বজগতে এবং ওদের নিজেদের মধ্যে। ফলে ওদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, এ-ই সত্য। তোমার প্রতিপালক সম্পর্কে এই কি যথেষ্ট নয় যে, তিনি সব বিষয়ে অবহিত। -সূরা হা মীম আসসাজদা (৪১) : ৫৩
যার অবারিত দান জীবনজুড়ে, মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ ফিরে যায় তাঁরই কাছে। আহা! কত সৌভাগ্য তাদের, যারা তাঁর কাছে ফিরে যায় আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার চিহ্ন ললাটে ধারণ করে। হায়! কী দুর্ভাগ্য ওদের, যারা তাঁর সামনে দাঁড়ায় অকৃতজ্ঞতার কলুষ-কালিমা নিয়ে।
তাই মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে দান করে স্রষ্টার হক সম্পর্কে সচেতনতা। আর প্রেরণা দেয় বিশ্বাস ও আনুগত্যের এবং নিবৃত্ত করে অবিশ্বাস ও অবাধ্যতা থেকে।
***
মৃত্যুকী? মৃত্যু হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনে গমন। ক্ষণস্থায়ী জীবনে কেউ থাকে না। রাজা-প্রজা, আমীর-ফকীর, বিদ্বান-মূর্খ কেউই থাকতে পারে না। আর চিরস্থায়ী জীবন থেকে কেউ ফেরে না, কখনো ফিরতে পারে না।
মৃত্যু হচ্ছে, ‘দারুলআমল’থেকে‘দারুল জাযায়’গমন-কর্মের জগৎ থেকে প্রতিদানের জগতে প্রবেশ। কর্মের জগতে কর্ম ছিল এবং অবকাশ ছিল; প্রতিদানের জগতে শুধু প্রতিদান, কর্মের অবকাশ নেই।
কুরআন যেমন মৃত্যুকে স্মরণ করিয়েছে তেমনি মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কেও জানিয়ে দিয়েছে-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ.
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর তোমাদের কর্মফল তো পূর্ণমাত্রায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে কিয়ামতের দিন। এরপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ভোগ ছাড়া কিছুই নয়। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮৫
মৃত্যুকে স্মরণ করাবার কারণ, প্রতিনিয়ত তা দেখেও মানুষের গাফিল থাকা। আর মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে জানাবার কারণ, তা ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়-নির্ভর উপায়-উপকরণের আওতার বাইরে হওয়া। যাদের জ্ঞানের পরিধি শুধু এই ইন্দ্রিয়ের জগৎ তারা মৃত্যুকে মনে করতে পারে বিলুপ্তি, কিন্তুনা, মৃত্যু মানে বিলুপ্তি নয়। মৃত্যুর মতই অমোঘ বাস্তব মৃত্যুর পরের জীবন। সেই জীবনের রূপ কী, বৈশিষ্ট্য কী, পরিবেশকী, প্রতিবেশ কী, কারা সঙ্গী সেই নতুন দেশে, নতুন জীবনে, কারা প্রতিবেশী, কেমন তাদের আচরণ, কেমন উচ্চারণ- এ এমন কিছু প্রশ্ন, যার জবাব ইন্দ্রিয়ের কাছে নেই; অথচ মানুষকে ঐ জীবনের প্রস্তুতি নিতে হয় এই জীবনের সমাপ্তির আগেই। হায়! কত বড় দায় মানব-জন্মের!
দয়াময় আল্লাহ মানুষকে জানিয়েছেন ঐ জীবন সম্পর্কে, ওপারের ঐ জগৎ সম্পর্কে। তাঁর সংবাদে যারা বিশ্বাস রাখে তারাই ঈমানদার এবং বুদ্ধিমান। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
الكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ.
বুদ্ধিমান সে যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য উপার্জন করে। আর অক্ষম সে যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুগামী করে এবং আল্লাহর প্রতি অলীক প্রত্যাশা পোষণ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৬০
মৃত্যুর স্মরণ তাই মানুষকে দেয় সৎ কর্মের প্রেরণা, এককথায় আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায়ের প্রেরণা। ইসলামে ‘আমলে সালিহ’বা সৎকর্ম শুধু ‘ইবাদত-বন্দেগী’নয় যেমন তা নয় শুধু ‘সৃষ্টির সেবা’। ইসলামে আমলে সালিহ উভয় প্রকারের সৎকর্মের নাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত পরিষ্কার বলেছেন-
مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ فَلْتُدْرِكْهُ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَيَأْتِي إِلَى النَّاسِ مَا يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ.
অর্থাৎ মৃত্যুর পরের চূড়ান্ত সফলতার দুই শর্ত : এক. জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আল্লাহর উপর ও শেষ দিবসের উপর ঈমান। আর দুই. মানুষের সাথে ঐ ব্যবহার করা যা অন্যের কাছ থেকে পেতে মানুষ পছন্দ করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৮০৭; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১০৬১৪
এখানে‘শেষ দিবসের উপর ঈমান’কথাটি পড়ুন আর এ কালের ইহবাদী ধারণাটাও স্মরণ করুন। এই মতবাদে মৃত্যুর যে মূল্যায়ন তা যেন চৌদ্দশ বছর আগেই খ-ন করে দিয়েছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইহবাদী ধারণায় মৃত্যু মানে বিলুপ্তি। আর ঈমানদারের কাছে মৃত্যু মানে আখিরাতের জীবনের সূচনা। এই ঈমানের সাথেই তারা মৃত্যুর মুখোমুখী হবেন। দ্বিতীয় শর্তটি সংশ্লিষ্ট বান্দার সাথে। অর্থাৎ অন্যের সাথে ঐ ব্যবহার করা যা আমরা তার কাছ থেকে পেতে পছন্দ করি। আমরা কী পেতে পছন্দ করি? ইনসাফ পেতে, সহানুভূতি পেতে, পরোপকার পেতে এবং সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা পেতে। ইসলাম বলছে, মৃত্যুর পরের জীবনে চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে তোমাকে হতে হবে ন্যায়পরায়ণ, সহমর্মী ও পরোপকারী। আর তোমার কাছে নিরাপদ হতে হবে অন্যের সম্পদ ও সম্ভ্রম।
সুতরাং ইসলামে মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের যে দর্শন, তা মানুষকে পরিণত করে সৎ ও সজ্জন মানুষে। তো যারা এই চিন্তা ও দর্শনের বিরোধিতা করেন তারা আসলে কিসের বিরোধিতা করেন? তাঁরা কি উপলব্ধি করছেন, এভাবে এই জাতি ও সমাজকে কোন্ গন্তব্যে নিয়ে চলেছেন?
***
মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে করে সৎকর্মমুখী ও কর্মতৎপর। জীবন তো ফুরিয়ে যায় পলে পলে যেমন এক বরফ-খ- নিঃশেষ হয় ফোঁটায় ফোঁটায়। তাই একটি ভালো কাজ- তা যত ছোটই হোক, হতে পারে আখিরাতের সঞ্চয়, একটি আলোকিত বাক্য, হতে পারে কারো হেদায়েতের উপায়, কারো একটু উপকার হয়ে যেতে পারে নাজাতের অসীলা। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.
জাহান্নাম থেকে বাঁচো, খেজুরের একটি টুকরো দ্বারা হলেও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১৭
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই শিক্ষা ধারণকারী মুমিন তো কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রকারের ভালো কাজ থেকে বিমুখ হয় না। তো ইসলামী শিক্ষায় মৃত্যুর যে মূল্যায়ন তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, যা মানুষকে করে তুলে সৎকর্ম-মুখর। কাজেই তা পার্থিব কল্যাণেরও এক বড় উপায়। সর্বোপরি এ হচ্ছে এক সত্য ও বাস্তবতা, যা এড়িয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। এই সত্যের মুখোমুখী হতে হবে প্রতিটি মানুষকে- বিশ্বাসীকেও এবং অবিশ্বাসীকেও।
***
মৃত্যু তো অগ্রাহ্য করার মতো বিষয় নয়। এই সমাজে তো ছিল না ‘মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করা’র ধারণা। তবে হাঁ, আমাদের রয়েছে আল্লাহর পথে, মৃত্যুভয় জয় করার উজ্জ্বল ইতিহাস, আছে আমৃত্যু সৎকর্মে সত্য প্রতিষ্ঠায় মশগুল থাকার বর্ণিল উদাহরণ, কিন্তু মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করা? এই বিদ্রোহ-পরায়ণতা ও ভিত্তিহীন অহমিকা তো এই সমাজে ছিল না। আমাদের আবহমান কালের সংস্কৃতি, মৃত্যুকে না-ভোলার এবং যথাসাধ্য ভালো কাজের মাধ্যমে আখিরাতের প্রস্তুতি নেয়ার। আর ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুল-বিস্মৃতির জন্য অপরাধী-মন নিয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা-প্রার্থনা করার। এই খোদাভীতি আমাদের প্রেরণা দিয়ে এসেছে বিশ্বাসের, ভালো কাজের, ইবাদত-বন্দেগীর, পরোপকারের, লেনদেনে স্বচ্ছতার এবং নৈতিক ও চারিত্রিক শুদ্ধতার। আখেরাতে জবাবদিহিতার অনুভূতি আমাদের নিবৃত্ত করে এসেছে মন্দ কাজ থেকে, যুলুম ও হিং¯্রতাথেকে, রক্তপাত ও পরস্ব হরণ থেকে এবং নৈতিক ও চারিত্রিক স্খলন থেকে।
মুসলিম-সমাজের এই শুদ্ধ চেতনা ও সর্বকল্যাণপ্রসূ জীবন-দর্শনের পরিবর্তে যারা আজ এখানে এই সমাজে ইহবাদী ধারণার জাল বিস্তার করছেন এবং প্রসঙ্গে অপ্রসঙ্গে অনাহুত শব্দ-বাক্য ও অবিশ্বাসী চেতনা-দর্শন প্রতিষ্ঠা করছেন তারা কি ভেবে দেখেছেন এর পার্থিব ফলাফলও হতে পারে কত ভয়াবহ? এই ইহবাদী চেতনার ঔরস থেকেই জন্ম লাভ করে চরম হিং¯্রতা, চূড়ান্ত প্রবৃত্তিপরায়ণতা এবং সমাজের সকল স্তরে ‘জোর যার মুল্লুক তার’-এর দৃষ্টান্ত-পরম্পরা। আর আখিরাতের পরিণাম তো বলাই বাহুল্য। সুতরাং ঈমানদার, দেশপ্রেমিক ও সমাজ-হিতৈষী জনগণের কর্তব্য, দুর্বৃত্তায়নের এই ডাকে প্রতারিত না হওয়া এবং ইহবাদী ধারণা ও তার সকল প্রকাশকে সম্পূর্ণরূপে বয়কট করা। দায়ীগণের কর্তব্য, ইসলামের‘ঈমান বিল আখিরাহ’শিক্ষাটি বিভিন্ন আঙ্গিকে বারবার আলোচনা করা।
***
মৃৃত্যুকে অগ্রাহ্য করার মাঝে কোনো বীরত্ব নেই। বরং এ এক অসার অহমিকা ও মর্মান্তিক নির্বুদ্ধিতা। কারণ মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করা মানে ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতি মোহগ্রস্ত হওয়া এবং চিরস্থায়ী জীবন থেকে বিমুখ হওয়া। মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করা মানে এক অটল বাস্তবতাকে বিস্মৃত হওয়া এবং অনিবার্য জবাবদিহিতা সম্পর্কে উদাসীন থাকা। মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করা মানে আত্মবিস্মৃত হওয়া এবং আত্মঘাতী হওয়া।
মৃত্যু ও তার পরের জীবনকে যে অগ্রাহ্য করে, জীবনসায়াহ্নে এসেও যে বলে না- ‘দয়াময়! ক্ষমা কর এ বান্দায়’, সে তো ঐ বুদ্ধিহীনের মতো যে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়ে, কিংবা জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দেয়, অথবা চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেয়। এই অর্থহীন জীবননাশে কোনো বীরত্ব নেই। কিংবা বলুন, এই‘বীরত্বে’কোনো মহিমা নেই। তো যে মানুষটি পরিণাম জেনেও সারাটি জীবন থাকে না-শোকর, না-ফরমান, প্রবৃত্তিই হয় যার উপাস্য আর প্রবৃত্তিপরায়ণতাই ধর্র্ম আর এই ধর্মের আহ্বানেই সে রচনা করে চলে বাক্যের পর বাক্য এবং পংক্তির পর পংক্তি, অবশেষে হায়! জীবনের শেষ মুহূর্তটিও কেটে যায় দুর্বৃত্ত হেন, পঙ্কিল পংক্তি রচনায়; সে তো ঐ মানুষটির মতো, যে অর্থহীন জীবননাশ করে; বরং তার চেয়েও উদ্ধত, বুদ্ধিহীন।
ঐ জীবনই যথার্থ, যা যাপিত হয় জ্যোতির্ময় নির্মলতায় এবং জীবনদাতার প্রতি শোকর ও কৃতজ্ঞতায়; ঐ মৃত্যুই মহিমাপূর্ণ, যা হয় এক শুভ্র জীবনের শুভ সন্ধ্যা এবং এক পবিত্র সান্নিধ্যময় জীবনের শুভ সকাল।
দয়াময় আল্লাহ জ্যোতির্ময় ও কর্মময় করুন আমাদের সকাল ও সন্ধ্যা আর বরকতময় ও রহমতময় করুন আমাদের সন্ধ্যা ও সকাল।
আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
.
[ মাসিক আলকাউসার » সম্পাদকীয় » সফর ১৪৩৮ . নভেম্বর ২০১৬ ]

আরাকান : সেই সালতানাত, এই গণকবর

মুসা আল হাফিজ
মিয়ানমারে আরাকান মুসলমানের কান্না শুনতে পাচ্ছেন? বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাদের বুকচাপড়ানোর শব্দ।রাখাইন বা মগদস্যু আর সেনাবর্বরতায় কবর রচিত হচ্ছে মানবাধিকারের,উৎপীড়নের আগুনে জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম। আরাকানের সবুজ নিসর্গে বইছে রক্তস্রোত।জনপদগুলোতে বেড়ে গেছে শকুনের সংখ্যা।পচাগলা দুর্গন্ধ তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে লাশের দিকে।
নাফ নদিতে মানুষের লাশ,পথের পাশে মানুষের লাশ,ঝোপের আড়ালে মানুষের লাশ।কুকুর কামড়াচ্ছে মানুষের লাশ,শেয়াল টানছে মানুষের লাশ। লাশগুলো বিকৃত, ধড় বিচ্ছিন্ন দেহ থেকে। নাড়িভূড়ি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, মেরুদণ্ড কেটে নেয়া হয়েছে,চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে পোড়ানো লাশ।কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ। এ লাশ নারীর।আহা, নারী! এ লাশ শিশুর। আহা,শিশু! এ লাশ প্রেমিক যুবকের,প্রেমময়ী যুবতির।ওরা ধর্ষণ করেছে এবং হত্যা করেছে।ওরা হাত - পা বেধেছে এবং ফেলে দিয়েছে সাগরে।ওরা গ্রাম ঘেরাও করেছে এবং আগুন জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়েছে গোটা গ্রাম। মাটিতে শুধু রয়ে গেছে ভষ্ম,বাতাসে উৎকট দুর্গন্ধ।
যারা মরছে,তারা রোহিঙ্গা। কেউ নেই তাদের পাশে।তাদের জীবন ভাসছে মৃত্যুর তরঙ্গে,অনিশ্চয়তার নৌকায়।তাদের জীবন রোদন করছে দূর্যোগের ভেতর। কতোটা দূর্যোগে তারা? সমুদ্রে ভাসমান আশ্রয়হীন নৌকাগুলো দেখুন,ঘর ছেড়ে পলাতক ঠিকানাহীন মানুষগুলোর চেহারা দেখুন,সীমান্তের কাঁটাতারে মুখ ঘষতে থাকা নিষ্পাপ,শিশুদের বিপন্নতা দেখুন।ক্ষুধা- পিপাসায় কাতর নারী- শিশুদের বহর গুচ্ছ গুচ্ছ বিপন্নতার ছবি হয়ে মৃত্যু থেকে পালাতে ছুটছে।তাদের উদাস দৃষ্টি এবং ভাষাহীন চেহারা যেন বিদ্রুপ করছে বিশ্ববিবেকের প্রতি।
কোথায় মানবাধিকারের বড় বড় গলাবাজ? কোথায় মুসলিম ভ্রাতৃত্বের নামে গড়ে উঠা ওআইসি? কোথায় আরবের পেট্রোডলারওয়ালা শেখ- আমিরের দল? এমনকি সৌদি আরবের কণ্ঠস্বরও তো শুনা গেলো না।সে আটকে আছে ইয়ামান সংকটে।ইরান শিয়াবাদ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। তুরস্ক ব্যস্ত সিরিয়া নিয়ে।পাকিস্তান সন্ত্রস্ত ভারতের হুমকিতে।

জাতিসংঘ কী করছে? পূর্বতিমুরের স্পৃহা এখন গেলো কই? দক্ষিণ সুদানের আবেগ এখন কোথায়? বামিয়ানে এক মূর্তির জন্য যা করেছেন, বার্মায় মানবতার জন্য তা করছেন না কেন? আমেরিকা-ব্রিটেন বা ইউরোপিয় ইউনিয়ন তো মানবাধিকার ইস্যুতে খুবই সোচ্চার! মানবতার এই দুঃসময়ে তারা কই? রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে শুধু আশ্রয় প্রদানের চাপ দিয়ে সব দায়িত্ব তাদের শেষ?
অথচ কী ভয়াল গণহত্যা সেখানে চলমান! বাংলাদেশের টেকনাফ কিংবা শাহপরির দ্বীপে দাঁড়ালেই দেখা যাচ্ছে দূর্যোগ! দেখা যাচ্ছে দাউদাউ আগুনে পুড়তে থাকা রোহিঙ্গাপল্লী। দেখা যাচ্ছে মানুষকে জীবন্ত দগ্ধকরণ।বাতাসে শুনা যাচ্ছে তাদের চিৎকার,বার্মিজ সেনাদের গুলির শব্দ আর পলায়ণপর মানুষকে ধাওয়া করা মগদের উল্লাস।
রোহিঙ্গারা হারিয়ছে সব ধরণের অধিকার।তারা হয়ে আছে নিজদেশে পরবাসী। তারা বন্চিত নাগরিক অধিকার থেকে।১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সরকার নাগরিকত্ব আইন করে তাদের নাগরিক স্বীকৃতি দেয়নি।তিন ধরণের নাগরিকের মধ্যে রাখা হয়নি তাদের। তাদেরকে নিছক বসবাসকারী বলা হয়েছে।অথচ রোহিঙ্গারা এক হাজার বছর ধরে এখানকার অধিবাসী!

সেই অষ্টম শতক থেকে আরাকানে তাদের অধিবাস।তাদের নাম থেকই সেকালে আরাকানের নাম হয়েছিলো রোহিং।বাঙালী,পার্সিয়ান, তুর্কি,মোঘল, আরব, পাঠানরা সমুদ্রের পার্শ্ববর্তি এ অন্চলে বসতি স্থাপন করেন।আরাকান রাজ ইঙ্গিচন্দ্রের রাজত্বকালে (৭৮৮-৮১৩)কয়েকটি আরবীয় বাণিজ্যবহর রামব্রি দ্বীপের কাছে বিধ্বস্ত হয়।যাত্রীরা পার্শ্ববর্তি দ্বীপে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কিছু ডাক্তার, সৈনিক ও সংগীতজ্ঞ। প্রত্যেকেই জ্ঞান ও আচরণে উজ্জ্বল।স্থানীয়রা তাদের আচরণে মুগ্ধ হয়।রাজা তাদেরকে গ্রহণ করেন অতিথি হিসেবে।তাদেরকে সেখানে বসবাসের অনুরোধ জানান।
সেই থেকে শুরু। ( তারপর কী, বলবো? বলতে ইচ্ছে করছে না। কারণ আমি আরেকটি স্পেনের ইতিহাস লেখার বেদনা বহন করতে পারছি না)

রোহিঙ্গা কারা : একটি সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত

Mohiuddin Kasemi

আরাকান নামে একসময় একটি সমৃদ্ধ স্বাধীন মুসলিম রাজ্য ছিল।যার প্রাচীন নাম রোহিং।
বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকানের বর্তমান নাম, পুরনো নাম রোহিং) এলাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস।
.
ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়, এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে উঠে, আরাকান তথা বর্তমান রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরকানী মুসলমানদের বংশধর। এক সময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন দুশ’ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়।
.
নামকরণ
রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটি প্রচলিত গল্প রয়েছে এভাবে_ সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি। এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা।
তবে,ওখানকার রাজসভার বাংলা সাহিত্যের লেখকরা ঐ রাজ্যকে রোসাং বা রোসাঙ্গ রাজ্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
.
অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে আরাকানে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়। আরব বংশোদ্ভূত এই জনগোষ্ঠী মায়্যু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের (বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম বিভাগের নিকট) চেয়ে মধ্য আরাকানের নিকটবর্তী ম্রক-ইউ এবং কাইয়্যুকতাও শহরতলীতেই বসবাস করতে পছন্দ করতো। এই অঞ্চলের বসবাসরত মুসলিম জনপদই পরবর্তীকালে রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করে।
.
ভাষা
ইতিহাস ও ভূগোল বলছে, রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশে বাঙালি, পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করেছে। তাদের কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে।
.
মগের মুল্লুক
রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস ‘মগ’ ও ‘রোহিঙ্গা’। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মগের মুল্লুক কথাটি বাংলাদেশে পরিচিত। দস্যুবৃত্তির কারণেই এমন নাম হয়েছে ‘মগ’দের। এক সময় তাদের দৌরাত্ম্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মোগলরা তাদের তাড়া করে জঙ্গলে ফেরত পাঠায়।
.
ইতিহাস
ইতিহাস এটা জানায় যে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়।
.
ব্রিটিশদের দায়
এক সময়ে ব্রিটিশদের দখলে আসে এ ভূখণ্ড। তখন বড় ধরনের ভুল করে তারা এবং এটা ইচ্ছাকৃত কিনা, সে প্রশ্ন জ্বলন্ত। তারা মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ ধরনের বহু ভূল করে গেছে ব্রিটিশ শাসকরা।
.
সাময়িক অধিকার
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন।
.
নাগরিকত্ব বাতিল
১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ধর্মীয়ভাবেও অত্যাচার করা হতে থাকে। নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হয়। হত্যা-ধর্ষণ হয়ে পড়ে নিয়মিত ঘটনা। সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হতে থাকে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। বিয়ে করার অনুমতি নেই। সন্তান হলে নিবন্ধন নেই। জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সে জন্য আরোপিত হয় একের পর এক বিধিনিষেধ।
.
'কালা'
মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের অনেকের কাছেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী 'কালা' নামে পরিচিত। বাঙালিদেরও তারা 'কালা' বলে। ভারতীয়দেরও একই পরিচিতি। এ পরিচয়ে প্রকাশ পায় সীমাহীন ঘৃণা।
.
মানবাধিকারের চরম লংঘন
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বলা হয় "বিশ্বের সবচেয়ে কম প্রত্যাশিত জনপদ"এবং "বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু"। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের ফলে তারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হন। তারা সরকারি অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে না, জমির মালিক হতে পারে না এবং দুইটির বেশি সন্তান না নেওয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসারে, ১৯৭৮ সাল থেকে মায়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে এবং তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
তথ্যসূত্র-
উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা অবলম্বনে।
.
হে আল্লাহ, আকারাকানসহ সারা বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলিদের হেফাজত করুন।
আমীন।

মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী

সুফীবাদই কি প্রকৃত ইসলাম?

ইসলাম তাওহীদ ও রিসালাত এবং দ্বীন ও শরীয়তের নাম। আকাইদ ও ইবাদত যেমন ইসলামের অংশ তেমনি মুআমালা, মুআশারা ও আখলাক সংক্রান্ত বিধি বিধানও ইসলামের অংশ। ইসলামে যেমন ইবাদত সংক্রান্ত বিধিবিধান রয়েছে তেমনি লেনদেন, জীবন যাপন এবং চরিত্র ও প্রবণতা সংক্রান্ত বিধি বিধানও রয়েছে। ওয়াজ-নসীহতের বিষয় যেমন ইসলামে রয়েছে তেমনি আমর বিল মা’রুফ, নাহি আনিল মুনকার ও জিহাদের বিধানও রয়েছে। ব্যক্তি-সংশোধন ও পরিবার-সংশোধনের বিষয় যেমন আছে তেমনি সমাজ ও সভ্যতা, নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনা এবং আইন ও বিচারের বিষয়টিও রয়েছে।
আত্মশুদ্ধি তথা মানুষের ভিতরগত প্রেরণা এবং চরিত্র সংশোধনের বিষয়ে শরীয়তের বিধিবিধান যে শাস্ত্রে আলোচিত ও বিশ্লেষিত হয় হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে তার নাম হয়ে যায় ‘তাসাওউফ’।অতএব‘তাসাওউফ’ নামের বিষয়টি শরীয়তের বাইরের কোনো বিষয় নয়, আবার তা পূর্ণ শরীয়তও নয়। এটা হল শরীয়তের বিধিবিধানের একটি অংশ।
মানুষ কেবল তখনই মুসলিম হতে পারে যখন সে তাওহীদের সঙ্গে পূর্ণ শরীয়তের উপর ঈমান আনবে এবং শরীয়তকে সমর্পিত হৃদয়ে গ্রহণ করবে। শুধু তাওহীদ স্বীকার করে কিংবা শরীয়তের শুধু একটি অংশকে গ্রহণ করে মানুষ ‘মুসলিম’ হবে-এ চিন্তার কোনো স্থান নেই ইসলামে।
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً ۪
এটাই হল ইসলামের সঠিক পরিচয়, যা কুরআন-সুন্নাহয় উল্লেখিত হয়েছে স্পষ্ট ভাষায়। আর এটা ইসলামের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত এবং অবিচ্ছিন্ন ধারা পরম্পরায় সর্বজন বিদিত। এর বিপরীতে মুলহিদ ও ধর্মদ্রোহী শ্রেণী নিজেরা ভিন্নতর ‘তাসাওউফ’ প্রণয়ন করেছে। তাদের দৃষ্টিতে সেটা এক আলাদা জীবন ব্যবস্থা। এর মূল ভিত্তিটা হল প্রবৃত্তির অনুগামিতা এবং কর্ম ও চরিত্রগত ক্ষেত্রে বিধিবন্ধন-হীনতা। অথচ প্রতারণামূলকভাবে এই উশৃংখলারই নাম তারা দিয়েছে ‘তাসাওউফ’। যাতে হক্কানী ছূফীয়ায়ে কেরামের নিকটে স্বীকৃত বিষয়টির সঙ্গে শুধু নামগত সাদৃশ্য দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করা যায়। তবে মিথ্যা মিথ্যাই। যতই তার বেশ-ভূষা পরিবর্তন করা হোক তার প্রকৃত পরিচয় কখনো গোপন থাকে না। যেদিন থেকে এই বিষয়টির উদ্ভব, সেদিন থেকেই কুরআন-সুন্নাহর পারদর্শী মণীষীগণ তাসাওউফের আবরণ গ্রহণকারী এই প্রতারক গোষ্ঠীকে সর্বসম্মতভাবে বেদ্বীন ও যিন্দীক ঘোষণা করেছেন এবং পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এরা বাতেনী ও ইবাহী সম্প্রদায়েরই একটি শাখা।
এ যুগটা উন্নতির (?) যুগ। অতএব অতীতের বেদ্বীনী তাসাওউফও এখন উন্নতি করে পরিণত হয়েছে ‘সুফীইজমে’।
প্রকৃত‘তাসাওউফ’ যেহেতু শরীয়তের সবচেয়ে কঠিন অংশ- অন্তরের পরিশুদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এজন্য শরীয়তের উপরে ঈমান রাখেন এমন অনেকেও এ অঙ্গণ সম্পর্কে পলায়নপর মানসিকতা পোষণ করেন, কিন্তু আজকালের ‘সূফীবাদ’ এতই মজার বিষয় যে, সেক্যুলার মানসিকতার লোকেরাও এতে আগ্রহ বোধ করেন। এমনকি আগাচৌ সাহেবকেও এ বিষয়ের একজন রসিক সমঝদার হিসেবে দেখা গেল। তার দাবি হল দ্বীন ও শরীয়ত নয়, সূফীবাদই হল প্রকৃত ইসলাম। নাউযুবিল্লাহ।
এ যুগের ধর্মদ্রোহী সেক্যুলার মানসিকতার লোকেরাই যখন এ মতবাদের প্রচারক তখন এটা বোঝা কারো পক্ষেই কঠিন নয় যে, ইসলামী তাসাওউফের সঙ্গে এই সূফীবাদের কোনোই সম্পর্ক নেই। বরং এটা হল ইসলামকে অস্বীকার করারই একটি পন্থা।
প্রকৃত তাসাওউফ শরীয়তে মুহাম্মাদীরও শাখা এবং এই তাসাওউফের ধারক-বাহকগণ আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার, জিহাদ, নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রপরিচালনা, আইন ও বিচারসহ সকল বিভাগকে স্বীকার করেন। তারা ইসলামকে দ্বীনে তাওহীদ এবং পূর্ণাঙ্গ শরীয়তের সমষ্টি মনে করেন, যার রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি।
সারকথা এই যে, আজকাল কিছু কিছু পাশ্চাত্যজীবী চিন্তাবিদ ও সেক্যুলার মানসিকতার লোকেরা সূফীবাদের যে রূপ-কাঠামো পেশ করে থাকে তার সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ইলমে তাসাওউফের কোনো সম্পর্ক নেই। এ প্রসঙ্গে গাযালী ও রূমীর নাম ব্যবহার করাও নির্জলা প্রতারণা ও মিথ্যাচার। এই সূফীবাদকে প্রকৃত ইসলাম বলে উল্লেখ করা ইসলামকে অস্বীকার করার এক জঘন্য ও চাতুরীপূর্ণ পদ্ধতি।
আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ঈমান ও আকীদার হিফাযত করুন। 
.

[ মাসিক আলকাউসার » শাবান-রমযান ১৪২৯ . আগস্ট ২০০৮ ]

ডঃ ফাতেন আব্দুর রহমান খুরশিদ, মুসলিম মহিলা বিজ্ঞানী



ডঃ ফাতেন আব্দুর রহমান খুরশিদ, মুসলিম মহিলা বিজ্ঞানী, যিনি রাসুল (সঃ) এর এক হাদীস থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবিষ্কার করেছেন ক্যান্সারের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ।
:
মিডিয়া আর শাহবাগীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের অনেকের বিশ্বাস দাড়িয়েছে যে মুসলিম নারীরা মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে বিলাদুল হারামাইন বা ইয়েমেনের মত দেশে যেখানে হিজাবের ব্যপারে কড়াকড়ি আছে, সেখানে অনেক নির্যাতিত; তাদের চার দেয়াল ও পর্দায় “বন্দী” করে রাখার কারণে নারীদের মেধা বিকাশের সুযোগ নেই। এটি যে ভ্রান্ত তার প্রমাণ ডঃ খুরশিদ, ডঃ সামিয়া মায়মানি সহ আরও অসংখ্য মুসলিম মহিলা বিজ্ঞানী যারা বিজ্ঞান ও গবেষণায় অনেক ক্ষেত্রে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেছেন।
:
ডঃ ফাতেন খুরশিদ কিং আব্দুল আযীয ইউনিভার্সিটির মেডিসিন ফ্যাকাল্টির একজন প্রফেসর, সেই সাথে কিং ফাহাদ মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের প্ল্যান্ট সেলস অ্যান্ড টিস্যুজ ইউনিটের প্রেসিডেন্ট। তিনি ২০০১ সালে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই গ্ল্যাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং এ তার পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। এখন পর্যন্ত তার চারটি বই ও চৌদ্দটি পেপার পাবলিশ হয়েছে। একই সাথে তিনি WAMY (World Assembly of Muslim Youth) এর মহিলা বিভাগের সদস্য।
:
বুখারী ও মুসলিমে একটি সহীহ হাদীসে এসেছে যে কিছু বেদুইন মদীনায় এসে অসুস্থ হয়ে যায়। তাদের অবস্থার যে বর্ণনা হাদীসে পাওয়া যায় তা পড়ে ডঃ খুরশিদ অনুভব করেন, তাদের অসুস্থতার কারণ হতে পারে লিভারের অসুখ, এডেমা বা ক্যন্সার। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাদের আদেশ দেন মরুভূমির শুষ্ক এলাকায় চলে যেতে এবং মেডিসিন হিসেবে উটের দুধ ও মূত্র মিশিয়ে খেতে। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ডঃ খুরশিদ মেডিসিন হিসেবে উটের মূত্রের কার্যকারিতার গবেষণায় লিপ্ত হয়ে যান। দীর্ঘ সাত বছর গবেষণার পর তিনি উটের মূত্র থেকে ন্যানো পার্টিক্যাল এক্সট্র্যাক্ট করতে সক্ষম হন যা ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সুস্থ সেলগুলোর ক্ষতি না করেই ক্যান্সার সেলগুলো ধ্বংস করে দিতে সবচেয়ে সক্ষম হিসেবে প্রমাণিত হয়। উপরন্তু স্বেচ্ছাসেবীদের উপর পরীক্ষা সম্পন্ন করে এটাও প্রমাণিত হয় যে এর কোন সাইড ইফেক্ট নেই। ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ব্রেইন টিউমারের মত রোগেও এটি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়।
:
তার এ গবেষণার কারণে তিনি ও তার দল ২০০৮ সালে সৌদিতে শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ২০০৯ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত International Innovation and Technology Exhibition (ITEX) এ ৬০০ প্রতিযোগীর সাথে অংশ নিয়ে তার ওষুধ শ্রেষ্ঠ ৬ আবিষ্কারের একটি হিসেবে গোল্ড মেডেল লাভ করে। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডঃ খুরশিদ World Supreme Council for Commission on Scientific Signs of Quran and Sunnah এর গবেষণা দলের একজন সদস্য।

তথ্যসূত্র :- (http://www.almrsal.com/post/197234)

দাম্পত্য জীবনকে কুরআান কিভাবে সাজিয়েছে?

Anamul Hoque Masud

একটা সুন্দর সংসার এর জন্য স্বামী-স্ত্রীর কি করা উচিত, কি না করা উচিত এগুলো নিয়ে আমরা তো কত লেখাই পড়ি, কত মানুষের কত উপদেশই শুনি – তার কতটা সত্য কতটা মিথ্যা কে জানে? কিন্তু, একটি সুখী বিবাহিত জীবন পাওয়ার জন্য কি করতে হবে – সেই শর্তগুলি যদি সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে আসলে তাহলে কেমন নয়? যিনি স্রষ্টা তার চাইতে বেশী কে জানবে তার সৃষ্টি সম্পর্কে? ভেবে দেখুন, যেখানে মহান আল্লাহ্‌ আমাদের সরাসরি বলে দিচ্ছেন – এই যে মানুষ! শোনো! তুমি যদি সুখী সংসার চাও তোমাকে এই এই কাজগুলো করতে হবে – তাহলে আমাদের কি আর অন্য কোনো দিকে তাকানো ঠিক হবে?
একটা আনন্দময় সংসারের জন্য স্বামী/স্ত্রীর পারষ্পরিক করণীয় কি হবে – এই লেখায় তা আমরা কুরআন মাজিদের সূরা নিসা’র ৩৪ নং আয়াতের প্রথম অংশের আলোকে আলোচনা করব। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে প্রথমে ছেলেদের কি করণীয় তা বলেছেন, এরপর মেয়েদের কি করণীয় তা নিয়ে বলেছেন। আমি আয়াতটির বাংলা অনুবাদে ইচ্ছে করে গুরুত্বপূর্ন শব্দগুলোকে আরবীতে রাখব। তারপর সেই আরবী শব্দগুলোর অর্থ ধরে ধরে স্বামী/স্ত্রীর পারষ্পরিক করণীয় কাজগুলির তালিকা বের করব। আসুন তাহলে শুরু করা যাক —
মহান আল্লাহ্‌ বলেন:
4-34
অর্থ:
ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে “ক্বাওয়াম” হবে; কারণ, আল্লাহ্‌ তাদের কাউকে কারো উপর সুবিধা দিয়েছেন, এবং কারণ তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করবে।
কাজেই, “সালিহা” মেয়েরা হবে “কানিতা” ও “হাফিযা” – হেফাযত করবে যা দেখা যায় না এবং যা আল্লাহ্‌ তাদেরকে হেফাযত করতে বলেছেন।


আয়াতাংশটা যে জটিল সন্দেহ নেই। লক্ষ্য করলে দেখবেন, এখানে আসলে দুইটা বাক্য আছে (উল্লেখ্য, বাক্য আর আয়াত এক জিনিস নয়। অনেক বাক্য মিলে এক আয়াত হতে পারে, আবার একাধিক আয়াত মিলেও একটা বাক্য হতে পারে)। প্রথম বাক্যে আল্লাহ্‌ ছেলেদের করণীয়গুলি নিয়ে বলেছেন, আর দ্বিতীয় বাক্যে বলেছেন মেয়েদের করণীয়গুলি নিয়ে।

ছেলেদের করণীয় কাজগুলি দিয়ে শুরু করা যাক।
ছেলেদের করণীয়:
ছেলেদের করণীয় বুঝতে হলে আমাদেরকে “কাওয়াম” শব্দের অর্থ বুঝতে হবে। আরবী ভাষায় একটা ক্রিয়া (verb) কে বুঝা যায় তার বিপরীত ক্রিয়ার সাথে তুলনা করে। কাওয়াম বা উঠে দাঁড়ানো হলো বসে থাকার উল্টো। কাওয়াম বুঝায় সক্রিয়তা, যা নিষ্ক্রিয়তার উল্টো।

ছেলেদের করণীয় ১ : সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে উদ্যোগী (active) হবে
আল্লাহ যখন বলছে ছেলেদের ‘কাওয়াম’ হতে হবে, তখন তিনি বলছেন সম্পর্ক রক্ষায় ছেলেদের এক্টিভ হতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে, শুরু করতে হবে। একটা ছেলে যখন তার স্ত্রীকে দেখবে সে রান্নাঘরের কাজ নিয়ে, বাচ্চা নিয়ে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে – তখন নিজের উদ্যোগে এগিয়ে যেয়ে সাহায্য করতে হবে। ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যেতে মন চায় – সেটা ছেলেকেই আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী কি করছে তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেকেই আগে শুভেচ্ছা জানাতে হবে।

ভুল বুঝা-বুঝি, ঝগড়া হলে ছেলের যতই ইচ্ছে করুক ম্যান-কেইভ (পুরুষ-গুহা) এ যেয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে, যতই মনে আসুক ‘ও ভুল করেছে ওকে ক্ষমা চাইতে হবে’, নিজের মনের এই সব ইচ্ছাকে জলাঞ্জলী দিয়ে উদ্যোগী হতে হবে, ঝগড়াঝাটির জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, এগিয়ে যেয়ে ক্ষমা চাইতে হবে, মন থেকে ক্ষমা করে দিতে হবে। মেয়েরা সৃষ্টিগতভাবে লাজুক প্রকৃতির, তাই এমনকি অন্তরঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রেও ছেলেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
ছেলেদের করণীয় ২: সম্পর্ক নবায়নে ক্রমাগত চেষ্টা চালাবে/ Showing continuous commitment
কাওয়াম শব্দের আরেক অর্থ হলো – কোন কিছু দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা, কিছুতেই ছেড়ে না দেয়া। আরবি ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য হলো কোন শব্দের মধ্যে যদি কোন অক্ষর পরপর দুইবার আসে তাহলে তা পুনরাবৃত্তি ও আধিক্য বুঝায়। যেহেতু কাওয়াম শব্দের মাঝখানে ‘ওয়াও’ অক্ষরটি দুইবার আছে, তাই এখানে কাওয়াম শব্দের মাধ্যমে বলা হচ্ছে – ছেলেদের বার বার চিন্তা করে দেখতে হবে, প্ল্যান করতে হবে, কি করলে আমাদের সম্পর্কটা দিনে দিনে আরো চুম্বকীয় হবে।

‘আরে ও তো আমারই, ও কি আর আমাকে ছেড়ে যাবে’ – এই জাতীয় চিন্তা বাদ দিতে হবে। কাজের মধ্যে থাকুন, অফিসে থাকুন আর যেখানেই থাকুন, ফোন করে খবর নিতে হবে। শত ব্যস্ততার ভিড়েও প্রায়োরিটি দিয়ে স্ত্রীর জন্য সময় বের করতে হবে। স্ত্রী সুন্দর করে সাজলে তার প্রশংসা করতে হবে। কারণ ছাড়াই মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে স্পর্শ করতে হবে, জড়িয়ে ধরতে হবে। আয়েশা রা. এর হাদিস থেকে আমরা জানি রাসূলুল্লাহ সা. বাসা থেকে বের হওয়ার সময় প্রায়ই তাঁকে চুমু দিয়ে বের হতেন।
ছেলেদের করণীয় ৩: ছেলেরা মেয়েদের শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রতিরক্ষা (to protect her) করবে
কাওয়াম শব্দের তৃতীয় অর্থ হলো – physically কোন কিছুর সাথে থাকা ও তাকে protect করা। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ বলছেন ছেলেরা মেয়েদের কাছাকাছি থেকে তাদের নিরাপত্তা দিবে, কখনো একাকিত্ব বোধ করতে দিবে না। এই প্রোটেকশন কিন্তু শুধু শারীরীক নয়, মানসিকও। মেয়েরা ছেলেদের চাইতে বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ায় লোকে কি বললো তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করে, কেউ বাজেভাবে কথা বললে অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়ে। কোনো মেয়ে যখন তার মানসিক অশান্তি নিয়ে কথা বলবে– একজন ছেলে সেটাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না, কটাক্ষ করবে না, উপদেশ না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুধু শুনবে। ছেলেরা মেয়েদের প্রোটেকশন দিবে– শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে।

ছেলেদের করণীয় ৪: ছেলেরা মেয়েদের প্রয়োজন (to fulfill her needs) পূরণ করবে
কাওয়াম শব্দের চতুর্থ অর্থ হলো– যত্ন নেয়া, পরিচর্যা করা, Take-care করা, চাহিদা পূরণ করা। মহান আল্লাহর একটা নাম হলো– আল-কাইয়ূম যা একই শব্দমূল ‘কা-মা’ থেকে এসেছে। কাইয়ূম শব্দের অর্থ হলো– যে শুধু সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেয়নি, সবসময় তার যত্ন নিচ্ছে, দেখ-ভাল করছে। আল্লাহ এই আয়াতে কাওয়াম শব্দের মাধ্যমে আমাদের বলছেন – ছেলেরা মেয়েদের যত্ন নিবে, দেখ-ভাল করবে, তাদের কি প্রয়োজন তা জিজ্ঞেস করবে, জানতে চাইবে।

ছেলেদের করণীয় ৫: ছেলেরা মেয়েদের সাথে ন্যায্য (fair) আচরণ করবে
কাওয়াম শব্দের পঞ্চম অর্থ হলো– কাউকে বা কোন কিছুকে তার ন্যায্য পাওনা দেয়া। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি– ‘আল্লাহ্‌ নামাজ কায়েম করতে বলেছেন।’ আমরা কিন্তু বলি না আল্লাহ্‌ নামাজ পড়তে বলেছেন। কারণ ‘কায়েম’ শব্দটা আরো উঁচু স্তরের শব্দ– যার অর্থ যতটুকু মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে নামাজ পড়া দরকার ঠিক সেভাবে নামাজ পড়া। অন্যভাবে বলতে গেলে– আমাদের উপর নামাজের যে দাবি তা ন্যায্যভাবে আদায় করা।

একইভাবে– মেয়েদের ব্যাপারে ছেলেদের খুব সতর্কতার সাথে তার ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। আল্লাহ একজন ছেলেকে তার পরিবারের মেয়েদের উপর জিম্মাদার করে পাঠিয়েছেন। তাই একজন ছেলে নিজেকে সবসময় জিজ্ঞেস করবে– আমি কি ওর সাথে ন্যায্য আচরণ করছি? আমার শক্তি বেশি, গলার জোর বেশি, মনের দৃঢ়তা বেশি– এগুলো ব্যবহার করে আমি ওর উপর কোন জুলুম করছি না তো?
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন– তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর/পরিবারের প্রতি শ্রেষ্ঠ (মুসলিম)।

ছেলেদের করণীয় ৬: ছেলেরা মেয়েদের খরচ চালাবে
‘ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে ‘ক্বাওয়াম’ হবে; কারণ, আল্লাহ্‌ তাদের কাউকে কারো উপর সুবিধা দিয়েছেন কারণ তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করবে।’ সূরা নিসা ৪:৩৪ আয়াতাংশ
নারীর জন্য খরচ করার ব্যাপারে কিপ্টেমি করা যাবে না। ইসলামে এমনকি ডিভোর্স দেয়ার সময়েও গিফট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই, স্ত্রী থাকাকালীন সময় যে গিফট দিতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন– কেউ তার পরিবারের জন্য যা ব্যয় করে তা সাদাকাহ বলে গণ্য হয়।

উপরের কথাগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারছি আল্লাহ ছেলেদেরকে মেয়েদের ব্যাপারে অনেক দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। আর লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো– আল্লাহ কিন্তু বলেননি ‘স্বামীরা স্ত্রীর ব্যাপারে কাওয়াম হবে’, বরং বলেছেন ‘ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে কাওয়াম হবে।’ অর্থাৎ, একজন ছেলেকে শুধু তার স্ত্রীর সাথেই নয়, শরীয়ত তাকে যে সব নারীদের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের সবার সাথেই তাকে কাওয়াম হতে হবে। একজন ছেলেকে তার মা, বোন, মেয়ে, খালা, ফুপুসহ সবার ব্যাপারে কাওয়াম হতে হবে। তাদের সবার সাথে সম্পর্ক রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে, যোগাযোগ রাখতে হবে, মানসিক-শারিরীক প্রতিরক্ষা দিতে হবে, কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে হবে, তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
দায়িত্বের এই লিস্ট পাওয়ার পর কোন ছেলে চার বিয়ে করা তো দূরে থাক, প্রথম বিয়ে করার আগেই একশ’ বার চিন্তা করবে– ওরে বাবা! এত দায়িত্ব আমি পালন করতে পারবো তো? কেন যে পুরুষ হয়ে জন্মেছিলাম!
অধৈর্য হবেন না। এবার আসতে যাচ্ছে মেয়েদের দায়িত্বের তালিকা…
মেয়েদের করণীয়:
সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে ছেলেদের করণীয় কাজগুলি বর্ণনা করার পর আল্লাহ্‌ মেয়েদের সম্পর্কে বলছেন –

কাজেই, ‘সালিহা’ মেয়েরা হবে ‘কানিতা’ ও ‘হাফিযা’– হেফাযত করবে যা দেখা যায় না এবং যা আল্লাহ্‌ তাদের হেফাযত করতে বলেছেন। 
আল্লাহ বাক্যটি শুরু করলেন ‘ফা’ বা ‘কাজেই/সুতরাং’ দিয়ে। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ বললেন যেহেতু ছেলেদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, মেয়েদেরও স্বাভাবিকভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এরপর লক্ষ্য করুন বাক্যটির ব্যতক্রমী গঠন। আল্লাহ কিন্তু বলেননি– ‘মেয়েরা হবে সালিহা, কানিতা, হাফিযা …।’ বরং তিনি বলেছেন– ‘সালিহা মেয়েরা হবে কানিতা ও হাফিযা– ’। তার মানে আল্লাহ্‌ বলছেন না যে সব মেয়েরা কানিতা, হাফিযা হতে পারবে। বরং, মেয়েদের প্রবণতা হলো কানিতা ও হাফিযা না হওয়া। শুধু সেই সব মেয়েই এই গুণ অর্জন করতে পারবে যারা সালিহা। অর্থাৎ, অন্য সব গুণ অর্জনের পূর্বশর্ত হলো ‘সালিহা’ হওয়া। আসুন তাহলে ‘সালিহা’ শব্দের অর্থ সম্পর্কে জানা যাক।
‘সালিহা’ এসেছে ‘সালাহা’ থেকে যার অর্থ একটি অর্থ হলো ‘ভালো’। কোন কিছু নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সেটাকে ঠিক করে ফেলাকে আরবিতে বলে ‘সালাহা’। স্কলাররা বলেন, এখানে আল্লাহ্‌ মেয়েদের ব্যাপারে ‘সালাহা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন কারণ মেয়েদের মধ্যে আল্লাহ এমন বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়েছেন যে তারা চাইলে যে কোনো কিছুরই খুঁত ধরতে পারে। একজন মেয়ের স্বামী যতই তার সাথে ভালো করুক না কেন, সে চাইলেই তার দোষ ধরতে পারবে– এই গুণ তার আছে। কিন্তু, আল্লাহ্‌ সবচেয়ে প্রথমে এই কাজটিই করতে নিষেধ করছেন।
মেয়েদের করণীয় ১: স্বামীর দোষ উপেক্ষা করবে
আল্লাহ্‌ বলছেন একজন স্ত্রীর সবচাইতে বড় গুণ হলো স্বামীর দোষ এড়িয়ে যাওয়া, দেখেও না দেখার ভান করা, ভুলে যাওয়া। প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে তার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করা। রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন– কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনও দোষ দেখে বিরক্ত বোধ করে, তখন সে তার এমন গুণের কথা স্মরণ করুক যার জন্য সে তাকে ভালবাসে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন– কোন মেয়ে যখন তার স্বামীর দোষ ধরে তখন স্বামীটি এটাকে তার Manliness এ আঘাত বলে মনে করে। ফলে, আরো বেশি চটে উঠে। স্বামীর কোন দোষ চোখে পড়লে যথাসম্ভব চেষ্টা করুন তা না দেখার ভান করতে, আর একদমই সহ্য না করতে পারলে তাকে কটাক্ষ না করে বুঝিয়ে বলুন, অনুরোধ করুন।
মেয়েদের করণীয় ২: সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করবে
মানুষের দোষ উপেক্ষা করা সহজ না, খুব কঠিন একটা কাজ, আর স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য করা তো আরো কঠিন। আর তাই মহান আল্লাহ মনে করিয়ে দিলেন– না, না। তুমি দোষ উপেক্ষা করে ভালো আচরণ করবে, কারণ তুমি ‘কানিতা’। ‘কানিতা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘যে খুশী মনে নিজের ইচ্ছার পরিবর্তে অন্যের ইচ্ছাকে মেনে দেয়’। কিন্তু, ‘কুনুত’ শব্দটি ইসলামে ব্যবহৃত হয় নিজের ইচ্ছার উপর আল্লাহর ইচ্ছাকে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ– এখানে আল্লাহ্‌ বলছেন– মেয়েরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে স্বামীর সাথে ভালো আচরণ করবে, তার কথা শুনবে। স্বামীর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক কতটা ভালো না মন্দ– তা দেখে বুঝা যায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক কতটা ভালো না মন্দ। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন– আমি যদি তোমাদের আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীদেরকে হুকুম করতাম স্বামীকে সিজদা করার জন্য (ইবনে মাজাহ)।

মেয়েদের করণীয় ৩: স্বামীর অবর্তমানে তার দোষের কথা বলবে না
এরপর আল্লাহ্‌ মেয়েদের বলেছেন, ‘হাফিযা’ বা প্রতিনিয়ত রক্ষা করতে– আল্লাহ্‌ তাদের রক্ষা করতে বলেছেন ‘যা দেখা যায় না’। এর প্রথম অর্থ হলো– স্বামীর অবর্তমানে মেয়েরা তার সম্মান রক্ষা করবে, তার দোষের কথা মানুষকে বলবে না, তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করবে না। স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে একে অপরের অংশ। একজন স্বামী/স্ত্রী যখন নিজের তার সঙ্গীর অবর্তমানে দোষের কথা বলে, তখন সে তার নিজের একটা অংশেরই অপমান করে।

মেয়েদের করণীয় ৪: বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না
‘হাফিযা’ হওয়ার দ্বিতীর অর্থ হলো– স্বামী যখন তাদের দেখছে না তখনও মেয়েরা তার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না। অন্য পুরুষেরা হয়তো মেয়েটার সাথে বেশি বেশি কথা বলতে চাইবে, কাছে আসতে চাইবে, চান্স নিতে চাইবে। কিন্তু, মেয়েরা স্বামীর অবর্তমানে এমন কিছু করবে না, যা তার স্বামী সামনে থাকলে সে করতো না। স্বামী যেখানে যেতে নিষেধ করবে সেখানে যাবে না, যার সাথে কথা বলতে নিষেধ করতে তার সাথে কথা বলবে না, যে কাপড় পড়তে মানা করেছে তার পড়বে না। ‘হাফিয’ হচ্ছে আল্লাহর একটি নাম। এর থেকেই বুঝা যায় মেয়েদের প্রতি অর্পিত এই দায়িত্ব কতটা পবিত্র।

মেয়েদের করণীয় ৫: স্বামীর আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিজেকে প্রস্তুত (beautify herself) করবে
‘হাফিযা’ হওয়ার তৃতীয় অর্থ হলো মেয়েরা তার স্বামীর আকাংক্ষাকে রক্ষা (to protect his desire) করবে। স্ত্রীর অবর্তমানে স্বামী কোথায় যাচ্ছে সে কিন্তু জানে না। স্ত্রীর দায়িত্ব হল– যাদের সে দেখতে পাচ্ছে না তাদের থেকেও স্বামীকে রক্ষা করা। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন– শয়তান পরনারীকে ছেলেদের চোখে সুন্দর করে দেখায়। কাজেই, একজন মেয়ের দায়িত্ব হলো তার স্বামী যাতে শয়তানের সাথে লড়াইয়ে বিজয়ী হয় তাতে সাহায্য করা। স্বামী যখনই তার স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইবে– অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী তাকে না করবে না, কারণ এতে একজন স্বামী খুব কষ্ট পায়, তার মন ভেঙ্গে যায়। আর এই সুযোগে শয়তান এসে মনের মধ্যে ফিস ফিস করতে থাকে– আমি বলেছিলাম না সে তোমাকে ভালবাসে না!

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন– ছেলেরা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বোধ করে চোখের দেখায় [৬]। স্বামী ঘরের ফেরার আগে মাত্র ৫ মিনিট ব্যয় করেই কিন্তু একটা মেয়ে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করতে পারে। মেয়েদের সহজাত প্রবণতা হলো– স্বামী ছাড়া পৃথিবীর সবার জন্য সে সাজবে। অথচ, একটা মেয়েকে সুন্দর দেখার সবচেয়ে বেশি অধিকার হলো তার স্বামীর। এখানে বলা হচ্ছে না যে সব মেয়েদের সুপারমডেল হয়ে যেতে হবে। স্বামীরা জানে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে একটা মেয়েকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। এখানে খুব সাধারণ সাজগোজের কথা বলা হচ্ছে যা ৫/১০ মিনিটেই করা যায়।
সাহাবাদের স্ত্রীরা স্বামীর ঘরের ফেরার সংবাদ পেলে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করে রাখতেন। স্বামীর সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করাও একটা ইবাদত। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ সা. এমনকি মদীনায় দূত পর্যন্ত পাঠাতেন– অনেক সময় নির্দেশ দিতেন যাতে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের স্বাগত জানানোর জন্য সেজেগুজে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এতে সবচেয়ে বেশি লাভ কার? সবচেয়ে বেশি লাভ মেয়েদেরই। কারণ, যখন স্বামী বুঝতে পারবে তার স্ত্রী তাকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে, তখন সে তার প্রতি আরো বেশি ভালাবাসা ও আকর্ষণ বোধ করবে। আর যখন স্বামী দেখবে স্ত্রী তার জন্য নিজেকে সুন্দর করে রাখে না– সেই স্ত্রী ক্রমেই তার স্বামীর ভালোবাসা হারাবে।
শেষ কথা:
স্কলাররা [২.৩] বলেন– দুইটি মাত্র হাদিস আছে– যার একটা স্বামীর জন্য আর আরেকটা স্ত্রীর জন্য– এই একটা করে হাদিস যদি একজন স্বামী ও স্ত্রী মনে রেখে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে সেটাই তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য যথেষ্ট হবে।

পুরুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিসটি হচ্ছে:
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন– ‘মেয়েদের সাথে কোমল আচরণ করো, কারণ তাদের বাঁকা পাঁজর থেকে তৈরি করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের উপরের অংশ। যদি তুমি একে সোজা করতে চাও এটা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে দাও তো বাঁকাই থেকে যাবে। কাজেই, মেয়েদের সাথে নমনীয় আচরণ করো’ [বুখারী ও মুসলিম, আবু হুরাইরা(রা) হতে বর্ণিত]

হাদিসটির ব্যাখায় স্কলাররা বলেন –

১) পাঁজর যেমন হৃদপিণ্ডকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে, একজন ভালো স্ত্রীও তার স্বামীকে বাইরের কলুষতা থেকে রক্ষা করে।
২) একজন স্বামীর দৃষ্টিতে অনেক সময় তার স্ত্রীকে গোঁয়ার ও হৃদয়হীনা বলে মনে হতে পারে। স্ত্রীর আচরণ ভুল মনে হলে স্বামী তার সাথে চীৎকার চেঁচামেচি করবে না, জোর করে নিজের মত চাপিয়ে দিবে না। বরং, কোমল আচরণের মাধ্যমে, শান্ত ভাষায় তাকে বুঝাতে চেষ্টা করবে।
৩) স্ত্রীর সাথে জোরজবরদস্তির ফল কখনোই ভালো হবে না। বেশি জোড়াজুড়ি করলে সম্পর্কটি ভেঙ্গে পর্যন্ত যেতে পারে।
৪) স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-ঝাঁটি হয়ে গেলে তাকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। ঠিক যেমনি– ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়, মেয়েরা মন ভাঙলেও তা সারতে সময় লাগে। সুতরাং, একজন স্বামীকে তার স্ত্রীর দোষগুলি উপেক্ষা করে, গুণের কথা মনে রেখে, ধৈর্য ধরে, ভালো ব্যবহার করে যেতে হবে। আর, মহান আল্লাহ্‌র কাছে সুন্দর সম্পর্কের জন্য দু’আ করতে হবে।
আর স্কলারদের মতে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিসটি হচ্ছে
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন– ‘আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম, আমি স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।’ 
(ইবনে মাযাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা থেকে বর্ণিত)


এই হাদিসের ব্যাখায় স্কলাররা বলেন– একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালবাসবে, সম্মান করবে ও তার মতামত অনুসারে কাজ করবে (হারাম কাজ ছাড়া) এবং তার সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করবে। তবে, স্বামীকে সম্মান করার অর্থ এই নয় যে স্বামী অন্যায়-অত্যাচার করলেও তাকে মুখ বুঁজে মেনে নিতে হবে। সম্মান করার অর্থ এটাও নয় যে স্ত্রী স্বামীর সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। বরং, স্ত্রী স্বামীর সাথে ভিন্নমত পোষন করতে পারবে, পরামর্শ দিবে, প্রয়োজনে যুক্তি সহকারে নিজের মতকে তুলে ধরবে– কিন্তু এই সবই সে করবে সম্মানের সাথে, কটাক্ষের ছলে নয়। রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে তাঁর স্ত্রীরা অনেক সময় ভিন্নমত পোষণ করেছেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় স্ত্রীর পরামর্শেই রাসূলুল্লাহ সা. সর্বপ্রথম তাঁর মাথার চুল চেঁছে ফেলেছিলেন।

এখানে উল্লেখ্য, যদি এমন হয়– একজন মেয়ের স্বামী তাকে কিছু করতে বলে, আর মেয়েটির পিতা-মাতা ও ভাই-বোন তাকে অন্য কোন কিছু করতে বলে, এক্ষেত্রেও মেয়েটিকে তার স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে [৫]। এ বিষয়ে পাশ্চাত্যের বহু রিলেশনশিপ এক্সপার্টও এখন বলেন– ‘দ্য হ্যাপিয়েস্ট ওয়াইফ ইজ দা সারেন্ডারড ওয়াইফ’ (এ বিষয়ে লরা ডয়েল এর বেস্ট-সেলিং বই ‘দা সারেন্ডারড ওয়াইফ” [৭] পড়ে দেখতে পারেন)।
কোনো কিছুই এমনি এমনি হয় না। যে কোনো কিছু পাওয়ার জন্যই চেষ্টা করতে হয়। একটা সুন্দর সুখী সংসার গড়ার জন্যও চেষ্টা করতে হয়। একটি সুন্দর-সুখী পরিবার গড়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী দুইজনকেই চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে ভুল হবে, মান-অভিমান হবে, কিন্তু সেটাকে ধরে রাখলে চলবে না। একে অপরের ভুলকে উপেক্ষা করে সুন্দর সংসারের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
[এই লেখাটি স্বামী-স্ত্রীর পারষ্পরিক দায়িত্বের কোন পরিপূর্ণ/কম্প্রিহেনসিভ লিষ্ট নয়। ছেলে-মেয়ের সুন্দর, ভালাবাসাময়, শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যে প্র্যাক্টিকাল স্টেপগুলো নিতে হবে শুধু সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়। এগুলোর বাইরেও স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি অনেক ধর্মীয় দায়িত্ব (যেমন– পরষ্পরকে ইসলাম পালন করতে সাহায্য করা, উৎসাহ দেয়া, ইসলাম শিক্ষা করা ইত্যাদি) আছে।]
রেফারেন্স:
Responsibilities of husband and wife (Khutbah) – Nouman Ali Khan
Like a Garment – Yasir Qadhi
Making marriage work (Khutbah) – Yasir Qadhi
Marriage without criticism – SheKnows blog
Hadith on prostrating husband 
Sex and the power of the visual – PragerU
The surrendered wife – Laura Doyle
*

কুরআন গবেষক ও স্কলার উস্তাদ নুমান আলি খানের “Responsibilities of Husbands & Responsibilities of Wives” খুতবাটি অনুসরণ করে লিখেছেন আদনান ফয়সাল। কিছু ব্যাখা নেয়া হয়েছে শেইখ ইয়াসির কাযীর “Like a Garment” লেকচার

আরাকানের মুসলিমদের জন্য চীনের বর্ডার খোলা সংক্রান্ত নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ ভুয়া সংবাদ প্রচার এবং আমাদের অচেতনতা

আরাকানের মুসলিমদের জন্য চীনের বর্ডার খোলা সংক্রান্ত নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ ভুয়া সংবাদ প্রচার এবং আমাদের অচেতনতা............... পুরোনো ইতিহাসের সাথে যোগসূত্র।
মুসলিম উম্মাহর জাগরণকে ঠেকানোর জন্য ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধ এসব মৌলিক কুফফারদের তুলনায় অধিক ক্ষতির কারণ হয়েছে ইসলামের ছদ্মবেশে থাকা মুনাফিক্ব চক্র এবং মুসলিম দেশগুলোর ত্বগুত শাসকেরা। মুসলিম উম্মাহ যখনই ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হওয়ার চেষ্টা করেছে,তখনই মুসলিম উম্মাহর অভ্যন্তরীণ শত্রুরা সাধারণ মুসলিমদেরকে ধোঁকায় নিপতিত করেছে।
আবার মুনাফিক্বদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে একদল নির্বোধ মুসলিম ! 
আল্লাহর রাসূল সাঃ যখন উহুদের ময়দানে রওয়ানা হয়েছিলেন,তখন এই অভ্যন্তরীণ শত্রু তথা মুনাফিক্বরাই কুফফারদের শক্তির ভয় দেখিয়ে প্রায় ৩০০ জন ব্যক্তিকে তাদের দলে ভিড়িয়ে নিয়ে ঈমানহারা করতে সক্ষম হয়েছিলো।

আজকের যুগেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, যখনই উম্মাহর আত-ত্বয়িফাতুল মানসূরাহ মুজাহিদরা উম্মাহকে তার পরাজিত অবস্থান থেকে বিজয়ের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করানোর জীবনপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন,তখনই তাদের সামনে অতীতের মুনাফিক্ব ও কতিপয় নির্বোধের চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে উম্মাহর একটি অংশ।
মুজাহিদরা যখনই উম্মাহকে কুফফারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান, এক শ্রেণীর দরবারী আলিম মুসলিম জাতির উপর অভিশাপ হয়ে চেপে বসা মুরতাদ শাসকদেরকে মুসলিম উম্মাহর বৈধ নেতৃত্ব হিসেবে পেশ করে !! এসব ত্বগুত শাসকদেরকে মুসলিমদের অভিভাবক বানিয়ে তারা উম্মাহকে পঙ্গু করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অথচ এই ত্বগুত শাসকগুলো প্রকাশ্যে ক্রুসেডার-কুফফার চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে দুনিয়া থেকে দ্বীন ধ্বংসের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, এক শ্রেণীর দরবারী আবার এসব মুরতাদ শাসকদের অনুমতি কিংবা তাদের অধীন হওয়া ব্যতীত ফারদ্বুল 'আইন জিহাদ বৈধ নয় বলে মুসলিমদেরকে গোমরাহ করার শয়তানী অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য ইনশাআল্লাহ।
কুফফারদের গলায় গলা মিলানো এসব দরবারীদের পাশাপাশি এক শ্রেণীর নির্বোধ মুসলিমও পিছিয়ে নেই,যাদের কিছু অংশ ফেইসবুকেও দেখা মেলে ।
এবার আসি মূল কথায়, আরাকানের মুসলিমদের রক্ষার জন্য যখন প্রতিটি মুসলিম আজ সচেতন হয়ে উঠছেন,ঠিক সেই মূহুর্তে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে কতিপয় মিডিয়া,যারা প্রচার করছে, চীন নাকি আরাকানের মুসলিমদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে !!! আর পূর্বোক্ত সেই বোকা শ্রেণীটি এসব বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতাপূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদগুলো প্রচার করেছে 'আমজনতাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করছে।

এই নির্বোধ শ্রেণীটি দুনিয়া মানচিত্রের কোনো খবরতো রাখেই না এমনকি একবারও খোজ নিয়েও এসব শাহবাগী মিডিয়ার সংবাদের সত্যতাও যাচাই করেনি !! কোথায় বাংলাদেশের সীমানা আর কোথায় চীনের সীমানা এই খোঁজ নেয়াতো বহুদূরের কথা !!!
এদেশীয় শাহবাগী মিডিয়ায় এই চরমতম ভুয়া সংবাদটি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ! ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার চেষ্টা করা সাধারণ মুসলিমদেরকে আবারো ঘুমিয়ে রাখা। 
আসল সংবাদ হচ্ছে, চীন সীমান্তে মায়ানমারের 'শান' প্রদেশে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা একটি দলের লড়াই শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য চীন তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে। কারণ, সেখানে এই সাধারণ নাগরিকরাও বৌদ্ধ।

মায়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত আরাকান হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন আর চীন হচ্ছে মায়ানমারের উত্তর পূর্ব ও উত্তর সীমান্তে অবস্থিত। আরাকান থেকে চীনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেখানে আরাকানের মুসলিমরা একগ্রাম থেকে অন্য গ্রামেও যেতে পারে না। 
কেননা রোহিঙ্গা মুসলিমদের কোনো নাগরিকত্ব নেই ফলে নাগরিকত্বের আইডি কার্ড তাদের নেই,যেটি ছাড়া এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাওয়ার সুযোগ নেই।

এর আগে গত ২ বছর আগে যখন আরাকানের মুসলিমদেরকে গণহত্যা চালানো হচ্ছিলো,তখনো একশ্রেণীর নির্বোধ প্রচার করতো, তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান জাহাজ পাঠিয়েছে ! আর্মি পাঠিয়েছে আরাকানের মুসলিমদের জন্য ! আসুন লাইকের বন্যা বইয়ে দেই !
কোথায় এরদোগানের সেই জাহাজ ! কোথায় আর্মি ! একশ্রেণীর মূর্খ মডারেট এসব ভুয়া সংবাদ দিয়ে মুসলিম যুবকদেরকে প্রতারিত করছে।

এমনকি সেসময় আমেরিকার পাঁ-চাটা গোলাম ইরাকের রাফেযী কাফির-মুরতাদ সেনাবাহিনীর একটি ছবি দিয়ে লাইক ভিখারী এক নির্বোধ পোস্ট করেছিলো, ইরাকের আর্মি রওয়ানা হয়েছে.....আরাকানের মুসলিমদের রক্ষার জন্য ! আমি সেটি নিয়ে পোস্টও দিয়েছিলাম।
যেই মুরতাদ সেনাবাহিনী নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যা করছে এবং সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে,তারা আরাকানের মুসলিমদের রক্ষার জন্য আসবে,এটা একটা বদ্ধপাগলও ভাবতে পারে না। আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে তারা কীভাবে আরাকান আসবে !!! হাওয়াই জাহাজে চড়ে !!!!
এখনো একশ্রেণীর নির্বোধ লাইক ভিখারী এরদোগান ও সউদি যুবরাজকে মুসলিম উম্মাহর নায়ক বানিয়ে প্রচার করছে,তারা নাকি আরাকানের মুসলিমদের জন্য বাহিনী পাঠাবে !!!!!!!
যারা সরাসরি কুফফারদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে,তারা আরাকানের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাবে ????
যারা তাদের পাশের দেশ সিরিয়ার জানোয়ার আসাদের উপর একটা ঢিলও ছোড়েনি,তারা আসবে আরাকানের মুসলিমদের উদ্ধার করার জন্য ??? বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাই এধরণের কথা প্রচার করতে পারে।

চীনের সীমান্ত খোলা নিয়ে এই ভুয়া সংবাদটির উপরোক্ত বাস্তবতা জানতে আপাতত ৭ টি লিংক দিলাম...... আরো লাগলে জানাবেন।
১। মায়ানমার টাইমস..... http://tinyurl.com/juccmk8 
২। চীনের মিডিয়া..... http://tinyurl.com/jymdseq 
৩। রয়টার্স..... http://tinyurl.com/jx2n3ok 
৪। এশিয়া টাইমস.... http://tinyurl.com/hydqbpu
৫। স্কাই নিউজ.... http://tinyurl.com/hxrn8lr
৬। নিউইয়র্ক টাইমস.... http://tinyurl.com/zv453hd
৭। আইবি টাইমস...... http://tinyurl.com/hegl4a9
কৃতজ্ঞতায়: মুহরাম Abdullah Hasan ভাই।