বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

জেরুসালেমে দু’টি ঐতিহাসিক দিন....


জেরুসালেম নগরী। ১০৯৯ খৃষ্টাব্দ। ১৫ই জুলাই। বিকেল ৩টা। খৃষ্টান ক্রুসেডারদের মুসলিম নগরী জেরুসালেমের পতন ঘটল। খৃষ্টান বাহিনী বন্যা স্রোতের মত প্রবেশ করলো। নগরীতে। খৃষ্টান অধিনায়ক গডফ্রের নির্দেশে নরবলীর মাধ্যমে বিজয়োৎসবের ব্যবস্থা করা হল। নারী, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল মুসলিম ও ইহুদী নাগরিকদের নিধন যজ্ঞ চললো তিন দিন ধরে। বীভৎস সে দৃশ্য। কারো মাথা ছিঁড়ে ফেলা হলো, কারো হাত-পা কাটা হলো, কাকেও তীর বৃষ্টি করে মারা হলো, কাউকে মারা হলো পুড়িয়ে। অনেক মুসলমান গিয়ে আশ্রয় ডিনয়েছিল উমার মসজিদে, মসজিদের ভেতরেই তাদেরকে হত্যা করা হলো। ৩০০ মুসলিম নারী, শিশুয, বৃদ্ধ, যুবক গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল আল আকসা মসজিদের ছাদে, তাদেরকেও রেহাই দেয়া হলো না। হত্যা করা হলো প্রত্যেককে। রাজপথ দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে গেল। ঘোড়ার হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গেল সে রক্তে। তিনদিনের হত্যাকান্ডে জেরুসালেম নগরীতে ৭০, ০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হলো। 

সেই জেরুসালেমে আর এক দৃশ্য..... 

১১৮৭ খৃষ্টাব্দ। ২রা অক্টোবর। ৮৮ বছর পর মুসলিম বাহিনী গাজী সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে বিজয়ী বেশে জেরুসালেম নগরীতে প্রবেশ করলো। নগরীর আতঙ্ক উদ্বেগ পীড়িত খৃষ্টান নাগরিকদের চোছে-মুখে মৃত্যুর ছাপ। কিন্তু শান্ত সৃশৃঙ্খলভাবে মুসলিম বাহিনী নগারে প্রবেশ করলো। সকলের আগে চলছেন গাজী সালাহউদ্দীন। মুখ তাঁর প্রশান্ত, চোখে তোন উত্তাপ নেই। ৮৮ বছর আগে যারা জেরুসালেমকে কসাই খানায় পরিণত করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোন ঘৃণাও তাঁর চোখে মুখে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিজয়ের পর ক্রুসেডারদের মুক্তিদেয়ার ব্যাপারে গাজী সালাহউদ্দীন অপরিসীম উদারতার পরিচয় দিলেন। প্রত্যেক পুরুষের জন্য দশ, নারীর জন্য পাঁচ ও শিশুর জন্য একটি করে স্বর্ণমুদ্রা মুক্তিপণ নির্ধারিত হলেও নামমাত্র মুক্তিপণ গ্রহণ করে তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলেন। পরিশেষে দরিদ্র, বৃদ্ধ ও নারীদেরতিনি বিনাপণে মুক্তি দিলেন। সহায়সম্বলহীন নারীদের তিনি প্রচুর পরিমাণে অর্থ দানও করলেন। 

-- আমরা সেই সে জাতি- ১ম খণ্ড থেকে


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন