খলিফাতুল মুসলিমীন আবু
বকর রা. এর খিলাফতকাল। আল্লাহর তলোয়ার খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. একে একে পারস্যের ভূমি
জয় করে চলছেন। ৬৩৩ খৃষ্টাব্দে ১২ হিজরী সালে কুফুরের শক্তিশালী ঘাটি আনবারের দিকে ৯ হাজার যোদ্ধা নিয়ে রওয়ানা হলেন। যখন
আনবারে পৌঁছলেন, দেখলেন আনবার অধিবসীরা
শহরের বাইরে বিরাট বিরাট পরিখা খনন করে রেখেছে।
.
পারস্যের সাসানী
সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আনবারের শাসনকর্তা শেরযাদ অত্যন্ত বিচক্ষণ ও
বুদ্ধিমান। মুসলিম বাহিনীকে শায়েস্তা করার জন্য এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। পরিখার
ওপার থেকেই মুসলিম বাহিনীর উপর তীর বর্ষণের নির্দেশ দিল। খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. ও
শত্রুদের চোঁখ লক্ষ্য করে তীর বর্ষণের পাল্টা আদেশ করলেন। মুসলিম যোদ্ধাদের তীরের
তীক্ষ্ণ ফলা শত্রুদের চোঁখকেই টার্গেট করল। মুহুর্তেই শত্রু বাহিনীর একহাজার চোঁখ
উপড়ে গেল! শত্রুদের মাঝে চিৎকার আর চেঁচামেচি শুরু হল - আনবার বাসীর চোঁখ চলে
গেল...আনবার বাসীর চোঁখ চলে গেল...!
.
অবস্থা বেগতিক দেখে
শেরযাদ সন্ধি করার জন্য চিঠি প্রেরণ করল। খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এমন কিছু শর্তারোপ
করলেন, যা মানতে পারলনা শেরযাদ! খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. ঘুরেঘুরে
পরিখার অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ স্থান সনাক্ত করলেন। মুসলিম বাহিনীকে নিজেদের বাহনজন্তু
উট জবাই করে পরিখায় ফেলার আদেশ দিলেন। মুসলিম বাহিনী উটের মরদেহের উপর দিয়ে পরিখার
সংকীর্ণ স্থান পার হয়ে গেলেন। শত্রুরা ভয়ে পালিয়ে আনবারের দূর্গে আশ্রয় নিয়ে নিল!
.
উপায়ান্তর না দেখে শেরযাদ
শর্তগুলো মেনে নিল! খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর কাছে নিরাপত্তা ভিক্ষা চাইল। তিনি
নিরাপত্তা দিলেন। তবে শর্ত করলেন, সে যেন কোনো ধরণের অস্ত্র, সম্পদ ব্যতিত একাকি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বেরিয়ে যায়। ঠিক তদ্রূপই
শেরযাদ একাকি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাহমন জাদওয়াহর কাছে আশ্রয় নিল।
.
যুদ্ধটি ইতিহাসে 'আনবারের যুদ্ধ' বলে পরিচিত। তেমনি 'যা-তুল উয়ূন' বা 'চোঁখ উপড়ানোর যুদ্ধ' বলেও প্রসিদ্ধ।
.
উল্লেখ্য, আনবার তৎকালিন পারস্যের একটি অঞ্চল ছিল। বর্তমানে ইরাকের
একটি প্রসিদ্ধ প্রদেশ।
.
চিন্তার বিষয়- মুসলিম
যোদ্ধারা কতটুকু পারদর্শী ছিল তীরন্দাজীতে! কুফ্ফারদের রণকৌশল যেখানে শেষ হত, মুসলিম যোদ্ধাদের শুরু হত সেখান থেকে!
.
[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৬/২৩৯]
..................অথবা......................
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন